- বইয়ের নামঃ ওয়ান টু বাকল মাই স্যু
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- প্রকাশনাঃ সমতট
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর, গোয়েন্দা কাহিনী
ওয়ান টু বাকল মাই স্যু
০১. এক দুই বকলস ছুঁই
হেনরি মর্লের মেজাজ সকাল থেকেই সপ্তমে চড়ে আছে। তার বহিঃপ্রকাশ ঘটল প্রাতরাশের টেবিলে। বেকনে কামড় দিতেই তাঁর মুখটা বিস্বাদে ভরে গেল। মনে হচ্ছিল তিনি যেন খানিকটা কাদার ডেলা খেয়ে ফেলেছেন। কড়াইশুটি সেদ্ধ নিয়েও দিদি জর্জিনার ওপর একটু রাগ দেখালেন।
জর্জিনা ভাইয়ের দিকে তাকালেন। শান্তভাবে জিজ্ঞাসা করলেন–কি হয়েছে এত রাগ করছ কেন? স্নানের জল কি ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল?
মি. মর্লে বিরক্তভাবে বলল–না, জল গরম ছিল।
দিদি ও ভাইয়ের মধ্যে বিস্তর ফারাক, যেমন শারীরিক গঠনে তেমনি স্বভাবে। ভাই বাঁকানো চিবুক খর্বাকৃতির মানুষ। সবসময় তিরিক্ষি মেজাজে থাকেন আর বোন মিস মর্লে দীর্ঘকায়, শান্ত মিষ্টি স্বভাবের। ভাইবোন ছাড়া এদের আর কোনো আত্মীয়-পরিজন নেই। বোন জর্জিনা ভাইয়ের দেখাশোনা করতেন।
মি. মর্লে এবার সংবাদপত্রের পাতায় চোখ রাখলেন একটি খবরের দুলাইন পড়েই তিনি মন্তব্য করলেন–সরকারি অপদার্থতা এবার চরমে উঠেছে।
ভাইয়ের কথা মিস মর্লের কানে গেল। তিনি বললেন–ভীষণ লজ্জার ব্যাপার। তিনি বিশ্বাস করতেন, যে সরকার গঠন করবে সেই-ই কাজ করবে। তাই ভাইয়ের মন্তব্য তার পাগলের প্রলাপ বলে মনে হল। তিনি জানতে চাইলেন, সরকারি নীতির ওপর আস্থা হারানোর কারণ কি?
মি. মর্লে দিদিকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বললেন। তেঁতো ওষুধ খাওয়ার মতো আর এক কাপ কফি গিলে ফেললেন এক চুমুকে। এবার রাগের আসল কারণটা বললেন–আজকালকার মেয়েরা সব আত্মকেন্দ্রিক। ওদের বিশ্বাস করা যায় না।
মিস মর্লে হেসে বললেন–কাকে বিশ্বাস করতে পারছ না? গ্ল্যাডিসকে?
মি. মর্লে মনের ক্ষোভ আর চেপে রাখতে পারলেন না। তিনি বললেন–গ্ল্যাডিস খবর পাঠিয়েছে সে সমারসেটে গেছে তার অসুস্থ দিদিমাকে দেখতে। তাই সে আজ চেম্বারে আসতে পারবে না। এক মুহূর্ত থেমে আবার বলতে লাগলেন–কথাটা সত্যি বলছ, দিদিমা অসুস্থ জানতে পারলো কার কাছে, যে ছেলেটা আমার চেম্বারে কাজ করে তার সঙ্গে ওর খুব ভাব। ওরা দু’জনে ষড়যন্ত্র করে এমন একটা গল্প তৈরি করেছে। দুজনে কোথাও বেড়াতে গিয়ে সারাটা দিন কাটাবার জন্যে এই ফন্দি করেছে। ছেলেটাকে প্রথম থেকেই আমার খুব সুবিধার বলে মনে হয়নি। ভীষণ বাঁচাল ও ধড়িবাজ। সবসময় গ্ল্যাডিসের পেছনে ঘুর ঘুর করে।
না না, এটা তোমার ভুল ধারণা, গ্ল্যাডিস খুব কাজের মেয়ে, মিস মর্লে বললেন।
ঠিক বলেছ তুমি জর্জিনা–তবে ওই ছেলেটাই যত নষ্টের গোড়া, ও কাজে যোগ দেওয়ার পর থেকে গ্ল্যাডিস পাল্টে গেছে। কাজে একেবারে মন নেই, সব কিছুতে ভুল করছে।
মিস মর্লে স্মিত হেসে বললেন–রাগ কোরো না, মেয়েরা প্রেমে পড়লে এরকমই হয়।
হেনরি মর্লে ধৈর্য হারিয়ে চিৎকার করে বললেন–তবু আমি বলব ও আমার সেক্রেটারি, এটা ওর মনে রাখা উচিত। কাজে অবহেলা করা ঠিক নয়। বিশেষত আমাদের দিনটা ও জানে আমার প্রচুর কাজ। আজ অনেক রোগী দেখার কথা। আজকে কাজে না এসে গ্ল্যাডিস ভারী অন্যায় করেছে।
মিস মর্লে ভাইকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল–ঠিক কথাটা বলেছো, হেনরি। নতুন ছেলেটা কি কোনো কাজ করছে না?
অসন্তোষের ভঙ্গিতে মি. মর্লে বললেন–অসহ্য কিছু পারে না। সকলের সঙ্গে যাচ্ছে তাই ব্যবহার করে, এমনকি নামগুলি ভালো ভাবে উচ্চারণ করতেও পারে না। ভাবছি অন্য একজনকে রাখব। বুঝতে পারছো জর্জিনা, শিক্ষার কত অবনতি হয়েছে। শিক্ষিত ভদ্র জটিল হওয়ার পরিবর্তে মুখ তৈরি হচ্ছে।
ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই হেনরি চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে উঠলেন, বললেন না, আর বসা হবে না, অনেক দেরি হয়ে গেছে। আজ সারাদিন খুব ব্যস্ত থাকতে হবে। একটুও অবসর পাবো না। সে সময় বারির সীল নামে এক মহিলা কিছুদিন আগে এসেছিলেন আমার চেম্বারে। তার দাঁতটা তাঁকে খুব ভোগাচ্ছে। এখনও কমেনি। একবার ড. রেইলিকে দেখিয়ে নিতে বললাম, কিন্তু তাতে তিনি রাজি নন।
মিস মর্লে বললেন–কেন তাঁর কাছে যাবে? তুমি কি পারবে না, হেনরি?
আরে না না, সেটা নয়, ড. রেইলি এ বিষয়ে খুব নাম করেছেন। অভিজ্ঞ ডাক্তার। প্রথম শ্রেণির ডিগ্রি আছে তাঁর। ডাক্তার হিসাবে তার হাতযশ আছে হেনরি বললেন।
জর্জিনা গম্ভীর ভাবে বললেন–হতে পারে রেইলি খুব বড় ডাক্তার, তবুও পেশেন্ট দেখার সময় তার হাত কাঁপে। তাছাড়া তিনি সর্বদা মদ গিলে থাকেন।
মি. মর্লে সশব্দে হেসে বললেন–আর একটা স্যান্ড উইচ হবে। আমার আসতে আসতে দেড়টা বেজে যাবে। ভাইয়ের কথার ধরন দেখে দিদি বুঝতে পারলেন যে তার মেজাজ ঠান্ডা হয়েছে।
দক্ষিণ কেনসিংটনের গ্লেনগাউরি কোর্ট হোটেল। এখানে ডাইনিং রুমে পাশাপাশি বসে আছেন মিস সেইনবারি সীল ও মিসেস বোলিথো, তাদের দুজনের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব। তাঁরা প্রাতরাশ শেষ করে গল্প করছিলেন।
মিস সীল হালকা হাসি ছড়িয়ে বললেন–জানো তো বোলিথো, আমার ব্যথাটা একেবারে কমে গেছে। ভাবছি ডঃ মর্লেকে টেলিফোন করে জানিয়ে দেবো।
মিসেস বোলিথো গম্ভীর কণ্ঠে বললেন–না, না, এমন বোকামি করো না। ডাক্তারকে বলে দাঁতটা তুলেই ফেলল।