লিডিয়া আচমকা রাগে চিৎকার করে উঠল, তার কপাল যে তোমার মতো ছেলে পেয়েছিলেন। তুমি ওঁর এতো প্রিয় কেন জানো, তুমি ওঁকে পুজো কর বলে।
অ্যালফ্রেড উল্টে প্রতিবাদ করল।–তোমার বাড়াবাড়ির মাত্রাটা একটু বেড়ে যাচ্ছে। এটাতো অস্বাভাবিক কিছু নয়, ছেলে তার বাবাকে ভালোবাসবে, শ্রদ্ধা করবে, করাটাই স্বাভাবিক। অ্যালফ্রেড লিডিয়ার হাতের উপর হাত রেখে নরম ভাবে বলল–তোমার চিন্তার সঙ্গে সবকিছু আগে আগে যায়। এতে তোমার ঈর্ষার তো কোনো কারণ দেখতে পাচ্ছি না।
লিডিয়া অনুশোচনা ভরা ঠোঁটে তাকে একটা চুমু খেল।
লিডিয়া বলল–এখন অবধি যখন আমি জানতে পারলাম না, আমার সেই রহস্যজনক অতিথি কে? তখন আমি বাগান পরিচর্যা করতে চললাম।
–প্রিয়া, বাইরে খুব ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা হাওয়া কীরকম তীরের মতো গায়ে ফুটছে দেখছ না?
–সারা শরীর গরম জামাকাপড়ে ঢেকে নিলেই হবে।
লিডিয়া ঘর থেকে চলে গেল। অ্যালফ্রেডের একা একা ঘরে থাকতে ভালো লাগছিল না। লিডিযা খেয়াল করেনি কখন সে চুপচাপ গলায় মাফলার গায়ে কোট চাপিয়ে তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। লিডিয়া ততক্ষণে দুটো পাথরের মাঝখানে ছোট ছোট কয়েকটা ক্যাকটাস গাছের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। এটাই আমি চাইছিলাম।
তোমার কাজের শেষ নিদর্শন লিডিয়া। একটু ইতস্তত করে সে বলল–এই যে এগুলো? তোমার কী এগুলো পছন্দ, অ্যালফ্রেড?
এগুলো রোদে পুড়ে শুকনো হয়ে গেছে তাই না?
এগুলো আমার মতে মৃত সমুদ্র।
এগুলো অন্য সব ফুলের মতো তেমন আকর্ষণীয় নয়।
ঠিক সেই সময় জোরে একটা পদশব্দ শোনা গেল। বৃদ্ধ খানসামা, একমাথা সাদা চুল সামনের দিকে কিছুটা ঝুঁকে পড়েছে। তাদের দিকে তাকে এগিয়ে আসতে দেখা গেল।
-ম্যাডাম, মিস জর্জ লী ফোন করে জানতে চাইছেন তিনি এবং মিঃ জর্জ আগামীকাল ৫টা ২০ মিনিটে এলে অসুবিধা হবে?
-না না, ওকে বল ঐ সময় আসতে।
—ধন্যবাদ ম্যাডাম।
খানসামা তাড়াতাড়ি চলে যেতেই লিডিয়া বলে-বুড়ো ট্রেসিলিয়ান, এই বয়সেও কী পরিশ্রম করতে পারে, দেখেছে। ওকে ছাড়া আমি কিছু চিন্তাই করি না।
অ্যালফ্রেডও মাথা নেড়ে সায় দিল।
কথার ফাঁকে লিডিয়া তার বাগান পরিচর্যার কাজও শেষ করলো।
ক্যাকটাস গাছগুলোর ওপর ছাউনির কাজ শেষ করে সে বলে উঠল–এবার আমি তৈরী।
অ্যালফ্রেড বোকার মতো বলল-তৈরী!
লিডিয়া হেসে ফেলল।
খ্রস্টমাসের জন্য। আমাদের এই চিন্তাশীল পরিবারের জন্য আমরা বারে আমাদের খ্রীস্টমাসের আয়োজন করতে যাচ্ছি।
ডেভিড তার পত্রখানি আর একবার পড়ে দেখছিল। তার স্ত্রী তাকে চুপচাপ নিরীক্ষণ করছিল। দ্বিতীয়বার চিঠিটা পড়ার পর সে বলল-ডেভিড শোন, সবকিছু তোমার উপলব্ধির উপর নির্ভর করছে।
হিলডা খুব সুন্দর না হলেও তার মনটা ছিল উদার এবং তার মধ্যে একটা যাদুকরী গুণ ছিল। অনেকটা জলছবির মতো। এছাড়া স্বীকার করতেই হয় হিলডা লীর মধ্যে বাড়তি একটা তেজ ছিল।
ডেভিড চারদিকে পায়চারি করতে থাকে। তার চুল এখনো পাকেনি। তার ছেলেমানুষী চেহারাটা সত্যিই আশ্চর্যের।
ডেভিড বলল–হিলডা তোমাকে বারবার আমার মনোভাবের কথা জানিয়েছি। আমি আমাদের বাড়ি দেশের পরিবেশ সবকিছুকে ঘৃণা করি। আমি যখন আমার বাবার কথা চিন্তা করি তখন আমার মার কথা মনে পড়ে যায়। আমার মার বিষণ্ণতার মূলে ছিলেন তিনি। প্রেমঘটিত ব্যাপার। আমার মার প্রতি ওনার বিশ্বাসঘাতকতা আমার ঘৃণাকে আরো বাড়িয়ে দেয়।
হিলডা বলে ওখানে তার পড়ে থাকার কোন অর্থ হয় না। অনেক আগেই তার চলে যাওয়া উচিত ছিল তাহলে তিনি আবার নতুন জীবন শুরু করতে পারতেন।
ডেভিডের মেজাজ হঠাৎ খারাপ হয়ে গেল, যেটা সে সময় অসম্ভব ছিল–তুমি জানো না, ঐ সময় মহিলারা ওরকম ব্যবহার করতে পারত না, তাছাড়া আমার মার চিন্তাধারা হল সব স্ত্রীদের স্বামীর ঘরেই থাকা উচিত। এছাড়া এটা তার নিজের ঘর। তিনি যাবেনই বা কোথায় আর ডিভোর্স করলেই বা কী হতো, বাবা হয়তো আবার বিয়ে করতেন। আর একটা পরিবারের জন্ম হতো; তখন আমাদের অবস্থা আরো খারাপ হতো। মা এইসব কথা চিন্তা করেছিলেন।
হ্যাঁ, তবে আমার মনে হয় তুমি বিশেষ কিছু জানোনা ডেভিড।
-হ্যাঁ, তিনি আমাকে সব কিছু বলে গেছেন। আমি যে তাকে কী রকম ভালোবাসতাম তা তিনি ভালো করেই জানতেন। যখন তিনি মারা যান, তার গলার স্বর বন্ধ হয়ে আসে। তিনি নিজেকে সামলে নিয়ে আবার বলেন। জানো হিলডা, কী ভয়ঙ্কর ব্যাপার একেবারে একাকী জীবন। তিনি তখন প্রায় যুবতী। তাঁর মৃত্যুর কোনো দরকার ছিল না। কিন্তু তিনি তাঁকে খুন করেছিলেন।…আমার বাবা। তাঁর মৃত্যুর জন্য তিনিই দায়ী। তিনি আমার মার বুক ভেঙে ছিলেন। সেই সময় আমি ঠিক করি যে, তার ছত্রছায়ায় আর থাকব না।
হিলডা তাকে সমর্থন জানিয়ে বলে–তুমি বিবেচকের মতো কাজ করেছ। তুমি ঠিক করেছ।
-বাবার ইচ্ছা ছিল আমি ওয়ার্কস-এ যাই। তার বাড়িতে থাকি। কিন্তু আমি তাকে একদম সহ্য করতে পারিনি। তার প্রস্তাবটা আমি প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। কিন্তু জানিনা অ্যালফ্রেড কী করে এতদিন ধরে সহ্য করে আসছে। অ্যালফ্রেডের আর্মিতে যাবার সব ব্যবস্থাই বাবা করে দিয়েছিল। অ্যালফ্রেড বড় ছেলে ক্যালভোনরি রেজিমেন্ট যাওয়ার কথা। হ্যারির যাওয়ার কথা ছিলো ওয়াকর্স-এ যেমন আমার আর জর্জের রাজনীতিতে প্রবেশ করার কথা।