কেলসি বললো, অর্থাৎ বলতে চান যে ওগুলো যারা পাবে তাদেরই হয়ে যাবে? না না, একথা ভালো নয়।
অ্যাডম গম্ভীর গলায় বলে, ভালো কথা তো নয়ই, তাছাড়া অনেকগুলো দলও সন্ধানে ঘুরছে। তারা কেউই সাধুসন্ত নয়। গুজবও হতে পারে, সত্যিও হতে পারে।
কিন্তু মেডোব্যাঙ্কে কেন?
এই ছোট্ট রাজকুমারীর জন্য, যার মুখে এখনো দুধের গন্ধ। রাজকুমারী শাইস্তা আলি ইউসুফের খুড়তুতো বোন। ই, কেউ হয়তো ওকে জিনিসগুলো পৌঁছে দেবার চেষ্টা করবে। আশেপাশে কিছু সন্দেহজনক চরিত্রের আমদানী হয়েছে।
অ্যাডাম ধীরে ধীরে বললো, প্রিঙ্গার রাত দুপুরে ক্রীড়ামঞ্চে ছিল কেন? কে তাকে হত্যা করেছে। সে প্রশ্ন অবান্তর। যতক্ষণ না আমরা জানতে পারছি কেন সে এত রাতে ক্রীড়ামঞ্চে গিয়েছিলো, বলা যেতে পারে তার অমন নির্দোষ ব্যায়ামপুষ্ট জীবনেও অনিদ্রা রোগ জন্মেছিল। বিছানা থেকে উঠে জানলা দিয়ে ক্রীড়ামঞ্চে আলো জ্বলতে দেখতে পেলো-তার জানলাটাও ওই দিকেই তো। শক্তসমর্থ সাহসী স্ত্রীলোক তাই নিজেই গেল অনুসন্ধানে, তাতে হয়তো কেউ কাজে বাধা পেলো, কাজেই লোকটা এমন মরিয়া হয়ে উঠলো যে তাকে গুলি করে মেরে ফেলতেও কসুর করলো না।
কেলসি মাথা নাড়ে, আমারও ওভাবেই দেখছি। কিন্তু আপনার শেষের কথাটা আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। হত্যা করবার জন্য গুলিও ছোঁড়া হয় না বা সেরকম প্রস্তুতি নিয়ে লোকে আসে না, যদি না..ক্রীড়ামঞ্চে কোন রাজার ধন আছে। কিছু লুকিয়ে রাখবার মতো জায়গাই তো ওটা নয়। ওখানে কিছু পাওয়া যায়নি।
অ্যাডাম বলে, হত্যাকারী সেটা তো রেখে যাবে না, নিয়েই যাবে। অবশ্য অন্য আরেকটা সম্ভাবনা রয়েছে এতে। ক্রীড়ামঞ্চটি হয়তো গোপন আড্ডার স্থান হিসেবেই মিস স্প্রিঙ্গার বা অন্য কেউ ব্যবহার করতো। ধরা যাক মিস স্প্রিঙ্গার ওখানে গিয়েছিলেন কারো সঙ্গে দেখা করতে।… মতের অমিল হতেই গুলি খেয়ে মরলো। অথবা মিস স্প্রিঙ্গার কাউকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে দেখে তার পিছু নেয়, এবং এমন কিছু দেখে বা শোনে যা তার পক্ষে অনুচিত।
কেলসি বললো, আমি অবশ্য জীবিত অবস্থায় মিস স্প্রিঙ্গারকে দেখিনি কিন্তু শুনে স্পষ্ট বুঝলাম যে, সব ব্যাপারেই তিনি নাক গলাতেন।
অ্যাডামও একমত। মনে হয় ভদ্রমহিলার মৃত্যুও হয়েছে ওই জন্য।অধিক কৌতূহলে মরিল সিংহ..ক্রীড়ামঞ্চেই নাটকের রঙ্গমঞ্চে।
অ্যাডাম জোরে মাথা নেড়ে বললেন যে, স্কুলেই কেউ আছে, যার ওপর মনোযোগ দিতে হবে, পাখির ঝাঁকে আছে একটা বিড়াল।
কেলসি কথাটা কানে যেতেই থ। আঁ? কী বললে, পাখীর ঝাঁকে বেড়াল? আজও এই কথাটা মিস রীচ বলেছে, স্কুলের একজন শিক্ষিকা। এই পর্বে তিনজন নতুন এসেছে। সেক্রেটারি স্যাপল্যান্ড, ফরাসি শিক্ষিকা ব্লাশ, আর মিস স্প্রিঙ্গার, তিনি তো মারাই গেছেন। পাখির ঝাঁকে বেড়াল যদি থাকেই তবে দুজনের মধ্যে একজনই বেড়াল, কোনজন? তোমার কোনো ধারণা আছে?
অ্যাডাম বলে, আমি একদিন মাদমোয়াজেল ব্লাশকে ক্রীড়ামঞ্চ থেকে বেরিয়ে আসতে দেখেছিলাম কেমন যেন দোষী দোষী ভাব নিয়ে। মিস বুলস্ট্রোডও আশ্চর্য নারী। এই ব্যাপারটা আমরা যত শীঘ্র নিষ্পত্তি করতে পারি ততই মঙ্গল। মেডোব্যাঙ্ককে আমরা আবার ঝকঝকে তকতকে করে তুলতে চাই।
আপনি যে কে সে কথাটা এবার মিস বুলস্ট্রোডকে জানানো উচিত। ভয় নেই। তিনি মুখ খুলবেন না।
অ্যাডাম মাথা নেড়ে বলে, ঘটনা যেরকম দাঁড়িয়েছে, তাতে তো বলতেই হবে, আর কোনো উপায় নেই।
.
চাই পুরানো প্রদীপের বদলে নতুন প্রদীপ
আরো একটি গুণ আছে মিস বুলস্ট্রোডের, তিনি চমৎকার শ্রোতা। এই গুণের জন্যই তাকে মহিলা শ্ৰেষ্ঠা বলা যেতে পারে।
অ্যাডামের কথাগুলো শুনে কেলসি বললো, অদ্ভুত! অ্যাডাম ভাবল, আপনিই তো অদ্ভুত! মূলকথায় এসে পৌঁছলেন, ই, তাহলে আমায় কী করতে হবে বলুন?
ইনসপেক্টর কেলসি বলে, দেখুন আমারা ভেবে দেখলাম আপনাকে সব কথা খুলে বলা উচিত…স্কুলের স্বার্থেই।
মিস বুলস্ট্রোড মাথা নেড়ে বললেন, স্বভাবতই স্কুলের স্বার্থই আমি প্রথমে দেখবো। আমার ছাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য আমিই সম্পূর্ণ দায়ী। কর্মীদের জন্যও বটে তবে কম। কাজেই মিস ম্প্রিন্সারের মৃত্যুর প্রচার যত কম হয় ততই আমার পক্ষে ভালো। অবশ্য ওটা স্বার্থপরের মতো হল। অবশ্য এই ঘটনাটার পূর্ণ প্রচার যদি আপনাদের কাজের জন্য আবশ্যক হয় তবে তো করতেই হবে। কিন্তু তার কী দরকার আছে?
কেলসি বলে, না কম প্রচার হলে আমাদের পক্ষেও ভালো। আমরাও জানিয়ে দেবো মনে হচ্ছে ঘটনাটা স্থানীয় ব্যাপার, ছোকরা গুণ্ডার দল…যাকে আজকালকার ভাষায় শিশু অপরাধী বলা হয়…মিস স্প্রিঙ্গার হঠাৎ তাদের চমকে দেওয়ায় ওরা গুলি ছোঁড়ে।…আমি চাই এই ধরনের গল্পই চলুক, তাহলেই আমরা চুপচাপ তদন্ত করতে পারবো।
কেলসি বলে, মিসেস আপজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। যত শিগগির সম্ভব, আপনজনের কাছে তার ঠিকানা আছে?
নিশ্চয়।…তবে শুনেছিলাম যে তিনি এখন বিদেশে। আচ্ছা দাঁড়ান এখুনি খোঁজ করছি।
ঘন্টি বোতামটা দুবার টিপে জুলিয়া আপনজনকে একটু পাঠিয়ে দিতে বললেন।
অ্যাডাম বললো, মেয়েটি আসার আগেই আমি কেটে পড়ি। ইনসপেক্টর তদন্ত করছেন, সেখানে আমার থাকাটা ঠিক নয়। ইনসপেক্টর এমন ভাব দেখাবেন যেন আপনি আমাকে এখানে ডেকে এনেছেন বকাবকি দেবার জন্য, এখন দেখছেন আমি কিছুই জানি না। অতএব চলে যেতে হুকুম দিলেন।