মিঃ পোয়ারো দরজায় নক করলেন। কিন্তু কোন সাড়া শব্দ পেলেন না, তারপর দরজার ফুটোতে চোখ দিয়ে তাকাল, তারপরই বললেন এক্ষুনি আমাদের দরজা ভাঙতে হবে। পোয়ারোর নির্দেশ মত জেফ্রি কিন ও গ্রেগারি বেয়ারলিং তারা দুজনে দরজায় ধাক্কা দিতে লাগল।
কিন্তু দরজা ভাঙা মুখের কথা নয়। অনেক চেষ্টার পর বেশ কিছুক্ষণ পরে সবার সমবেত ধাক্কায় দরজাটা শেষ পর্যন্ত ভেঙ্গে গেল। বাড়ির সবাই দরজার সামনে অপেক্ষা করতে লাগল কি দেখবে সেই ভেবে তারা যা ভয় করছিল তা-ই দেখতে পেল। জানালাটা তাদের দিকে মুখ করে বাঁ দিকে দরজা আর জানালার মাঝখানে একটা বড় লেখার টেবিল। টেবিলের দিকে মুখ না দিয়ে একটু বেঁকে একজন লম্বা চেহারার মানুষ বসে আছেন।
শরীরটা চেয়ারের উপর ঝোকানো তার পিছন দিকটা দরজার দিকে, মুখটা জানালার দিকে তাঁর ডান হাতটা মেঝের দিকে ঝুলে পড়েছে, আর হাতের নীচে কার্পেটের উপর একটা চকচকে পিস্তল।
পোয়ারো তীক্ষ্ণ গলায় গ্রেগরি বেয়ারলিংকে বলল, মিসেস রোচ ও অন্য দুজন মহিলাকে এখান থেকে নিয়ে যান।
মিসেস লাইচাম কেঁপে উঠে বললেন বোচ নিজেকে গুলি করেছে, উঃ কি সাংঘাতিক! গ্রেগরি বেয়ারলিং তাকে এবং অন্য দুজন মহিলাকে নিয়ে অন্যদিকে গেলেন।
পোয়ারো ঘরের মধ্যে ঢুকল, যুবক দুজন তার পিছনে। বুলেটটা মাথার ডান দিক ফুটো করে বের হয়ে গিয়ে নিশ্চয়ই বাঁ দিকের ঝোলানো আয়নাটায় আঘাত করেছে। আয়নাটা ভেঙ্গে গেছে। লেখার টেবিলের উপর এক টুকরো কাগজ, তাতে শুধু একটা শব্দ লেখা দুঃখিত।
পোয়ারো দরজার দিকে ফিরে তাকাল। দরজার তালায় ভিতর থেকে তো চাবি লাগানো নেই, সে বলল আমার মনে হয়।
পোয়ারো খুব তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়িয়ে জানালার কাছে গেল। জানলাটা বেশ বড়।
সে নীচে বাইরের দিকে ঘাসগুলো পরীক্ষা করে জানলাটা আবার বন্ধ করে দিল।
সে বলল, আমাদের এখুনি পুলিশে ফোন করা দরকার। তারা যতক্ষণ না এটা আত্মহত্যা বলছেন ততক্ষণ আমাদের কোনো কিছুতে হাত দেওয়া উচিত নয়।
মনে হয় মিঃ রোচ পনেরো মিনিট আগে মারা গেছেন।
পোয়ারো ডিগবিকে স্টাডিরুমের সামনে পাহারা দিতে রেখে গেল। হ্যারি মহিলাদের কাছে চলে গেল।
মিঃ পোয়ারো বলতে আরম্ভ করলেন আপনি মিঃ লাইচাম রোচের ঘনিষ্ঠ বন্ধু তাই আপনার সঙ্গে আমার প্রথম কথা বলা উচিত। কারণ এই সময় মিসেস লাইচামকে প্রশ্ন করা উচিত নয়। আমি সহজ ভাবে ঘটনাগুলো আপনার সামনে রাখব। তাহলে শুরু করি। আমার লণ্ডনের ঠিকানায় মিঃ রোচের কাছ থেকে একটা চিঠি পাই। তাতে লেখা আছে তার ব্যবসা থেকে কেউ প্রচুর অর্থ আত্মসাৎ করেছে। তিনি পুলিশকে খবর দিতে নারাজ। কিন্তু তিনি চেয়েছিলেন আমি এসে ব্যাপারটার তদন্ত করি। আমি রাজী হয়েছিলাম কিন্তু আমার আসতে কয়েকদিন দেরী হয়ে গেল।
বেয়ারলিং সামান্য হাসলেন। তিনি মাঝে মাঝে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতেন কিন্তু বিকৃত মস্তিষ্ক নয় কারণ আত্মহত্যা বিকৃত মস্তিষ্কের কাজ নয়। তদন্তকারী জুরীরা তাই বল বেয়ারলিং দৃঢ়ভাবে বলল, হিউবার্ট মোটেই স্বাভাবিক লোক ছিল না। তিনি কিছুটা উন্মাদগ্রস্ত ছিলেন পারিবারিক ব্যাপারে। কিন্তু এতসব সত্ত্বেও খুব বুদ্ধিমান ছিলেন।
মিঃ পোয়ারো বললেন, রহস্যটা খুব শীঘ্র উন্মোচন করতে হবে। তিনি চিঠিতে লিখেছিলেন পারিবারিক কারণেই অনেকে আত্মহত্যা করেন। তিনি একটা অপরাধের ছায়া দেখেছিলেন সেই জন্যই তাকে মরতে হল। যাইহোক আমি এই ব্যাপারে তদন্ত করব এবং খুব তাড়াতাড়ি কাজটা শেষ করার চেষ্টা করব।
বেয়ারলিং বললেন, আমি কিভাবে আপনাকে সাহায্য করব বুঝতে পারছি না। হিউবার্ট কোনদিন গোপন কিছু আমাকে বলেননি।
আপনি আমাকে বলুন মিঃ বেয়ারলিং আপনার মতে কার পক্ষে মিঃ রোচের অর্থ চুরি করার সম্ভাবনা রয়েছে।
বলা মুশকিল। তবে ক্যাপ্টেন মার্শাল বলে একজন এজেন্ট আছে তার বিষয় সম্পত্তি দেখার জন্য। তিনি খুব চমৎকার লোক। যুদ্ধে তার একটা হাত কাটা গেছে।
হিউবার্ট এই ভদ্রলোককে বেশ পছন্দ করতেন।
মিঃ! পোয়ারো বেয়ারলিংকে অনুরোধ করলেন আপনি আমায় সব খুলে বলুন।
বেয়ারলিং বললেন, ঠিক আছে বলছি তাহলে আপনি ড্রইংরুমে একজন সুন্দরী মহিলা দেখেছেন?
আমি দুজন সুন্দরী মহিলাকে দেখেছি।
হা একজনের নাম মিস অ্যাসবি, হ্যারি ডেলহাউস তাকে এনেছেন। কিন্তু আমি আর একজন মহিলার কথা বলছি তার নাম ডায়না ক্লিভস। তিনি একজন সাংঘাতিক মহিলা। এখান থেকে কুড়ি মাইলের মধ্যে যত পুরুষ আছে সবার সঙ্গে উনি ফষ্টিনষ্টি করেছেন এই জন্য তাকে কেউ না কেউ একদিন খুন করবেই। এদিকে আর একজন মহিলা মিঃ বেয়ারলিংকে সমানে লক্ষ্য করে যাচ্ছেন তিনি হলেন লাইচাম রোচের পালিতা কন্যা। ডায়না ক্লিভস একদিক দিয়ে তাদের দূর সম্পর্কের ভাইঝি হয়। হিউবার্ট তাকে খুব ভালোবাসতেন। তিনি চাইতেন না ডায়না ক্লিভসের বিয়ে হোক। তবে হিউবার্টের পছন্দ মত পাত্র যদি হয় তাহলে তার কোন আপত্তি ছিল না। বেয়ারলিংকে হিউবার্টের খুব পছন্দ ছিল। বেয়ারলিংও ডায়নার প্রেমে পড়েছিল তবে ডায়নার চরিত্র একেবারেই ভালো ছিল না সে সবাইকেই খেলাত!
কিন্তু ক্যাপ্টেন মার্শাল তার নজরে পড়েছিল লোকে বলাবলি করত।