অ্যালফ্রেড বিরক্ত হয়ে রুক্ষস্বরে বলল–লিডিয়া, আমার ইচ্ছা নয় যে, তুমি এধরনের কথা বল। এটা একটা অকৃতজ্ঞের পরিচয়। আমার বাবা আমাদের জন্য সমস্ত কিছুই করেছেন। তাছাড়া, তুমি ভালো করেই জানো, তুমি ঐ বুড়ো মানুষটির অত্যন্ত প্রিয়।
-না, মোটেই আমি তার প্রিয় নই।
ছিঃ ছিঃ লিডিয়া, তোমার মুখ থেকে এ ধরনের কথা শুনতে খুবই খারাপ লাগছে। অবিবেচকের মতো কথাবার্তা। বাবা যদি বুঝতে পারেন।
–তোমার বাবা খুব ভালো করেই জানেন, আমি ওনাকে অপছন্দ করি। আমার মনে হয় তিনি তাতে আনন্দ পান।
-তুমি খুব ভুল করছো লিডিয়া। জানো তিনি আমাকে প্রায়ই কী বলেন? তোমার স্বভাব তার কাছে খুব মিষ্টি।
অস্বাভাবিক কিছু নয়। আমার স্বভাব সবসময়েই নষ থাকে এবং চিরকাল থাকবেও। শোন, অ্যালফ্রেড ওঁর সম্পর্কে আমার মনোভাব কী তা আমি তোমাকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিচ্ছি, আমি তোমার বাবাকে পছন্দ করি না। আমার মতে উনি একজন খেয়ালী আর অত্যাচারী বুড়ো। ওঁর প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা আর দুর্বলতার সুযোগ নিতে চাইছেন উনি। তাই অনেক আগেই তোমার ওনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো উচিত ছিল।
অ্যালফ্রেড তীক্ষ্ণ স্বরে বলে–আমি তাই করবো লিডিয়া। দয়া করে তুমি ওঁর সম্বন্ধে আর কিছু বল না।
আমি দুঃখিত, মনে হয় আমি ভুল করছি-ওসব কথা বাদ দিয়ে এসো আমরা সামনে খ্রস্টমাসের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করি। তা তুমি কী মনে করো তোমার ভাই ডেভিড কী সত্যি সত্যই এখানে আসবে?
–আসবে নাই বা কেন?
লিডিয়া সন্দিগ্ধ চোখে দেখল–বড় আশ্চর্য মানুষ এই ডেভিড। জেনে রাখো বহু বছর হল এ বাড়ির সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। সে তোমার মায়ের খুব ভক্ত ছিল। জায়গাটার প্রতি তার একটু ভালোবাসা ছিল।
অ্যালফ্রেড বলল–এও আমার জানা আছে, যে, উত্তেজনার বশে বাবা হয়তো কোন সময়ে তার সাথে খারাপ ব্যবহার করে থাকবেন। তবু আমার মনে হয় ডেভিড আর হিলডা খ্রীস্টমাসের সময় ঠিক আসবে। তুমি দেখো।
লিডিয়া মুখটা বিরক্ত করে বলল–জর্জ আর ম্যাগজলেন সম্ভবতঃ আগামীকালই এসে পৌঁছাবে। আমার ভয় যে, ম্যাগজলেনের একঘেয়ে লাগবে।
কেন? জর্জ কী তার থেকে কুড়ি বছরের ছোট মেয়েকে বিয়ে করেছে? এটা আমি ভাবতেও পারি না, কারণ, জর্জ খুব একটা চালাক ছিল না।
–না, সে তার জীবনে খুবই সফল। নির্বাচন কেন্দ্রের লোকেরা তাকে খুব ভালোবাসে। আমার বিশ্বাস রাজনীতির ক্ষেত্রে ম্যাগজলেন তার হয়ে খুবই পরিশ্রম করে।
-ম্যাগজলেনকে আমার খুব ভালো লাগে। তাকে দেখতে খুব সুন্দর। কিন্তু মাঝে মাঝে তার কী মনে হয় জানো? গোলাপের মতো সুন্দর সুন্দর মেয়েদের ও একজন। আরো ভালো করে বলতে গেলে ওর মিষ্টি চেহারা, মিষ্টি ব্যবহারের উপর যেন একটা মেঘের আস্তরণ ছড়ানো আছে।
–মানে তারা ভেতরে ভেতরে খুব খারাপ। লিডিয়া তাকে বলল–অ্যালফ্রেড তুমি এইরকম আশ্চর্য কথা বলতে পারলে? আমি জানতাম তোমার ভেতরটা ভদ্র, খারাপ কথা তুমি কাউকে বলতে পারো না। আমার মাঝে মাঝে তোমার উপর রাগ হয় কেন জানো? তুমি কোনো কোনো ব্যাপারে সন্দেহপ্রবণ নও এবং এই পৃথিবী সম্পর্কে তোমার জ্ঞানও খুব সীমিত।
তার স্বামী হাসল।–তোমার মতো এ পৃথিবী সম্পর্কে সবসময়েই আমি। না! একজনের মনের মধ্যেই কেবল অসৎ বাসা বাঁধেনি, অসৎ চারিদিকেই ছড়িয়ে আছে। এ পৃথিবীর অসৎ অন্যায়, অসাধুতা সম্পর্কে তোমার কোনো ধারণাই নেই। কিন্তু তা আমার আছে।
আমি সেটা সবসময়ই উপলব্ধি করতে পারি এই বাড়িতে, এইখানে। লিডিয়া মুখটা ঘুরিয়ে নিল।
-লিডিয়া..অ্যালফ্রেড তার কথা শেষ না করতেই ঘাড় ঘোরাতে দেখল মসৃণ মুখের একজন কালোলোক তার দিকে সশ্রদ্ধচিত্তে তাকিয়ে আছে।
লিডিয়া কঠিন স্বরে বলল-খবর কী-হারবারি:
হারবারি নীচু গলায় বিনীতভাবে বলল–ম্যাডাম, খ্রীস্টমাসের সময় আরো দুজন অতিথি আসবে সেকথা আপনাকে বলতে বললেন, আর তাদের জন্য ঘর ঠিক করে রাখতে বললেন।
লিডিয়া চমকে উঠে বলে আরো দুজন অতিথি?
হারবারি নরম গলায় বলল-ম্যাডাম একজন ভদ্রলোক ও আর একজন তরুণী।
অ্যালফ্রেড অবাক হয়ে বলল-তরুণী?
-হ্যাঁ, স্যার মি. মিলি সেই কথাই বলছিল।
লিডিয়া সঙ্গে সঙ্গে বলল–আমি ওর সঙ্গে দেখা করতে ওপরে যাচ্ছি।
–ম্যাডাম, আমায় ক্ষমা করবেন। মিঃ লী এখন ঘুমোচ্ছেন তিনি আমায় একথাও বলে দিয়েছেন যে এখন কেউ যেন তাকে বিরক্ত না করে।
হারবারি চলে যেতেই লিডিয়া বলল–এবার বুঝতে পারলে তো কেন আমি লোকটাকে পছন্দ করিনা। বেড়ালের মতো কেমন চুপচাপ বাড়িতে চলাফেরা করেন। তার চলার শব্দ কেউ শুনতেও পায় না।
লোকটিকে আমিও অপছন্দ করি। কিন্তু একটা কথা কী জান আজকালকার দিনে একটা ভালো পুরুষ নার্স পাওয়া কঠিন। আর তাছাড়া লোকটা ভালো কাজ জানে। আসল যে ব্যাপারটা হল বাবা ওনাকে পছন্দ করেন।
-সেটা না হয় হল কিন্তু অ্যালফ্রেড ঐ তরুণী লেডিটি কে?
তার স্বামী মাথা নেড়ে বলল তারও অজানা, তারা দুজনে দুজনকে দেখল। লিডিয়া আবার বলল–আমি কী চিন্তা করছি জান অ্যালফ্রেড? আমার ধারণা তোমার বাবা একঘেয়েমিতে ভুগছেন। তাই খ্রীস্টমাসে একটা নতুন বৈচিত্র্য আনতে চান।
আমাদের পরিবারে দুজন নুতন লোকের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়ে? বেচারা বুড়ো হয়েছে তাছাড়া খোঁড়া পায়ের জন্য পঙ্গু হয়ে আছেন অথচ কিছুদিন আগেও তার জীবন ছিল নানা অভিযানে পূর্ণ।