–মিঃ এণ্ড মিসেস অ্যালফ্রেড লী স্থায়ীভাবে বাস করে আর বাকীরা বাইরে থেকে বেড়াতে এসেছে।
এরপর সাগডেন তাদের সাইমন লীর ওপরতলার ঘরে নিয়ে গেল।
ঘটনাস্থলে প্রবেশ করে চেয়ার যত্রতত্র ছড়ানো, সর্বত্র রক্তের ছিট দেখে কর্নেল জনসন মন্তব্য করলনে-খুবই ভয়ঙ্কর। এ যেন কসাইখানা।
বৃদ্ধের মৃতদেহের সামনে বসে একজন মাঝবয়েসী ছেলে কী যেন পরীক্ষা করছিল।
ডাক্তার কিছু পেলেন নাকি?
–তদন্তের সময় আমি আপনাকে বৈজ্ঞানিক ভাষায় জানাবোখন। শূকরছানার মত কণ্ঠনালী, কাটা হয়েছে। এক মিনিটের মধ্যে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলেই তার মৃত্যু হয়েছে।
পোয়ারো হামলা দুটো খুঁচিয়ে দেখে মৃত দেহের দিকে তাকিয়ে রইল। এরপর ঘরের অবিন্যস্ত জিনিষগুলোর ওজন আন্দাজ করতে গিয়ে তার ভ্রু কুঁচকে উঠল।
বিড়বিড় করে পোয়ারো বলল–এমন দুর্বল বৃদ্ধ আর তবুও এসব ভারী ভারী জিনিষ।
জনসন সার্জেন্টের দিকে ফিরে বলল–ছাপগুলোর ব্যাপার কী?
–ঘরের সর্বত্র অনেক ছাপ দেখতে পেয়েছি স্যার। আর আলমারীর ওপর ঐ বৃদ্ধের হাতের ছাপ ছাড়া আর কারো হাতের ছাপ নেই।
এবার ডাক্তার অভিমত জানালোতাকে যেই খুন করুক না কেন নিশ্চয়ই তার গায়ে রক্ত লাগবে।
পোয়ারো বলল–প্রয়োজন নেই। রক্তক্ষরণ হয়েছে সম্পূর্ণভাবে কণ্ঠনালীর শিরা থেকে। অন্য শিরাগুলোর থেকে রক্ত ছিটকে যাবার সম্ভাবনাও কম। এখানে একটা কিছু আছে, সংঘর্ষ.. এবং রক্ত-রক্তের ধাঁধা…কিভাবে যে এর ব্যাখ্যা করব? চেয়ার, কার্পেট, টেবিলে এতে রক্তের ছড়াছড়ি। অমন শুকনো, রোগা, দুর্বল স্বাস্থ্যের বৃদ্ধের দেহে এত রক্ত আসে কী করে?
উত্তরে সাগডেন বলল–ঐ মহিলা, মিসেস অ্যালফ্রেড ফিসফিস করে বলেছিল–কে ভেবেছিল, ঐ বৃদ্ধটার দেহে এত রক্ত ছিল…,তখন কথাটার গুরুত্ব অনুভব করিনি।
পোয়ারো নরম গলায় বলল-ওটা লেডি ম্যাকবেথের উক্তি।
স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে অ্যালফ্রেড লী ছোট্ট স্টাডিরুমে এসে ঢুকল। সেখানে পোয়ারো, সাগডেন এবং চীফ কনস্টেবল অপেক্ষা করছিল।
কর্নেল জনসন এগিয়ে গিয়ে তাদের সঙ্গে পরিচিত হল এরপর মিঃ এণ্ড মিসেস লীর সঙ্গে পোয়ারোর পরিচয় করিয়ে দিল।
তারপর বলল–আজ রাতে যারা এই বাড়িতে ছিল তাদের একটা তালিকা পেয়েছি।
সাগডেন তালিকাটা মিঃ লীকে পড়ে শোনালেন।
অ্যালফ্রেড বলল–তালিকাটা ঠিক আছে।
–শুনেছি আপনার সব ভাইয়েরা এবং তাদের স্ত্রীরা এখানে খ্রীস্টমাসের ছুটিতে বেড়াতে এসেছেন? তবে মিস্ এস্ট্রাভাভোস আর মিঃ ফার এরা কারা? জানতে চাইলেন কর্নেল।
-মিস এস্ট্রাভোস আমার ভাগ্নী। আর মিঃ ফার, দক্ষিণ আফ্রিকার আমার বাবার একসময়ের পার্টনারের ছেলে।
হঠাৎ লিডিয়া বলে ওঠে–আসলে মিঃ ফার হঠাই এখানে এসে পড়ে। আমার শ্বশুরমশাই ওর পরিচয় পেয়ে ওকে এখানেই থেকে যেতে বলেন।
–আচ্ছা, মিসেস লী, আপনাদের চাকর-বাকর সকলকে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হয়?
-হ্যাঁ প্রায় সবাইকে বিশ্বাসযোগ্য বলেই মনে হয়। কেবল নবাগতা জোয়ান আর আমার শ্বশুরমশাইয়ের সাজভৃত্য সিডনী হারবারি ছাড়া। সে মাত্র একবছর হয়েছে এসেছে। তবে আমার মনে হয় আমার শ্বশুরমশাই তার কাজে সন্তুষ্ট ছিলেন। জোয়ান ছিল বিশ্রী স্বভাবের মেয়ে।
এবার কর্নেল জনসনকে জিজ্ঞেস করল মিঃ লী, এবার আপনি আজ রাতের ঘটনার কথা বলুন।
অ্যালফ্রেড নীচু গলায় বলতে শুরু করল–তখন সোয়া ছটা হবে ওর কাছে কিছুক্ষণ থেকে ওকে শুভরাত্রি জানিয়ে চলে আসি।
বাধা দিয়ে পোয়ারো বলল–আপনি তাকে ছটার সময় শুভরাত্রি জানিয়ে আসেন কেন? রাত্রে ওর সাথে আপনার আর দেখা হয় না?
অ্যালফ্রেড জানালো যে, তার বাবা হাল্কা খাওয়ার জন্য সন্ধ্যে সাতটায় শুয়ে পড়েন আর তারা খেয়ে-দেয়ে ওঠে আটটায়। সেইদিন ওরা যখন নীচে ডাইনিংরুমে সকলে খাচ্ছে ঠিক সেইসময় ওপর থেকে আসবাবপত্র পড়ে যাওয়ার আওয়াজ আর ঠিক তার পরেই তার বাবার ভয়ঙ্কর চিৎকার যা ভোলা যাচ্ছে না। শুনে এক মিনিট হতবাক হওয়ার পরই ওরা ওপরে গিয়ে যখন দরজা বন্ধ দেখল তখন দরজা ভাঙতে বাধ্য হল এবং ভেতরে…
কর্নেল জনসন আলফ্রেডের উদভ্রান্ত দৃষ্টি ক্ষীণ কণ্ঠস্বর শুনে তাকে থামতে বলল।
পোয়ারা জানতে চাইল-চিৎকারের সময় কে ছিল?
–আমার ভাই হ্যারি।
–আর কেউ ছিল না?
না।
-বাকী সকলে কোথায় ছিল?
-আমরা পারিবারিক আলোচনায় মেতে উঠি, জর্জ কাকে ফোন করতে চলে যায়, স্টিফেনও হঠাৎ উধাও হয় আর ডেভিড কোন ফাঁকে চলে যায় বুঝতেও পারিনি।
-তাহলে আপনি পরিবারের বিশেষ কোনো লোকের সাথে বিশেষ কিছু আলোচনা করছিলেন?
-আপনি কী বলতে চাইছেন মিঃ পোয়ারো? ফুঁসে উঠল লিডিয়া।
আপনার স্বামী এই মাত্র বললেন পারিবারিক আলোচনা, জর্জ, স্টিফেন, ডেভিড সকলেই চলে যায় যখন তখন এটা সীমাবদ্ধ আলোচনা!
-আমার দেওর হ্যারি বহুকাল বাইরে ছিল তাই তার সাথেই কথাবার্তা বলছিলেন আমার স্বামী।
এরপর জনসন হীরের কথা জানতে চাইলেন, অ্যালফ্রেড জানালো, সে হীরের ব্যাপারে জানে। তার বাবা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ঐ অখচিত হীরেগুলো এনেছিলেন এবং সবসময় নিজের ঘরের আলমারীতেই রাখতেন। এক একটা হীরের মূল্য দশ পাউণ্ডের কাছে তাও জানালেন অ্যালফ্রেড।
এরপর কর্নেল তাদের জানালো হীরেগুলো চুরি গেছে। ওরা দুজনে হতবাক হয়ে গেল।