- বইয়ের নামঃ ইভিল আনডার দ্য সান
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর, ভূতের গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী
ইভিল আনডার দ্য সান
০১. ক্যাপ্টেন রজার অ্যাংমারিং
প্রথম পরিচ্ছেদ
১.১
ক্যাপ্টেন রজার অ্যাংমারিং যখন লেবারকোম্ব উপসাগরের এক দ্বীপে ১৮৭২ সালে একটা বাড়ি তৈরি করলেন, তার খামখেয়ালিপনার চূড়ান্ত বলেই ধরে নেওয়া হয়েছিলো তখন সেটাকে। একজন ব্যক্তির পক্ষে নদী বয়ে যাওয়া সবুজ ঘাসে ছাওয়া বিস্তীর্ণ প্রান্তরে প্রাসাদোপম বাড়ি তৈরি করাই বেশি স্বাভাবিক ছিল।
এর পরম ভালোবাসা ছিল, ক্যাপ্টেন রজার অ্যাংমারিং বাড়িটা তৈরি করলেন বেশ শক্ত কাঠামোয়। জোয়ারের সময়ে সেটা মূল ভূখণ্ড থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তো, চঞ্চল বাতাস ও গাঙচিল ছোট পাথুরে অন্তরীপের ওপর।
তাঁর প্রথম ও শেষ সঙ্গিনী ছিলো সমুদ্রই। সেই বাড়ি এবং দ্বীপের মালিক হলেন তার মৃত্যুর পর। তাদের নিজেদের জমি-জমা ক্রমশ কমে আসছিলো, এই সম্পত্তি নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামালেন না। খারাপের দিকে তাদের উত্তরাধিকারীদের অবস্থা ক্রমে ক্রমে কমে যেতে লাগলো।
সমুদ্রতীরে অবসর যাপনের সৌখিন রীতি যখন ১৯২১ সালে। ডেভন ও কর্ণওয়াল উপকুল গ্রীষ্মকালেও আর অসহ্য বলে মনে হলো না। তার বাড়ি বিক্রি হবার নয়, কিন্তু তিনি ভালো দামই পেলেন। কারণ সমুদ্রচারী ক্যাপ্টেন রজারের সংগ্রহ করা সম্পত্তির বিনিময়ে।
একটা কংক্রীটের সেতু মূল ভূখণ্ড থেকে দ্বীপ পর্যন্ত। দ্বীপের সর্বত্র তৈরি হলো পরিকল্পনা মাফিক। তৈরি হলো মনোরম পথ ও অবসর যাপনের নিভৃত স্থান। জলি রজার হোটেল, স্মাগলার্স দ্বীপ দুটো টেনিস কোর্ট, ভেলা ও স্প্রীং-পাটাতনে সাজানো সৈকতের দিকে নেমে আসা খোলা চত্ত্বর। বিজয়ীর ভঙ্গিতে লেদারকোম্ব উপসাগর একই সঙ্গে আত্মপ্রকাশ করলো। জলি রজার হোটেলে সাধারণত তিলধারণের জায়গা থাকতো না, এবং জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাথা পিছু থাকার খরচও বেড়ে গেল।
লেদারকোম্ব উপসাগরে গেছেন কখন, জায়গাটা একটা দ্বীপের মতো। ওখানে ভীষণ ভালো একটা হোটেল আছে। জায়গাটা খুব আরামের, কোনো উটকো লোক বা শ্যারাব্যাং-গাড়ির ঝামেলা নেই। ওখানে যাওয়া উচিত আপনার।
.
১.২
রজারে বাস করছেন একজন বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তি জলি। তিনি আসল দৃষ্টি মেলে দিয়েছেন সামনের সমুদ্রতীরের দিকে, ডেক চেয়ারে গা এলিয়ে বসে আছেন। গোঁফজোড়া বাঁকানো রাজকীয় পদ্ধতিতে, পরনে তার দুধ-সাদা ধবধবে স্যুট, মাথায় পানামা টুপি চোখের উপর নামানো।
সমুদ্রতীরের দিকে সিমেন্ট বাঁধানো একাধিক চত্ত্বর ঢালু হয়ে নেমে এসেছে। রবার ও ক্যাম্বিশের তৈরি নৌকো, পলিথিনের বল, খেলনা এবং কয়েকটা ভেলা ও একটা দীর্ঘ স্প্রীং পাটাতনের সামনের দিকে ছড়িয়ে রেখেছে।
কথাবার্তার স্রোত ভেসে আসছে, পোয়ারোর বাঁ দিক থেকে মিসেস গার্ডেনারের অবিশ্রান্ত একঘেয়ে বুলি মুহূর্তের জন্যেও বিচলিত হচ্ছে না মিসেস গার্ডেনারের কর্মব্যস্ত হাত। কথার স্রোত এবং উল বোনার কাটার দক্ষতায় তাল রেখে এগিয়ে চলেছে। একটা দোলনা-চেয়ারে গা এলিয়ে শুয়ে আছেন তাঁর স্বামী ওডেল সি. গার্ডেনার। মাথার টুপিটা টেনে নামানো নাকের ওপর এবং কোনোরকম উৎসাহ পেলেই তিনি সংক্ষিপ্ত মন্তব্যে সরব হচ্ছেন।
মিস ব্রুস্টার পোয়ারোর ডান পাশে বসে। তার মাথায় ধূসর চুল; মুখমণ্ডলে প্রকৃতি-সহিষ্ণুতার ছাপ; শরীরের গঠনটা অনেকটা অ্যাথলেটিকদের মতো।শিকারী হাউন্ড যেন কোনো পমেরেনিয়ান কুকুরের যতিহীন তীক্ষ্ণ চীৎকারকে কর্কশ ধমকের সাহায্যে বাধা দিতে চেষ্টা করছে।
মিসেস গার্ডেনার তখন বলে চলেছে, আমি বললাম মিঃ গার্ডেনারকে, প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করা খুব ভালো, যে কোনো জায়গা তন্ন তন্ন করে ঘুরে দেখতে চাই। আমি বললাম, মোটামুটি ভালোভাবে ঘুরে দেখেছি গোটা ইংলন্ডটা। সমুদ্রের কাছাকাছি শান্ত পরিবেশে গিয়ে বিশ্রাম করতে আমি চাই। আমি ওকে বলেছি, আমার এখন বিশ্রামের প্রয়োজন।
হ্যাঁ সোনা, বলে টুপির নিচ থেকেই অনুচ্চ কণ্ঠে জবাব দিলেন।
তার কাহিনীর পশ্চাদ্ধাবনে মনোনিবেশ করলেন মিঃ গার্ডেনার। বেড়ানোর ব্যবস্থা করে দিলেন তিনি যেচে, আর সে কারণেই যখন আমি কুক-এর মিঃ কেলসোকে একথা জানালাম। একমাত্র ঈশ্বরই জানেন। তিনি না থাকলে আমরা যে কি করতাম। এর চেয়ে ভালো জায়গা নেই, মিঃ কেলসোকে এ জায়গাটার কথা বলা মাত্রই তিনি বললেন। জলি রজার অন্য সব হোটেলের চেয়ে আলাদা। নির্জন মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ, সঙ্গে পরিচর্যার সুব্যবস্থা, জল কলের ব্যবস্থার কথা জানতে চেয়েছিলেন, মিঃ গার্ডেনার, মিঃ গার্ডেনারের এক বোন একবার এই জাতীয় একটি অতিথিশালায় দিন কয়েক ছিলেন, বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, শুনলে অবাক হবেন নিতান্তই গ্রামের মতো, কলঘরের ব্যবস্থা ছিলো মাটির তৈরি। এ ধরনের নির্জন সুন্দর জায়গা সম্পর্কে মিঃ গার্ডেনার সন্দেহপ্রবণ তা না, ওডেল, বলেছেন মিঃ গার্ডেনার নিশ্চয়ই শোনা।
আমাদের আশ্বাস দিলেন মিঃ কেলসো, সঙ্গে সঙ্গে বললেন–এখন দেখছি সে কথা সত্যি, জলকলের ব্যবস্থা আধুনিক এবং রান্না অত্যন্ত চমৎকার, সময়ানুবর্তিতা আমি সবচেয়ে পছন্দ করি; বুঝতেই পারছেন কি বলতে চাইছি। এলাকাটা ছোট হওয়ায় সুযোগ রয়েছে প্রত্যেকের সঙ্গেই প্রত্যেকের পরিচয়ের। তারা একটু আলাদা থাকতে চায়, যদি ইংরেজদের কোনো দোষ থেকে থাকে তাহলে আপনার সঙ্গে পরিচয় বছর দুয়েকের পুরানো না হওয়া পর্যন্ত। এখন দেখতে পাচ্ছি, মিঃ কেলসো আরও বললেন, নানান ধরনের বিচিত্র সব মানুষেরা এসে ভীড় করে এই স্মাগলার্স দ্বীপে। সে কথা মিথ্যা নয়, আমার তো পালকের ঘায়ে মূৰ্ছা যাবার মতো অবস্থা আপনার আসল পরিচয় পেয়ে তাই না, ওডেল।