কেলসি বললো, দেখুন সবচেয়ে বেশি করে সে জিনিসটা আপনি বা বুলস্ট্রোড এড়িয়ে যেতে চান তা হল প্রচার। মনে হয় না মেয়েটিকে কেউ চুরি করে নিয়ে গেছে। অতএব ভাবনা করবেন না। আমার উপরেই ছেড়ে দিন।
চ্যাডির ঘুম আসছে না রাতে, খাট থেকে নেমে দুটো অ্যাসপিরিন মুখে ফেলে এক গেলাস জল খায়। ফিরে যেতে যেতে জানলার পর্দা সরিয়ে একনজর দেখে মনকে আশ্বস্ত করতে চেয়েছিল, যে সারারাতে আর কখনো ক্রীড়ামঞ্চে আলো দেখা যাবে না।
কিন্তু দেখা গেলো।…চ্যাডি সঙ্গে সঙ্গে জুতোজোড়া পড়ে মোটা কোট গায়ে চরিয়ে টর্চ লাইটটা নিয়ে বেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামে। কাউকে ডাকবার কথাও মনে হল না। ক্রীড়ামঞ্চে তাড়াতাড়ি যেতে হবে। দেখতে হবে সে রাতের আগন্তুক কে। পাশের দরজা দিয়ে বেরিয়ে ঝোঁপের রাস্তা দিয়ে প্রায় ছুটেই চলে, দুরুদুরু বুকে দরজার কাছে গিয়ে ধীরে ধীরে নিঃশব্দে হাঁটে। দরজা সামান্য ভেজানো ছিলো, ধাক্কা দিয়ে খুলে ভেতরে তাকালো।
.
হত্যার পর হত্যা
ইনসপেক্টর কেলসি ভীষণ গম্ভীর গলায় ঘরে ঢুকলো, আসুন আবার একটা।
এটা আবার কী? প্রশ্ন করে অ্যাডাম। আবার একটা হত্যা, ইনসপেক্টর কেলসি বলে, তার পিছু পিছু অ্যাডামও বেরিয়ে আসে। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে ইনসপেক্টরকে প্রশ্ন করে অ্যাডাম–
আরেকজন শিক্ষার্থী…মিস ভ্যান্সিটার্ট। কোথায়? ক্রীড়ামঞ্চে।
আবার অ্যাডাম বললেন, কী আছে সেখানে। আপনি এবার জায়গাটার তল্লাশি নিন, ইনসপেক্টর কেলসি বলে, বলা যায় না আপনাদের কায়দা অনুসরণ করলে যদি কোনো ফল পাওয়া যায়। নিশ্চয়ই ক্রীড়ামঞ্চে কিছু আছে নইলে ওখানেই হত্যার পর হত্যা হচ্ছে কেন? ডাক্তার হাঁটু গেড়ে শব পরীক্ষায় ব্যস্ত। ঘরে ঢুকতেই ডাক্তার উঠে দাঁড়ায়।
আধঘণ্টা হল মারা গেছেন। ডাক্তার বললো, বড়োজোর চল্লিশ মিনিট হবে। প্রথম কে দেখেছিল? কেলসি জিজ্ঞাসা করল। তার লোক বলে ওঠে, মিস চ্যাডউইক। কেলসি বললো, কি দিয়ে মারা হয়েছে? আবার গুলি কি?
ডাক্তার মাথা নেড়ে বলে, না, এবারে মারা হয়েছে মাথার পেছনে বালির বস্তা বা হান্টার জাতীয় কিছু একটা দিয়ে।
দরজার কাছে গলফের ডান্ডা পড়েছিল। একমাত্র এটাই ছিল।
ডাক্তার বলে, মৃতদেহে অস্ত্রের কোনো ছাপ পড়েনি। রবার মোড়া হান্টার বা বালির বস্তা হবে। খুনি নিঃশব্দে এসে মাথার পেছনে হেনেছে প্রচণ্ড আঘাত। উনি সামনে পড়ে গিয়েছিলেন, জানতেও পারেননি কিসের আঘাত লাগলো।
কি করেছিলেন তিনি? ডাক্তার বলে এই দেরাজটার সামনে হাঁটু গেড়ে ছিলেন। ইনসপেক্টর এগিয়ে গিয়ে সেটাকে দেখে। মেয়েটির নাম লেখা আছে নিশ্চয়ই। দেখি, হ্যাঁ, এই তো শাইস্তা…ওহো সেই মিশরীয় মেয়েটা। মহামাননীয় রাজকুমারী শাইস্তা। মিস ভ্যান্সিটার্টের উপর আজ স্কুলের দায়িত্ব ছিল। মিস বুলস্ট্রোড তো বাইরে গেছে।
ইনসপেক্টর বললেন, মিস চ্যাডউইকের সঙ্গে তাহলে দেখা করা যাক।
চ্যাডউইক তার ঘরে একটা চেয়ারে বসেছিলেন। রাতটা বেশ গরম তবুও তার ঘরে বিদ্যুঞল্পী জ্বলছে, হাঁটু থেকে পা পর্যন্ত কম্বলে ঢাকা। ইনসপেক্টর কেলসির দিকে বিবর্ণ মুখে তাকিয়ে, মরে গেছে..মরে গেছে না?
কেলসি মাথা নেড়ে ধীরে ধীরে মিস চ্যাডউইককে বলে, কী ভয়ানক! মিস বুলস্ট্রোডও নেই, স্কুলটা শেষ হয়ে যাবে যে।…বলতে বলতে কেঁদে উঠলো।
সান্ত্বনার সুরে কেলসি বলে, আমার কথা আপনার মনে খুব আঘাত লেগেছে জানি, তবু আমার অনুরোধ সাহস ফিরিয়ে আনুন। মিস চ্যাডউইক আমাকে বলুন কী ঘটেছিল। আমরা যত শিগগিরি জানতে পারি কে অপরাধী ততই মঙ্গল, ততই কম প্রচার হবে এই সব অপকাণ্ডের।
চ্যাডউইক বললো, দেখুন আমি তাড়াতাড়ি শুতে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম যে অন্তত একটি দিনের জন্যও অনেকক্ষণ ধরে ঘুমোত পারি। কিন্তু ভীষণ দুশ্চিন্তা হচ্ছিল, ঘুম এল না।
স্কুলের ব্যাপারে দুশ্চিন্তা?
হ্যাঁ, শাইস্তার নিখোঁজ হয়ে যাবার ব্যাপার। মিস স্প্রিঙ্গারের কথাও মনে হচ্ছিলো। ভাবছিলাম অভিভাবকদের আতঙ্কিত করে তুলবে। তারা কি আর পরের বারে তাদের মেয়েদের পাঠাবেন? তারপর অ্যাসপিরিন খেলাম, আবার শুতে আসবার সময় কেন জানি না পর্দা তুলে বাইরে তাকালাম। বোধহয় তখনো আমার মাথার মধ্যে মিস প্রিন্সারের চিন্তাই ঘুরছিল। আমি দেখলাম –এখানে তো আলো জ্বলছে।
কী রকম আলো?
আলোটা যেন নেচে নেচে উঠলো, টর্চের লাইটই হবে বোধহয়। আগেরবার মিস জনসন ও আমি যেরকম দেখেছিলাম।
হুবহু একই আলো কী?
হুঁ, সেইরকমই মনে হচ্ছে। বোধহয় একটু তেজ কম ছিলো, কী জানি ঠিক মনে নেই।
ওঃ তারপর?
হঠাৎ চ্যাডউইকের গলার স্বর তেজালো হয়ে উঠলো। তারপর আমি এবারে সংকল্প করেছিলাম দেখতেই হবে ওখানে কে, আর কি করছে। তাই আমি কোট আর জুতো পরে নিলাম। একছুটে বাইরে চলে গেলোম। কাউকে ডেকে নেবার কথা মনে হয়নি তখনও। এত তাড়াতাড়ি ছুটে গিয়েছিলাম সে সব কথা মনেও হয়নি। ভেবেছি দেরি হয়ে গেলে হয়তো তাকে পাওয়াই যাবে না। দরজা পর্যন্ত সমস্ত রাস্তাই দৌড়ে গিয়েছিলাম। তারপর পা টিপে টিপে কোনো আওয়াজ না করে ওখানে গিয়ে দেখতে পাই কে আছে, ওখানে কী করছে। দরজা ভেজানো ছিল। ধাক্কা দিতেই খুলে গেল, এদিক ওদিক চোখ বোলাতে গিয়েই দেখি…ওকী উপুড় হয়ে পড়ে আছে,…মৃত…তার গা…শিউরে শিউরে উঠলো।