পিলার তার কথায় সায় দিল।
-হা সে খুব সুন্দর ছেলে, মন খুলে সে হাসতে পারে। আমি তাকে খুব ভালোবাসি।
বয়স্ক লোকটি পিলারের দিকে তাকিয়ে বললেন–হ্যারিই আমার উপযুক্ত ছেলে। তার মেয়েদের সঙ্গে একটা গোপন সম্পর্ক ছিল। আমার জীবনটাও খুব ভালো ছিল। সবকিছুই পর্যাপ্ত পরিমাণে ছিল।
পিলার বলে উঠল–আমাদের স্পেনে একটা প্রবাদ প্রচলিত আছে। সেটা এইরকম–ঈশ্বর বলেছেন তোমার যা পছন্দ নিয়ে নাও তার দাম দিয়ে দাও।
–এটাই ভালো। তোমার যা পছন্দ নিয়ে নাও..আমি তাই করেছি। আমার সারা জীবন যখন যা মনে হয়েছে…
–হঠাৎ পিলার গম্ভীর গলায় বলে উঠল–তার দাম দিয়েছিলেন?
সাইমনের মুখের হাসি মিলিয়ে গেল–এ তুমি কী প্রশ্ন করছ?
-ঠাকুরদা আমি প্রশ্ন করছি–আপনি তার দাম দিয়েছিলেন?
তিনি আস্তে আস্তে বললেন–আমি জানি না। তিনি তার মুঠো করা হাতটা চেয়ারে ঠুকে বললেন-তুমি একথা কেন বলতে গেলে নাতনী?
পিলার উত্তরে বলল–আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি।
সাইমন বললেন-তুমি একটি শয়তানের বাচ্চা।
পিলার ঠাণ্ডা গলায় বলল–আপনিই আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
-হ্যাঁ, তুমি আমার কন্যা জেনিয়ার মেয়ে। তোমার সঙ্গে আমার রক্তের সম্পর্ক আছে। আর তাছাড়া, অনেকদিন তোমার মতো সুন্দরী যুবতী দেখিনি তাই।
পিলার মুচকি মুচকি হাসছিল।
সাইমন বলে উঠলেন–কিন্তু মনে রেখো তুমি আমাকে বোকা বানাতে পারবে না। আমি জানি তুমি কেন এতক্ষণ ধরে ধৈর্য ধরে আমার পাশে বসেছিলে–শুধু আমার টাকার লোভে। অথবা তুমি তোমার ঠাকুর্দাকে ভালোবাসার ভান করো।
না, আমি আপনাকে ভালোবাসিনা আপনাকে অপছন্দ করি। এটা সত্য এবং আপনার বিশ্বাস করা উচিত। আমি ভালো করেই জানি আপনি তোক ভালো নন। আমি সেটা পছন্দ করি আর এটাও ঠিক আপনি বাড়ির অন্য সব লোকেদের চেয়ে খাঁটি। এছাড়া, আমার যেটা সবচেয়ে পছন্দ যে, আপনি অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন। যাকে বলে অ্যাডভেঞ্চারস লাইফ।
–জানো পিলার, আমাদের মধ্যে জিপসির রক্ত আছে যাকে বলে ভবঘুরে বা যাযাবর। তবে হ্যারি ছাড়া আর কারো ওপর এ প্রভাব পড়তে দেখিনি। দরকার হলে আমি ধৈর্য ধরতে পারি। আমার যে ক্ষতি করেছে তাকে ধরার জন্য পনেরো বছর অপেক্ষা করে আছি। এটাই লী বংশের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। আমি পনেরো বছর পরে সুযোগ পেয়েছি তাকে আমি ধ্বংস করে দিয়েছি। তিনি খুব হাল্কা ভাবে হাসলেন।
পিলার প্রশ্ন করল–ঘটনাটা নিশ্চয়ই দক্ষিণ আফ্রিকায় ঘটেছিল?
হ্যাঁ, খুব ভালো দেশ। বিয়ের পাঁচ বছর পর আমি সেখানে ফিরে গিয়েছিলাম।
-কিন্তু বিয়ের বহুবছর আগেও আপনি ওখানে থাকতেন।
–হ্যাঁ।
–আমাকে সেই সম্বন্ধে কিছু বলুন।
তিনি কাহিনীটা বলতে শুরু করলেন। পিলার অবাক হয়ে কাহিনীটা শুনতে লাগল। তারপর তিনি একটা বড় আলমারীর কাছে এগিয়ে গেলেন লাঠিতে ভর দিয়ে। আলমারীর পাল্লাটা খুলে হরিণের চামড়ার ব্যাগটা খুলে পিলারের করুণ মুখের দিকে চেয়ে রইলেন–এগুলো কী জান? অখচিত সব হীরের টুকরো। এখন এগুলো এ অবস্থায় পাওয়া যায়। এগুলো কাটার পর আসল হীরে বেরিয়ে পড়বে। তখনি সেগুলো চমকে দেবে, ঝলসে উঠবে।
পিলার বাচ্চা মেয়ের মতো অবাক হয়ে বলল-ও আমি অবিশ্বাস করি।
তিনি খুব মজা পেলেন, বললেন,-এ একেবারে খাঁটি হীরে।
—খুব দামী?
কয়েক হাজার পাউণ্ড হবে। এগুলো বড় বড় হীরে। নয় কিংবা দশ হাজার ধরতে পারো।
–এগুলো বিক্রি করছেন না কেন?
–আমার টাকার প্রয়োজন নেই তাই। আমি এগুলোকে আমার কাছেই রেখে দিতে ভালোবাসি।
তিনি আবার ঐগুলোকে আলমারীতে রেখে দিলেন এবং হারবারিকে ডাকলেন–এসো।
হারবারি ভেতরে এসে বলে–চা তৈরী।
হিলডা বলে উঠল–তাহলে সত্যিই তুমি এখানে এলে ডেভিড। আমি তোমায় কত খুঁজেছি। ঘরটা ভীষণ ঠাণ্ডা। চল এখান থেকে চলে যাই।
ডেভিড তার কথায় কান না দিয়ে একটা চেয়ার দেখিয়ে বলল–এই সেই চেয়ার, যেখানে আমাদের মা সবসময় বসে থাকতেন। এটা তেমনি তাই আছে; শুধু রঙটা একটু চটে গেছে। ডেভিড বলে চলল–তিনি সবসময় এখানে বসে থাকতেন আর আমাদের বই পড়ে শোনাতেন। আমি তখন বছর ছয়েকের শিশু ছিলাম।
হিলডা তার হাত ধরে টেনে নিয়ে চলল–চলো, ড্রইংরুমের দিকে যাওয়া যাক। এখন ওরা কোথায় আছে, চায়ের সময় হয়ে গেছে।
ডেভিড বহুদিন পর পিয়ানোটার ওপর হাত রাখল, তার খুব সখ ছিল পিয়ানো বাজানোর। কিছুক্ষণ বাজাবার পর হঠাৎ সে উঠে দাঁড়াল। সে খুব কাঁপছিল। হিলডা দৌড়ে তার কাছে গেল।
–কী হয়েছে ডেভিড?
–না না, তেমন কিছু নয়। ডেভিড উত্তরে বলল।
কর্কশভাবে বেলটা বেজে উঠল দরজার কাঁচ দিয়ে বাইরে তাকাতেই ট্রেসিলিয়ানের স্ত্র জোড়া কুঁচকে উঠল বাইরে দাঁড়ানো আগন্তুককে দেখে। সে কপালে হাত দিয়ে চিন্তা করল। মনে হয় সবকিছুই যেন দ্বিতীয়বার ঘটে। এর আগে আরো একবার এরকম ঘটনা ঘটে থাকবে। সে নিশ্চিত মনে করে দরজা খুলে দিল।
তারপরই দরজার ওপারে থাকা ভদ্রলোক জিজ্ঞাসা করেন–এটা কী মিঃ সাইমন লীর বাড়ি?
-হা মহাশয়।
–ওনার সঙ্গে আমি একটু সাক্ষাৎ করতে চাই।
ঠিক তক্ষুনি ট্রেসিলিয়ানের মনের স্মৃতিতে একটা অস্পষ্ট স্মৃতি ভেসে উঠল। বহুদিন ধরে সে এই গলার স্বর শুনে এসেছে। মিঃ লী তখন ইংল্যাণ্ডে থাকতেন।
ট্রেসিলিয়ান দ্বিধা চিত্তে মাথা নেড়ে বলল–কিন্তু স্যার মিঃ লী যে এখন অথর্ব। তিনি এখন খুব একটা লোকের সংগে দেখা-সাক্ষাৎ করেন না। আপনি যদি আপনার দরকারটা