না। ওগুলোর মধ্যে চাবি ছিলো। কিন্তু তালা বন্ধ ছিল না। ভেতরের কাজ বলে মনে হচ্ছে নাকি স্যার। ওই দুজন মাস্টারনী আর জীন মেয়েটি, যার কানে ব্যথা ছিলো, এরা ছাড়া সবাই তো বিছানায় শুয়ে নাকি ঘুমাচ্ছিল। কিন্তু প্রমাণ কই। সাক্ষী কই? এমনকি মিস বুলস্ট্রোড নিজেও বাইরে আসতে পারেন। এইখানে মিস স্প্রিন্সারের সঙ্গে দেখা করে থাকতে পারেন অথবা এখানে আসতে পারেন। তারপর গুলি করা হয়ে গেলে হত্যাকারী অতি সহজেই ঝোঁপঝাড়ের মধ্যে দিয়ে চুপিসারে পাশের দরজা দিয়ে বাড়ির মধ্যে ঢুকে হল্লা ওঠবার আগেই নিশ্চিন্তে বিছানায় শুয়ে পড়তে পারে। তবে উদ্দেশ্য কী?
কেলসি ক্রীড়ামঞ্চ থেকে স্কুলবাড়ির দিকে হাঁটে। ব্রিগস তখনো একটা ফুলের জমি তৈরি করেছিলো, সে ইনসপেক্টরকে দেখেই সোজা হয়ে দাঁড়ায়। ব্রিগস বলে, হা, আজকালকার ছেলেছোকরারা কি জানে, বাগান করা চাড্ডিখানি কথা। তাদের কাছে বাগান করাও যেন আটটা পাঁচটার কাজ। কোনোদিন হয়তো কাজ দেখতেই পারবো না। আবার হয়তো ভোর সাতটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত কাজ করে যেতে হবে। মোদ্দা কথা হল বাগানে যদি পরাণ ঢেলে না দেন, এর ব্যবহার দেখে খুশী না হন তো কিছু হবে না।
কেলসি বলে, এই বাগানটা নিয়ে তুমি অহঙ্কার করতে পার হে! এত ভালো বাগান আর দেখাই যায় না।
ব্রিগস বলে, তা ঠিক। আমার কপাল ভালো একটা শক্তসমর্থ জোয়ান আমার হাতে হাতে কাজ করে দেয়। তার নাম অ্যাডাম গুডম্যান।
ইনসপেক্টর বললো, কই তাকে দেখলাম না আমি।
আজ ছুটি চেয়ে নিয়েছে কাজকর্ম ঢিলে তাই।
কিন্তু ওর কথা আমাকে জানানো উচিত ছিল। এখানে যারা কাজ করে সেই তালিকাতে ওর নাম নেই।
ওঃ তাতে কী, কাল তো আবার দেখা পাবেন। যদিও মনে হয় না আপনাকে ও কিছু বলতে পারবে। এই পর্বের শুরুতে একজন শক্তসমর্থ যুবক নিজে এসে যেচে কাজটা নিয়েছে, কেলসির মনে সন্দেহ জাগে।
যথারীতি সেই সন্ধ্যাতে মেয়েরা উপাসনার জন্য হলঘরে এল। উপাসনা শেষ হয়ে গেলে মিস বুলস্ট্রোড হাত তুলে তাদের থামতে বললেন।
তোমাদের কটি কথা বলতে চাই। জানই তো কাল রাতে মিস প্রিন্সারকে গুলি করে ক্রীড়ামঞ্চে হত্যা করা হয়েছে। তোমাদের মধ্যে কেউ গত সপ্তাহে মিস প্রিঙ্গার সম্বন্ধে এমন কিছু শুনে থাক বা দেখে থাক বা তোমাদের অস্বাভাবিক ঠেকেছে, তাহলে আমি চাই যে, সেকথা তোমরা আমাকে এখন জানাও। আজ সন্ধ্যায় যে কোনো সময়ে আমার বসার ঘরে এসে কথাগুলো বলে যেতে পার।
আইলিন রীচকে ইনসপেক্টর বললেন আপনি মেডোব্যাঙ্কে কদিন আছেন?
বছর দেড়েক হল।
আগে কখনও গণ্ডগোল হয়নি।?
আইলিন রীচ চমকে ওঠে। কোথায়, মেডোব্যাঙ্কে! না না, এই পর্বের আগে পর্যন্ত সব ঠিক ছিলো।
কেন? এই পর্বে কী হয়েছে, খুন হওয়ার কথাটা নিশ্চয়ই বলছেন না। আপনি অন্য কিছু বলতে চাইছেন?
তা কেন, না না, বোধহয় তাই কিন্তু গোটা ব্যাপারটা এমন ধোঁয়াটে-বলুন বলুন
আইলিন বলে–ইদানীং মিস বুলস্ট্রোডের মনে সুখ নেই। এই হল একটা ব্যাপার, অবশ্য আপনি সেটা বুঝতেও পারবেন না। আর শুধু তিনি একলাই যে অসুখী তা নয়। আপনি নিশ্চয়ই অন্য কোনো সংবাদের প্রত্যাশায় আছেন, তাই না? আমি যা বলছি সেটা তো মানসিকতার কথা। আইলিন বললেন যে, তার মনে হচ্ছে একটা কিছু গোঁজামিল আছে। এখানে যেন আমাদের মধ্যে এমন একজন কেউ আছেন যার স্থান এখানে নয়। অনুভূতিটা কেমন জানেন যেন মনে হচ্ছে পাখির ঝাঁকে বেড়াল এসে লুকিয়ে আছে আমাদের মধ্যে। কিন্তু বেড়ালটাকে আমরা দেখতে পাচ্ছি না।
কিন্তু রীজ কথাটা যে ভীষণ অস্পষ্ট।
.
আশ্চর্য কাহিনী
মাদমোয়াজেল অ্যাঞ্জেল ব্লাশকে দেখে পঁয়ত্রিশ বছর মনে হয়, প্রসাধন ছিল না। ঘন বাদামী চুল পরিপাটি করা, মোটা খসখসে কোর্ট আর স্কার্ট পরে আছে। বেশ ঝাঁঝালো সুরে বললেন, যে স্কুলে খুন হয় সেখানে থাকা কি পোয়! তাছাড়া বাড়িটার কোথাও কোনো গুপ্ত সংকেত ঘণ্টা নেই।
এখানে তো আর তেমন দামী জিনিসপত্র থাকে না মাদমোয়াজেল ব্লাশ, যে চোর-টোর আসবে?
কোনো মেয়ের কাছে যদি কোনো দামী জিনিস থাকেও সেটাকেও সে ব্যায়ামঘরে রাখতে যাবে কেন?
কী করে জানলেন? তাদের প্রত্যেকের জন্য একেকটা তালাবন্ধ দেরাজ আছে সেখানে জানেন না?
সে তো শুধু খেলার সরঞ্জাম রাখবার জন্য। আইনত তাই বটে, কিন্তু খেলার বুটের মধ্যে তো কেননা জিনিস রাখতে পারে। অথবা পুলোভারে বা স্কার্ফেও তোত জড়িয়ে রাখতে পারে।
কী ধরনের জিনিস মাদমোয়াজেল? খুব আদুরে বাপেরাও তো মেয়েকে জড়োয়ার হার স্কুলে নিয়ে আসতে দেবে না?
ধরুন পোকার মতো দেখতে ছোটো একটা মণি বা এমন কোনো জিনিস, তার দাম প্রচুর। এখানকার একটি মেয়ের বাবা তো পুরাতাত্ত্বিক।
আমার তো সম্ভব বলে মনে হয় না–মাদমোয়াজেল। আমি তো শুধু একটা সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছিলাম।
ইনসপেক্টর তাকে জিজ্ঞাসা করল, মিস প্রিন্সারের সঙ্গে জানাশোনা ছিল?
না ভীষণ অভদ্র ব্যবহার বলে পারতপক্ষে কথা বলতাম না। হাড়সর্বস্ব চেহারা, দাগদাগ মুখ, রুক্ষ কর্কশ সুর, যেন ইংরেজ রমণীর ব্যঙ্গ চিত্র। আমার সঙ্গে প্রায়ই বিশ্রী ব্যবহার করত।
বিশ্রী ব্যবহার করবার কারণ?
তার ক্রীড়ামঞ্চে আমাকে আসতে দিতে চাইতো না। একদিন সেখানে গিয়ে ঘুরে দেখছি, কী সুন্দর ইমারত চমৎকার সাজানো গোছানো। মিস প্রিন্সার এসে আমাকে বলে, কী করছেন এখানে, আপনার তো এখানে কোনো কাজ নেই। যে কিনা স্কুলেরই আরেকজন শিক্ষিকা–কি ভেবেছিল কি?