- বইয়ের নামঃ ভূতুড়ে সুড়ঙ্গ
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প
ভূতুড়ে সুড়ঙ্গ
০১.
গোধূলি বেলায় উপত্যকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়লো অদ্ভুত গোঙানি!
ওই, ফিসফিস করে বললো মুসা আমান। শুরু হলো আবার!
হারভে র্যাঞ্চের কাছে একটা উঁচু শৈলশিরার ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে আছে তিন গোয়েন্দা। কয়েক শো ফুট দূরে প্রশান্ত মহাসাগরের তটরেখা।
আবার শোনা গেল গোঙানি। যেন কোনো দানবের দীর্ঘশ্বাস, লম্বিত, কাঁপা, ভয়াল।
ঠাণ্ডা শিহরণ বয়ে গেল মুসার শিরদাঁড়া বেয়ে। কাজে আসে না বলে দোষ দেয়া যায় না র্যাঞ্চের শ্রমিকদের।
হয়তো লাইটহাউস থেকে আসছে, নিচু কণ্ঠে বললো রবিন। আসার পথে যেটা দেখে এলাম। ফগহর্ন।
মাথা নাড়লো কিশোর। আমার তা মনে হয় না। ফগহর্নের শব্দ ওরকম নয়। তাছাড়া এখন কুয়াশা নেই, ফগহর্ন বাজাবে কেন?
তাহলে কি…, বলতে গিয়ে থেমে গেল রবিন।
কিশোর তার জায়গায় নেই। উঠে শৈলশিরার ডান পাশ ধরে ছুটতে শুরু করেছে। তাকে অনুসরণ করলো দুই সহকারী গোয়েন্দা। পর্বতের ওধারে হারিয়ে গেছে সূর্য, আবছা বেগুনী আলো এখন উপত্যকায়।
পঞ্চাশ গজমতো এসে থেমে গেল গোয়েন্দাপ্রধান। আবার সেই গোঙানি। কানের পেছনে হাত রেখে ভালো করে শুনলো শব্দটা।
চোখ বড় বড় করে মুসা বললো, কিশোর, কি করবো?
জবাব দিলো না কিশোর। হঠাৎ ঘুরে হাঁটতে শুরু করলো, উল্টোদিকে একশো গজ দূরে এসে থামলো।
এই কাজই করবো নাকি খালি আমরা। পাশে এসে বললো রবিন। পাহাড়ের ওপরে খালি হাঁটাচলা? গোয়েন্দাপ্রধানের কাণ্ড দেখে মুসার মতোই সেও অবাক হয়েছে।
এবারও জবাব দিলো না কিশোর। কান পেতে শুনলো গোঙানির আওয়াজ। শব্দটা থেমে যাওয়ার পর ঘুরলো রবিনের দিকে। বললো, না, নথি, পরীক্ষাটা শেষ করলাম।
কিসের পরীক্ষা? জিজ্ঞেস করলো মুসা। হাঁটলাম আর দৌড়ালাম তো শুধু, আর কি করলাম?
বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে শব্দটা শুনলাম, ব্যাখ্যা করলো কিশোর। মনে মনে জ্যামিতি..মানে, কতগুলো কল্পিত রেখা এঁকেছি। শব্দটা কোত্থেকে আসে তার একটা ধারণা নেয়ার চেষ্টা করেছি। রেখা এঁকেছি মোট তিনটে। যেখানে সবগুলো এক জায়গায় ক্রস করেছে, শব্দটা সেখান থেকেই আসে।
বুঝে ফেললো রবিন। ঠিক বলেছে ও, মুসা। একে বলে ট্রাইঅ্যাঙ্গুলেশন। এঞ্জিনিয়াররা হরদম এই পদ্ধতি কাজে লাগায়।
বুঝেছো তাহলে, বললো কিশোর। নিখুঁত ভাবে করতে পারিনি। তবে আমাদের উদ্দেশ্য সফল হবে।
কিসের উদ্দেশ্য? কিশোরের সহজ ইংরেজিও এখন হীব্রু ভাষা বলে মনে হচ্ছে মুসার কাছে। কি বের করতে চাইছো?
শব্দটা কোথা থেকে আসে। পর্বতের ওই গুহা থেকে। হেনরি ফিগারোর গুহা।
এটা তো জানিই আমরা, নিরাশ মনে হলো মুসাকে। মিস্টার হারভেই বলেছেন।
মাথা নাড়লো আবার কিশোর। তাতে কি হয়েছে? ভালো গোয়েন্দা কক্ষণো অন্যের কথায় নির্ভর করে না। নিজে তদন্ত করে যাচাই করে দেখে। অন্যের চোখে দেখা আর নিজের চোখে দেখার মাঝে অনেক ফারাক। গাল চুলকে নিলো। শিওর হলাম, শব্দটা হেনরি ফিগারোর গুহা থেকেই আসে। এখন জানতে হবে গোঙানিটা কিসের, আর…
তাকে থামিয়ে দিলো সেই বিচিত্র আওয়াজ। ঘন ছায়া নামছে উপত্যকায়। গুঁড়ি মেরে যেন এগিয়ে আসছে অন্ধকারের দানব। শব্দটা শুনে এইবার গোয়েন্দা প্রধানও কেঁপে উঠলো।
ঢোক গিললো মুসা। খাইছে, কিশোর! মিস্টার হারভে আর শেরিফ গুহাটা তন্নতন্ন করে খুঁজেছেন। কিছু পাননি।
হয়তো কোনো ধরনের জানোয়ার, রবিন বললো।
জানোয়ারের মতো কি লাগছে? প্রশ্ন করলো কিশোর। আর, মি হারভে বা শেরিফ কোনো অস্বাভাবিক জন্তুর পায়ের ছাপও পাননি। ভালো করেহ জানো, ওঁরা দুজনেই অভিজ্ঞ শিকারী, দক্ষ ট্র্যাকার।
অস্বাভাবিক জন্তু? অস্বস্তি বোধ করছে মুসা।
এমন কোনো জন্তু, যার নাম শুনেনি মানুষ। মুসার দিকে তাকালো গোয়েন্দাপ্রধান, চোখে আলো ঝিলিক দিয়ে উঠলো। কে জানে, হেনরি ফিগারোও এসবের কারণ হতে পারে!
আঁতকে উঠলো মুসা। আল্লাহরে! বলো কি, কিশোর? ভূত-টুত তো বিশ্বাস করি না আমরা, করি?
তুমি করো, হাসলো কিশোর। কিন্তু ভূতের কথা বলছি না আমি।
তাই তো বললে। হেনরি ফিগারো মারা গেছে একশো বছর আগে, প্রতিবাদ করলো রবিন। তার ভূত না হলে আর কি?
জবাব দেয়ার সুযোগই পেলো না কিশোর। ঠিক ওই সময় উপত্যকা ছাড়িয়ে ওপাশের আকাশ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো লাল আলোয়। প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দে থরথর করে কেঁপে উঠলো যেন সমস্ত এলাকা।
কী, কিশোর? জিজ্ঞেস করলো রবিন।
মাথা নাড়লো কিশোর। জানি না।
বিস্ফোরণের আওয়াজ পাহাড়ে পাহাড়ে প্রতিধ্বনি তুলে মিলিয়ে গেল ধীরে ধীরে। একে অন্যের দিকে তাকালো তিন কিশোর।
নার্ভাস ভঙ্গিতে আঙুল মটকালো. রবিন। বোধহয় নেভি! ওই যে যাদের নৌবহর দেখলাম। নিশ্চয় চ্যানেল আইল্যাণ্ডস-এ প্র্যাকটিস করছে।
নিষ্প্রাণ হাসি হাসলো মুসা। ঠিকই বলেছো। বছরে দুবার এখানে এসে প্র্যাকটিস করে ওরা। খবরের কাগজে পড়েছি। নির্জন দ্বীপগুলোয় আস্তানা গেড়ে গোলাগুলির মহড়া চালায়।
হা, কিশোর বললো। কালকের পেপারেও ছিলো। নাইট ফায়ারিং, প্র্যাকটিস। চলো, র্যাঞ্চে। এই উপত্যকার কথা আরও জানতে হবে।