- বইয়ের নামঃ বোম্বেটে
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী
বোম্বেটে
০১.
ক্যারোলিন! চিৎকার করতে করতে সিঁড়ি বেয়ে উঠে এলেন জিনার বাবা মিস্টার পারকার। এই, ক্যারোলিন, কোথায় তুমি?
এই যে, এখানে, বেডরুম থেকে বেরিয়ে এলেন জিনার মা। ঘর সাফ করছি। …কি হলো, এতো চেঁচাচ্ছো কেন?
এই দেখো না, টেলিগ্রাম, বললেন মিস্টার পারকার। প্রফেসর কারসওয়েল। চিনেছো?
কয়েক বছর আগে যে এসেছিলো? খালি খাওয়ার কথা ভুলে যেতো, সেই লোকটা তো? স্বামীর কোটের হাতায় লেগে থাকা ময়লা ঝেড়ে দিলেন মিসেস পারকার।
ওভাবে ঝাড়ছো কেন? ভুরু কোঁচকালেন মিস্টার পারকার। আমি কি ময়লার ডিপো নাকি?…শোনো, আজ আসছে। এক হপ্তা থাকবে।
চমকে উঠলেন মিসেস পারকার। কিন্তু জিনারাও তো আসছে আজ! তুমি জানো।
অ্যাঁ, তাই তো…ভুলে গিয়েছিলাম। থাক, জিনাকে ফোন করে দাও, আগামী হপ্তায় আসতে বলো। জিনার সঙ্গে আবার কিশোর, মুসা আর রবিনও তো আসবে। না, এ-হপ্তায় ওদের আসা চলবে না। প্রফেসরের সঙ্গে আমি শান্তিতে কাজ করতে চাই। নতুন একটা আবিষ্কারের ব্যাপারে..আরে, ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
তোমাদের পাগলামির জন্যে ছেলেমেয়েদের আনন্দ আমি নষ্ট করতে পারবো। ওরা আজই আসবে। হয়তো এতোক্ষণে রওনা হয়ে গেছে…এক কাজ করো। তোমার বন্ধুকেই মানা করে দাও, যেন পরে আসে।
বেশ, অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজি হলেন মিস্টার পারকার। গৃহিণীকে চটিয়ে দিয়ে পারিবারিক অশান্তি আর অসুবিধে সৃষ্টি করতে চান না। তবে, প্রফেসর খুব মাইণ্ড করবে। বন্ধুকে ফোন করার জন্যে চলে গেলেন তিনি।
বেডরুমে আবার ফিরে এলেন মিসেস পারকার। তাঁকে সাহায্য করার জন্যে একজন কাজের লোক রেখেছেন, তাঁরই বয়েসী এক মহিলা, নাম আইলিন।
সব চেয়ে বেশি অসুবিধে হবে থাকার, বললেন মিসেস পারকার।
ঘর থেকে সবই শুনেছে আইলিন। ঝুল পরিষ্কার করতে করতে মাথা নাড়লো।
ওই যে, আবার ডাকছে। তুমি কাজ করো, আমি শুনে আসি, আবার ঘর থেকে বেরোলেন জিনার মা।
স্টাডি থেকে ডাকছেন মিস্টার পারকার। সে-ঘরে ঢুকলেন জিনার মা। আবার কি হয়েছে?
এই দেখো না, কি কাণ্ড, রিসিভারটা ধরে রেখেছেন মিস্টার পারকার। প্রফেসর নাকি অনেক আগেই রওনা হয়ে গেছে। প্লেনে করে। ইংল্যাণ্ড থেকে আসতে আর কতো সময় লাগবে? আজই পৌঁছে যাবে..আর হ্যাঁ, সঙ্গে তার ছেলেকে নিয়ে আসছে!
তার ছেলে! সত্যি! আমি ওদের জায়গা দেবো কোথায়?
আর তো কোনো উপায় নেই। জিনাকেই ফোন করো। বুঝিয়ে বলো, আগামী হপ্তায় যেন আসে। নাও, ধরো, রিসিভার বাড়িয়ে দিলেন মিস্টার পারকার।
ডায়াল করলেন মিসেস পারকার। হ্যাল্লো। কে?..মিসেস পাশা?… কিশোর কোথায়?.রওনা হয়ে গেছে? কখন?..না না, এমনি। ওরা আসছে কিনা জানার জন্যে. হ্যাঁ। রাখি। গুড বাই। রিসিভার নামিয়ে রাখলেন জিনার মা। জোরে নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, রওনা হয়ে গেছে, সকালে। যে কোনো সময় এসে পড়বে। আমি এখন কি যে করি!…তোমাকে নিয়ে আর পারি না। খালি কথা ভল যাও। আর তোমার প্রফেসর বন্ধুও…
আমি কি করবো? রেগে গেলেন বদমেজাজী বিজ্ঞানী। আমি চিঠি দিয়েছি আসার জন্যে, আসছে। টেলিগ্রাম পেলাম আজ…
সেজন্যেই তো বলছি, খালি ভুলে যাও। তুমি তো জানো, ছেলেমেয়েগুলো আজ আসবে, তারপরেও চিঠি লিখতে গেলে কেন? আর লিখলেই যখনু, আগামী হপ্তায় আসতে বললে কি হতো? আসুক, আমি কিছু জানি না। থাকার ব্যবস্থা ভুমি। করবে। আর না পারলে নিজে গিয়ে শুয়ো কয়লা রাখার ঘরে…
ওসব আমি জানি না, কড়া গলায় বললেন মিস্টার পারকার। আইলিন আছে। দুজনে মিলে একটা কিছু ব্যবস্থা করো গিয়ে। আমার অনেক কাজ। এই কাজগুলো, টেবিলে রাখা কাগজের উঁচু একটা স্থূপ দেখালেন তিনি। সব পড়ে শেষ করতে হবে…যাও এখন। আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে…
তোমার যাচ্ছে! আর আমার হয়ে গেছে। আমি বলে দিচ্ছি…জানালার দিকে চোখ পড়তে হঠাৎ থেমে গেলেন মিসেস পারকার। আরি, দেখো দেখো!
দেখে মিস্টার পারকারও অবাক হলেন। বানর! ওটা এলো কোত্থেকে?
নিচতলা থেকে আইলিনের ডাক শোনা গেল। ম্যাডাম, দেখে যান…বোধহয় আপনাদের মেহমান… বানরটার দিকে হাঁ করে চেয়ে আছেন মিসেস পারকার। জানালার কাছে নাক ঘষছে ছোট্ট জীবটা, হাস্যকর শিশুসুলভ ভাবভঙ্গি। নিশ্চয়। তোমার বন্ধু! গুঙিয়ে উঠলেন তিনি। বানরটাও কি ওদের নাকি? দুম দুম করে কিল পড়লো সদর দরজায়, সারা বাড়ি কেঁপে উঠলো।
তাড়াতাড়ি নিচের তলায় ছুটে এলেন দুজনে।
হ্যাঁ, প্রফেসর কারসওয়েলই এসেছেন। সঙ্গে তাঁর ছেলে। বয়েস নয়-দশের বেশি না। বানরটা এখন বসে রয়েছে ছেলেটার কাঁধে, কখন কিভাবে নেমে এসেছে কে জানে। বানর আর তার মনিবের চেহারায় খুব একটা অমিল নেই।
এয়ারপোর্ট থেকে ট্যাক্সি নিয়ে এসেছেন প্রফেসর। ড্রাইভারের দিকে চেয়ে। বাজখাই গলায় হাঁকলেন, এই, বসে আছো কেন? ব্যাগট্যাগগুলো নামাও। হাঁ। করে কি দেখছো? মিসেস পারকারের দিকে ফিরলেন। এই যে, ম্যাডাম, ভালো। আছেন? আবার এলাম আপনাকে জ্বালাতে।…তা আপনার স্বামী কোথায়? বলতে বলতে ভেতরে ঢুকলেন তিনি। এই যে, হ্যারি। অনেক ইন্টারেস্টিং নিউজ আছে।