অভিযুক্ত আসামী নিজের নির্দোষিতা আঁকড়ে রইল। এদিকে বিচারের জন্য কেসটা ফৌজদারী আলাদতে পাঠান হল।
লেনার্ড ভোলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমাণ খুবই জোরাল। মিঃ মেহার্ন এবং ভোলের নির্দোষ তা প্রমাণ করার জন্য যে দুদে ব্যারিষ্টার লাগান হয়েছে তিনিও হতাশ হয়ে পড়লেন। আমরা যদি ঐ অষ্ট্রিয়ান মহিলার সাক্ষ্যে চিড় ধরাতে পারি তাহলে হয়ত একটা উপায় বার করতে পারি।
মিঃ মেহার্ন ভাবল, ধরে নেওয়া যাক লেনার্ড ভোল সত্যিই মিস ফ্রেঞ্চের বাড়ি থেকে চলে এসেছিল রাত নটার সময়। তাহলে সিটিংরুমে সাড়ে নটার সময় কোন ব্যক্তির গলার স্বর শোনা গিয়েছিল। এই ব্যাপারে একমাত্র আশার আলো জেনেট ম্যাকেঞ্জির ভাইপো জেনেট তার মনিবকে উইলে অর্থ সংস্থানের জন্য চাপ দিত। এছাড়া অন্য পথে গেলে নেতিবাচক উত্তর পাওয়া যাচ্ছে।
বিচারের আগের দিন মিঃ মেহার্ন একটা চিঠি পেলেন। ঐ চিঠিই ঘটনার গতি অন্য দিকে ফেরাল। চিঠিটা একটা সাধারণ কাগজে লেখা, যে লিখেছে সে অশিক্ষিত। বানান ভুল।
চিঠিটা লেখা এই ভাবে…
প্রিয় মহাশয়,
আপনি উকিল যে ঐ যুবকের হয়ে মামলা লড়ছেন। আপনি যদি তার স্ত্রীর সাক্ষ্যে সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণ করতে চান তবে আজ রাতেই ১৬নং শস রেন্টস স্টেপনিতে চলে আসুন। ঐ ঠিকানায় মিসেস মগসনের খোঁজ করলেই হবে।
মিঃ মেহার্ন বার বার চিঠিটা পড়লেন। এই চিঠিটার উপর আসামীর বাঁচার একমাত্র আশা নির্ভর করছে। এখন চেষ্টা করতে হবে রোমেন হেলজার যা বলছেন সব মিথ্যা।
মিঃ মেহার্ন ঠিক করে ফেললেন তার মক্কেলকে যেভাবেই হোক বাঁচাবেন। সুতরাং সে শস রেন্টস এ গেলেন। তিনতলার উপরে উঠে দরজায় টোকা মারলেন।
একবার, দুবার তারপর আস্তে আস্তে ন্যুজ চেহারার একজন রমণী দরজা খুলে দিলেন।
মিঃ মেহার্ন নিস্পৃহ ভাবে ছোট্ট নোংরা ঘরটায় ঢুকলেন, ভিতরে গ্যাসের আলো জ্বলছে।
রমণী মধ্যবয়স্কা, ঝুঁকে পড়া চেহারা, মাথায় একরাশ চুল, মুখের চারধারে স্কার্ফ শক্ত করে বাঁধা।
মহিলা বললেন অবাক হচ্ছ নিশ্চয়ই, দেখবে আমার সৌন্দৰ্য্য, বলে রমণী স্কাটা একদিকে খুলে ফেলল। মিঃ মেহার্ন ভয়ে গুটিয়ে গেলেন। মুখে বিশ্রী দগদগে লাল দাগ। রমণী মুখটা আবার ঢেকে দিল।
জান আমি কিন্তু এক সময় দেখতে খুব সুন্দরী ছিলাম। অ্যাসিড! অ্যাসিডে আমার এই অবস্থা। কিন্তু আমি তাদের উপর প্রতিশোধ নেব।–মিঃ মেহার্ন তাকে থামাবার চেষ্টা করলেন। একসময় মহিলা থেমে গেলেন। এবার মেহান বললেন, তুমি আমাকে এমন কিছু খবর দিতে পারবে যাতে আমার মক্কেল লেনার্ড ভোল খুনের অভিযোগ থেকে মুক্তি পাবে।
রমণী বলে উঠল আমার দুশ পাউণ্ড লাগবে। তুমি দুশ পাউণ্ড দাও, আমি তোমাকে দু-একটা খবর দেব। বুঝতে পারছ?
কি রকম খবর?
একটা রোমেন ভোলের লেখা চিঠি, ঐ চিঠিতেই তোমার কাজ হবে কিন্তু বদলে দুশ পাউণ্ড চাই।
মিঃ মেহার্ন বললেন, আমি তোমাকে দশ পাউণ্ড দেব, এর বেশী এক কানাকড়িও দেব না।
মহিলা চেঁচিয়ে উঠলেন, তারপর কুড়িপাউণ্ড রফা হল। মহিলা গালাগাল দিতে দিতে শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দিল।
তারপর এক বাণ্ডিল চিঠি নিয়ে বলল, এই নাও অপদার্থ এই বাণ্ডিলের উপরের চিঠিটা তোমার কাজে লাগবে।
মিঃ মেহার্ন প্রত্যেকটা চিঠি ভালো করে পড়ে উপরের চিঠিটা নিলেন। একবারের উপরের চিঠিটা লেনার্ড ভোলের গ্রেপ্তারের দিন লেখা।
রমণী নাকি সুরে বলল, ঐ চিঠিটা বারোটা বাজাবে কি বল? আদালতে ঐ বেহায়া বউটা কি বলেছে আমি তা শুনেছি, খুঁজে বার কর দশটা কুড়িতে সে কোথায় ছিল; লায়ন রোড সিনেমায় খোঁজ নাও।
কিন্তু লোকটা কে? মিঃ মেহার্ন জিজ্ঞাসা করলেন? চিঠিতে শুধু একটা খৃষ্টান নাম পাচ্ছি।
ঐ লোকটাই তো আমার এই হাল করেছে। সে অনেকদিন আগেকার কথা ঐঠক মেয়েটাই তাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে।
আমি অনেকদিন ধরেই মেয়েটার উপর প্রতিশোধ নেবার সুযোগ খুঁজেছিলাম আজ তাকে বাগে পেয়েছি। বউটা এবার ফল ভোগ করবে তাই না উকিল সায়েব?
খুব সম্ভবত মিথ্যা সাক্ষ্য দেবার জন্য তার জেল হবে, মিঃ মেহার্ন শান্ত ভাবে বললেন। তারপর সে কোন কথা না বলে টেবিলের উপর প্রতিশ্রুত কুড়ি পাউণ্ড অর্থ রাখলেন। এবং লায়ন রোডের সিনেমা হলের দিকে এগোলেন।
খুব সহজেই সিনেমা হলটি পেয়ে গেল। রোমেন হেলজারের একটা ফটো হলের কেয়ার টেকারকে দেখাবার সঙ্গে সঙ্গেই সে রোমেন হেলজারকে চিনতে পারল।
ঘটনার দিন রোমেন হেলজার রাত দশটার একটু পরে একজন পুরুষের সঙ্গে সিনেমা হলে আসে। তারা দুজন সিনেমা শেষ হওয়া পর্যন্ত ছিল, প্রায় এক ঘণ্টা।
যেটুকু খবর পেলেন তাতে মিঃ মেহার্ন সন্তুষ্ট হলেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে রোমেন হেলজারের সাক্ষ্য প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মিথ্যেয় ভর্তি। সে রাগে ঐসব মিথ্যে বলেছে। কিন্তু কেন এই রাগ।
মিঃ মেহার্ন ভাবলেন ব্যাপারটা দুজনের মধ্যে গোপন আছে। কোনদিন হয়ত ব্যাপারটা জানতে পারবে।
তিনি এবার হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে একটি ট্যাক্সি নিলেন এবং নিজের মনে বললেন এক্ষুনি স্যার চার্লসকে খবরটা জানাতে হবে।
মিস এমিলি ফ্রেঞ্চকে খুনের জন্য লেনার্ড ভোলের বিচার চারিদিকে বেশ সাড়া জাগিয়েছে। সাক্ষ্য প্রমাণ জেরা প্রভৃতি প্রথমে খুব শান্তভাবে শুরু হল। নানারকম বৈজ্ঞানিক তথ্য সংক্রান্ত প্রমাণ দাখিল করা হল।