চীফ কনস্টেবল জিজ্ঞাসা করলেন হীরে?
আমি তখন তাকে জিজ্ঞাসা করি আপনি কী করতে বলেছেন? তিনি তখন আমায় বললেন ঠিক আছে আপনি রাত নটা নাগাদ একবার আসুন। আপনাকে তখন সঠিক খবর জানাবো হীরেগুলো চুরি গেছে না যায়নি। ব্যাপারটা আমার কাছে রহস্যজনক লাগলেও আমি তার প্রস্তাবে রাজী হয়ে যাই।
জনসন বলল–এটা সত্যিই রহস্যজনক।
অনেক রকম ধারণাই আমার আছে। এখানে কৌতুকের কোনো প্রশ্নই নেই। আমার দৃঢ়বিশ্বাস হীরেগুলো চুরিই হয়েছে। কিন্তু ঐ বৃদ্ধ লোক নিশ্চিত নন? কে চুরি করতে পারে ঠিক জানেন না। তবে তিনি দুজন লোকের ওপর সন্দেহ করেছেন। এক তার বাড়ির চাকর, আর দ্বিতীয় জন তার পরিবারের একজন সদস্য।
পোয়ারো মাথা নেড়ে সায় দিয়ে বলেন–এর থেকে বোঝা যায় তার মনোভাব বেশ ভালোই ছিল। হয়তো তিনি এ কারণে পুলিশকে জানিয়েছেন, যদি তারা অপরাধ কবুল করেন তাহলে তিনি ব্যাপারটা ধামাচাপা দেবেন।
জনসন বললেন–আর যদি তার সন্দেহ নিরশন না হয়?
তিনি তাহলে পুলিশের হাতে কেসটা তুলে দেবেন।
–আচ্ছা, পরিবারের কে সেই সদস্য। সেই বিষয়ে আপনার কোনো ধারণা আছে?
–না স্যার।
মাথা নেড়ে জনসন বলল–ঠিক আছে তারপর কী হল বলুন।
সাগডেন আবার বলতে শুরু করল। ঠিক নটা পনেরো, আমি দরজায় বেল টিপতে যাবো আর ঠিক সেই সময়ই আমি ভেতর থেকে একটা আর্ত চিৎকার এবং সকলের সম্মিলিত চিৎকার শুনতে পাই। শুনে আমি বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি এবং ঘনঘন বেল টিপতে থাকি। কিন্তু তিন-চার মিনিটের আগে দরজা খোলা হয়নি। যাই হোক যে চাকরটা এসে দরজা খোলে সেই চাকরটা জানায় লী খুন হয়েছে। আমি তখন তাড়াতাড়ি ওপরে উঠে যাই। গিয়ে দেখি ঘরের সব আসবাবপত্র ছড়ানো ছেটানো। আর লীর রক্তাপ্লুত দেহটা ফায়ার প্লেসের সামনে পড়ে আছে। তার গলা দিয়ে তখন রক্ত বেরোচ্ছে। কার্পেটটা লালে লাল হয়ে গেছে।
চীফ কনস্টেবল তীক্ষ্ণ স্বরে বললেন হয়তো তিনি নিজেই এইরকম করেছেন।
সাগডেন মাথা নেড়ে বলল–অসম্ভব স্যার, যেভাবে চেয়ার টেবিল ওলটপালট ছিল তাতে মনে হয় না, তিনি তার পঙ্গু পা নিয়ে এসব করতে পারেন। আর তিনি যদি সত্যিই আত্মহত্যা করতেন তবে সেই ধারালো ছুরিটা পাশে পরে থাকতে দেখা যেত। এখানে কিন্তু সেইরকম কিছুই হয়নি।
-হ্যাঁ, আপনার সিদ্ধান্তই ঠিক।
–এর থেকে কী অনুমান করা যায়? এই বাড়ির কেউ এইরকম নিষ্ঠুর কাজ করে থাকবে। বাইরের কেউ তাকে খুন করে পালাবে কী ভাবে?
-জানালাগুলো বন্ধ ছিল না ভোলা ছিল?
–তার ঘরের দুটো জানালার একটা বন্ধ আর লক করা ছিল। আর অপরটি ইঞ্চিখানেক ফাঁক করা ছিল। সেখানে কারো পায়ের বা হাতের ছাপ ছিল না। আর সেখান দিয়ে কেউ পালাতে পারে আমি তা চিন্তাই করতে পারি না।
জনসন বলে উঠল–আশ্চর্য, একটা বন্ধ ঘরে একজন খুন হল অথচ খুনী কোন পথে পালালো তা বোঝা যাচ্ছে না। এইরকম অদ্ভূত হত্যাকাণ্ড গোয়েন্দা গল্পেও পাওয়া যায় না। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় এক অতি প্রকৃত শক্তির কাজ।
সাগডেন সূক্ষ্ম হাসি হেসে বলল–না স্যার, ঠিক ততটা মন্দ আমার মনে হয় না।
–কিন্তু আপনি যে বলেছিলেন দরজাটা ভেতের দিক থেকে বন্ধ ছিল।
সুপারিনটেন্টে একটা চাবি বের করে টেবিলের উপর রেখে বলল-দেখুন এতে কোনো হাতের ছাপ নেই। একটা ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে ভালো করে পরীক্ষা করে দেখুন।
সামনের দিকে ঝুঁকে দুজনে চাবিটাকে ভালো করে পরীক্ষা করতে লাগল। পোয়ারো চাবির শেষ প্রান্তে কতকগুলো দাগ দেখতে পেল।
-হ্যাঁ দেখতে পাচ্ছি। চাবির গর্তের ভেতর দিয়ে চাবিটা সাঁড়াশি জাতীয় কোনো বস্তু দিয়ে ঘরের ভেতরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এর থেকে মনে হতে পারে ভেতর থেকে যখন দরজা বন্ধ ছিল তখন এটা একটা আত্মহত্যার ঘটনা। খুনী নিশ্চয়ই প্রথমে ঘটনাটা এইভাবে সাজিয়ে থাকবে। কিন্তু একটা প্রশ্ন আপনাদের খুনী যদি এতই চতুর, তাহলে একটা অস্ত্র ফেলে গেল না কেন? যাতে মনে হতে পারে সেই অস্ত্র দিয়েই মিঃ লী আত্মহত্যা করেছেন। পোয়ারো বলল –অস্ত্র যখন নেই তাহলে ধরে নেওয়া যাক এটা একটা আত্মহত্যার ঘটনা না। এটা ধরে নেওয়া যেতে পারে খুনীর পক্ষে একটা মারাত্মক ভুল।
সুপারিনটেন্টে সাগডেন বললেন,–আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি সব অপরাধীই একটা ভুল করে যাবেই।
পোয়ারো বলে–যাই হোক; ভুল করা সত্ত্বেও অপরাধী অপরাধ এড়িয়ে পালিয়ে যেতে পেরেছে। আমার অনুমান তাকে আমরা খুব শীঘ্রই সনাক্ত করতে পারব।
এই বাড়ির কাউকেই তো আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করিনি। সাগডেন দৃঢ়ভাবে বলল।
কর্নেল বলল-দুর্ঘটনার সময় যারা এ বাড়িতে ছিল তাদের কোনো তালিকা আছে?
সাগডেন নোটবুক পড়তে লাগল–মিঃ এবং মিসেস অ্যালফ্রেড লী, এম. পি. মিঃ জর্জ লী এবং তার স্ত্রী। মিঃ হেনরি লী, মিঃ এণ্ড মিসেস ডেভিড লী, মিস পিলার এস্ট্রাভাডোস, মিঃ স্টিফেন ফার, তারপর চাকর-চাকরানি, খানসামা এডওয়ার্ড ট্রেসিলিয়ান, ভৃত্য ওয়ালটার চ্যাম্পিয়ান, রাঁধুনী এমিলি রীভস, রান্নাঘরের পরিচারিকা কুইন জোন্স, প্রধান পরিচারিকা গ্লোডিয়া সেপাট, দ্বিতীয় পরিচারিকা গ্রেস ব্রেটে, তৃতীয় পরিচারিকা বেগ্রিস মস্কোব, পরিচারিকা জোরন ফেঞ্চ, সাজভৃত্য সিডনি হারবারি।
–কতজন পরিবার এখানে স্থায়ীভাবে বাস করে, আর কতজনই বা খ্রীস্টমাসে বেড়াতে এসেছে? কর্নেল জিজ্ঞাসা করল।