এরপর ম্যাকেঞ্জিকে ডাকা হল। সে আগে যা বলেছে সেই কথাই বলল।
জেরা করার সময় আসামী পক্ষে উকিল তার স্ব-বিরোধী সাক্ষ্যের উপর বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। সেটা হলো মিস ফ্রেঞ্চের সঙ্গে ভোলের সম্পর্ক; আসামী পক্ষের উকিল জোর দিয়ে বললেন যে যদিও জেনট ম্যাকেঞ্জি ঐ রাতে মিস ফ্রেঞ্চের সিটিংরুমে পুরুষের গলা শুনতে পেয়েছিল, কিন্তু ঐটা যে ভোলের গলা তা প্রমাণিত হয়নি। উকিল এখন প্রমাণ করবে সাক্ষী অভিযুক্তকে ঈর্ষা করে তাই ঐ রকম সাক্ষ্য দিচ্ছে।
এরপর পরবর্তী সাক্ষী রোমেন হেলজার আপনি গত তিন বছর আসামীর সঙ্গে একত্রে স্ত্রী হিসেবে থেকেছেন?
সাক্ষী এক মুহূর্তের জন্য আসামীর দিকে তাকাল তারপর তার অদ্ভুত দৃষ্টি এবং তার অভিব্যক্তি কিছু বোঝা গেল না।
প্রশ্ন চলতে লাগল, ক্রমশ সেই ভয়ানক ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়ল। ঘটনার দিন রাত্রে আসামী একটা শাবল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল।
দশটা কুড়িতে বাড়ি ফিরে এল এবং স্বীকার করল যে সে বৃদ্ধা মহিলাকে খুন করেছে। তার জামার হাতায় রক্ত লেগেছিল। সে ঐ জামাটা রান্নাঘরের স্টোভের আগুনে পুড়িয়ে দিল। সে ভয় দেখিয়ে স্ত্রীকে চুপ থাকতে বাধ্য করল।
আদালতে উপস্থিত জনসাধারণ আসামীর বিরুদ্ধে সহানুভূতিহীন হয়ে পড়ল এবং আসামী নিজে মাথা নীচু করে বসে রইল। সে ভাবতে লাগল তার ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গেছে।
এই বার আসামী পক্ষের উকিল উঠে দাঁড়ালেন। তিনি হেলজারকে বললেন তার সাহায্য সব বানানো সে দশটা কুড়ির সময় নিজে বাড়ি ছিল না। সে অন্য পুরুষের প্রণয়াসক্ত, সে ভোলকে ফাঁসিতে ঝোলাবে বলে এইরূপ মিথ্যা সাক্ষী দিচ্ছে।
রোমেন দৃঢ়ভাবে প্রতিবাদ করল। এরপরই সেই মারাত্মক চিঠিটা দাখিল করা হল। আদালতে চিঠিটা পড়া হল। ম্যাক্স, প্রিয় আমার, ভাগ্য তাকে আমাদের হাতে এনে ফেলেছে। খুনের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমি ভেবে অবাক হচ্ছি যে লেনার্ড ভোল একটা মাছি পর্যন্ত মারতে পারে না। সে কি না মিস ফ্রেঞ্চকে খুন করল। হায় বেচারা সে রক্ত মাখা অবস্থায় বাড়ি এসেছিল আমার কাছে সব স্বীকার করেছে আমি তাকে ফাঁসিতে ঝোলাবো। সে যখন ফাঁসিতে ঝুলবে তখন বুঝতে পারবে রোমেন হেলজারই তার ঐ অবস্থা করেছে। তারপর আমরা দুজন সুখে বাকি জীবন কাটাতে পারব।
চিঠিটা প্রকাশ হয়ে পড়তেই রোমেন হেলজার একেবারে ভেঙে পড়ল সবকিছু স্বীকার করল সে। লেনার্ড নটা কুড়িতেই বাড়ি ফিরেছিল।
মামলা এবার অন্যদিকে মোড় নিল। আসামীর উকিল স্যার চার্লস তার কয়েকজন সাক্ষীকে ডাকলেন। আসামীকেও সাক্ষ্য দিতে ডাকা হলো, সে জেরার চাপে একটু ঘাবড়ালো না।
বিবাদী পক্ষের উকিল অনেক চেষ্টা করলেন, কিন্তু তেমন কিছু করতে পারলেন না। সাক্ষ্য জেরা শেষ হতে জুরীরা গোপন বৈঠকে গেলেন। একটু পরেই ফিরে এসে তারা বললেন, আসামী নির্দোষ।
লেনার্ড ভোল বেকসুর খালাস পেল। মিঃ মেহার্ন তাড়াতাড়ি উঠে তার মক্কেলকে অভিনন্দন জানালেন। এই কেসটা সত্যিই অদ্ভুত, বিশেষ করে রোমেন হেলজার একটা অদ্ভুত চরিত্র। রোমেন হেলজারের আকর্ষণীয় চেহারার জন্য কেসটা তার স্মৃতিপটে জীবন্ত হয়ে থাকবে।
রোমেন হেলজারকে দেখতে একজন বিবর্ণ, শান্ত মহিলা, কিন্তু আদালতে এসে সে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের আকার ধারণ করেছিল।
স্যার চার্লস মিঃ মেহার্নকে বললেন, আমাদের মক্কেল খুব অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে চলুন তাকে অভিনন্দন জানিয়ে আসি। কিন্তু মিঃ আর একজনের সঙ্গে মুখোমুখি হতে চান তিনি হলেন রোমেন হেলজার। তার দেখা পেতে একটু দেরি হলো কিন্তু কোথায় দেখা হলো সেই কথা এখানে অবান্তর। মিঃ মেহার্ন রোমেন হেলজারকে সব কথা খুলে বলতে রোমেন বলল, আমি আমার মুখটা কি করে পাল্টালাম সেটা তো খুব সোজা।
গ্যাসের আলো এত কম ছিল যে আপনি মেক-আপ ধরতেই পারেননি।
কিন্তু আপনি ঐরকম করতে গেলেন কেন?
শুনুন, যে করেই হোক তাকে আমার মুক্ত করার দরকার ছিল। আমি জানতাম মানসিকতা বুঝি তাই আমি চাইলাম আমাকে অপদস্থ করা হোক, অপরাধী করা হোক, তাহলেই স্বয়ংক্রিয় ভাবেই আসামীর পক্ষে সহানুভূতির উদ্রেক হবে।
কিন্তু চিঠির বাণ্ডিলগুলো?
ঐ চিঠিটা আমারই তৈরি করা, বাকিগুলো লেনার্ডকে লেখা আমার সত্যিকারের প্রেমের চিঠি।
তাহলে ম্যাক্স নামের লোকটা কে?
ঐ নামে কোনো লোকের অস্তিত্ব নেই।
মিঃ মেহার্ন দুঃখিত হয়ে বললেন, আমরা তো তাকে সোজা রাস্তাতেই আনতে পারতাম।
আমি ঝুঁকি নিতে চাইনি। আপনি তো নিজেই মনে করতেন যে সে নিরপরাধ।
কিন্তু মিঃ মেহার্ন আপনি মোটেই বুঝতে পারেননি, কিন্তু আমি জানি লেনার্ড সত্যিসত্যই খুন করেছিল।
.
০২.
জোয়ান অ্যাসবি ঘণ্টার আওয়াজ শুনে দৌড়ে সিঁড়ির দিকে গেল। দৌড়ে যেতে গিয়ে একজন যুবকের সঙ্গে বেশ জোরে ধাক্কা খেল।
আরে জোন যে। এত তাড়াহুড়ো কিসের? দুঃখিত হ্যারি। আমি তোমাকে দেখতে পাইনি। কিন্তু এত তাড়াহুড়ো কেন?
ঘণ্টা বেজে গেছে এটা দ্বিতীয় ঘণ্টা। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময়টা দেখে নাও।
হ্যারি ডেলহাউস পুরোনো ক্লকের দিকে তাকাল। আটটা বারো, সে বলল।
বাটলারকে উদ্দেশ্য করে প্রথম ঘণ্টাটা বাজালে না কি দ্বিতীয় ঘণ্টাটা?
প্রথম ঘন্টা স্যার।
আটটা বারোতে প্রথম ঘণ্টা বাজালে? তোমার তো চাকরি চলে যাবে?