অ্যাঞ্জেল ব্লাশ চলে যেতেই বন্ড বললো, অভিমানী, ফরাসিরা সকলেই অভিমানী।
কেলসি বলে, যাই হোক কিছু খবর তো জানা গেল। মিস স্প্রিঙ্গার চাইতেন না যে লোকে তার ব্যায়ামঘরে আসুক মানে ক্রীড়ামঞ্চে…কিন্তু কেন?
বন্ড বললেন, তিনি হয়তো মনে মনে ভাবতেন যে ফরাসিনী তাকে চোখে চোখে রাখছে।
কিন্তু তাই বা কেন, তার ওপরে যে গোয়েন্দাগিরি করেছে এই ভয়টা তো তখুনি জাগবে যখন অ্যাঞ্জেল ব্লাশ তার কোনো গোপনীয় তথ্য জেনে নেবার সম্ভাবনা থাকবে।
আর কে কে আছে?
দুজন নবীন শিক্ষিকা মিস ব্লেক ও মিস রোয়ান, আর মিস বুলস্ট্রোডের সেক্রেটারি। মিস ব্লেকের বয়স কম, গোলগাল চেহারা, সরল মুখ। উদ্ভিদতত্ত্ব ও পদার্থবিদ্যা পড়ায়।
বিশেষ কোনো খরবই দিতে পারল না। মিস রোয়ানের মনস্তত্ত্বের ডিগ্রি। কাজেই তার নানা অভিমত। খুব সম্ভব স্প্রিঙ্গার আত্মহত্যাই করেছেন।
কেলসি তো অবাক, সে কী! তার মনে সুখ ছিল না?
ভীষণ তীব্র স্বভাব ছিলো তার।
বুঝুন তাহলে ওটা তো মানসিক প্রতিরক্ষা। তার সম্বন্ধে এতক্ষণ যতটুকু জেনেছি তাতে তো মনে হয় তিনি বেশ আত্মবিশ্বাসী মানুষ ছিলেন।
একটু বেশিই আত্মবিশ্বাসী নয় কি, তার অনেক কথা থেকেই আমার সন্দেহ প্রমাণিত হয়।
মিস বুলস্ট্রোড এসে বললেন, ইনসপেক্টর কেলসি, একটি মেয়ে আপনার সঙ্গে দেখা করতে চায়।
সত্যি? কিছু জানে বুঝি?
আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আপনি নিজে কথা বলে দেখুন, মেয়েটি আমাদের বিদেশী ছাত্রীদের মধ্যে একজন। আমীর ইব্রাহিমের ভাইঝি, রাজকুমারী শাইস্তা। মনে মনে নিজেকে খুব বড়ো করে ভাবে, বুঝলেন তো?
মাঝারি গড়নের একটি কাল মেয়ে ঘরে ঢুকলো, শান্ত বাদামী চোখে তাকিয়ে বলে, আপনারা পুলিশ?
হ্যাঁ আমরা পুলিশ, বসো, বলো তো তুমি কী জান মিস স্প্রিঙ্গারের সম্বন্ধে।
হ্যাঁ বলবো আপনাকে।
বসে পড়ে সামনের দিকে ঝুঁকে–এই জায়গাটার ওপর লোকে নজর রেখেছে, তাদের দেখা যায় না বটে কিন্তু তারা আছে।
এই স্কুলের ওপর কেন নজর রাখবে?
আমার জন্য, আমাকে চুরি করে নিয়ে যাবে।
তোমাকে তারা চুরি করতে চায় কেন?
কেন, মুক্তিপণ আদায় করবে আমার আত্মীয়দের কাছ থেকে।
আঁ…ও আচ্ছা…আচ্ছা কিন্তু তার সঙ্গে মিস স্প্রিঙ্গারের মৃত্যুর কি সম্বন্ধ?
শাইস্তা বলে, তিনি হয়তো ওদের দেখে ফেলেছিলেন, তিনি হয়তো সব জানতে পেরেছিলেন বলে তাদের ভয় দেখিয়েছিলেন। তারা হয়তো টাকার লোভ দেখিয়েছিল। তিনি টাকা নিতে ক্রীড়ামঞ্চে গেলেন, ব্যস তখন ওরা তাকে গুলি করল।
নাঃ, মিস স্প্রিঙ্গার কখনও কি ঘুষ নিতে পারেন?
কেন? স্কুলের মাস্টারনী হয়ে থাকাটা কি খুব সুখের…তাও ব্যায়াম শেখানোর মাস্টারনী? তার চেয়ে যদি টাকা থাকে সেটা ভালো না।
তোমাকে চুরি করে নিয়ে যাওয়ার কথাটা তো তোমার নিছক কল্পনাও হতে পারে? ইনসপেক্টর বললো।
শাইস্তা রেগে ওঠে, আপনি কিছু জানেন না। আমার জ্যাঠতুতো দাদা হচ্ছে রামাতের রাজা শাহাজার্দা আলি ইউসুফ। তিনি বিপ্লবে মারা গেছেন। কথা ছিল আমি বড়ো হলে তার সঙ্গে আমার বিয়ে হবে। কাজেই বুঝেছেন তো আমার গুরুত্ব কতখানি। কমিউনিস্টরা ভীষণ ভীষণ পাজি। ওরা ভাবছে যে রত্নগুলো কোথায় আছে আমি জানি।
রত্ন…কিসের রত্ন?
আমার ওই দাদার কিছু রত্ন ছিলো তার বাবারও ছিল। আমাদের পরিবারে সবসময়েই বহু হীরা জহরৎ থাকতো, বিপদের জন্য–বুঝলেন? ওরা ভাবছে যে আমি জানি রত্নগুলো কোথায়, তাই ওরা আমাকে ধরে নিয়ে খবর আদায় করবে।
জানো নাকি রত্নগুলো কোথায়?
না বিপ্লবের সময় থেকে ওগুলো উধাও। হয়তো কমিউনিস্ট হতচ্ছাড়াগুলো নিয়েছে, আবার হয়তো নিতে পারেনি।
ওগুলো কার সম্পদ?
আমার জ্যাঠতুতো দাদার মৃত্যুর পর ওগুলো আমার হয়ে গেছে, তার বংশে তো আর কেউ নেই। আমার মাও মারা গেছে।
সেই ব্যবস্থাই ছিল বুঝি, বিয়ের পর ওই রত্নগুলো তোমার হতো? তুমি পেতে?
.
আলোচনা চক্র
ইনসপেক্টর কেলসি ফিরতেই থানার সার্জেন্ট জানালো অ্যাডাম গুডম্যানকে।
অ্যাডাম গুডম্যান ও…হা মালি। অ্যাডাম বললো, শুনলাম আমাকে ডেকেছেন, কর্কশ স্বরে বললো।
কেলসি বললো–হ্যাঁ, ঘরে এসো।
খুনের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না, আমাকে কেন? আমি তো বাসায় রাতে ঘুমোচ্ছিলাম। অ্যাডাম বললো ইনসপেক্টরকে যে, সে এইটা দেখাতে চায়।
অ্যাডামের সেই বেপরোয়া ভাবও নেই। মুখ গোমড়ানিও নেই। শান্ত ধীর সশ্রদ্ধ ভাব, কী একটা পকেট থেকে বের করে দেয়, কেলসি সেটা দেখে মাথা তুলে বলে…বারবার তোমাকে এখন দরকার হবে না।
অবাক হয়ে বিচক্ষণ তরুণ পুলিশই উঠে চলে যায়। কেলসি বললো, এই তবে আপনার পরিচয়?
কিন্তু বলুন তো কোন কাজকর্ম আপনি এখানে—
তারপর অ্যাডাম বললেন ইনসপেক্টরকে যে, তিনি কী ব্যাপারে মেডোব্যাঙ্কে।
আমাদের ঠিক জানা নেই যে মেডোব্যাঙ্কে কি হচ্ছে। আমার কাজ পাহারাদারি বা কাল রাত পর্যন্ত তাই ছিলো। খেলার মাস্টারনী হত্যা? স্কুলের পাঠ্যতালিকায় পড়ে না।
অ্যাডামের কাহিনী কেলসি মন দিয়ে শোনে…ইনসপেক্টর বললো, ওই মেয়েটার ওপর অবিচারই করেছি। কিন্তু এই কাহিনী চট করে বিশ্বাস করা অসম্ভব। পাঁচ থেকে দশ লক্ষ পাউন্ড মূল্যের রত্ন? কার যেন জিনিসটা বললেন? বলা ভীষণ কঠিন। এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে আপনার বাঘা বাঘা উকিলের প্রয়োজন। তিনমাস আগে রত্নগুলোর মালিক ছিল রামাতের মহামান্য শাহজা আলি ইউসুফ। রামাতে যদি রত্নগুলো পৌঁছে যায় তার মালিকানা হবে সরকারের। হয়তো আলি ইউসুফ কোনো উইল করে গেছেন। সেই উইল কোথায় করা হয়েছে সেই প্রমাণের ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করছে।