ম্যাগজলেন বলল–সেটা তো খুব ভালো কথা। সব জায়গাতেই খ্রীস্টমাস খুব বড় ব্যাপার। ম্যাগজলেন একটু থেমে তারপর বলে–জর্জ তোমার বাবা খুব বিত্তবান, কোটিপতি বলা যায়। যায় না?
–আমার মনে হয় ডবল কোটিপতি।
ম্যাগলেজ একটু ঈর্ষার ভাব মেশানো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে–এত টাকা তিনি কী করে পেলেন? দক্ষিণ আফ্রিকায়?
-হ্যাঁ, প্রথম জীবনে তিনি হীরের ব্যবসা করে প্রচুর টাকা করেছেন। তারপর ইংলণ্ডে এসে নতুন করে ব্যবসা ফেঁদে সেই টাকা দ্বিগুণ কিংবা তিনগুণ করেন।
–তার মৃত্যুর পর এত অর্থ সম্পত্তি কীভাবে ভাগ হবে তুমি জানো?
-বাবা এই সব ব্যাপারে খুব একটা কথা বলেন না। তবে আমার ধারণা তার অর্থের সিংহভাগ পাবে অ্যালফ্রেড আর আমি। অ্যালফ্রেড অবশ্য আমার থেকে একটু বেশী পাবে। আমার আর এক ভাই ডেভিড, সে বিশেষ কিছু পাবে না, কারণ, সে বাবার অমতে বাড়ি ছেড়ে চলে যায় চিত্রশিল্পী হওয়ার জন্য। বাবা তাকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করবে বলে শাসিয়েও ছিল। উত্তরে সে বলেছিল ওঁর টাকার তোয়াক্কা সে করে না। আর আছে আমার বোন জেনিফা। একজন বিদেশী আর্টিস্টের সঙ্গে দেশ ছেড়ে সে চলে যায়। কিছুদিন আগে সে মারা গেছে। তার একটা মেয়ে আছে। আমার মনে হয় বাবা তাকে কিছু দিয়ে যাবেন। আরো একজন আছে তার নাম হ্যারি।
একটা অস্বস্তিবোধ তাকে থামিয়ে দেয়।
ম্যাগজলেন অবাক হল-কে এই হ্যারি?
–আঃ আমার ভাই সে।
–কিন্তু তোমার যে আরো একটা ভাই আছে সে কথা তো আগে শুনিনি।
শোন প্রিয়তমা, সে খুব একটা বিখ্যাত লোক নয়। সেই কারণে তার নাম তোমার কাছে আমরা করিনি। অনেকদিন তার কোনো খবর নেই। মনে হয় সে মারা গেছে।
ম্যাগজলেন হঠাৎ হেসে উঠল।
–তুমি হাসছ কেন? কী ব্যাপার?
–ম্যাগজলেন হাসতে হাসতে বলে-হাসির কথা বললে হাসব না? আমি এখন তোমার ভাই হ্যারির কথা চিন্তা করছি। সে অখ্যাত আর তুমি কতই না বিখ্যাত। কিন্তু জর্জ তোমার বাবা তো খুব একটা বিখ্যাত নন। শেষে অভিমানের সুরে বলেন, মাঝে মাঝে তিনি আমাকে এমন এমন কথা বলেন যে আমার শুনতে খুব খারাপ লাগে।
-ম্যাগজলেন তোমার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম। লিডিয়াও কী এই রকম কিছু ভাবে?
-না, লিডিয়াকে সেরকম কিছু বলে না। ম্যাগজলেন ক্রুদ্ধ স্বরে বলে–জানি না কেন তাকে কিছু বলেন না।
সে যা হোক এই বয়সে বাবাকে সবার ক্ষমা করা উচিত। তাছাড়া, ওনার শরীর খুব একটা ভালো নয়।
-আচ্ছা, জর্জ, তোমার বাবার শরীর সত্যিই কী খারাপ?
–আমি তা কী করে জানাব? তবে তিনি যখন পরিবারের লোকদের একসঙ্গে দেখবার জন্য ডেকে পাঠিয়েছেন, তখন আমাদের সবার যাওয়াই উচিত। হয়তো এটাই তার শেষ খ্রীস্টমাস। অতএব আমরা যে বাড়িতে গিয়ে ঠিক কাজই করবো। তাতে সন্দেহ নেই।
-কিন্তু আমার ঘেন্না করে। অ্যালফ্রেড একটা গবেট। লিডিয়া কথায় কথায় আমাকে ধমকায়। আর ঐ জানোয়ারের মতো চাকরটা।
-কে বৃদ্ধ ট্ৰেলিলিয়ান?
–না, হারবারি। বেড়ালের মতো নিঃশব্দে চলাফেরা করে আর বোকার মতো হাসে। সে যাই হোক ঐ নিয়ে মাথা ঘামাবার দরকার নেই ওই বুড়ো লোকটিকে কোনো অজুহাতে অপমান কোরো না। আমি বরং লিডিয়াকে জানিয়ে দিচ্ছি, আগামীকাল ৫-২০ মিনিটে আমরা যাচ্ছি। ম্যাগজলেন মাথা নীচু করে ঘর থেকে চলে গেলো।
গরস্টন হলের দোতলায় লম্বা বারান্দা পার হয়ে একটা বিরাট ঘর। পুরোনো ফ্যাশানে ঘর সাজানো। সবকিছুই চমৎকার, দামী এবং মজবুত। ঐ বৃদ্ধ মানুষটা আরাম কেদারায় বসে থাকেন। তাঁর পরনে নীল রং-এর নোংরা ড্রেসিং গাউন। পায়ে কার্পেট চটি। তার চুল সাদা এবং তার মুখের চামড়া হলদেটে। তাঁর চেহারাটা তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। তাঁর নাকটা ঈগলের ঠোঁটের মতো বাঁকানো, চোখ দুটো গভীর এবং ভয়ঙ্কর জীবন্ত। এসব দেখেশুনে প্রত্যক্ষকারীকে মত পরিবর্তন করতে হবে। আগুনের মত তেজদীপ্ত প্রাণশক্তিতে তার জীবন ভরপুর।
রাজহংসের মতো ভক-ভক আওয়াজ করে বললেন-সাইমন লী, মিসেস অ্যালফ্রেডকে সংবাদ দিয়েছে।
হারবারি তার চেয়ারের সামনে দাঁড়িয়েছিল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে সে উত্তর দিল-হ্যাঁ, স্যার, আপনি আমাকে যা যা বলতে বলেছিলেন আমি তাই তাই বলেছি ওদের।
-খুব ভালো…ওরা সারাটা বিকেল নিশ্চয় খুব ভেবেছে। আমি ওদের জন্য বসে আছি। ওদের নিয়ে এসো।
-হা স্যার। বলে সে চুপচাপ চলে গেলো।
হারবারির দিকে স্থির দৃষ্টিতে দেখে নিয়ে বৃদ্ধ লী নিজেই নিজেকে অভিশাপ দেয়। লোকটি সত্যিই নিঃশব্দে বেড়ালের মতো হাঁটে, কোথায় কখন থাকে বোঝা যায় না।
তিনি শান্ত ভাবে চেয়ারে বসেছিলেন, ঠিক সেই সময় দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হল। অ্যালফ্রেড ও লিডিয়া ভেতরে ঢুকলো।
-আহ, তোমরা এসে গেছ? লিডিয়া এসো, আমার কাছে এসে বস।
–অ্যালফ্রেড জিজ্ঞাসা করল–কেমন আছ বাবা? দুপুরে তোমার ঘুম হয়েছিল তো?
-খুব সুন্দর, পুরোনো দিনের স্বপ্ন দেখলাম। এখানে চিরকালের মতো স্থিত হয়ে আর সমাজের স্তম্ভ হয়ে বসার আগে আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখলাম, কক-কক আওয়াজ করে তিনি হেসে উঠলেন।
তার পুত্রবধূ নিঃশব্দে হাসতে লাগল।
অ্যালফ্রেড এবার কাজের কথাটা বলল–বাবা ব্যাপারটা কী? শুনলাম খ্রীস্টমাসের সময় আরো দুজন অতিথি আসছে। তারা কারা?
-হ্যাঁ, তাদের সম্পর্কে আমি তোমাদের অবশ্যই বলব। এবছরটা আমার কাছে হবে গ্র্যাণ্ড খ্রস্টমাস। আমাকে একবার দেখতে দাও এখানে কে কে আসছে। জর্জ আর ম্যাগজলেন আসছে।–বুড়ো সাইমন বলেন-বেচারা জর্জ গ্যাসব্যাগ ছাড়া সে আর কিছুই নয়। তবু সে আমার পুত্র।