সে স্বামীর মৃত্যুতে যেন খুশী। কি বাজে স্বপ্ন ডিকের কি কোনো অলৌকিক শক্তি আছে? নাকি সে অ্যালিকসকে সতর্ক করে দিচ্ছে।
এই সব কথা অ্যালিকস ভেবেই যাচ্ছে এমন সময় টেলিফোন বেজে উঠল। সে টেলিফোন তুলে জিজ্ঞাসা করল, কে কথা বলছ? আমি ডিক, আমি এখন ছুটিতে আছি। তোমাদের গ্রামের সরাইখানাটা বেশ, এখানে মাছ ধরতে এসেছি, আমি যদি তোমার ওখানে যাই তাহলে আপত্তি আছে?
না, কড়া সুরে অ্যালিকস বলল, আসবে না তুমি।
ডিক থতমত খেয়ে বলল, আমাকে মাপ কর, আমি তোমাকে বিরক্ত করব না।
অ্যালিকস ভাবল এতটা রূঢ় না হওয়াই উচিত ছিল, সে স্বর কোমল করে বলল, আরে না, আজকে আমাদের বাড়িতে অন্য লোকের আসবার কথা আছে তুমি না হয় কাল রাত্রে ডিনারে এসো।
ডিকস বলল, সরি কাল আমি থাকব না, গুডবাই অ্যালিকস, বেস্ট অফ লাক টু ইউ মাই ডিয়ার। অ্যালিকস কোনো উত্তর না দিয়ে রিসিভার নামিয়ে রাখল। মনে মনে বলল, ভাগ্যিস ডিনারের নেমন্তন্ন নেয়নি। অ্যালিকস উত্তেজনায় কাঁপতে কাঁপতে ভাবল, যাই একটু বাগান ঘেরা কটেজে ঘুরে আসি। কটেজটি ভারি সুন্দর ফুলে ফুলে ভরা হট ওয়াটার, ইলিকট্রিক টেলিফোন, মর্ডান রাথরুম চওড়া বারান্দা সব আছে।
কটেজটি অ্যালিকস ও ডোরাল্ড দুজনে মিলে কিনে নিয়েছে। কটেজটি সুন্দর তবে ভারী নির্জন। এতদুরে কাজের লোক পাওয়া যায় না।
বাগানটা পরিচর্যা করার জন্য একজন মালী রাখা হয়েছে, তার নাম জর্জ।
বৃদ্ধ জর্জ সপ্তাহে দুদিন আসে সোমবার ও শুক্রবার। কিন্তু জর্জ আজকে বুধবার এসেছে। কেন?
জর্জকে জিজ্ঞাসা করতে সে বলল, শুক্রবার তাদের বাড়িতে উৎসব তাই, তাছাড়া আপনি নাকি কাল লণ্ডন যাচ্ছেন? মিঃ মার্টিন বললেন।
অ্যালিকস অবাক হয়ে বলল, না, আমরা তো লণ্ডন যাচ্ছি না, তুমি হয়ত ভুল শুনেছ তাছাড়া আমার লণ্ডন ভালো লাগে না। জর্জ তাড়াতাড়ি উত্তর দিল আমারও লণ্ডন একদম ভালো লাগে না। সেখানে বড়বেশী মোটরকার।
এই বাড়ির আগের মালিক দুহাজার পাউণ্ড দিয়ে এই কটেজ বিক্রী করে চলে গেছে লণ্ডনে। কিন্তু আমরা তা তিন হাজার পাউণ্ডে কিনেছি।
না, আপনি তাহলে জানেন না আমি যতদূর জানি এই কজেট মিঃ মাটিন দু হাজার পাউণ্ডে কিনেছেন। মালীর সঙ্গে কি তর্ক করবে? সে ভাবল ডোরাল্ড কি তাকে মিথ্যা কথা বলেছে? ফুল তুলতে তুলতে সে সব ভুলে যেতে চেষ্টা করল।
অ্যালিকস হঠাৎ একটা সবুজ মত কি দেখতে পেল আরে এটা তো ডোরান্ডের পকেট ডায়েরি। অ্যালিস্ ডায়েরিটা পড়ে দেখল তাতে লেখা ১৫ মে তারিখে সেন্ট পিটার্স চার্চে বেলা ১-৩০ টায় অ্যালিকসের সাথে তার বিয়ে হল।
তারপর লেখা ১৮ জুন সে তো আজকে রাত্রি নটা, তারপর আর কিছু লেখা নেই। সে আরও দেখল ব্যবসা সংক্রান্ত অনেক নোট বা ঠিকানা ফোন নম্বর ইত্যাদি কিন্তু কোনো মিস বা মিসেসের নাম নেই।
যাই হোক অ্যালিকস আজকে ডিকের ফোনের কথা গোপন রাখল।
লাঞ্চের সময় ডোরান্ডকে বাড়ি ফিরতে দেকে অ্যালিকস কিচেনে ঢুকে নানা কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
সন্ধ্যায় ডিনারের পর জানালা খুলে দিয়ে ওরা দুজনে লিভিং রুমে বসল। সাদা ফুলের গন্ধ ভেসে আসছে।
অ্যালিকস বলল, আজ রাত্রি নটায় কি করবে গো? ডায়েরীতে লেখা
ও ডায়েরীটা বুঝি তুমি কুড়িয়ে পেয়েছ?
হ্যাঁ, তার সঙ্গে তোমার অনেক সিক্রেট জেনে ফেলেছি।
আমার কিছুই গোপন নেই। আর নটার সময় ডার্করুমে কাজ করব। তুমি আমাকে হেল্প করবে। ডোরাল্ডের ফটো তোলার শখ আছে। ছবি তোলার পর নেগেটিভ ডেভেলপ করা। এনলার্জ করা সব ডোরান্ড নিজে করে। সে সব কাজ ঘড়ি ধরে করে।
অ্যালিকস কিছু না ভেবে হঠাৎ প্রশ্ন করে বসল, ডোরাল্ড আমি তোমার বিষয় কিছুই জানি না কেন?
ডোরাল্ড চমকে উঠল, সে কি আমি তো সব বলেছি। নর্দাম্বারল্যাণ্ডে ছেলেবেলা, তারপর সাউথ আফ্রিকা সেখান থেকে কানাডা সেখানেই সাফল্য লাভ করেছি।
অ্যালিকস এবার ঠাট্টা করে বলল, এতদিন বিয়ে না করে প্রেম নিশ্চয়ই করেছ।
ডোরাল্ড গম্ভীর হয়ে বলল, একজনকেই আমার ভালো লেগেছিল কিন্তু তার সঙ্গে প্রেমের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
ডোরাল্ড জিজ্ঞাসা করল, আজ রাত্রেই তোমার এসব বাজে কথা মনে হলো কেন? কে জানে? আমার মনে হচ্ছে সবাই যেন আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
সবাই বলতে? এই যে বড় জর্জ বলল, কাল নাকি আমরা লণ্ডন যাচ্ছি। তারপর কটেজটা নাকি দু-হাজার পাউণ্ডে কেনা হয়েছে?
ডোরাল্ড ভীষণ রেগে গেল। চিৎকার করে বলল, লোকটা আস্ত বোকা আমি জানি লণ্ডন ওর কাছে খারাপ শহর, তাই চটাবার জন্য ওকে বলেছিলুম। আর এমসকে যখন টাকা দিচ্ছিলাম তখন ও হাজির ছিল। মিঃ এমসকে এক হাজার পাউণ্ড ক্রস চেকে দিয়েছি সেটা ও জানে না। আমাদের ব্যাপারে ও নাক গলায় কেন?
যাকগে বুড়ো হয়েছে তো! যেতে দাও। নটা বাজতে আর পাঁচ মিনিট বাকি আমি কিন্তু ডার্করুমে যাচ্ছি না।
আমিও যাব না। ডোরাল্ড বলল।
মেয়েরা কত কি ভাবে? তারপর স্বামীর সাথে শোবার পর সব মেঘ সরে গেল।
পরদিন সকালটা বেশ ভালো রোদে ঝলমল দিন। বাগানে সব গাছে ফুল ফুটেছে। সারাদিন কাজ করল। কিন্তু সন্ধ্যা হতেই ঘাড়ে আবার ভূত চাপল ডিকের সেই কথা খালি মনে পড়ল। তার স্বামীকে সন্দেহ হলো আবার অজানা নারীর প্রতি হিংসা ও ঘৃণা জন্মাল। সে ভাবল পুরুষদের সে হাড়ে হাড়ে চেনে। জর্জের কথা শুনে সে সেদিন অত রেগে গেল কেন? তারপর একদিন কিছু কেনাকাটার জন্য গ্রামে যাবার দরকার কিন্তু ডোরাল্ড অ্যালিকসকে না যেতে দিয়ে সে নিজে গেল। সে ভাবতে বসল ডোরাল্ডের এত জেদ কেন? তাহলে তার স্বামী কি তাকে সন্দেহ করছে ডিককে নিয়ে? অ্যালিকসের মাথার ভেতর যেন একটা পোকা ঢুকেছে কিছুতেই তাকে তাড়ানো যাচ্ছে না। এইসব ভাবতে ভাবতে বিকেল হয়ে গেল। ডোরাল্ডের বাড়ি ফিরতে দেরি আছে।