চার্লস ভাবল এবার সে সম্পূর্ণ নিরাপদ। যখন ডাঃ মেনেলে তার পিসীকে সাবধানে থাকতে এবং আরও কুড়ি বছর বাঁচবে বলেছিলেন তখনই সে পরিকল্পনাটা এঁটে ফেলেছিল। এখন সে এই কাজে কৃতকার্য। চার্লস এবার যা যা করণীয় সব যন্ত্রচালিতের মত করে চলল। কবর দেবার ব্যবস্থা, আত্মীয়স্বজন যাবে তার ব্যবস্থা, কয়েক জন রাতে থাকবে তার ব্যবস্থা ইত্যাদি। সে যে কি সাংঘাতিক অবস্থার মধ্যে আছে তা মৃত আন্টি এবং অন্য কেউ-ই জানে না। তার কাজকর্ম সবই গোপন আছে। এখন আর সে ভয় নেই। চার্লস নিজের মনে হাসল। সে যা করেছে এতে অপরাধের কিছু নেই। শুধু পিসীর সাথে পিসেমশায়ের গলা নকল করে একটু ঠাট্টা করেছে। ব্যস এতেই সব সমাধান হয়ে গেল। এখন সে একজন ধনী ব্যক্তি।
এইসব চিন্তা করতে করতে এলিজাবেথ জানিয়ে গেল হপকিনস এসেছেন তার সঙ্গে দেখা করতে।
হপকিনস গত পঁচিশ বছর ধরে মিসেস হার্টারের উকিল। সে ঠিক সময়ে এসেছে।
চার্লস গম্ভীর মুখে লাইব্রেরী রুমে ঢুকল এবং মিঃ হপকিনসকে চেয়ারে বসার আমন্ত্রণ জানালেন।
আমি আপনার লেখা চিঠি ঠিক বুঝতে পারিনি মিঃ রিডাওয়ে। আপনার ধারণা হয়ত ভুল কারণ মিসেস হার্টারের উইলটা আমার হেপাজতে নেই। আমার কাছে ছিল কিন্তু তিনি মারা যাবার আগে গত মঙ্গলবার উইলটি চেয়ে পাঠান।
চার্লস অবাক হয়ে গেল তার শরীর কেমন হতে লাগল তার মনে হচ্ছে কোথাও গণ্ডগোল আছে।
সে তার আন্টির কাগজপত্রের মধ্যে উইলটা খুঁজতে লাগল কিন্তু কোথাও পেলো না।
মিঃ হপকিনসের ইচ্ছানুসারে এলিজাবেথকে ডাকা হলো। সে বলল, মৃত্যুর দিন সকাল পৰ্য্যন্ত তার কত্রীর হাতে উইলটা ছিল।
কিন্তু ম্যাডাম মারা যাবার পরদিন শুধু নীল খামটা টেবিলের উপর পড়েছিল।
দুজনই এলিজাবেথের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
এলিজাবেথ অনুমতি নিয়ে ঘরের দিকে চলে গেল।
মিঃ হপকিনস চার্লসকে প্রশ্ন করলেন, আপনার সাথে পিসীর কোনো মনোমালিন্য হয়নি তো?
চার্লস জোর গলায় বলে উঠল, আমাদের দুজনের সম্পর্ক মধুর ছিল।
চার্লসের এই সব কথা ভাবতে ভাবতে মুখটা বিবর্ণ হয়ে গেল। সে জিজ্ঞাসা করল, যদি উইলটা আর কখনও না পাওয়া যায় তাহলে কি হবে?
মিসেস হার্টারের আগের উইলটা রয়েছে। ১৯২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে করা ঐ উইল অনুযায়ী তার ভাগ্নী মিরিয়াম সব পাবে।
মিরিয়াম সব পাবে?
হঠাৎ টেলিফোন বেজে উঠল,
ডাঃ মেনেলে মিঃ রিডাওয়ে বললেন এইমাত্র শব ব্যবচ্ছেদ শেষ হল। তাঁর হৃদযন্ত্র ক্রিয়া বন্ধ হওয়ার জন্যই মৃত্যু হয়েছে। তিনি দুমাসের বেশী আর বাঁচতেন না।
চার্লস কিন্তু ইতিমধ্যে রিসিভারটা দুম করে নামিয়ে রেখেছে।
সে বুঝতে পারল তার সঙ্গে কেউ যেন চালাকি করছে। তার সামনে আর কোন আশা নেই। জেল ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই।
.
০৫.
সে বুঝতে পারল অলক্ষ্যে কেউ যেন তাকে দেখে হাসছে।
অ্যালিকসের স্বামী হেঁটে চলল গ্রামের দিকে যতক্ষণ না স্বামী দৃষ্টির আড়ালে চলে গেল ততক্ষণ সে কাঠের গেট ধরে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল।
অ্যালিকস মার্টিন সুন্দরী নয়, চেহারাটা নজর ধরাও নয় তবে একটা চটক আছে। ওর বাদামী চুল ওর গর্বের বিষয়। তার কথা বলার ধরনটিও বেশ মধুর। পোশাক পরিচ্ছেদে বেশ ছিমছাম, যে পোশাকটি পরলে তাকে মানায় সেই পোশাকটিই সে পরে।
আঠারো বছর বয়সে লেখাপড়া শেষ করে তাকে চাকরিতে ঢুকতে হয়েছে।
অ্যালিকস নামী ইস্কুলের গ্র্যাজুয়েট। তার রুগ্ন মাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তাকে শর্টহ্যাণ্ড টাইপিস্টের চাকরি করতে হয়েছে।
এই পনেরো বছরের মধ্যে বিয়ে না হলেও প্রেম হয়েছে। প্রেমিক তার সহকর্মী কেরানী ডিক উইনডিফোর্ড। কিন্তু তারা কেউ পরস্পরের কাছে প্রেম নিবেদন করেনি। তবু অ্যালিকস ভাবত তারা দুজনে স্বামী স্ত্রী হবে।
এদিকে হঠাৎ অ্যালিকসসের কপাল খুলে গেল। তার দূর সম্পর্কের এক কাজিন মারা গেছে। সে তার সঞ্চিত বেশ কয়েক হাজার পাউণ্ড উইল করে গেছে তাকে।
অ্যালিকস ভাবল এবার তা হলে সে মিসেস অ্যালিকস উইনফোর্ড হবে। এই সুসংবাদে ডিকের কিছুই হলো না উল্টে সে অ্যালিকসকে এড়িয়ে চলে।
কিন্তু এর কারণ কি? ধনী পত্নীর স্বামী হতে তার পৌরুষে বাঁধছে? এইসব ভেবে ডিক নিজেও কষ্ট পাচ্ছে। অ্যালিকস তাকে ভালোবাসে সে শুধু অপেক্ষা করছে ডিকের হয়তো ভুল ভাঙবে।
এমন সময় সব উল্টে গেল, অ্যালিকসসের এক বান্ধবীর বাড়িতে ডোরাল্ড মারটিনের দেখা হল। সঙ্গে সঙ্গে তাদের প্রণয় সৃষ্টি হল। সে প্রেম নদীতে ঝাঁপ দিল। সে ডিককে ভুলে গেল।
কয়েকদিন পরে ডিককে সে সব বলল এবং শীঘ্র তারা বিয়ে করবে একথাও বলল।
ডিক বলল, লোকটি তোমার অপরিচিত। তুমি ওর বিষয়ে কিছু জান না। মাত্র কদিনের পরিচয়ে তুমি জেনে গেলে।
অ্যালিকস এবার রেগে গিয়ে বলল, আমি জানতাম না যে কোনো পুরুষ এগারো বছরেও জানতে পারে না ভালোবাসা কি?
অ্যালিকস-এর কথা শুনে ডিক অনেক অনুনয় করল, তবু অ্যালিকস শুনল না। তখন সে ভয় দেখাল শান্ত শিষ্ট এই মানুষটার মধ্যে এত আগুন লুকিয়েছিল।
ডিক বলে ডোরাল্ডকে সে খুন করবে? অবশ্য সে যা বলছে রাগের মাথায় বলছে।
আজ সকালে স্বামীকে বিদায় দেবার পর ডিকের শাসানি তার মনে পড়ে গেল। বিয়ের পর অ্যালিকস তিনবার একই স্বপ্ন দেখেছে। ডিক তার স্বামীকে খুন করছে। ডোরাল্ড মরে পড়ে আছে, আর ডিক তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।