দরজায় টোকা শুনে মিস বুলস্ট্রোড বললেন, ভেতরে এসো। ছুটতে ছুটতে আসার জন্য জুলিয়া আপজন হাঁপাচ্ছে।
এসো জুলিয়া।
কেলসি গর্জে উঠলো এখন তুমি যেতে পার, গুডম্যান। নিজের কাজ করগে।
জুলিয়া বললো, যে তাকে ডাকা হয়েছে? মিসেস বুলস্ট্রোড বললো, হ্যাঁ তোমার মায়ের ঠিকানাটা দাও। একটা চিঠি লিখতে হবে। জুলিয়া বললো, মা বিদেশে গেছে, ইসাবেল মাসিকে লিখুন। তারপর তাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তোমার মা ইনটেলিজেন্সে কাজ করতেন, তাই না? হ্যাঁ, মায়ের খুব ভালো লাগতো।
আচ্ছা জুলিয়া ধন্যবাদ। যেতে পারো এখন।
.
বিপর্যয়
স্কুল খোলর পর তৃতীয় সপ্তাহ শেষ। এই শনি-রবিবারেই ছাত্রীরা প্রথম তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে বাইরে বেরুবার অনুমতি পাবে। ফলে সপ্তাহ শেষে প্রায় খালি মেডোব্যাঙ্ক। রোববার দুপুরে খাবার জন্য মোট কুড়িজন মেয়ে কর্মীরাও অনেকে ছুটিতে গেছে। মিস বুলস্ট্রোড নিজেও সপ্তাহের শেষে বেরিয়ে যাচ্ছেন। মেডোব্যাঙ্কের প্রতিপত্তির দরুন মিস স্প্রিঙ্গারের হত্যাকাণ্ডটি পত্রপত্রিকায় বিশেষ আলোড়ন তুললো না। স্পষ্ট করে না বললেও এমন একটা ধারণার সৃষ্টি হল যেন কজন মস্তান ছোকরা দরজা ভেঙ্গে ক্রীড়ামঞ্চে ঢুকেছিলো। মিস ম্প্রিন্সারের মৃত্যু হয়তো আকস্মিক ইচ্ছাকৃত নয়। পুলিশ কজন তরুণকে থানায় ডেকেছে পুলিশকে সাহায্য করতে।
..শনিবার সকালে মিস বুলস্ট্রোড.তার সেক্রেটারি অ্যান স্যাপল্যান্ড চিঠিপত্র লেখার কাজ সবে শেষ করেছে–টেলিফোন বাজতেই অ্যান ধরলো।
আমীর ইব্রাহিমের অনুচরের সঙ্গে মিস বুলস্ট্রোড কথা বললেন…রোববার বেলা সাড়ে এগারোটা থেকে শাইস্তা তৈরি থাকবে। রাত আটটার মধ্যে মেয়ে যেন ফিরে আসে। টেলিফোন রেখে বললেন, এই প্রাচ্য দেশের মানুষগুলো ঠিক একটুও সময় দিতে পারে না, কালই শাইস্তা যাবে গ্রিসেলদারের সঙ্গে, সব ঠিক হয়ে গেছে, এখন আবার বদলাও। অ্যান স্যাপল্যান্ডকে বললেন যে চ্যাডউইককে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা।
চ্যাডউইক হন্তদন্ত হয়ে ঢোকে। মিস বুলস্ট্রোড বললেন, চ্যাডিকাল আমীর ইব্রাহিম শাইস্তার কাকা ওকে নিতে আসবেন, যদি তিনি নিজে আসেন তো বলে দিও মেয়েটি স্কুলে ভালোই পড়াশুনা করছে।
.
রবিবার সকাল, ঝকঝকে দিন। শনিবারে মিস বুলস্ট্রোড চলে গেছেন। স্কুলে রয়েছে শুধু মিস ভ্যান্সিটার্ট, মিস চ্যাডউইক, মিস রোয়ান আর মাদমোয়াজেল ব্লাশ। মিস ভ্যান্সিটার্ট ও চ্যাডউইক সব অভিভাবকদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন আর তাদের মেয়েদের দিচ্ছেন।
সভাঘরে মিস ভ্যান্সিটার্ট ও মিস চ্যাডউইক বসেছিলেন। মিস রোয়ান ঘরে ঢুকেই বললো, শাইস্তা কোথায়, তাকে কোথাও পেলাম না, আমীরের গাড়ি এসেছে তাকে নিতে। চ্যাডি বললো, কী, কোথাও কোনো ভুল হয়েছে নিশ্চয়ই। আমীরের গাড়ি তো এসেছিল সেই বলল, প্রায় মিনিট পঁয়তাল্লিশ হল। আমি নিজে দেখেছি সেই গাড়িতে উঠতে।
ভ্যান্সিটার্ট বললে, হয়তো দু-দুবার করে গাড়িকে বলে দিয়েছে অমনি কিছু একটা গোলমাল হয়েছে। নিজেই বাইরে গিয়ে শোফেয়ারকে বললো, দেখো গলতি হয়েছে কোথাও। পঁয়তাল্লিশ মিনিট হল মেয়েটি লন্ডনের পথে রওনা হয়ে গেছে। কখনো অমন ভুল হতে পারে না।
হামেশাই হয় এমন।
সাড়ে চারটের সময় টেলিফোন বাজতে চ্যাডি সাড়া দিল, মেডোব্যাঙ্ক স্কুল, মিস বুলস্ট্রোড আছেন? কণ্ঠস্বরে বোঝা গেল বেশ উঁচু বংশের কোনো ইংরেজ পুরুষ।
মিস বুলস্ট্রোড আজ এখানে নেই, আমি মিস চ্যাডউইক বলছি।
দেখুন আপনাদের এক ছাত্রীর সম্পর্কে আমাদের কিছু বলবার আছে…আমি ক্রারিজ থেকে বলছি আমীর ইব্রাহিমের কামরা থেকে।
হা বলুন?…শাইস্তার সম্বন্ধে তো?
হ্যাঁ, আপনাদের কাছ থেকে আমরা এখনো কোনো খবর পাইনি, আমীর বেশ বিরক্ত হয়েছেন?
খবর? তাকে আমরা কি খবর দেবো?
কেন বলতে তো পারতেন, শাইস্তা এলো না বা আসতে পারলো না।
এলো না!..মানে আপনি কি বলতে চান যে সে এখনো পৌঁছায়নি? না আসেইনি এখানে, …মেডোব্যাঙ্ক থেকে রওনা হয়ে গিয়েছে, বলছেন!
হ্যাঁ, সকালেই তো একটা গাড়ি এসেছিল। প্রায় সাড়ে এগারোটায়, সেই গাড়িতেই তো গেল।
কী আশ্চর্য এখনও পর্যন্ত কোনো পাত্তা নেই।
মিস চ্যাডউইক বললো, কী কাণ্ড! দুর্ঘটনা না হলেই বাঁচি, না না না, খারাপ কেন ভাবছেন, কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে এতক্ষণ খবর পেয়ে যেতেন। নইলে আমরাও তো পেতাম।
না…ব্যাপারটা অদ্ভুত মনে হচ্ছে। আচ্ছা…মানে…আমীরকে অবশ্য এখন কোনো সম্ভাবনার কথা বলবো না…তবু আপনাকে জিজ্ঞেস করছি। কোনো…ইয়ে মানে পুরুষ বন্ধু নেই তো? নাঃ থাকতেই পারে না।
দেখুন ওসব কথা মনেও স্থান দেবেন না, একেবারে অসম্ভব। টেলিফোন রেখে চ্যাডি ভাবলো সত্যি কি অসম্ভব? চ্যাডি বলে, মেয়েটি কিন্তু বলেছিল যে কেউ ওকে হরণ করতে চেষ্টা করবে।
.
মিস চ্যাডউকের ঘুম আসে না
বিছানায় শুয়ে মিস চ্যাডউইক এপাশ ওপাশ করছে ঘুম আসছে না।
আটটা যখন বেজে গেলো তখনও শাইস্তা ফিরলো না। কোনো খবরও পাওয়া গেল না। তখন মিস চ্যাডউইক আর শান্ত থাকতে পারলো না। নিজের হাতেই ব্যাপারটার ভার নিলো। ইনসপেক্টর কেলসিকে টেলিফোন করলো। ইনসপেক্টর বললো যে, মিস চ্যাডউইক যেন তার ওপরেই ব্যাপারটা ছেড়ে দেয়। যা কিছু করার তিনিই করবেন।