- বইয়ের নামঃ এলিফ্যান্টস ক্যান রিমেমবার
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- প্রকাশনাঃ সমতট
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর, গোয়েন্দা কাহিনী
এলিফ্যান্টস ক্যান রিমেমবার
১.১ সাহিত্যের ভোজসভা
এলিফ্যান্টস ক্যান রিমেমবার (১৯৭২) – আগাথা ক্রিস্টি
অনুবাদ : পৃথ্বীরাজ সেন
সাহিত্যের ভোজসভা
মিসেস অলিভার কেশবিন্যাস নিরীক্ষণ করতে আয়নায় নিজের দিকে তাকাতেই হঠাৎ ম্যান্টলপিসের ওপর রাখা ঘড়িটার দিকে তাকালেন কারণ তার ধারণা সেটা কুড়ি মিনিট স্লো যাচ্ছে। তিনি খোলাখুলিভাবেই স্বীকার করেন যে, তার কেশবিন্যাসের স্টাইল সবসময়েই কেমন যেন বদলে যায়। তিনি প্রায় সর্বতোভাবে চেষ্টা করেন কেশবিন্যাসের স্টাইল একইরকম রাখতে এবং ভ্রূ-লেখা বুদ্ধিদীপ্ত করে তুলতে। আঁটো করে চুলগুলো থোকায় থোকায় কুঞ্চিত করতে চেষ্টা করেছিলেন আবার কখনও বা চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে একধরনের চুলের আর্ট সৃষ্টি করার চেষ্টাও করেছিলেন। তার কেশবিন্যাস কী ধরনের হবে সেটা কোনো ব্যাপারই। নয় আজ কারণ আজ তিনি যা করতে যাচ্ছেন তা তিনি কদাচিত করে থাকেন।
তার ওয়ারড্রবের একেবারে ওপরের তাকে চারটি টুপি শোভা পাচ্ছিল। আপনি যখন বিয়েবাড়িতে যাবেন অবশ্যই টুপি ব্যবহার করতে হবে। তাই মিসেস অলিভার দুটি টুপি রেখেছেন বিবাহবাসরের জন্য চিহ্নিত। একটা হল পাখির পালকের তৈরি গোলাকৃতি ব্যান্ডবক্সের মতো, সেটা মাথার ওপর বেশ আঁটো করে বসানো যায় ফলে এর সুবিধা হল যে, হঠাৎ বৃষ্টি হলে বিবাহবাসরে যেতে গিয়ে চুল ভিজে যাওয়ার ভয় থাকে না।
অপরটি আরো বেশি সম্প্রসারিত, এ ধরনের টুপি গ্রীষ্মের কোনো এক শনিবারের অপরাহ্নে বিয়েবাড়িতে যোগ দিতে যাওয়ার পক্ষে উপযুক্ত। তাতে ফুল সিফনে লাগানো থাকে লজ্জাবতী লতা জড়ানো একটা হলুদ জালের আবরণে ঢাকা থাকে।
অপর দুটি টুপি সর্বপ্রয়োজনের উপযোগী। একটা টুপির তো তিনি নাম দিয়েছেন–কান্ট্রি হাউস হ্যাট।
মিসেস অলিভার শীতের দিনে কাশ্মীরী পুলওভার এবং গরমের দিনে পাতলা পুলওভার ব্যবহার করেন। কিন্তু তিনি পুলওভার গায়ে চাপালেও টুপি বড়ো একটা ব্যবহার করেন না। সত্যি কথা বলতে কি মফসসলে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে ভোজ সারতে টুপি পড়ার দরকার হয় না।
চতুর্থ টুপিটা অত্যন্ত দামি এবং অস্বাভাবিক টেকসইও বটে। সম্ভবত তিনি কিছু সময়ের জন্য ভাবলেন কারণ সেটা অত্যন্ত দামি।
একটু দোটানায় পড়ে তাকে সহযোগিতার জন্য হাঁক দিলেন। মরিয়া ছুটে এলো, পরামর্শ দেবার জন্য তাকে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
মরিয়া জিজ্ঞাসা করেছিল, আপনার সুন্দর স্মার্ট টুপিটা কি আপনি পড়তে যাচ্ছেন?
এই কথার উত্তরে হ্যাঁ বলেছিলেন মিসেস অলিভার এবং জানতে চেয়েছিলেন এইভাবে কিংবা অন্য কীভাবে পড়লে ভালো দেখাবে তাকে।
মরিয়ার দিক থেকে সাহায্যের আশায় বেশ কয়েকবার ট্রায়াল দেবার পর টুপিটা মাথার থেকে সরিয়েছিলেন। উলের পোশাক পরিহিতা মিসেস অলিভারের মাথায় টুপিটা চাপিয়ে সামান্য একটু আধটু এদিক ওদিক ঘুরিয়ে মরিয়া বলেছিল, আপনাকে এরকম স্মার্ট আগে কখনও দেখা যায়নি।
তাকে কিছু বলার সুযোগ দিলেই সব সময়েই তার পছন্দে সায় দেয়, তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ওঠে, এই জন্যই মরিয়াকে খুব পছন্দ করেন।
মধ্যাহ্নভোজে বক্তৃতা দিতে যাচ্ছেন, মরিয়া জিজ্ঞাসা করায় মিসেস অলিভার যেন দারুণ ভয় পাওয়ার মতন চমকে উঠলেন এবং বললেন, না, অবশ্যই নয়। এবং বললেন, তুমি ত জানো আমি কখনও বক্তৃতা দিই না।
মরিয়া ভেবেছিল, সাহিত্যিকদের মধ্যাহ্নভোজে সবাই যা করে থাকেন আপনিও তাই করতে যাচ্ছেন। ১৯৭৩ সালের সব বিখ্যাত লেখকরা কিংবা যে বছরেই হোক না কেন আমরা এখন তাদের কাছে পেয়েছি।
মিসেস অলিভার বললেন, আমি কোনো বক্তৃতা দিতে চাই না, যাঁরা বক্তৃতা দিতে পছন্দ করে থাকেন তারাই দেবেন, আর তারা আমার থেকে ভালোই বক্তা।
মরিয়া বলল–আমি নিশ্চিত, আপনি এতে ঠিক মতো মন দিলে ভালো বক্তৃতা দিতে পারবেন।
মিসেস অলিভার বললেন, না, আমার বলা উচিত নয়, আমি জানি কী করতে পারি, এবং এও জানি আমি কী করতে পারি না। আমি বক্তৃতা দিতে পারি না কারণ স্নায়ু দুর্বল হয়ে ওঠে আমার, সম্ভবত তখন আমি তোতলাতে থাকি কিংবা একই কথা দুবার বলে ফেলি, আমি চিন্তায় পড়ে যাই তখন আমি কেবল অপমান বোধ করি না, সম্ভবত তখন আমাকে ভীষণ অপমানিত দেখায়। বক্তৃতা লিখে নিয়ে গিয়ে পড়া যায় আমি সেটাও পারি, কিন্তু আমি সেটাকে বক্তৃতা বলে মনে করি না।
মরিয়া বললেন, বেশ, আশাকরি সব কিছুই ভালোভাবে সম্পন্ন হবে। তবে আমি এও নিশ্চিত যে, মধ্যাহ্নভোজ দারুণ সুন্দর হয়ে উঠবে।
বিমর্ষ গলায় মিসেস অলিভার বললেন, অনেক অনেক ভালো মধ্যাহ্নভোজ।
মুখে প্রকাশ না করে তিনি ভাবলেন যে, আমি নরকে যাচ্ছি? একটু সময়ের জন্য নিজের মনে চিন্তা করলেন কারণ কোনো কিছু করার পর ভাবার থেকে কিছু করার আগে ভেবে দেখাটাই বেশি পছন্দ করেন তিনি।
তিনি নিজের মনে বললেন, স্টোভের ওপর জ্যাম উতলে পড়ার গন্ধ পেয়ে সে তখন ছুটে গিয়েছিল রান্নাঘরে। আমি দেখতে চাই সেটা কী রকম অনুভূত হয়, সব সময়েই সাহিত্যবাসরের মধ্যাহ্নভোজে আমি আমন্ত্রিত হয়ে থাকি, বা সে রকম ধরনের কিছুতে আর আমি কখনও যাই না।