মানে…হা ওরকম একটা ধারণা তখন হয়েছিলো। ভেবেছিলাম হয়তো আমাদের কোনো ইতালীয় ছাত্রী। বিদেশী মেয়েরা ইংরেজ মেয়েদের তুলনায় অনেক অকালপক্ক।
মিস বুলস্ট্রোড বলেন, অত বিদেশীপনা করো না, বহু ইংরেজ ছাত্রী গোপনে গোপনে কত অযোগ্য পাত্রে মিলিত হয়। এসময় ওরকম ধারণা হওয়া স্বাভাবিক।
তারপর?
আমি ভাবলাম মিস চ্যাডউইকে ডেকে সঙ্গে নিয়ে দেখে আসি..কী ব্যাপার?
কেলসি বললো, বিশেষ করে মিস চ্যাডউইককে কেন?
মিস বুলস্ট্রোডকে অত রাতে বিরক্ত করতে চাইনি। কাজেই মিস চ্যাডউইকের কথাই মনে পড়লো। যখনই আমরা মিস বুলস্ট্রোডকে বিরক্ত করতে চাই না। তখনই আমরা মিস চ্যাডউইককে স্মরণ করি। উনি তো কতকাল এখানে আছেন, কত তার অভিজ্ঞতা। তিনি শুনেই বলেন এখুনি সেখানে আমাদের যাওয়া উচিত। কোনোমতো একটা সোয়েটার বা কোট চাপিয়ে পাশের দরজা দিয়ে বেরুলাম। রাস্তায় যেই নেমেছি কানে এল গুলির আওয়াজ। ক্রীড়ামঞ্চের দিকে শব্দটা হতেই আমরা ওদিকে ছুটলাম, হা সঙ্গে একটা টর্চও নিইনি। অন্ধকারে দু-চারবার হোঁচট খেলাম..দরজা খোলাই ছিল, আলোর বোম টিপতেই
দাঁড়া দাঁড়া সেখানে আলো ছিল না? টর্চের বা অন্য কোনো আলো?
না জায়গাটা ঘুটঘুঁটে অন্ধকার ছিল। বোতাম টিপতেই চোখে পড়লো উনি ওখানে,
উনি–ইনসপেক্টর নরম গলায় বলে, আর কোনো বিবরণ দেবার দরকার নেই। আমি এখুনি ওখানে যাচ্ছি। নিজের চোখেই দেখবো…যেতে যেতে কাউকে দেখেছিলেন? কারো দৌড়ে পালাবার শব্দ পেয়েছিলেন?
না কোনো শব্দ শুনিনি।
স্কুল দালান থেকে আর কেউ গুলির আওয়াজ পেয়েছিল? মিস বুলস্ট্রোড মাথা নাড়লেন, না। জানি না, গুলির শব্দ শুনেছি বলে কেউ আমাকে বলেনি। ক্রীড়ামঞ্চ এখান থেকে বেশ খানিকটা দূরে তাই হয়তো আওয়াজটা কেউ লক্ষ্য করেনি।
.
পাখির ঝাঁকে বেড়াল
জেনিয়া সাটক্লিফ তার মাকে লিখলো—
মামনি,
আমাদের এখানে কাল রাতে একটা খুন হয়েছে। আমাদের শরীরচর্চার দিদিমনি মিস প্রিঙ্গারকে হত্যা করা হয়েছে। মাঝরাতে ঘটনাটা ঘটেছিল, পুলিশ এসেছিল। আজ সকাল থেকে সবাইকে জেরা করছে।
মিস চ্যাডউইক কাউকে এসব কথা জানাতে মানা করে দিয়েছেন কিন্তু ভাবলাম তুমি হয়তো জানতে চাইবে।
স্নেহের–
জেনিয়া।
সমাজের উপরতলায় মেডোব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠানটির স্থান। কাজেই পুলিশের খোদকর্তা ব্যাপারটায় মনোযোগ দিলেন। মিস বুলস্ট্রোডও চুপচাপ বসে থাকেননি। যখন তদন্ত চলছিল তখনই তিনি দুটো টেলিফোন করেছিলেন। একজন একটি প্রভূত ক্ষমতাবান সংবাদপত্রের অধিকারীকে ও দ্বিতীয়টি স্বরাষ্ট্র বিভাগের সচিবকে। তারা দুজনেই মিস বুলস্ট্রোডের বন্ধু। কাজেই হত্যাকাণ্ডের সংবাদটা বিশেষ প্রচারিত হল না। ক্রীড়া শিক্ষয়িত্রীকে স্কুলের ব্যায়ামাগারে নিহত অবস্থায় পাওয়া গেছে। মৃতদেহে গুলির চিহ্ন আছে কিনা এ বিষয়ে সঠিক বলা যাচ্ছে না। যে ব্যাপারটি নিছক দুর্ঘটনা ছাড়া কিছু নয়।…প্রতিটি কাগজে খবরটা প্রকাশিত হল বেশ বিনীত ভঙ্গিতে।
সেদিন সন্ধ্যায় পুলিশের বড়কর্তা মিঃ স্টোন ও ইনসপেক্টর কেলসির সঙ্গে তিনি এক গোপন বৈঠকে বসেছিলেন। কাগজওয়ালারা যদি ব্যাপারটা নিয়ে বেশি উচ্চবাচ্চ না করে তাতে তো পুলিশেরই সুবিধা..চুপচাপ তদন্ত চালিয়ে যাওয়া যাবে।
পুলিশের প্রধান বলেন, সত্যিই আমি ভয়ানক দুঃখিত মিস বুলস্ট্রোড, বুঝি তো এই ঘটনা আপনার জন্য কতরকম সমস্যা নিয়ে আসতে পারে। মিস বুলস্ট্রোড বললেন, কোনো স্কুলে যদি খুন হয় সমস্যা আসবেই। তা নিয়ে ভেবে কি লাভ, আগেও আমরা বহু সমস্যা কাটিয়ে উঠেছি, এটাও কাটিয়ে উঠবো।…আমি আশা করছি যে আপনারা শীঘ্রই এর একটা কিনারা করবেন।
পুলিশ সাহেব বললেন, স্কুলবাড়ি খানাতল্লাশি করতে কি আপনার আপত্তি আছে?
মিস বলুস্ট্রোড বললেন, কিছুমাত্র নয়, আপনারা বোধহয় অস্ত্রটা খুঁজছেন?
হা বিদেশী পিস্তল। আপনি কি জানেন আপনার কোনো কর্মী বা ছাত্রীর কাছে কি পিস্তল আছে?
না, অন্তত আমার জানা নেই, ছাত্রীদের কাছে যে নেই-ই সে বিষয়ে আমি নিঃসন্দেহ। কারণ তারা এলে তাদের জিনিসপত্র খুলে গুছিয়ে রাখা হয়। পিস্তল থাকলে তো কেউ না কেউ দেখতোই। তবে ইনসপেক্টর আপনি যা ভালো বোঝেন করুন। আপনার লোকজন তো মাঠে ময়দানে তল্লাশি শুরু করেই দিয়েছে।
হ্যাঁ, এখানকার প্রত্যেক কর্মীদের আমি জেরা করতে চাই, হয়তো এমন কেউ আছেন যিনি মিস স্প্রিঙ্গারের এমন কোনো উক্তি শুনেছেন যা আমাদের অনুসন্ধানে সাহায্য করতে পারে।
আমি ভাবছি আজ সন্ধ্যায় উপাসনার পর মেয়েদের সামনে ছোট্ট একটা ভাষণ রাখবে। তাদের কেউ যদি মিস স্প্রিঙ্গারের এমন কোনো কথা জানে যেন আমার কাছ এসে সেকথা বলে।
পুলিশের কর্তাটি বললেন, বাঃ সুন্দর পরিকল্পনা।
মিস বুলস্ট্রোড বললেন, কিন্তু মনে রাখবেন কোনো মেয়ে অতিরঞ্জিত করবেই। হয়তো কল্পিত ঘটনাই ফেঁদে বসবে যাতে নিজের গুরুত্ব বেড়ে যায়। জানেন তো মেয়েরা বড়ো অদ্ভুত চরিত্র। আপনারা নিশ্চয়ই এধরনের অনেক প্রচেষ্টাই দেখেছেন।
খেলার ঘরে দেরাজগুলো খুঁজে দেখেছি স্যার।
কিছু পেলে?
আজ্ঞে না, তেমন কিছু না। কিছু মজার জিনিস দেখেছি বটে। কিন্তু আমাদের প্রয়োজন নয়। কোনোটা তালা বন্ধ ছিল?