মিঃ মেহার্ন হঠাৎ বলে উঠলেন আচ্ছা এমন কি কেউ আছে যে আপনাকে নটা কুড়িতে বাড়ি ফিরতে দেখেছে? যেমন ধরুন কোনো চাকরানি?
না, আমাদের কোনো চাকরানি নেই।
ফেরার পথে রাস্তায় আপনার সাথে কারও দেখা হয়েছিল?
কিছুটা পথ তো আমি বাসে চড়ে এসেছি, সেরকম কারও সঙ্গে দেখা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না, তবে কণ্ডাকটর হয়ত মনে করতে পারে।
মিঃ মেহার্ন মাথা নাড়লেন, তিনি নিশ্চিত হতে পারছেন না। তাহলে আপনার স্ত্রীর কথা প্রমাণ করবার মত কেউ নেই। আচ্ছা মিস ফ্রেঞ্চ কি জানতেন, আপনি বিবাহিত?
ও, হ্যাঁ।
তাহলে আপনি, কোনদিন স্ত্রীকে ওনার কাছে নিয়ে যাননি কেন?
মিঃ ভোল তোতলাতে লাগল?
মিঃ মেহার্ন বললেন, মিস ফ্রেঞ্চ আপনাকে বিয়ে করবে বলে চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়ে ছিলেন।
মিঃ ভোল হেসে উঠলে আমাদের মধ্যে চল্লিশ বছরের প্রায় তফাৎ। আপনাকে আমি সব খুলে বলছি। আমার আর্থিক অনটন চলছিল–আমি আশা করেছিলাম মিস ফ্রেঞ্চ আমাকে কিছুটা ধার দেবেন। তাছাড়া তিনি ধরে নিয়েছিলেন আমাদের দুজনের সম্পর্ক ভালো নয়। আমরা আলাদা থাকি।
তার এই ভাবনাকে আমি তেমন আমল দিইনি। তিনি আমাকে তার পালিত পুত্র বলতেন।
আপনার বক্তব্য এখানেই শেষ?
হ্যাঁ, আমার কিছু আর বলার নেই।
মিঃ মেহার্ন আবেগ ভরে বলে উঠলেন আমি আপনার নির্দোষিতায় বিশ্বাস করি, আমি তা প্রমাণ করে আপনাকে মুক্ত করব।
তবে এই মামলার অনেক কিছুই জেনেট ম্যাকেঞ্জির সাক্ষ্যর উপর নির্ভর করছে। তিনি তো আবার আপনাকে ঘৃণা করে।
মিঃ ভোল প্রতিবাদ করে বললেন, সে আমাকে মোটেই ঘৃণা করে না।
মিঃ মেহার্ন মাথা নাড়তে নাড়তে বাইরে চলে গেলেন। তিনি ভোলদের আস্তানা প্যাডিংটন স্ট্রীটের বাড়িতে হাজির হলেন।
পরিচারিকা দরজা খুলে দিল। মিঃ মেহার্ন তার কার্ডটি পরিচারিকার হাতে দিয়ে বললেন এটি দেখাও তোমার মনিবকে তাহলে উনি আমার সঙ্গে দেখা করবেন। কিছুক্ষণ পরে দাসী তাকে ড্রইংরুমে নিয়ে গেল। মিঃ মেহার্ন বসে আছেন এমন সময় হঠাৎ একজন লম্বা, ফ্যাকাশে মহিলার সম্মুখীন হয়ে ভীষণ চমকে গেলেন।
মহিলা ঘরে প্রবেশ করে মিঃ মেহার্নকে বললেন, আপনিই মিঃ মেহার্ন। আপনিই আমার স্বামীর উকিল? আপনি কি অনুগ্রহ করে বলবেন আমার স্বামীর মামলাটির ফলাফল কি হতে পারে? সবকিছু জানা আমার অবশ্যই দরকার শত খারাপ ঘটনা হলেও আমি তা শুনতে প্রস্তুত।
মিঃ মেহার্ন বলতে শুরু করলেন, আমি জানি আপনি নিশ্চয়ই মানসিক কষ্টে আছেন
যাই হোক মিঃ মেহার্ন মিঃ ভোলের সঙ্গে তার সাক্ষাৎকারের ঘটনার বিবরণ জানালেন।
মিসেস ভোল মনোযোগ দিয়ে শুনলেন, তার পর বললেন আমার স্বামী চায় আমি যেন বলি সে ঐ দিন রাত্রে নটা কুড়িতে বাড়ি এসেছিল। তাই না?
মিঃ মেহার্ন তীক্ষ্ণভাবে জিজ্ঞাসা করলেন কেন তিনি ঐ সময় বাড়ি আসেননি?
রোমেন ভোল ঠাণ্ডা লাগায় বলল, প্রশ্ন হচ্ছে আমি যদি ঐ রকম সাক্ষ্য দিই তবে আদালত তাকে মুক্ত করবে? আচ্ছা এমন কেউ কি আছে যে আমার বক্তব্য সমর্থন করতে পারে?
তার ব্যগ্রতা দেখে মিঃ মেহার্ন একটু অস্বস্তি বোধ করলেন এবং আতঙ্কিত হয়ে পড়লেন। তারপর বিষণ্ণ ভাবে রোমেন ভোলের দিকে তাকিয়ে বললেন মিসেস ভোল আপনার মনের উপর খুব চাপ পড়েছে, আপনি স্বামীর প্রতি এত অনুরক্ত যে
মিসেস ভোল তীক্ষ্ণভাবে বলে উঠলেন, আমার স্বামী কি আপনাকে বলেছে যে আমি তার প্রতি অনুরক্ত? তবে শুনে রাখুন আমি তাকে ঘৃণা করি, আমি চাই তার ফাঁসি হোক।
রোমেন ভোলের হঠাৎ ঐ বিষোদগারণ দেখে মিঃ মেহার্ন কিছুটা কুঁকড়ে গেলেন।
রোমেন ভোল আর এক পা এগিয়ে এসে বলতে আরম্ভ করলেন, খুব সম্ভব আমি তার ফাঁসিতে মরণ দেখব। আমি যদি বলি সেদিন রাত্রে সে দশটা কুড়িতে এসেছিল, আর সে আপনাকে বলেছে যে সে মিস ফ্রেঞ্চের উইলের ব্যাপারে জানে না কিন্তু সে সবই জানে।
সে ঐজন্যই তাকে খুন করেছে। যাতে সে প্রচুর অর্থের মালিক হয়। যদি বলি ঐ রাতে সে আমার কাছে সব কবুল করেছে যে, সে খুন করে এসেছে? তার জামায় রক্ত লেগেছিল কি হবে তা হলে?
মিঃ মেহার্ন অনেক কষ্টে বুদ্ধিগ্রাহ্য ভাবে বললেন, স্বামীর বিরুদ্ধে সাক্ষী দেবার জন্য কখনই আপনাকে ডাকা হবে না।
সে আমার স্বামী নয়।
মিঃ মেহার্ন ভাবল তিনি যেন ভুল শুনছেন। আমি আপনার কথা ঠিক বুঝতে পারলাম না।
লেনার্ড ভোল আমার স্বামী নয়। আমি ভিয়েনায় একজন অভিনেত্রী ছিলাম। আমার স্বামী বেঁচে আছেন তবে পাগলাগারদে আছেন। ফলে লেনার্ড ভোলের সঙ্গে আমার বিয়ে হতে পারেনি।
মিঃ মেহার্ন বললেন, আচ্ছা আমি জানতে চাই লেনার্ড ভোলের প্রতি আপনার মনোভাব এত তিক্ত কেন?
রোমেন ভোল মাথা নাড়িয়ে বললেন এটা গোপন রাখতে চাই।
মিঃ মেহার্ন শুকনো কেশে উঠে দাঁড়ালেন আচ্ছা আমাদের কথাবার্তা আর চালিয়ে যাবার প্রয়োজন নেই। তিনি বললেন গুড ইভনিং ম্যাডাম। তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। নিজের মনে বললেন সমস্ত ব্যাপারটা অদ্ভুত মামলার জট আরো পাকিয়ে উঠল।
যুবকটি এখন অথৈ জলে, তার বিরুদ্ধে খুব বেশী প্রমাণ রয়ে গেছে, অত প্রমাণ রেখে কেউ খুন করে না মহিলা নিশ্চয়ই মিথ্যা বলছে।
পুলিশ কোর্টের কাজকর্ম চুকে গেল এই মামলার প্রধান সাক্ষীদ্বয় হলো মৃতার পরিচারিকা জেনেট ম্যাকেঞ্জি এবং তার স্ত্রী রলে পরিচিত রোমেন হেলজার।