বাটলার হেসে বলল, আজ সাতটার ট্রেন আধঘণ্টা দেরিতে পৌঁছচ্ছে তাই দশ মিনিট দেরিতে ডিনারের আয়োজন করা হয়েছে।
মনিবের হুকুমে।
কোথায় একটা গুলির শব্দ হলো হ্যারি বলল। ইতিমধ্যে কালো মতন পঁয়ত্রিশ বছর বয়স একজন লোক তাদের ড্রইংরুম থেকে বের হয়ে এলো।
এদিকে এরা তিনজন আওয়াজ সম্বন্ধে নানা রকম আলোচনা করতে লাগল। কিসের আওয়াজ কোন দিক থেকে আওয়াজটা এলো ইত্যাদি, সুদর্শন লোকটি শুধু মাথা নাড়ল। সে বলল, শব্দটা ঘণ্টা ও সামনের দরজাটা দিয়ে এল মনে হয়। হ্যারি বলল, উত্তর দিক থেকে শব্দটা এসেছে, শব্দটার উৎপত্তি আমাদের পিছন দিক থেকে।
জেফ্রি কিন বলল, আজকাল খুনখারাপি লেগেই আছে, মিস অ্যাসবি বলল, খুনের কথা শুনলে আমার হাত পা কাপে।
হ্যারি বলল খুন? কিন্তু কোনো রক্তপাত নেই, কোনো গোঙানি নেই, এরকম খুন আমি কোনোদিন দেখিনি।
আমার মনে হয় কোনো চোরাশিকারী খরগোশ মারছে, তারই গুলির শব্দ।
যাক বাবা বাঁচা গেল, বলে হাসতে হাসতে তিনজন বড় ড্রইংরুমটায় ঢুকল।
ইংল্যাণ্ডের প্রাচীন বাড়ির মধ্যে লাইচাম ক্লোজ অন্যতম বিখ্যাত বাড়ি।
হিউবার্ট লাইচাম রোচ পরিবারের সর্বশেষ বংশধর। টুপি বিক্রেতার মত রাগী সে, হতভাগ্য বেচারা! হিউবার্ট লাইচাম খ্যাতনামা সঙ্গীতজ্ঞ, তিনি একটা উগ্র স্বভাবের, রাগ হলে জ্ঞান থাকে না। জোর করে নিজের গুরুত্ব অপরের উপর চাপায়।
গান বাজনা নিয়ে তার খুঁতখুতানি সবচেয়ে বেশী। তিনি যখন অতিথিদের সামনে বাজাবেন তখন সবাইকে একেবারে চুপ করে থাকতে হবে। আর একটা ব্যাপারে খুঁতখুতানি আছে, সেটা হল রাতের খাওয়া।
রাতের খাওয়া রীতিমত একটা উৎসব, একটা অনুষ্ঠান। রাতের খাওয়ার সময় সবাইকে ঠিক সময় হাজির হতে হবে।
রাত আটটা পাঁচের সময় একটা ঘণ্টা পড়ে। আটটা পনেরোয় আর একটা ঘণ্টা পড়ে। তারপর ডাইনিংরুমের দরজা খুলে যায়, বলা হয় টেবিলে খাবার দেওয়া হয়েছে। অতিথিরা তখন শোভাযাত্রা করে খাবার ঘরে ঢোকে। দ্বিতীয় ঘন্টা পড়ার পরে কেউ যদি দেরি করে তবে তার জন্য সে রাতের খাবার ঘরের দরজা বন্ধ।
তাই এই পবিত্র অনুষ্ঠানটা আজ হঠাৎ দশ মিনিট পিছিয়ে গেছে বলে সবাই খুব অবাক।
জোন অ্যাসবি দেখতে খুব সুন্দর। চোখদুটো নীল মাথার চুল সোনালী, চোখের চাউনি কিছুটা অস্থির, দুষ্টমী ভরা। সে এই প্রথমবারই লাইচাম ক্লোজ এসেছে।
দরজা খুলে ডায়না ক্লিভস ঘরের ভেতর ঢোকে সে রোচের পালিতা কন্যা। ডায়নার সৌন্দৰ্য্য পুরুষের বুকে জ্বালা ধরিয়ে দেয়। চেহারাটা আবেদনময় কিন্তু কাছে গেলে মনে হয় বরফের ডেলা। যুবতীকে দেখেই যুবক দুজন এগিয়ে গেল। ডায়না দুজনের দিকে তাকিয়ে হাসল। জেফ্রি কিনের মুখটা কালো হয়ে গেল।
মিসেস রোচ ঘরে ঢুকলেই সে নিজেকে সামলে নিল। মিসেস রোচ বেশ লম্বা, রংটা ময়লা, আচরণে দ্বিধা জড়িত। পরে সবুজ রঙের গাউন। তার সঙ্গে মধ্যবয়স্কা একজন ঘরে ঢুকলেন নাম গ্রেগরী বেয়ারলিং।
ঘণ্টা বেজে উঠলো। ডিগবি দরজা খুলে ঘোষণা করল ডিনার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একটা আশ্চর্য্য ঘটনা সবাই আছে কিন্তু হিউবার্ট লাইচাম রোচ নেই। কি হতে পারে তাঁর। সবাই কিছুটা আশঙ্কিত হয়ে অপেক্ষা করতে লাগল।
অবশেষে দরজাটা আর একবার খুলে গেল। সবাই ভাবল গৃহস্বামী কিন্তু তা নয়। যে ঘরে ঢুকল তাকে দেখে মনে হয় সে বিদেশী, ছোট্টখাট্ট লোক, মাথায় পুরো টাক বেশ বড় বড় গোঁফ; পরণে সাদাসিধা ইভনিং ড্রেস।
আগন্তুক মিসেস রোচের কাছে দেরি হওয়ার জন্য ক্ষমতা চাইল।
মিসেস রোচ বললেন, আপনার মোটেই দেরী হয়নি মি–তিনি থেমে গেলেন।
পোয়ারো, ম্যাডাম, আমার নাম এরকুল পোয়ারো, তার পিছনে কে যেন বলে উঠল ও কোনো মহিলা বোধ হয়। আপনি কি জানতেন আমি আসব?
মিসেস রোচ বললেন, হ্যাঁ। তবে আমার সবসময় সবকিছু মনে থাকে না। ডিগবি সব দিকে নজর রাখে।
এরকুল পোয়ারো বললে রেল লাইনে একটা দুর্ঘটনার জন্য আমার ট্রেন দেরিতে পৌঁছেছে। জোন তখন বলে উঠল সেই জন্যই দেরি করে ডিনারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মিসেস লাইচাম রোচ বললেন, আমি বুঝতে পারছি না কেন মানে, তিনি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বলতে লাগলেন হিউবার্ট তো কোনোদিন এরকম দেরি করে না।
পোয়ারোর চোখ দুটো খুব তাড়াতাড়ি সবাইকে জরিপ করল।
এদিকে জেপ্রি কিন ব্যাখ্যা করল, মিঃ রোচ ডিনারে কোন দিন দেরি করে আসেননি একজন আগন্তুকের কাছে পরিস্থিতিটা খুবই অদ্ভুত, সবাই কেমন যেন অপ্রস্তুত, দ্বিধা জড়ানো।
হঠাৎ মিসেস লাইচাম রোচ বললেন, আমি ডিগবিকে পাঠাচ্ছি কেন মিঃ লাইচাম রোচ আসেননি ডিনারে।
ডিগবিকে ডাকা হলো এবং তাকে বলতে সে উত্তর দিল মিঃ লাইচাম রোচ আটটা বাজার পাঁচ মিনিট আগে নীচে নেমে স্টাডিরুমে গিয়েছেন।
ডিগবি বলল, আচ্ছা আমি তাকে জানাচ্ছি যে ডিনার প্রস্তুত।
ধন্যবাদ ডিগবি।
ঘরের মধ্যে কিছুক্ষণের নীরবতা। একটু পরেই ডিগবি ঘরে ঢুকল। জোরে জোরে তার নিশ্বাস পড়ছে এরকম হবার কথা নয় তার। আমাকে মাফ করবেন ম্যাডাম, স্টাডিরুম ভিতর থেকে দরজা বন্ধ।
এই সময়ই এরকুল পোয়ারো পরিস্থিতিটা নিজের হাতে নিল। সে বলল, আমাদের সবারই এখন স্টাডিরুমে যাওয়া দরকার।
হলঘরের মধ্য দিয়ে সিঁড়ি অতিক্রম করে, গ্র্যাণ্ডফাদার ক্লকটা এবং ডিনার গং এর পাশ দিয়ে সে করিডর দিয়ে চলল। করিডর শেষ হয়েছে স্টাডিরুমের বন্ধ দরজার সামনে।