এক কাজ করা যাক, ওর রাইটিং টেবিলের ড্রয়ারগুলো খুলে দেখা যাক যদি কিছু পাওয়া যায়। কিন্তু ব্যবসা সংক্রান্ত চিঠি, ব্যাঙ্কের বই ইত্যাদি ছাড়া কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। হঠাৎ সব থেকে নীচের ড্রয়ারে একটা বড় খাম পেল তাতে অনেকগুলো ক্লিপিং পেল।
চার্লস ল্যামেটার নামে বিখ্যাত এক নারী হন্তাকারীর বিচার সংক্রান্ত। সে ধনী বিধবা ডিভোর্সী রমণীকে বিয়ে করত। তারপর সুযোগ বুঝে খুন করে ফেলত। প্রমাণ অভাবে সে খালাস পেয়ে যেত। ল্যামেটার ছবি ছাপা হয়েছে। তার লম্বা দাড়ি, খাড়া নাক, জ্বলজ্বলে চোখ কিন্তু মানুষটার ভুরু জোড়া, চোখ আর নাক যেন ডোরাল্ডের মতো, দাড়ি কামালেই আসল রূপ বেরিয়ে পড়বে।
তাহলে ল্যামেটার আমেরিকা থেকে পালিয়ে এসে এখানে ডোরাল্ড মার্টিন সেজে বসে নেই তো! সর্বনাশ এখন কি হবে? বুধবার রাত্রি নটায় সে বেঁচে গেছে।
না এখানে আর থাকা চলবে না কিন্তু সে পালাবার আগেই ডেরাল্ড ফিরে এসেছে।
জানালা দিয়ে দেখল ডোরাল্ডের হাতে সদ্য কেনা নতুন একটা বেলচা। তার শরীর বেলচা দেখেই হিম হয়ে গেল তখন সে উদভ্রান্তের মত নীচে নেমে এল কিন্তু ডোরাল্ড তাকে জিজ্ঞাসা করল, তুমি কোথায় যাচ্ছ?
আমার ভীষণ মাথা ধরেছে, আমি রাস্তায় একটু বেড়িয়ে আসি।
তোমার কিছু একটা হয়েছে, চল আমিও তোমার সঙ্গে যাই।
অ্যালিকস বাধা দিল না, দুজনে রাস্তায় কিছুক্ষণ বেড়িয়ে বাড়ি ফিরল। বাড়ি ফেরার পর ডোরাল্ড অ্যালিকসের সঙ্গে সঙ্গে থাকতে লাগল। সে রাত্রে কোনো রকমে সাপার শেষ করল। তারপর অ্যালিকস মনে সাহস নিয়ে ভাবল, সে আজ রাত্রে এই বাড়িতে কিছুতেই এই খুনীর সাথে থাকবে না। সে সুযোগ বুঝে ডিককে ফোন করবে।
কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে ডোরাল্ড বলল, আজ নটা বাজলেই আমরা কিন্তু ডার্করুমে ঢুকব।
প্লিজ ডোরাল্ড আজ আমি ক্লান্ত আমায় মাপ কর তুমি, একা ম্যানেজ কর।
বেশিক্ষণের কাজ নয়, তুমি দেখো তোমার মাথা ধরবে না।
অ্যালিকস ভয় পেয়ে গেল, সে উঠে দাঁড়াল। আমি একটা বুচারকে ফোন করে আসি। অ্যালি তাড়াতাড়ি রিসিভার তুলে ট্রাভেলাস আমর্স-এর নম্বর বলল। মিঃ উইণ্ডিপোর্ডকে চাইল। ধরুন, ঠিক সেই সময়ে ডোরাল্ড ঘরে ঢুকল। অ্যালিকস বিরক্ত হলো।
কিন্তু ডোরাল্ড ঘর থেকে বেরোলো না, সে একটা বই মুখে দিয়ে বসে রইল।
এদিকে অ্যালিকস যতটা সম্ভব চালাকি করে আসল কথাটা জানিয়ে দিল।
সে বলল, ফিলোমেনা কটেজ থেকে কথা বলছি প্লিজকাম, ব্রিজটিপে এবং ছেড়ে সে কথা বলল যত শীঘ্র সম্ভব লাইফ অর ডেথ।
অ্যালিকস রিসিভার নামিয়ে রাখল। ডোরাল্ড তার বই রেখে বলল, বাঃ তুমি তো বেশ বুচারের সঙ্গে কথা বললে। ডোরাল্ড জিজ্ঞাসা করল, মাথা ধরা ছেড়েছে?
হা ছেড়েছে।
দুজনে আবার বসল। ডোরাল্ড সেই বইখানা পড়তে লাগল আর অ্যালিকস তার জামায় বোম বসাতে লাগল।
দেওয়াল ঘড়িতে ঢং করে একটা শব্দ হতেই ডোরাল্ড বলল, সাড়ে আটটা বাজল। চল অ্যালিকস আমরা ডার্করুমে যাই।
না, নটার সময় যাব।
কিন্তু আমার টাইম যে সাড়ে আটটা।
আজ আমার ভালো লাগছে না। তা বললে চলবে না তোমায় যেতেই হবে। অ্যালিকস এবার বুদ্ধি খাটাল যেভাবে হোক ওকে নটা পৰ্য্যন্ত আটকাতে হবে কারণ ডিক আসতে অন্তত আধঘন্টা লাগবে। কিন্তু ডোরাল্ড অ্যালিকসকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে ডার্করুমের দিকে চলল।
অ্যালিকস ভয় পেয়ে চীৎকার করে আবার থেমে ডোরাল্ডকে জরুরী কথা বলার অছিলায় ঘরে নিয়ে গেল।
তারপর সে বলল, আমি আমার বিষয় তোমাকে কিছুই বলিনি। আমি আগে দুবার বিয়ে করে ছিলুম। আমি যাকে বিয়ে করি তার বয়স আমার ডবল তার নামে দুহাজার পাউণ্ডের ইনসিওরেন্স করাই যাতে সে মারা গেলে টাকাটা আমি পাই। তাছাড়া আমি একটা হাসপাতালের ডিসপেনসারিতে কাজ করতুম সেখান থেকে তীব্র বিষ সংগ্রহ করি। বিষটার নাম হয়োসিন। কফির সাথে এক চিমটে মিশিয়ে দিলেই মানুষ একমিনিটে মরে যাবে। কিন্তু পোস্টমর্টেম করলে বিষের কোনো চিহ্ন পাওয়া যাবে না।
আমি সেই লোকটিকে কফির কাপে এক চিমটে বিষ মিশিয়ে দিয়ে দেখি লোকটি কিভাবে মরে। এক চুমুক খাবার পর দেখি লোকটি শুধু বলল, আমার শরীর কেমন করছে ব্যস এই তার শেষ কথা।
তার টাকাগুলি হাতিয়ে আবার অন্যগ্রামে গিয়ে পরিচয় গোপন করে অন্য এক ধনী ব্যক্তিকে বিয়ে করলুম। তবে এবারে বেশী টাকা পাইনি তবে লোকের সহানুভূতির জোরে এই টাইপিস্টের কাজটা যোগাড় করি।
ঘড়িতে ঠিক নটা বাজে। ডোরাল্ড চীৎকার করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, শয়তানী তুই তাহলে আমাকে কফিতে বিষ মিশিয়েছিস? ও মাইগড!
অ্যালিকস উঠে খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে ছোরাল্ডকে বলল, হ্যাঁ লামেটার আমি তোমার কফিতে বিষ মিশিয়েছি। তুমি একাই মানুষ খুন করতে পারো?
ডোরাল্ড কি বলতে লাগল কিন্তু তার কথা গলায় আটকে গেল।
কিছুক্ষণ বাদে গেট খোলার আওয়াজ হলো। ডিক আসছে সঙ্গে একজন পুলিশ ম্যান।
ডিক বলল, কি হয়েছে মাই লিটল গার্ল। অ্যালিকস থর থর করে কাঁপছে। ঘরে গিয়ে ডিককে দেখতে বলল। ডিক দেখলো চেয়ারে একজন লোক বসে রয়েছে। কিন্তু সে মৃত।