তাকে বাধা দিয়ে আগন্তুক বলল–ঠিক আছে আপনি শুধু মিঃ লীকে এটা দিয়ে আসুন। বলে পকেট থেকে একটা খাম বের করে তার হাতে দিল।
–ঠিক আছে।
কাগজটা খামের ভেতর থেকে পড়তে গিয়ে সাইমন লী অবাক হয়ে গেলেন। তার স্ত্র জোড়া কুঁচকে উঠল ঠিকই তবুও তিনি হেসে উঠলেন। বললেন–সবদিক দিয়েই তাহলে ভালোই হল।
এই মূহুর্তে আমি এবেনেজাপকারের কথাই ভাবছিলাম। সে আমার পার্টনার ছিল কিম্বারলীতে। তার ছেলে এসেছে এখন।
স্টিফেন ফারকে খুব নার্ভাস লাগছিল। ওর কথা বলার সময় দক্ষিণ আফ্রিকার একটা টান লক্ষ্য করা যাচ্ছিল।
–তুমিই তাহলে এদের ছেলে। তোমাকে দেখে আমার খুব আনন্দ হচ্ছে। বুড়ো পিলারের দিকে তাকিয়ে বলল–আমার নাতনী, পিলার এস্ট্রাভাডোস।
পিলার গম্ভীর স্বরে বলল–কেমন আছ তুমি?
ফার মেয়েটির আন্তরিকতা দেখে মুগ্ধ হয়ে গেল। মিস এস্ট্রাভাডোস, তোমার পরিচয় জানতে পেরে আমি খুব খুশী হলাম।
পিলার ধন্যবাদ জানাল।
সাইমন কী বলল–বস স্টিফেন, বড় দিনের সময় তোমার কিন্তু আমাদের সঙ্গে থাকতে হবে। অবশ্য যদি তোমার অন্য কোনো প্ল্যান না থাকে।
না না, আমার তেমন কিছু নেই এবং আমার পছন্দও নয়।
বুড়ো পিলারের দিকে তাকিয়ে বলল–সব ঠিক হয়ে যাবে, লিডিয়া বল আমাদের একজন অতিথি এসেছে।
পিলার চলে যেতেই সাইমন লী তার কাছ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা দেশটার খবর নিতে থাকে।
কিছুক্ষণ পর লিডিয়া ঢুকতেই সাইমন লী ওর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলল–এ আমার এক বন্ধুর ছেলে। আমাদের সঙ্গে বড়দিনের উৎসব উপভোগ করতে চায়। তার জন্য একটা ঘরের ব্যবস্থা করো।
আগন্তুককে ভালো করে দেখে নিয়ে লিডিয়া বলে–অবশ্যই।
সাইমন বলে–এটি আমার পুত্রবধূ।
–এইরকম পারিবারিক উৎসবে আমার একটু অস্বস্তি হচ্ছে।
সাইমন বলল–কেন বাছা, তুমি তোমাকে আমাদের পরিবারের একজন ভাবার চেষ্টা করো।
৩. ভীমরুলের বাসা
০৩.
২৪শে ডিসেম্বর।
হ্যারি বলল–বাবা আপনি সত্যি আমায় এখানে থাকতে বলছেন? এ যেন ভীমরুলের বাসায় থাকা।
সাইমন রুক্ষকণ্ঠে বলল–তুমি কী বলতে চাইছ?।
হ্যারি বলল–অ্যালফ্রেড ভাই হিসাবে ভালো, তবে আমি থাকলে সে বিরক্ত হবে।
–তোমাকে আমি যা বলছি তাই হবে। বাড়িটা যখন আমার তখন আমি যা চাইব তাই হবে। আমার ইচ্ছা তুমি এখানে চিরকালের মতো থাকে বিবাহ কর।
–আমি কাকে বিবাহ করবো? কেউ তার নিজের ভগ্নীকে বিবাহ করতে পারে না। আর তরুণী পিলার সত্যিই আকর্ষণীয়া।
–তুমি সেটা লক্ষ্য করেছ নাকি?
–জর্জ এদিক থেকে খুব ভালো করেছে। এ মেয়েটি কে?
–আমি তা কী করে জানবো? তবে আমার শোনা কথা সে নাকি একজন অবসরপ্রাপ্ত নৌবাহিনীর অফিসারের মেয়ে।
–জর্জ সতর্ক না হলে ঐ মেয়েটাকে নিয়ে ঝামেলায় পড়তে পারে।
সাইমন বলে উঠলেন–জর্জ চিরকালই একটু বোকা ধরনের ছেলে ছিল।
হ্যারি বলে উঠল-মেয়েটি কীসের জন্য বিয়ে করতে চায়? টাকার জন্য? হ্যারি নিজে থেকে পুনরায় বলল–আপনার কী মনে হয় অ্যালফ্রেডের ব্যাপারটা কী আপনি মিটিয়ে নিতে পারবেন?
সাইমন গম্ভীর ভাবে বলল–খুব শীঘ্রই আমরা এই ব্যাপারে একমত হতে পারব। তারপর হারবারিকে বললেন অ্যালফ্রেডকে ডেকে আনার জন্য।
অ্যালফ্রেড দৌড়তে দৌড়তে এসে জিজ্ঞাসা করল–বাবা আপনি আমায় ডেকেছেন?
-হ্যাঁ বস, আবার সবকিছু নতুন করে সাজিয়ে নিতে হবে। এই বাড়িতে আরো দুজন মানুষ আমাদের সঙ্গে থাকবে।
–আরো দুজন?
-এখন থেকে এটাই পিলারের নিজের বাড়ি। হ্যারি আমাদের ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এসেছে।
অ্যালফ্রেড জিজ্ঞাসা করল–হ্যারি এখানে থাকতে এসেছে?
হ্যারি নিজেই বলল–কেন নয় বস?
অ্যালফ্রেড তার দিকে তাকিয়ে বলল-তুমি বাবার সঙ্গে যেমন খারাপ ব্যবহার করে চলে গিয়েছিলে তারপরও তুমি এখানে থাকতে চাও?
হ্যারি হাত নেড়ে বলল–সেটা এখন অতীত হয়ে গেছে আর সেটা তোমার ব্যাপার না আমার ব্যাপার। তিনি যদি সব ভুলে আমায় ক্ষমা করতে চান।
সাইমন বলে উঠল-হা, সেটাই আমার ইচ্ছা। যতই হোক হ্যারি আমার পুত্র।
সাইমন অ্যালফ্রেডের কাঁধে হাত রেখে বলল–ও যখন এখানে এসেছে তখন এখানেই থাকুক। তাছাড়া, ও আমার খুব প্রিয়।
অ্যালফ্রেড মুখটা বিবর্ণ করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
হ্যারিও হাসতে হাসতে তার পিছু নিল।
ওরা চলে যাবার পর সাইমন হারবারির দিকে তাকিয়েই বলল–তোমার এখন অনেক কাজ বাকী আছে। মধ্যাহ্নভোজের পর সবাইকে এখানে নিয়ে আসবে।
-হা মহাশয়।
দাঁড়াও তোমাকে আমার আরো কিছু বলার আছে। ওরা যখন এখানে আসবে তুমিও তখন ওদের সঙ্গে সঙ্গে এখানে আসবে। আর যদি কখনো বারান্দায় আসো তাহলে এমনভাবে মুখে আওয়াজ করবে যাতে আমি শুনতে পাই। কোনো রকম ভনিতা করবে না বুঝতে পারলে?
-হ্যাঁ মহাশয়।
নীচে নেমে সে ট্রেসিলিয়ানকে বলল–তুমি না বলেছিলে আমরা একটা সুন্দর খ্রীস্টমাস উপভোগ করতে চলেছি।
-তুমি কী বলতে চাও? ধৈর্য ধরো সবকিছুই দেখতে পাবে আমরা একটা সুন্দর খ্রীস্টমাস ভোগ করতে চলেছি।
ওরা যখন দরজার কাছে এসে দাঁড়ালো সাইমন তখন ফোনে কার সঙ্গে কথা বলছিলেন। হাত নেড়ে সকলকে ঘরের ভেতরে আসতে বললেন এবং বসতে বললেন-আমার কথা বলতে এক মিনিটও লাগবে না।
হকিন্স এ্যাণ্ড ব্রেসের চার্লটন,-চার্লটন তুমি? আমি সাইমন লী কথা বলছি। আমার একটা নতুন উইল তৈরী করার আছে। হা হা, যা বলছি শোন, তাড়াতাড়ির কিছু নেই। সবকিছুর পরিবর্তন হয়ে গেছে। তোমার খ্রীস্টমাস নষ্ট করো না। বক্সিং দিবস কিংবা তার পরের দিন এসো। না না, আমি ঠিক আছি এতো তাড়াতাড়ি মরছি না।