সাইমন বলে উঠল–না লিডিয়া সব সময় তা হয় না।
লিডিয়া মৃদু হেসে বলল–আমাকে ক্ষমা করবেন, আমাকে এক্ষুনি অ্যালফ্রেডের কাছে যেতে হবে। ও উত্তেজনা হলে ঘাবড়ে যায়।
সাইমন কক কক করে হেসে উঠলেন–অ্যালফ্রেড কোনো পরিবর্তন অপছন্দ করে।
লিডিয়া বলল-ও কিন্তু আপনার খুব অনুরক্ত।
–তোমার কাছে সেটা স্বাভাবিক নয় তাই না?
অনেক অনেক আনন্দের ব্যাপার। এখনো অনেক মজার ঘটনা ঘটতে বাকী আছে। তিনি নিজের মনে বলে উঠলেন–আমি এই খ্রীস্টমাসটা উপভোগ করতে যাচ্ছি।
সাইমন চেয়ার থেকে উঠে লাঠিতে ভর দিয়ে ঘরের এক কোণে আলমারীর পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন। তিনি কাঁপতে কাঁপতে আলমারীর তালাটা খুলে একটা হরিণের চামড়ার ব্যাগ বের করলেন। ব্যাগটা খুলতেই হীরের টুকরোগুলো ঝলসে উঠল। তিনি কাঁপা কাঁপা আঙুলগুলো দিয়ে হীরেগুলো নাড়াচাড়া করতে লাগলেন।
আমার সৌন্দর্য সেই এক ঔজ্জ্বলতা এখনো পুরোনো বন্ধুর মতো রয়ে গেছে। আমার পুরোনো দিনের সাথী। ওরা কাটবেও না, ছিলবেও না।
আমার পুরোনো দিনের সাথীরা তোমরা নারীদের গলায়, কানে, আঙুলে ঝুলে আর কোনো দিন শোভাবর্ধন করবে না, তোমরা শুধু আমার, আমার সাথী হয়েই তোমরা থাকবে। আমি আর তোমরা শুধু একটা ব্যাপার জানি, ওরা বলে আমি নাকি বুড়ো হয়ে গেছি, সুস্থ নই, পঙ্গু। তাতে আমার কিছু এসে যায় না। আমার জীবনের অনেকটা পথ বাকী পড়ে আছে। আমি এখন তোমাদের বৃদ্ধ কুকুর প্রহরীর মতো পাহারা দিচ্ছি। আরো অনেক মজার ঘটনা বাকী রয়ে গেছে।
২. বেল বাজার সঙ্গে
০২.
২৩ শে ডিসেম্বর।
বেল বাজার সঙ্গে সঙ্গে ট্রেসিলিয়ান এগিয়ে গেল। সে এমনিতেই একটু শ্লথ; আবার বেল বেজে উঠল। মনে মনে বিরক্ত হল সে, লোকটা যে কী তার ঠিক নেই ভদ্রলোকের বাড়িতে কীভাবে বেল বাজাতে হয় তাও জানে না। সে তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজার কাঁচে চোখ রেখে দেখল। তার অনুমানই ঠিক। লোকটার চেহারায় একটা কাঠখোট্টা ভাব। মুখে এতটুকু মিষ্টতা নেই। চেহারাটা তার বিশাল, মাথায় স্নাউট টুপি। দরজা খুলতেই সে আগন্তুককে দেখতে পেল। সামনাসামনি দেখলে তার পোষাকের মধ্যে একটা নোংরা ভাব একটা ঔদ্ধত্য ভাব দেখা যাবে।
আগন্তুক তাকে বলে–তুমি ট্রেসিলিয়ান না?
ট্রেসিলিয়ান এক বুক নিঃশ্বাস নিয়ে আগন্তুককে ভালোভাবে দেখল। হ্যাঁ সেই চোখ, সেই নাক, বহু বছর আগে সে মানুষটিকে দেখেছিল। তখন সে আরো বেশী ঔদ্ধত্যপূর্ণ ছিল। সে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে-মিঃ হ্যারি।
হ্যারি হেসে বলল–তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে, আমাকে দেখে তুমি শক পেয়েছ কেন তুমি কী আমার আসা পছন্দ করোনি?
-হ্যাঁ স্যার, নিশ্চয়ই স্যার।
–তাহলে তুমি আমাকে দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলে কেন?
দুতিন পা পিছিয়ে গিয়ে সে বাড়িটাকে ভালো করে দেখল। তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল সেই পুরোনো কুৎসিত ম্যানসন।–আমার বাবা কেমন আছেন ট্রেসিলিয়ান?
-স্যার, তিনি অনেকটা পঙ্গুর মতো আছেন। তিনি তার নিজের ঘরেই থাকেন, বড়ো একটা বাইরে বেরোতে চান না। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতা থাকলেও মনের দিক থেকে তিনি সতেজ।
হ্যারি ভেতরে ঢুকে জিজ্ঞাসা করলেন–পুরোনো পাপী, আমার ভাই অ্যালফ্রেড কেমন আছেন?
–তিনি এখন খুব ভালো আছেন।
হ্যারি দাঁত বের করে হাসল-আশাকরি আমায় দেখার জন্য সে উঁচিয়ে আছে।
–বাউণ্ডুলেটা আবার ফিরে এসেছে। মনে রেখো ভালো মানুষটি সেজে বসে আছে। মনে রেখো এ সবকিছুই তার অপছন্দ। আমি হলফ করে বলতে পারি সে সুস্থ হয়ে থাকুক অ্যালফ্রেড তা চায় না। একটু থেমে সে বলে–আঙুল দেখিয়ে তিনি বলেন এই পথে তিনি সেখানে যাবেনই।
সে মাথা নেড়ে ট্রেসিলিয়ানকে অনুসরণ করল ড্রইংরুমে যাবার জন্য। হ্যারি বলল–তুমি এখন তোমার কাজে যেতে পারো ট্রেসিলিয়ান। দেখি মিঃ এবং মিসেস অ্যালফ্রেডকে খুঁজে পাই নাকি?
হ্যারি ড্রইংরুমে ঢুকতে গিয়ে থমকে দাঁড়ালো। হঠাৎ সে জানলার ধারে একটি মেয়েকে বসে থাকা অবস্থায় দেখতে পেল। মেয়েটির কালো চুল, সুন্দর মুখের দিকে তাকাতে গিয়ে তার চোখ দুটো বিস্ময়ে থমকে দাঁড়ালো।
সে বলে উঠলো-হায় ঈশ্বর। তুমি কী আমার বাবার সপ্তম এবং পরমাসুন্দরী স্ত্রী?
পিলার তার দিকে এগিয়ে এসে বলল–আমি পিলার এস্ট্রাভাডোস; তুমি নিশ্চয় আমার মায়ের ভাই, হ্যারি মামা।
হ্যারি মেয়েটির দিকে ভালো করে তাকিয়ে বলল–ও, তাহলে তুমি জেনির মেয়ে।
–তাহলে কেন তুমি আমাকে তোমার বাবার সপ্তম স্ত্রী কী না জিজ্ঞাসা করলে?
হ্যারি হেসে বলল–আমার মনে হয় ওর সরকারী স্ত্রী একজনই। পিলার তোমাকে মৌসেলিয়ামে দেখে মনে হচ্ছিল তুমি যেন একটা সুন্দর ফুলের কুঁড়ি।
-কি যেন একটা বললে মৌস?
-হ্যাঁ, ঠিক তাই। তুমি একটা মিউজিয়াম ছাড়া আর কী? এখানে যতসব বাজে জিনিষ ভর্তি।
পিলার অত্যন্ত আহত কণ্ঠে বলল–আমার তো তা মনে হয় না। আমার মনে হয় সব জিনিষগুলো সুন্দর, কার্পেটগুলো অতি উচ্চমানের আর ফার্নিচারগুলোও।
হ্যারি দাঁত বের করে বলল–তুমি ঠিককথাই বলেছ। পিলারের দিকে চেয়ে সে বলল তোমাকে এর মাঝে দেখে লাথি মেরে বের করে দেওয়ার লোভটা সামলাতে পারছি না।
লিডিয়াকে ছুটে আসতে দেখে হ্যারি চুপ করে গেল।
-হ্যারি তুমি কেমন আছো? আমি লিডিয়া, অ্যালফ্রেডের স্ত্রী।