রিসিভারটা নামিয়ে রেখে সে আটজনের মুখের দিকে একবার দেখে নিয়ে বলল–কী ব্যাপার বল তো? তোমাদের সবাইকে খুব বিষণ্ণ লাগছে। ব্যাপার কী?
অ্যালফ্রেড বলল–আপনি আমাদের ডেকে পাঠিয়েছেন?
সাইমন তক্ষুনি বলে উঠল-ওহো দুঃখিত-সেরকম কিছুই নয় খুবই স্বাভাবিক। আচ্ছা, তোমাদের কী মনে হয়? এটা একটা পারিবারিক মিলন সভা? না, মোটে সেটা না। মধ্যাহ্নভোজের পর তোমাদের কারুরই আসার দরকার নেই। আমি খুব ক্লান্ত আমি একটু ঘুমবো। খ্রীস্টমাসের উৎসবের জন্য একটু সতেজ হয়ে উঠতে চাই আমি। তিনি এ সমস্ত কথা বলার পর দাঁত বার করে হাসলেন।
জর্জ বলল–নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই।
সাইমন জর্জের দিকে তাকিয়ে বলল-শোন, জর্জ তোমায় একটা কথা বলি। তোমার মাসোহারা বোধহয় কমতে পারে। কারণ এখানকার খরচ বেড়েছে কিন্তু আয় আগের তুলনায় কমেছে।
জর্জের মুখটা রাগে লাল হয়ে গেল। সে বলল-কিন্তু যেহেতু সংসারের খরচ আগের থেকে বেড়েছে সেহেতু আমার মাসোহারা বাবদ টাকাটা যদি কমিয়ে দেন তাহলে আমাকে খুব অসুবিধায় পড়তে হবে।
-কেন তোমার স্ত্রী ইচ্ছা করলেই বাজে খরচ কমিয়ে ঐ টাকায় সংসার চালাতে পারে। আর তাছাড়া, তিনি তো খুবই বুদ্ধিমতী আশা করি এখন থেকে তিনি তাই করবেন। জানি তুমি আগে কখনও এরকম আর্থিক সংকটে পড়োনি। এখন তুমি যেতে পারো।
এরপর সাইমন ক্লান্ত হয়ে চেয়ারে গা এলিয়ে দিলেন।
এক এক করে সবাই চলে গেল। শুধু হিলডা দরজার সামনে এক মুহূর্তের জন্য দাঁড়িয়ে আবার ফিরে এল সাইমনের সামনে।
সাইমন একবার চোখ মেলে তাকাতে গিয়ে চোখের সামনে হিলডাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিরক্ত হল এবং বলল-কী ব্যাপার তুমি এখনও এখানে দাঁড়িয়ে আছ?
হিলডা বলল-দেখুন, আপনার চিঠির বক্তব্য অনুযায়ী আমি ডেভিডকে অনুরোধ করেছিলাম এখানে আসার জন্য।
-হ্যাঁ, তাতে কী হল?
-আপনি পরিবারের সকলকে চারপাশে রেখে আনন্দ উপভোগ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু যা বললেন তার জন্য তো নয়। আপনি কী আমাদের নিয়ে কৌতুক করতে চেয়েছিলেন?
সাইমন মুখ দিয়ে একটা অদ্ভুত শব্দ করে বলল–আমি কৌতুক বিশেষজ্ঞ। কিন্তু তা বলে কেউ আমায় তার জন্য প্রশংসা করুক তা আমি চাই না। আমি কেবল সেটা উপভোগ করতে চাই।
হিলডা কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। সাইমনের মাথায় একটা চিন্তা হল। সে তীক্ষ্ণ স্বরে জানতে চাইল–কী চিন্তা করছ তুমি?
–আমার ভয় করছে।
–ভয়-কাকে আমাকে?
–না আপনাকে নয়। আপনার জন্য আমার ভয় হচ্ছে।
বিচারপতি যেমন শেষ রায় দিয়ে চলে যায়। হিলডাও তেমন করে তার শেষ কথাটা বলে ঘর থেকে চলে গেল।
সাইমন খুব আশ্চর্য হয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর ধীরে ধীরে আলমারির দিকে এগিয়ে গেল এবং বিড়বিড় করে নিজের মনে বলে উঠল–আমার সুন্দর জিনিষগুলো একবার দেখাই যাক না…
পৌনে আটটার সময় দরজার বেলটা বেজে উঠল। ট্রেসিলিয়ান দরজা খুলতে গেল। সে ফিরে আসতেই হারবারির সঙ্গে মুখোমুখি হল। সে তখন ট্রেতে কফির কাপগুলো সাজিয়ে রাখছিল।
-পুলিশ সুপারিনটেন্টে মিঃ সাগডেন। আরে তুমি ভালো করে চেয়ে দেখ তুমি কী করছ।
কফির একটা কাপ তার কাঁপা কাঁপা হাত থেকে পড়ে ভেঙে গেল।
ট্রেসিলিয়ান দুঃখ প্রকাশ করে বলল–ছিঃ ছিঃ আমি এগারো বছর ধরে কাপ ডিস ঘোয়া মোছা করছি। একটা কাপ বা একটা ডিস আজ পর্যন্ত আমার হাত থেকে ভাঙেনি। আর তুমি একদিন হাত দিয়েই ভাঙলে।
আতঙ্কিত মুখ করে সে বলল–আমি দুঃখিত মিঃ ট্রেসিলিয়ান। জানি না কেমন করে আমার কাছ থেকে এমন অঘটন ঘটে গেল। তুমি কী যেন বলছিলে? এ বাড়িতে পুলিশ সুপার এসেছেন?
-হ্যাঁ, মিঃ সাগডেন।
হারবারি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করল–কেন কী চায় সে?
–দুঃস্থ পুলিশদের সাহায্য নিতে এসেছেন।
–ও, আচ্ছা, তাই বল। ঠিক আছে এখন আমি চললাম, এবার তার গলার স্বর স্বাভাবিক হল।
–কোথায়? সিনেমায়?
–সেই রকমই মনে হয়। টা টা মিঃ ট্রেসিলিয়ান।
পুলিশ সুপার চলে যাওয়ার পর নৈশভোজের আয়োজন করতে ব্যস্ত হয়ে উঠল। শেষ অতিথি ম্যাগজলেন ড্রইংরুমে প্রবেশ করতেই বৃদ্ধ খানসামা সেখানে উপস্থিত হয়ে বললেন–নৈশভোজের খাবার টেবিলে দেওয়া হয়ে গেছে।
আর এদিকে মিঃ ডেভিডের ব্যাপার। তাকে দেখে খুব চিন্তান্বিত লাগছিল। ডেভিডকে দেখতে ঠিক তার মায়ের মত। আর এখন তাকে পরিপূর্ণ পুরুষের মত লাগে। তবে সে চশমার কাঁচ দিয়ে দেখল সে একটু নার্ভাস।
কিছুক্ষণ আগে পুলিশ আসার খবরে হারবারির মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল ঠিক সেই রকম লাগছিল ডেভিডের মুখ।
আজ রাতে হ্যারিকে সবচেয়ে বেশী মন মরা দেখাচ্ছিল। মাঝে মাঝে সে অ্যালফ্রেডের দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছিল যে তাদের ভ্রাতৃপ্রেম নষ্ট হবার নয়। অ্যালফ্রেড তবুও হ্যারিকে সহ্য করতে পারছে না।
কিন্তু মিঃ সাইমন সর্বাপেক্ষা স্নেহ করেন হ্যারিকে যেটা অ্যালফ্রেডের কাছে অসহ্য। আর সে যতই বাবাকে শ্রদ্ধা করুক না কেন মিঃ লী তাকে বেশী পাত্তা দেয় না।
রাতের আহারের শেষে লী পরিবারের পুরুষরা একে একে গিয়ে ড্রইংরুমে বসল। এদিকে ডাইনিংরুমে চারজন মহিলা পর পর বসে আছে অথচ কেউই কারো সাথে কথা বলতে প্রয়োজন বোধ করছে না। বৃদ্ধ ট্রেসিলিয়ানের এই ব্যাপারটা খুবই খারাপ লাগল।
প্যান্ট্রি থেকে কফির ট্রেটা হাতে করে নিয়ে সে এবার ডাইনিংরুমে হাজির হল। ডাইনিংরুম থেকে প্যান্ট্রিতে ফিরে যাবার সময় সে ডাইনিংরুমের দরজা খোলার শব্দ পেল। ডেভিড লী যে এতক্ষণ ডাইনিংরুমে বসেছিল সে তা লক্ষ্য করেনি। এখন ডেভিড ডাইনিংরুম থেকে ড্রইংরুমে প্রবেশ করল।