- বইয়ের নামঃ এ.বি.সি. মার্ডার
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- প্রকাশনাঃ সমতট
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর, গোয়েন্দা কাহিনী
এ.বি.সি. মার্ডার
১. ছমাসের জন্য বিশ্রাম
ছমাসের জন্য বিশ্রাম। অখণ্ড অবসর। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। তাই দেরি না করে গিন্নিকেতের খামারের হিসেব নিকেশ বুঝিয়ে দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। যাবো ইংল্যান্ড।
উনিশশো পঁয়ত্রিশ সাল। জুনের শেষ ভাগ। বহুদিন আগে ইংল্যান্ডে এসেছিলাম।
ইংল্যান্ডে হাজির হয়ে আগে খোঁজ করলাম আমার প্রাণের বন্ধু এরকুল পোয়ারোর। লন্ডনের এক আভিজাত্যপূর্ণ এলাকায় দামী ফ্ল্যাটে নাকি সে আছে, অনুসন্ধান করে জানলাম।
আমি তার ফ্ল্যাটে গিয়ে তো একেবারে থ। একেবারে রাজকীয় ব্যাপার চাকর-বাকরের অভাব নেই। তবে ফ্ল্যাটের ঘরগুলো দেখে আমার ঠিক মন ভরলো না। কোনোটা ত্রিভুজাকৃতি, কোনোটা আবার পঞ্চভুজ। এরকম আকৃতির ঘর করার কারণ কি জানতে চাইলাম বন্ধুর কাছে।
সে আমার প্রশ্নের জবাবে জানালো–চারপাশে সরলরেখার এত ছাড়াছাড়ি যে সরল জীবনযাপনের জন্য এ এক আদর্শ পীঠস্থান। কি তাই তো?
আমি ঘাড় নেড়ে তাকে সায় জানালাম।
আমরা দুজনে অনেকদিন পর মিলিত হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে হাসি-ঠাট্টায় গা ভাসিয়ে দিলাম। হঠাৎ পোয়ারোর চেহারার দিকে নজর পড়লো আমার।
বন্ধু, তোমাকে অনেকদিন পর দেখছি। কিন্তু তোমার চেহারার পরিবর্তন কিছু দেখছি না তো, চেহারার উজ্জ্বলতা আগের তুলনায় খানিকটা বেড়েছে। চুলও সাদা হয়নি এখনও। তুমি কি বুড়ো হবে না। এর কারণ কি?
–এর কারণ, পোয়ারো স্মিত হেসে জবাব দিলো। তুমি একে বৈজ্ঞানিক বা অবৈজ্ঞানিক যা-ই বলো না কেন, মাঝে মাঝে তারও একটু হেরফের হয়। তুমি বরং এত না ভেবে প্রশ্নের সমাধান তুমি নিজেই করে ফেলো।
এই বলে পোয়ারো তার চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। পাশেই তার শোবার ঘর। ঐ ঘরে গিয়ে ঢুকলো। খানিক বাদে হাতে একটি ছোট্ট শিশি নিয়ে আমার সামনে হাজির হলো। আমার হাতে দিলো।
আমি শিশিটা হাতে নিয়ে গায়ে লাগানো লেবেলটা পড়তে লাগলাম। আসলে শিশিটা কলপের।
-এবার বুঝেছি, তোমার চুলে এখনও পাক ধরেনি কেন? তুমি কলপ ব্যবহার করো। তাহলে এরপর এসে দেখবো আমার বন্ধু প্রবর একজোড়া ইয়া বড় মোচ লাগিয়ে নাক উঁচু করে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
গোঁফের ব্যাপারে পোয়ারো আগাগোড়া একটু স্পর্শকাতর।
-না, সেদিন যেন জীবনে না আসে, এই প্রার্থনা ঈশ্বরের কাছে করে পোয়ারো জবাব দিলো। নকল গোঁফ, ভাবতেও ঘেন্না করে। কথা শেষ করে সে তার গোঁফ জোড়ায় হাত বুলোত লাগলো।
সে যে মনে মনে একটু বিরক্ত হয়েছে বুঝে তাই প্রসঙ্গ পাল্টালাম।
–গোয়েন্দাগিরি তাহলে তুমি সত্যিই ছেড়ে দিয়ে অবসর নিলে?
-না, ছাড়িনি, ভেবেছিলাম, অবশ্য অনেকদিন আগে ভেবেছিলাম। তারপর ঠিক করলাম অযথা সময় নষ্ট না করে বিজ্ঞানের কারিগরি নিয়ে মাথা ঘামাই। তাই বইপত্রও কিনলাম বেশকিছু অর্থ ব্যয় করে। কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ যখন শেষ করে ফেলেছি, এমন সময় শুনলাম একটি খুনের খবর। অতএব আবার সেই গোয়েন্দাগিরি শুরু করলাম। একটু থেমে পোয়ারো বলতে থাকে, আসলে কি জানো যেখানেই সূক্ষ্ম বিচার সেখানেই পোয়ারো স্বয়ং হাজির। তখন মাথার মধ্যে অকেজো স্নায়ু কিলবিল করে ওঠে। বলো, চুপ করে বসে থাকা যায়? আর এই বুদ্ধিটুকুর জন্য সেদিন নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পেলাম।
-বাঃ, খুনির কাজের প্রশংসা করতে হয়।
–তা যা বলেছো, তুমি তো এতদিন পর এলে…কেমন যেন একটা বিপদের গন্ধ পাচ্ছি।
–বিপদ? তার মানে?
-হ্যাঁ, ভাই। হেস্টিংস, ভাগ্যের ওপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখি। পোয়ারো বলতে থাকে, তোমাকে তোমার নিয়তি এতদিন পরে আমার কাছে টেনে এনেছে। বিপদ তোমার মাথার শিয়রে। এ গন্ধ চিনতে আমার ভুল হয় না বন্ধু।
-তুমি কি সে রকম কিছু আন্দাজ করতে পেরেছো?
–হয়তো পেরেছি…হয়তো পারিনি…হয়তো, পোয়ারো ধোঁয়া ধোঁয়া ভাবে উত্তর দিলো।
তার মুখে বিচলিত ভাব লক্ষ্য করলাম। সে দেরাজ টেনে বের করলো, কাগজপত্র সাজানো রয়েছে। ওর মধ্যে থেকে কয়েকটা প্রয়োজনীয় কাগজ এনে আমার হাতে দিলো। তারপর বললো, তুমি এই কাগজগুলো প্রথম থেকে পড়ে যাও। তারপর কি বুঝতে পারছো তা আমাকে বলবে।
আমি হাতে নিয়ে দৃষ্টি দিলাম, ওগুলো কয়েকটি চিঠি।
চিঠির ভাষা এইরকম—
নমস্কার পোয়ারো মশাই, দণ্ডবৎ,
আপনার অসীম ক্ষমতা সম্পর্কে আমি অবগত আছি। আমাদের ব্রিটিশ পুলিশদের মাথা গবেট। কিছুই ওদের মগজে ঢোকে না। আপনি নাকি সব অদ্ভুত রহস্যের সমাধান ঝটাপট করে দেন। গোয়েন্দাপ্রবর, এবার আপনার বুদ্ধির খেলা দেখান তো। আরে বাবা, এ যেমন-তেমন ব্যাপার নয়। ভীষণ শক্ত চাই। এ মাসের একুশ তারিখে এ্যান্ডোভারে কেমন নাকানি-চোবানি খাওয়াই, সেটাই কেবল চোখ মেলে দেখবেন।
ইতি
বশংবদ
এ.বি.সি. তারপর একটি খাম আমার হাতে দিলো–এটা দেখো।
লক্ষ্য করলাম, লন্ডনের পোস্ট অফিসের স্টাম্প মারা। ঠিকানাটা হাতে লেখা নয়। টাইপ করা হয়েছে। বললাম–এ নিশ্চয়ই কারো পাগলামি।
কেবল কি পাগলামো? পোয়ারো বলতে থাকে–কথায় আছে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে এমন কোনো কাজ নেই যা পাগলে পারে না।
পৃথিবীতে খ্যাতিসম্পন্ন মানুষরা এমন চিঠি দিনে কয়েকখানা করে পায়। আমি বললাম। এ নিয়ে তোমার মাথা ঘামানোর কোনো যুক্তি দেখি না। এই চিঠির ব্যাপারে কোনো খোঁজ নিয়েছো?