হ্যারি লিডিয়ার বুদ্ধিদীপ্ত মুখটা ভালো করে দেখে নিয়ে বলল-লিডিয়া তুমি ভালো আছো তো?
লিডিয়াও তাকে ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। সে চিন্তা করে দেখল-রুক্ষ স্বভাবের মনে হল তাকে। যদিও সে শ্যামবর্ণীয়, তবু তাকে আমি অবিশ্বাস করব।
এ ব্যাপারে আমার কোনো ধারণাই নেই। যদি না তুমি তাকে দেখলে তার ভেতর কোনো পরিবর্তন দেখতে পাবে কী না।
–আর সব ভায়েরা ইংল্যাণ্ড শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
–না তারা সকলে খ্রীস্টমাসের জন্য এখানে এসে উপস্থিত হয়েছে।
হ্যারি স্তম্ভিত হয়ে গেল। তার মানে এটা একটা পারিবারিক মিলনের ব্যবস্থা। তা ঐ বুড়ো লোকটির সংবাদ কী? আগে তো তিনি মানুষের অনুভূতির মর্যাদা দেননি, এরকম ভাবে কারো জন্য তিনি মাথা ঘামাননি। এখন নিশ্চয়ই ওনার অনেক পরিবর্তন ঘটেছে।
-লিডিয়া বলে–তাই তো মনে হয়।
পিলার চোখ দুটো বড় বড় করে আশ্চর্য হয়ে চেয়ে রইল।
জর্জের খবর কী? পকেট থেকে আধ পেনি বের করতে হলে এখানো কী আগের মতো হৈ চৈ করে?
লিডিয়া উত্তরে বলে–জর্জ এখন পার্লামেন্টের সদস্য–ওয়েস্টারিংহ্যামের।
–কি বললে? ঐ পাজীটা এখন পার্লামেন্টের সদস্য। ঈশ্বর ওকে ক্ষমা করুন। হ্যারি শব্দ করে হেসে উঠল।
একটা সময় তার হাসি থেমে গেল। আর কারো পদশব্দ শুনতে পায়নি সে।…
অ্যালফ্রেড কখন যে চুপ করে তার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে তা সে টেরও পায়নি। সে শুধু শান্ত হয়ে হ্যারিকে দেখছিল।
হ্যারি মিনিট কয়েক দাঁড়িয়ে থাকার পর এক-পা তার দিকে এগিয়ে গেল। তার ঠোঁটে একটুকরো হাসি ফুটে উঠল। সে বলল–কেন তুমি অ্যালফ্রেড নও?
অ্যালফ্রেড মাথা নেড়ে বলল–হ্যালো হ্যারি।
তারা একে অপরের দিকে চেয়ে রইল। লিডিয়া জোরে নিঃশ্বাস নিল। কী অবাস্তব ঘটনা। দুটো কুকুরের মতো, তারা একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে।
পিলারের চোখ দুটো আরো বড় বড় হল। সে নিজের মনে চিন্তা করল, তারা ওরকম ভাবে একে অপরের দিকে চেয়ে না থেকে কেন দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরছে না? ইংরেজরা অবশ্য তা করে না। কিন্তু তারা তো বলতে পারে, তবে কেন কেবল একে অপরের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে?
শেষকালে হ্যারিই মুখ খুলল,–অনেকদিন পর আবার বেশ আনন্দ পেলাম।
-আমারও তাই মনে হয়। বহু বছর তুমি বাইরে ছিলে।
হ্যারি এমন ভাবে চোয়ালে আঙুল ঠেকাল যে তাকে দেখে মনে হল সে যেন যুদ্ধের জন্য তৈরী। সে বলল–হ্যাঁ, আমি আমার বাড়িতে ফিরে এসে খুব খুশী।
সাইমন লী বলে ওঠেন–আমার খালি মনে হয় আমি খুব বাজে লোক ছিলাম। তিনি চেয়ারের উপর হেলান দিয়ে বসলেন। তার পাশে বসেছিলেন নাতনী পিলার।
মনে হয় তিনি মেয়েটি ছাড়া নিজের সাথে আরো কথা বলতে চাইছেন। কিন্তু কী ভেবে আবার চুপ করে গেলেন।
তিনি বলেন–আচ্ছা, আমি যে খুব বাজে লোক ছিলাম, সে সম্বন্ধে তোমার মতামত কী পিলার?
পিলার কাঁধ নাচিয়ে বলল–সবমানুষই খারাপ। একথা নানেরা বলেন। তাই জন্য তাদের সবার জন্য আমার প্রার্থনা করা উচিত।
সাইমন হেসে বলেন–কিন্তু আমি যে সবার থেকে খারাপ কাজ করে এসেছি। তার জন্য আমার এতটুকু অনুশোচনা হয় না। একেবারেই তা হয় না। আমি প্রতিটা মিনিট নিজে উপভোগ করছি। সবাই বলে বয়স হলে তোমার অনুশোচনা হবে। ওসব শুধু আমাকে দেওয়া সান্ত্বনা। আমার অনুশোচনা হয় না। আমি অনেক ভালো ভালো পাপ করেছি। আমি চুরি করা, লোক ঠকানো, মিথ্যা বলা..কী না করেছি আমি।…হা ঈশ্বর। এছাড়া, সর্বদা মেয়েদের সঙ্গও আমার ভালো লাগত। একদিন একজন আমাকে একটা কথা বলেছিল। একজন আরব চীফের চল্লিশটা ছেলে ছিল তার দেহরক্ষী, সবকটাই প্রায় এক বয়সের। আহা! চল্লিশটার ব্যাপার যদিও আমি কিছু জানি না তবুও আমি হলফ করে বলতে পারি যদি আমি বাচ্চার কথা ভাবতাম তাহলে খুব সহজেই বেশ কিছু দেহরক্ষী জন্ম দিতে পারতাম। পিলার তুমি নিশ্চয়ই অন্য কিছু ভাবছ? তুমি কী আঘাত পেলে?
-না, আমি কেন আঘাত পেতে যাবো, সব পুরুষরাই সবসময়েই মেয়েদের কামনা করে। আমার পিতাও সেই কারণে সেইরকমই ছিলেন। আর সেইজন্যই তাদের স্ত্রীরা কখনই সুখী হয় না। এবং তার জন্যই চার্চে গিয়ে প্রার্থনা জানায়।
বৃদ্ধ সাইমন ভ্রু কুঁচকিয়ে বলে–আমি এডেলডাকে সুখী করিনি। তিনি নিজের কাছে কৈফিয়ত দেওয়ার মত বলল, হায় ঈশ্বর মেয়েছেলে জাতটা যেন কেমন। এডেলডাকে যখন আমি বিবাহ করি তখন সে হাসিখুশীতে ভরা ছিল। কিন্তু বিবাহের পর সে সম্পূর্ণ বদলে গেল। সর্বক্ষণ সে খালি কাদত। এখানেই এডেলডার দুর্বলতা সে যদি একবার আমার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করত। কিন্তু কোনোদিন একবারের জন্যও সে তা করেনি। আমার বিশ্বাস আমি তাকে বিয়ে করে স্থিতি হতেই চেয়েছিলাম। মনে আশা ছিল–একটা সুখী পরিবার গড়ে তুলব এবং আমার পুরোনো জীবন পরিত্যাগ করব।
তার কণ্ঠস্বর বন্ধ হয়ে এল। তিনি তার বুকের আগুনের দিকে চেয়ে রইলেন।
–ঈশ্বর যে সুখী পরিবার গড়ে তুলতে চেয়েছিলাম সেটা কেমন পরিবার? বলে সে দুঃখের হাসি হেসে উঠল।
-আমার ছেলেদের দিকে তাকিয়ে দেখ তাদের একটাও মানুষ হয়নি। কেন? তারা কী ধমণীতে রক্তের স্বাদ পায়নি? তারা বৈধ না অবৈধ জানি না। যেমন প্রথমেই ধরা যাক অ্যালফ্রেডের কথা। অ্যালফ্রেডের সঙ্গ আমার কাছে একঘেঁয়ে এবং ভয়ঙ্কর লেগেছে। সে তার কুকুরের চোখ দিয়ে আমার দিকে চেয়ে থাকে। আমি তাকে যে কাজই বলি না কেন ও ঠিকই করে দেবে। হায় ঈশ্বর কী বোকা সে। ডেভিড অবশ্য সবসময়ই বোকা ছিল। স্বপ্নে পাওয়া মানুষের মতো। ও আসলে ঠিক ওর মায়ের মতো ছিল। সে তার জীবনে একটাই ভালো কাজ করেছে। সুন্দরী একটি মেয়েকে বিবাহ করেছে। তিনি চোয়াল থেকে হাতটা নামিয়ে চেয়ারের উপর রাখলেন। হ্যারি অবশ্য এদের থেকে আলাদা এবং সবচেয়ে বুদ্ধিমান ছেলে। সে যে এখন জীবিত আছে সেটা খুবই আনন্দের।