মিসেস অলিভেরা বললেন–ধন্যবাদ, আমি নিশ্চিন্ত হলাম মি. সেলবি, আর একটা কথা, সপ্তাহের শেষে আমরাই কি কেবল ক্রমহ্যামে যাব নাকি আর…..।
মি. সেলবি শান্ত স্বরে বললেন–হা, মিসেস অলিভেরা, আপনার অনুমানই ঠিক। আমাদের সঙ্গে মি. পোয়ারোও যাচ্ছেন।
-সত্যি?
পোয়ারো হাসি মুখে বললেন মি. ব্লাস্টের মতো মানুষের আমন্ত্রণ আমি উপেক্ষা করতে পারি না। তাই তাঁর আমন্ত্রণ সাদরে গ্রহণ করলাম।
মিসেস অলিভেরা ক্ষুব্ধ স্বরে বললেন–মানে, আলিস্টেয়ার আমাকে বলেছিলেন সপ্তাহটা আমাদের সঙ্গেই কাটাবেন। অন্য কোনো অতিথি সেখানে থাকবে না।
মি. সেলবি গলায় দৃঢ়তা এনে বললেন–মাপ করবেন, মিসেস অলিভেরা, মি. পোয়ারোর সঙ্গে মি. ব্লাস্টের জরুরি আলোচনা আছে। তাই তিনি তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
–তাহলে উনি আমাকে কথাটা জানাননি কেন?
এমন সময় সেখানে হাজির হল মিস জেন অলিভেরা। সে তার মাকে বলল–গলার স্বরে বিরক্তির প্রকাশ।, তুমি এখনও রেডি হওনি। মধ্যাহ্নভোজের সময় হয়ে গেছে।
আর একটু অপেক্ষা করো জেন, আসছি। হঠাৎ দেখতে পাওয়ার ভান করে পোয়ারোকে বলল–ওহ মঁসিয়ে পোয়ারো, আপনি কখন এলেন?
মিসেস অলিভেরা তিক্ত স্বরে বললেন–মসিয়ো পোয়ারো, সপ্তাহের শেষ কাটাতে যাচ্ছেন আমাদের সঙ্গে ক্রমহ্যামে।–
ওহ, বেশ মজা হবে। মিসেস অলিভেরা চলে গেলেন। এবার জেন পোয়ারোর সামনে একটু এগিয়ে এল। খুব নিচু গলায় বলল, কেউ যাতে শুনতে না পায়–মঁসিয়ে পোয়ারো, সত্যি আপনি ক্রমহ্যামে আসছেন? কিন্তু কেন? ‘
কাঁধ ঝাঁকিয়ে পোয়ারো বললেন–এটা আপনার কাকার সিদ্ধান্ত, মিস অলিভেরা।
জেন অসহিষ্ণু হয়ে বলল–তিনি কখন বলেছেন আপনাকে? কাকা তো কিছুই জানেন না–সম্ভবত না জানার কথা। আপনার সেখানে কি প্রয়োজন?
জেনের মা হলঘর থেকে চিৎকার করে ডাকলেন–জেন, একটা বাজে, দেরি হয়ে যাবে চলে এসো।
জেন চলে যেতে যেতে হিস হিস করে বলে গেল প্লীজ, আপনি আসবেন না।
জেন চলে যেতে পোয়ারো মিসেস অলিভেরার চীৎকার শুনতে পেলেন। তিনি উচ্চস্বরে বলছেন, জেন, তুমি ভীষণ অবাধ্য হয়েছ। আমাকে একটা কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে আমার কথার বিরুদ্ধাচরণ না করো।
তরুণ সেক্রেটারি মি. সেলবি বলে উঠলেন–তাহলে মঁসিয়ে পোয়ারো, আগামীকাল ঠিক পৌনে ছ’টার সময়। ভুলবেন না যেন।
পোয়ারো পাথরের মতো দাঁড়িয়েছিলেন। কোনোরকমে জবাব দিলেন অবশ্যই।
মুহূর্ত কয়েক আগে তাঁর কানে যে কথাগুলো এল সেই কণ্ঠস্বরের সঙ্গে গতরাত্রে টেলিফোনে শোনা কণ্ঠস্বরের মিল খুঁজতে চাইছিলেন তিনি। তাই গতকাল গলাটা তার চেনা বলে মনে হয়েছিল।
তিনি গথিক হাউস থেকে বাইরে বেরিয়ে এলেন।
পথ চলতে চলতে ভাবছেন, তাহলে মিসেস অলিভেরা টেলিফোনে ভয় দেখাচ্ছেন? কি করে সম্ভব? স্বার্থপর, বুদ্ধিহীনা, যুক্তির ধার ধারেন না, আত্মগরিমায় বিভোর, মুরগির মতো নাদুসনুদুস মহিলার পক্ষে এমনটা করা অসম্ভব। তিনি মনে মনে হাসলেন, ভাবলেন তার কানই তাঁর সঙ্গে বিট্রে করেছে।
সকাল পৌনে ছ’টায় একটা রোলস গাড়ি এসে দাঁড়ালো এরকুল পোয়ারোর বাড়ির সামনে। গাড়িতে দুজন আরোহী। একজন গাড়ির মালিক অ্যালিস্টোর ব্লাস্ট, অন্যজন তার সেক্রেটারি মি. সেলবি।
পোয়ারো গাড়িতে উঠে বসলেন। গাড়ি চলতে শুরু করল। ব্লাস্ট তাঁর বাগান ও পুষ্প প্রদর্শনী নিয়ে কিছু কথা বললেন।
পোয়ারো বললেন–অভিনন্দন মি. ব্লাস্ট। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসতে পেরেছেন বলে সত্যিই আনন্দিত হয়েছি।
মি. ব্লাস্ট পোয়ারোর কথা শুনতে পেলেন না। তিনি বলে চললেন–সেদিন ছেলেটি আমাকে মারার চেষ্টা করেনি। ও চেয়েছিল প্রধানমন্ত্রীকে গুলি করতে। একাজে ছেলেটির কোনো অভিজ্ঞতা নেই। পেশাদার খুনি নয় সে। তাই প্রধানমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি ছোঁড়ে সে। বেচারা টিপ কিভাবে করতে হয় তাই জানে না। ভেবেছিল প্রধানমন্ত্রীকে সরিয়ে দিলেই অর্থনীতির পালাবদল ঘটবে। মূর্খ সব।
এরকুল পোয়ারো বিমর্ষ সুরে বললেন আপনার জীবনের ওপর দিয়েও এরকম কতবার বিপদ গেছে, তাই না?
মি. ব্লাস্ট হেসে বললেন–এতে ওরা আমায় দমিয়ে দিতে পারেনি। অনেকদিন আগে একবার কে বা কারা ডাকে বোমা পাঠিয়েছিল। আমাকে মারার জন্য। কিন্তু সেই বোমা ছিল নিষ্ক্রিয়। তাই আমার কোনো ক্ষতি ওরা করতে পারেনি। যারা বিশ্বের কর্তৃত্ব হাতের মুঠোয় নিতে চাইছে তারা কিভাবে একটি বোমাকে কার্যকরী করতে হয় সেটাই জানে না। এতটাই মূর্খ তারা, ভাবুন একবার?
পোয়ারো মাথা ঝাঁকালেন।
মি. ব্লাস্ট আবার বলতে শুরু করলেন, আমি উচ্চ পদাধিকারী হলেও চালাক চতুর নই। চিরকালই সরল সাধারণ বুদ্ধিতে চলি। তবে অঙ্ক ও ইংরাজিতে আমার অসাধারণ জ্ঞান আছে। ইংরাজি কোনো লেখা যদি আমি পড়ি তার অর্থ সহজেই বুঝতে পারি। একটু হেসে বললেন, ছাড়ন ওসব কথা, তবে আমি বড় বড় কথা বলতে পছন্দ করি না। নিজের প্রশংসা নিজেই করা খুব খারাপ অভ্যেস। কাজের সব ব্যাপার আমি অফিসেই রেখে আসি। বেড়াতে বেরিয়ে ওসব কথা আলোচনা করে বেড়ানোর মজাটা নষ্ট করার পক্ষপাতী আমি নই। অনেক দিন ধরে আপনার রোমাঞ্চকর কাহিনি শোনার জন্যে আমি অপেক্ষা করে আছি। আমি অনেক রহস্য কাহিনি ও থ্রিলার পড়েছি। মঁসিয়ে পোয়ারো, আপনি কি বিশ্বাস করেন বাস্তব জীবনেও এরকম ঘটনা ঘটতে পারে?