পোয়ারো তীব্র স্বরে বললেন–অবশ্যই। আমি নিশ্চিত লক্ষ্যে পৌঁছতে চাইছি।
মিস জর্জিনা মর্লে ভাইয়ের মৃত্যুর পর তাঁর গ্রাম হার্টকোর্ডে ফিরে যান। সেখানে তার একটি ছোট্ট কুঁড়ে আছে।
একদিন এরকুল পোয়ারো তাঁর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন। তিনি পোয়ারোকে খুশি মনে স্বাগত জানালেন। তার চেহারার মধ্যে রুক্ষতা ফুটে উঠেছে। আগের থেকে তিনি আরও কঠিন হয়েছেন। জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা জেগেছে তাঁর। ভাইয়ের পেশাদারি জীবনে কলঙ্ক লাগায় তিনি খুবই দুঃখ পেয়েছেন।
তিনি বিশ্বাস করেন বিচারকের রায় অসত্য। তিনি এও মনে করেন পোয়ারোও এই বিচারের রায়ে খুশি হননি। তাই তিনি পোয়ারোর প্রতিটি প্রশ্নের জবাব দিলেন হাসি মুখে। পোয়ারো প্রশ্ন করলেন মি. মর্লের কাগজপত্র কি আপনার কাছে আছে?
না, ওগুলো সব গ্ল্যাডিসের হেফাজতে আছে। সে যত্ন করে সেগুলি গুছিয়ে রেখেছে।
–মি. মর্লের রোগীদের খরব রাখেন?
না, তেমনভাবে না, গোড়াতে শুনেছিলাম কিছু রোগী মি. রেইলিকে দেখান। আবার কেউ কেউ অন্য ডাক্তারের কাছে গিয়েছেন।
আপনি নিশ্চয় জানেন, মিস সেইনসবারি সীল কিছুদিন ধরে নিরুদ্দেশ। তার খোঁজ আমরা পেয়েছি।
–শেষ পর্যন্ত তাকে খুঁজে বের করলেন আপনারা। সে এখন কি অবস্থায় আছে?
–তাকে খুন করা হয়েছে?
–তাকেও খুন করা হয়েছে! তাকেও কথাটার ওপর বেশ জোর দিলেন তিনি। পোয়ারো বললেন মি. মর্লে তার কথা আলাদাভাবে কিছু বলেছে আপনাকে?
আমি মনে করতে পারছি না। নিশ্চয় সে শান্তশিষ্ট ভদ্র রোগী ছিল, তা না-হলে আমায় বলত।-আচ্ছা, আপনার কি মনে আছে, মি. মর্লের মুখে চ্যাপম্যান নামে কোনো রোগীর কথা শুনেছেন?–চ্যাপম্যান? না, না, এমন নাম তার কাছে কখনো শুনিনি। এ বিষয়ে আপনি গ্ল্যাডিসকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। হয়তো ও আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
তার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে আমার আছে। তাকে এখন কোথায় পাব?–সে একটা চাকরি জোগাড় করেছে। র্যামসগেটে এক দন্তচিকিৎসকের চেম্বারে।
ফ্র্যাঙ্ক কার্টারের সঙ্গে তার বিয়ে হয়ে গেছে?
–না, আমার মনে হয় না সে তাকে কোনোদিন বিয়ে করবে। ওই ছোকরাকে কেউ পছন্দ করে না। একটা লম্পট। ও ন্যায়নীতির ধার ধারে না। ও নিশ্চয় কোনো দুষ্ট চক্রের হাতে পড়েছে।
–আপনি কি ভাবছেন সে আপনার ভাইকে গুলি করেছে?
মিস মর্লে তিক্ত স্বরে বললেন আমার ভাইয়ের ওপর একাজ করলেও করতে পারে। তবে এটা আসল কারণ নয়। হেনরি ওদের আসল কারণ নয়। হেনরি ওদের মধ্যে বিচ্ছেদ চাইলেও গ্ল্যাডিস ওকে ভীষণ ভালোবাসত। ফ্র্যাঙ্ককে কেউ প্ররোচিত করতে পারে। অথবা মোটা অঙ্কের টাকা পাবার লোভ দেখাতে পারে?
টাকার লোভ? তার মানে আপনি বলছেন ঘুষ নিয়ে ফ্র্যাঙ্ক আমার ভাইকে খুন করেছে? অবাস্তব চিন্তা-ধারা! ও একাজ করতে পারে না। এমন সময় সুন্দরী একটি মেয়ে ঘরে এসে ঢুকল। তার হাতে একটি ট্রে, সে ট্রে নামিয়ে দরজা বন্ধ করে চলে গেল। পোয়ারো জানতে চাইলেন, এই মেয়েটিকে আপনার লন্ডনের বাড়িতে দেখেছি মনে হয়?
হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। ও অ্যাগনেস। আমার কাছেই থাকে। আমার সব কাজ করে, খুব ভালো রাঁধুনি। তাই আসার সময় সঙ্গে এনেছি।
পোয়ারো মাথা নাড়লেন। তখন তার মানসপটে ভেসে উঠেছে মি. মর্লের ৫৮ কুইন শার্লট স্ট্রিটের বাড়ির ছবি। দুই ভাই-বোন দোতলায় বাস করনে। একতলার ঘরগুলি বন্ধ থাকত। বাড়িতে ঢোকার একমাত্র পথে পাহারায় থাকত অ্যালফ্রেড। তাই তার অলক্ষ্যে ওই বাড়িতে প্রবেশ করা কারো পক্ষে সম্ভব ছিল না।
রাঁধুনি ও পরিচারিকা বহুদিনের পুরোনো কাজের লোক। এবং বিশ্বস্তও বটে। তারা পুলিশের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সাহায্য করেছে। কোনোরকম বিরক্ত বোধ করেনি।
পোয়ারো বিদায় নিয়ে ঘরের বাইরে এলেন। অ্যাগনেস পোয়ারোর টুপি ও ছড়ি এগিয়ে দিল। সে ভীত সন্ত্রস্ত ভঙ্গীতে জানতে চাইল, স্যার, কর্তার মৃত্যুর কারণ জানতে পেরেছেন?
পোয়ারো তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,নতুন কিছু জানা যায়নি।
কর্তা তাহলে ভুল করে ওষুধ দিয়েছিলেন। এবং তার গুরুত্ব বুঝতে পেরে নিজেই গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন, তাই না, স্যার?
–হ্যাঁ। এসব জেনে তোমার কি লাভ হবে?
অ্যাগনেস নিচু স্বরে বলল–আমার কত্ৰী এই যুক্তি মানতে রাজি নন। পোয়ারো উদগ্রীব হয়ে বললেন–তোমারও একমত?–আমি! না, না, আমি আর কি বলব। আমি শুধু নিশ্চিন্ত হতে চাইছিলাম। এরকুল পোয়ারো শান্ত স্বরে বললেন–আত্মহত্যা শুনলে তুমি কি চিন্তামুক্ত হতে? অ্যাগনেস চটপট উত্তর দিল–হ্যাঁ, স্যার।
এরকুল পোয়ারো ওর চোখে চোখ রাখলেন। দেখলেন, চোখ দুটো আনন্দে চিক চিক করছে। এরকুল পোয়ারো আর প্রশ্ন না করে রাস্তায় নেমে এলেন। হাঁটতে হাঁটতে তিনি ভাবলেন, অ্যাগনেসের করা ওই প্রশ্নের আড়ালে কোনো গুঢ়ই তথ্য আছে কি? তিনি নিশ্চিত, এই প্রশ্নের একটা উত্তর আছে। তবে সেটা সম্পর্কে তিনি ওয়াকিবহাল নন। তবে এটা ভেবে তিনি আশ্বস্ত হলেন যে মি. মর্লের খুনের একটা ধাপ এগোতে পেরেছেন।
পোয়ারো বাড়ি ফিরে এলেন। তার জন্য চমক অপেক্ষায় আছে, যা তিনি কল্পনাও করেননি। তিনি দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকলেন। দেখতে পেলেন বিরল কেশ ছোটোখাটো চেহারার এক ভদ্রলোককে। তার সঙ্গে পোয়োজরার আগেই আলাপ হয়েছিল। তিনি হলেন মি. বার্নেস। বার্নেসও পোয়ারোকে দেখে সসম্ভ্রমে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। তার চোখে মিষ্টি হাসির ইশারা। তিনি বললেন–মঁসিয়ে পোয়ারো, আপনি আমার বাড়ি গিয়েছিলেন তাই আমি কৃতজ্ঞতাবশত এসেছি।