অ্যালফ্রেড বলে-তার নির্বাচন কেন্দ্রের লোকেরা তাকে পছন্দ করে।
সাইমন আবার কক কক করে আওয়াজ করলেন-তারা মনে করে সে সৎ! এখনো কোনো লী-ই সৎ হতে পারেনি।
-ওঃ বাবা…
–হা পুত্র, তুমি অবশ্য তার ব্যতিক্রম। লিডিয়া প্রশ্ন করল–আর ডেভিড?
বহুবছর পরে ওকে দেখার কৌতূহল আমার অনেক। বেচারা বড় ছেলেমানুষ আর অভিমানী। আমি ভাবছি ওর স্ত্রী কেমন হবে? সে তার বয়স থেকে কুড়ি বছরের ছোট কোনো মেয়েকে বিয়ে করেনি তো? ঐ বোকা জর্জের মতো।
লিডিয়া বলল–খুব সুন্দর একটা চিঠি লিখেছে হিলডা। এইমাত্র তার একটা বার্তা পেলাম। তারা অবশ্যই আগামীকাল এসে পৌঁছাবে।
শ্বশুরমশাই কৌতূহল সহকারে তার দিকে তাকিয়ে বললেন–আমি তো কখনো লিডিয়ার মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখতে পাই না। লিডিয়া, আমি তোমাব সম্বন্ধে কী বলি জান, তুমি একজন ভালো বংশের সুশিক্ষিতা মেয়ে, এটাই তোমার প্রকৃত পরিচয়। তুমি ভালো ভালো কথা বল, এটা একটা বংশের ব্যাপার। তুমি আমার প্রতি যেরকম যত্ন নাও আর কেউ তা নেয় না।
এবার তার চোখদুটো আনন্দে নেচে উঠল–এখন অনুমান করে বলত খ্রীস্টমাসের সময় কারা কারা আসছে? তোমাকে আমি তিনটে নাম বলতে বলব। কিন্তু আমি বাজী রেখে বলতে পারি তুমি তা পারবে না। তিনি তিনজনের মুখের দিকে তাকাতে থাকেন। অ্যালফ্রেড ক্রু কুঁচকে বলে–আপনি নাকি একটা যুবতী মেয়েকে চঞ্চল করে দিয়েছেন?
-আমি আন্দাজ করতে পারি তোমার সেটাই হয়েছে। তবে বলি শোন, পিলার যে কেননা সময় এখানে এসে পরবে।
অ্যালফ্রেড রুস্বরে জিজ্ঞাসা করল–পিলার?
–পিলার একটা ভাডোস। জেনিফারের একমাত্র কন্যা, আমার নাতনী। তার কী পছন্দ তাই চিন্তা করছি।
অ্যালফ্রেড উঁচু গলায় বলল–তুমি তো আগে আমায় একথা জানাওনি কখনো।
বৃদ্ধ দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বলেভেবেছিলাম গোপন রাখব। এখানে আসার জন্য চার্লটনকে দিয়ে ওকে পত্র লেখাই। এই বাড়ির একই ছাদের তলায় ঐ তরতাজা মেয়েটাকে কেমন দেখায় তাই দেখতে চাই একবার। পিলারকে আমি কখনো দেখিনি। জানি না তাকে কার মতো দেখতে হয়েছে? বাবা না মার মতো।
অ্যালফ্রেড সবদিকে বিচার করে তার মতামত জানায়–বাবা তুমি কী মনে কর কাজটা ঠিক হচ্ছে?
বৃদ্ধ তার কথায় বাধা দিয়ে বলে–নিরাপত্তা আর নিরাপত্তা–তুমি খুব বেশী নিরাপত্তার কথা চিন্তা করছ অ্যালফ্রেড। আমার সেটা ভাববার বিষয় নয়। তুমি যাই চিন্তা করো না কেন আমার একটাই কথা যে, সে আমাদের পরিবারের একমাত্র নাতনী এবং আমার নাতনী। ওর বাবা কী করেছিল কে ছিল তা নিয়ে আমার মাথা ঘামাবার দরকার নেই। ওর সঙ্গে যে আমার রক্তের সম্পর্ক আছে এটাই বড় কথা। আর একথাও বলছি সে আমার বাড়িতে বাস করতেই আসছে।
লিডিয়া তীক্ষ্ণ মেজাজে বলল–ও এখানে বসবাস করতে আসছে?
–তিনি তার চেয়েও তীক্ষ্ণ স্বরে জিজ্ঞাসা করল, কেন তাতে তোমার আপত্তি আছে?
লিডিয়া মৃদু উত্তর দিল–আপনার বাড়িতে কেউ এসে থাকবে তাতে আমার আপত্তির কী আছে–আমি শুধু মেয়েটি সম্পর্কে চিন্তা করছি।
তুমি মেয়েটি সম্পর্কে কী বলতে চাইছ? এখানে কী ও সুখে থাকবে? এই পৃথিবীতে কী ওর এক পেনিও নেই? ওকে ধন্যবাদ জানাতেই হবে। তারপর অ্যালফ্রেডের দিকে তাকিয়ে বলল–এটা একটা বড় খ্রীস্টমাস হতে চলেছে। আমার সব ছেলেরা ওকে ঘিরে থাকবে। তোমাকে একটা সংকেত দিয়ে রাখলাম। বলতো অপর অতিথিটা কে?
অ্যালফ্রেড তার দিকে স্থির দৃষ্টিতে দেখল।
–আমার সব ছেলেরা মানে তার মধ্যে তোমার ভাই হ্যারিও আসছে।
অ্যালফ্রেডের মুখটা চুপসে গেল। আমতা আমতা করে বলল–কিন্তু আমরা তো জানি সে আর বেঁচে নেই।
-না সে মরেনি।
–এতকিছুর পরও তুমি তাকে ফিরিয়ে আনছ?
–তুমি ঠিকই বলছ ও একটা বাউণ্ডুলে ছেলে। তবুও আমরা তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাবো।
–কিন্তু সে আমাদের সবাইকে বিরক্ত করে তুলেছিল।
–তার অপরাধের ময়লা ঘাটাবার প্রয়োজন নেই। শুধু একটা কথাই মনে রাখো যে, খ্রীস্টমাস উৎসব হচ্ছে ক্ষমা করার উৎসব। ওকে আমরা আমাদের বাড়িতে সাদরে অভ্যর্থনা জানাবো।
অ্যালফ্রেড উঠে দাঁড়ালো এবং মনে মনে বলল–এটা নেহাৎই একটা সখ। আমি কোনো দিনই ভাবিনি হ্যারি আবার এই চার দেওয়ালের মধ্যে ফিরে আসবে।
সাইমন সামনের দিকে মাথা নোয়ালেন। নরম স্বরে বললেন–আচ্ছা, তুমি তো হ্যারিকে কোনোদিন পছন্দ করতে না করতে কী? সে যাইহোক অতীতের ঘটনা এখন অতীতই, খ্রীস্টমাসের এটাই মূলনীতি। তাই না লিডিয়া?
লিডিয়ার মুখটা অন্ধকারে ঢেকে গিয়েছিল। সে শুকনো গলায় বলল–দেখা যাচ্ছে, এবার খ্রস্টমাসে আপনি ভালো ব্যবস্থাই করছেন।
–আমার ইচ্ছা আমার পরিবারের সকলে শান্তি আর শুভেচ্ছা নিয়ে আমার চারপাশে ঘিরে থাকুক। তোমরা কী চলে যাচ্ছ?
অ্যালফ্রেড ঘর থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেল। লিডিয়া তাকে অনুসরণ করল।
অ্যালফ্রেড উত্তেজিত হয়ে চলে যেতে দেখে, সাইমন বলে উঠলেন–হ্যারির ফিরে আসার সংবাদে অ্যালফ্রেডের মাথা গরম হয়ে গেছে। হ্যারি আর ও কখনো মিলেমিশে থাকতে পারেনি। হ্যারি সবসময় ওকে ঠাট্টা করে বলতে শ্লথ তবে নিশ্চিত।
লিডিয়া কিছু একটা বলবে বলে ভেবেছিল কিন্তু বুড়ো লোকটা কষ্ট পাবে ভেবে চুপ করে গেল।নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখল। সে কথাটা একটু ঘুরিয়ে বলল-কচ্ছপ আর খরগোসের দৌড়ে শেষপর্যন্ত কিন্তু কচ্ছপেরই জিৎ হয়।