-খ্রীস্টমাসটা হল শান্তি, শুভেচ্ছা বিনিময়ের সব জায়গায় শুধু প্রীতি আর শুভেচ্ছা জানানো।
এরকুল পোয়ারো তার চেয়ারে বসে ভালো করে জনসনকে দেখছিল। সে এখানে খ্রীস্টমাস উপলক্ষে জনসনের অতিথি হয়ে এসেছে। সে বলে উঠল তাহলে তোমাদের ধারণা হল-খ্রীস্টমাসের সময় কোনো অপরাধ অনুষ্ঠান হয় না? কেন হয় না? এর কারণটাই বা কী হতে পারে?
জনসন একটু চিন্তা করে নিয়ে বলল–কেন? তোমাকে আমি আগেই বলেছি না খ্রীস্টমাসের সময় মানুষের মনে সৎ চিন্তা প্রতিষ্ঠা করার সময়। অতীতের সমস্ত হিংসা, বিবাদ ভুলে পরস্পর মৈত্রী বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া এইরকম আর কী?
এরকুল পোয়ারো নিজের মনে বলে উঠল–ইংরেজরা এত অনুভূতিপ্রবণ ছিল যে, তারা কখনও মন্দ কিছু কল্পনাই করতে পারত না।
জনসন জোর গলায় বলল–সেই পুরানো দিনের ঐতিহ্যপূর্ণ উৎসবের কথা ভাবলে বরং লাভই হয়।
যাই হোক, এসো আমরা ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখি তোমার মতে খ্রীস্টমাস হল–আনন্দ উপভোগ করার সময়। তার মানে প্রচুর খাওয়া-দাওয়া আর মদ্যপান করা। আর তার মানেই অতিরিক্ত ভক্ষণ। আর তার ফলে হজমের গণ্ডগোল, তার থেকে শরীরে অস্বস্তি।
পোয়ারো বলল-জনসন, এর থেকেই অপরাধের উৎপত্তি হয়ে থাকে।
–আমি ঠিক এই ব্যাপারে একমত নই। এর আর একটা দিক হল–খ্রস্টমাস হল প্রীতি ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের পন্থা।
–এর অর্থ হল যুদ্ধ থেকে বিরত থাকা। পোয়ারো তার স্বপক্ষে মত প্রকাশ করল–যেমন ধরুন পরিবারের কিছু সদস্য বিদেশে কাটিয়ে খ্রীস্টমাসের সময় মিলিত হয়। আবার বন্ধু তুমি এটা অস্বীকার করবে না যে, দীর্ঘদিন অদর্শনের জন্য পুরোনো ক্ষোভ, মনোমালিন্য জমে থাকার ফলে পরে সাক্ষাতের সময় সেটা সুখের না হয়ে দুঃখেরও হতে পারে। আর এই অশান্তি থেকে অপরাধের জন্ম হতে পারে।
কর্নেল জনসন বলল–আমি কিন্তু ঠিক এই ব্যাপারটা মেনে নিতে পারছি না।
-আরে, তোমার তো গ্রহণ করার দরকার নেই। যা গ্রহণ করার আমিই করছি। মানুষের স্বভাব বা ব্যবহারে যে কোনো পরিস্থিতিতে বদলে যেতে পারে। আর সেক্ষেত্রেও শান্ত প্রকৃতির মানুষও প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে যেতে পারে।
কর্নেল তার দিকে একবার সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে দেখল।
–আমি বুঝতে পারি না কখন যে তুমি অস্থির হয়ে ওঠো আর কখনই তুমি আমার পেছনে লাগার জন্য তৎপর হয়ে ওঠো।
পোয়ারো হেসে বলল–আমি খুব মজার লোক। আমি এক কৃত্রিম পরিবেশ তৈরী করে মানুষের স্বাভাবিক অবস্থার কথা জানতে পারি।
ঠিক সেই সময়ই কর্নেল জনসনের চাকর এসে বলল–স্যার, সুপারিনটেন্ডেন্ট সাহেবের ফোন এসেছে।
-তুমি যাও আমি আসছি।
ঠিক তিন মিনিট পরে সে ফিরে এল এবং জানাল–স্যার, যতসব অনাসৃষ্টির কাজ এই খ্রীস্টমাস ইভের শুভ দিনে।
পোয়ারো ভ্রূ উপরে তুলে বলল–অবশ্যই এটা খুন।
বৃদ্ধ সাইমন লী ছিলেন অনেক ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে একজন। আমার বিশ্বাস তিনি হীরের ব্যবসা করে প্রচুর টাকার মালিক হয়েছিলেন। তারপর তিনি সেই টাকা মেসিন তৈরীর কারখানায় লাগিয়ে ফুলিয়ে ফাপিয়ে তোলেন।
পোয়ারো জিজ্ঞাসা করলেন–তিনি সবার প্রিয় ছিলেন তো?
–তাকে সবাই অপছন্দ করত। বহুবছর তিনি পঙ্গু ছিলেন। অবশ্য তাঁর সম্পর্কে আমি বিশেষ কিছুই জানি না। শুধু আমি এইটুকু জানি যে, তিনি আমাদের দেশের এক বিরাট পুরুষ ছিলেন।
–এই কেসটা তাহলে একটা বিরাট আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারে?
–আমাকে খুব শীঘ্রই লংডেন গিয়ে পৌঁছতে হবে।
জনসন বলল–একটা কথা তোমাকে বলতে লজ্জা পাচ্ছি। সাগডেন মানুষ হিসেবে ভালো সাবধানী এবং পরিশ্রমী। কিন্তু অনুমান ক্ষমতা অতটা প্রখর নয়। তাই মনে হয় তোমার উপদেশ এখানে কাজে লাগতে পারে।
পোয়ারো সঙ্গে সঙ্গে জানালো–এতে আমি খুশীই হবে। আমাকে তোমার একজন করে ধরে নিতে হবে। আমি সুপারিনটেন্ডেন্টের মনে আঘাত দিতে চাই না।–এই কেসটা তার আমার নয়, যে সরকারী ভাবে আমি তার পরামর্শদাতা।
জনসন বলল-পোয়ারো তুমি একজন সজ্জন ব্যক্তি। তারপর তারা দুজন লংডেনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করল।
একজন কনস্টেবল সামনের দরজা খুলে দিল।
সাগডেন বলল–স্যার আপনাকে পেয়ে আমি খুব খুশী। প্রথমে আমরা মিঃ লীর স্টাডিরুম থেকে ঘুরে আসি। সেখানে এই সম্বন্ধে একটু আলোচনা করে নিতে চাই।
চীফ কনস্টেবল পোয়ারোর সঙ্গে সাগডেনের পরিচয় করিয়ে দিল।
কর্নেল জনসন অধৈর্য হয়ে বলল-সাগডেন তাহলে এবার ঘটনাটা জানা যাবে।
-হ্যাঁ, স্যার এটা যে খুন সে বিষয়ে নিঃসন্দেহ। ডাক্তারের কাছ থেকে জেনেছি গলার শিরা কেটে ফেলা হয়েছে। কিন্তু সমস্ত ব্যাপারটাই কেমন যেন অদ্ভুত।
-আপনাকে আমি সমস্ত ঘটনা জানাতে চাই স্যার।
-আজ বিকেল পাঁচটার পর এগজেনফিল্ড পুলিস স্টেশনে মিঃ লী ফোন করে আমাকে বলেন, আজ সন্ধ্যে আটটায় তিনি আমার সঙ্গে দেখা করতে চান। আর তার সঙ্গে তিনি এও বলে দেন, বাড়ির খানসামা যদি জিজ্ঞাসা করে কেন আসছি তাহলে আমি যেন বলি পুলিশ চ্যারিটির চাঁদা আদায় করতে।
–তার অর্থ এই দাঁড়াচ্ছে কোনো একটা অজুহাতে এই বাড়িতে প্রবেশ করা।
–ঠিক তাই স্যার। মিঃ লী একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি তাই ওনার অনুরোধ রাখতে আটটার কিছু আগেই আসি।লী আমাকে তার ঘরে ডেকে পাঠান। তিনি একটা ফায়ার প্লেসের সামনে বসেছিলেন। তিনি একটা ড্রেসিং গাউন পরেছিলেন, আমি বসার পর তিনি আমাকে জানালেন যে, ওনার আলমারি থেকে কতকগুলি মূল্যবান হীরে চুরি গেছে। সেগুলো কয়েক হাজার পাউণ্ডের।