মিসেস হার্টার বললেন, আমার এখন সত্তর পার হয়ে গেছে। একদিন না একদিন আমাদের সবাইকে তো ওপারে যেতে হবে।
এলিজাবেথ তার কথা শুনে কাঁদতে কাঁদতে বাইরে চলে গেল।
মিসেস হার্টার স্নেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। খুব বিশ্বাসী ওকে আমি উইলের কত দিয়েছি। ওকে একশ পাউণ্ড দেওয়া উচিত।
পরের দিন তিনি উকিলকে চিঠি লিখে অনুরোধ করলেন উইলটা দেখানোর জন্য। একদিন চার্লস তার পিসীকে বলল, গেস্টরুমে ঐ গোবদা মুখো ফটোটা কার? গালে দাড়ি লম্বা জুলফি মাথায় টুপি উনি কে?
মিসেস হার্টার চার্লসের কথায় খুব রেগে গেলেন। এবং বললেন, ওটা তোমার পিসেমশাইয়ের ফটো।
চার্লস ক্ষমা চেয়ে বলল, সরি আমি তোমাকে দুঃখ দিতে চাইনি। তবে একটা কথা আমি পিসেমশাইকে মানে ফটোর ঐ ব্যক্তিকে যেন দেখেছি। আমাদের বাড়িতে তিনি যেন শেষের জানালার ধারে বসে আছেন।
শেষের জানালায়? মিসেস হার্টার চঞ্চল হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন।
চার্লস বলল, হ্যাঁ কেন?
মিসেস হার্টার ভাবলেন তিনি আজ নিয়ে মোট তিনদিন সেই রহস্যময় গলা শুনতে পেয়েছেন। তাহলে আর কোন সন্দেহ নেই তার সঙ্গে অন্য এক জগতের সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। তিনি রেডিওতে তার স্বামীর গলায় শুনতে পেয়েছেন। তিনি বলছেন, মেরি তুমি নিশ্চয়ই এখন প্রস্তুত শুক্রবার আমি তোমার জন্য আসব…সাড়ে নটার সময়…ভয় পেও না, কোনো যন্ত্রণা অনুভব করবে না…প্রস্তুত থেকো।
মিসেস হার্টারের মুখটা সাদা হয়ে গেছে, ঠোঁট দুটো নীল শুকনো দেখাচ্ছে।
তিনি কাঁপা হাতে নীচের লাইন কটা লিখলেন,
আজ রাতে সওয়া নটায় আমি আমার মৃত স্বামীর গলার স্বর পরিষ্কার শুনতে পেয়েছি। সে রাত সাড়ে নটায় শুক্রবার আমার কাছে আসবে।
আমি যদি ঐদিন মারা যাই তাহলে এটাই প্রমাণিত হবে
বিদেহী জগৎ আছে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব। মেরি হার্টার।
মিসেস হাটার চিঠিটা লিখে এলিজাবেথকে দিয়ে চিঠিটা পোষ্ট করালেন ডাঃ মেনেলের কাছে। এলিজাবেথকে কোনো কথা বলতে দিলেন না। তিনি বললেন, আমি অপার্থিব ব্যাপার অনুভব করছি।
আমি তোমাকে একশ পাউণ্ড দিতে চাই তবে মৃত্যুর আগে ব্যাঙ্কে যেতে যদি না পারি চার্লস তার ব্যবস্থা করবে।
এলিজাবেথ কোনো কথায় কান করলেন না।
মিসেস হার্টার বললেন, মনে রেখো চার্লস যদি আমার কিছু হয় তবে এলিকে অতিরিক্ত পঞ্চাশ পাউণ্ড দেবার ব্যবস্থা করবে।
চার্লস গলায় খুশির স্বর আনার চেষ্টা করল, তোমার কি হতে যাচ্ছে। ডাঃ মেনেল বলেছেন, তুমি আরও কুড়ি বছর বাঁচবে। তখন শততম জন্মদিন পালন করব।
মিসেস হার্টার স্নেহমাখা হাসি হেসে বললেন শুক্রবার তুমি কি করছ?
চার্লস অবাক হয়ে বলল, সন্ধ্যাবেলা ইউইং আমাকে তাস খেলতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তবে তুমি যদি চাও তাহলে আমি থাকতে পারি।
মিসেস হার্টার দৃঢ়ভাবে বললেন, না। আমি ঐ রাতে একদম একা থাকতে চাই। তার ইচ্ছা তিনি একাই কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি হবেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বাড়িটা খুবই নিস্তব্ধ মনে হল। মিসেস হার্টার চেয়ারে বসে আছেন তাঁর সব প্রস্তুতি শেষ।
তিনি চার্লসের জন্য একটা নির্দেশের তালিকা করলেন। তাঁর সব আত্মীয়দেরও কিছু কিছু জিনিস দেয়ার কথা লিখলেন। উইলের বক্তব্য খুব একটা দীর্ঘ নয়। মিসেস হার্টার ঘড়ির দিকে তাকালেন সাড়ে নটা বাজতে তিনি মিনিট বাকি। তিনি প্রস্তুত হয়ে আছেন শান্ত, সংযত। শেষ কথা কটি নিজের মনে বার বার বলার সময় তার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল, কি যেন এখনি ঘটবে।
সাড়ে নটা, রেডিওটা তিনি চালিয়ে দিলেন। তিনি এবার কি শুনবেন?
কেউ কি আবহাওয়ার খবর বলতে নাকি পঁচিশ বছর আগে মারা গেছে এমন একজনের গলা শুনবে।
তিনি কিছুই শুনতে পেলেন না। তার বদলে সামনের দরজায় একটা যেন হাতড়ানো শব্দ। তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়লেন। দরজার বাইরে যেন মৃদু পায়ের শব্দ, দরজাটা আস্তে আস্তে খুলে গেল। মিসেস হার্টার টলতে টলতে উঠে দাঁড়ালেন, তার দুচোখ ভোলা, দরজার দিকে নিবদ্ধ। তিনি চাপা আর্তনাদ করে উঠলেন।
আলোয় দেখলেন পুরোনো আমলের কোট গায়ে বাদামী রঙের দাড়ি ও লম্বা জুলফি সমৃদ্ধ পরিচিত মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে।
প্যাট্রিক তাকে নিতে এসেছে। তার হৃদযন্ত্র শেষবারের মতো লাফিয়ে উঠে চিরতরে স্তব্ধ হয়ে গেল। তিনি মেঝেতে পড়ে গেলেন।
প্রায় একঘন্টা পরে কত্রীকে ঐ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখল এলিজাবেথ। সঙ্গে সঙ্গে ডাঃ মেনেলকে খবর পাঠিয়ে আনা হল। আর কিছু করার নেই। মিসেস হার্টার চিকিৎসার বাইরে চলে গেছেন।
এলিজাবেথের মিসেস হার্টারের ডাক্তারকে লেখা সেই চিঠিটার কথা মনে পড়ল। সে ডাঃ মেনেলেকে চিঠিটা পড়তে দিলো। ডাঃ মেনেলে চিঠিটা আগ্রহ সহকারে পড়ে চার্লসকে দেখালেন।
তিনি আশ্চর্য হয়ে বললেন, আপনার পিসী তার স্বামীর গলা শুনেছিলেন ভেবে নিয়ে ঐ বিশেষ সময়টিতে উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং তার হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে যায়।
চার্লস বলল, অবচেতন মনের প্রতিক্রিয়া?
কিছুটা ঐরকম যতশীঘ্র পারি ময়না তদন্তের ফল আপনাকে জানাব।
চার্লস মাথা নাড়ল।
আগের দিন রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে ছিল তখন সে রেডিওর ক্যাবিনেটের তার সরিয়ে নিল। ঐ তারটা চার্লসের শোবার ঘর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। পিসেমশাইয়ের কিছু পোক কর্পূরের গন্ধ ভরা আলমারিতে রেখে দিল। এলিজাবেথকে ফায়ার প্লেসে আগুন জ্বালাতে বলেছিল। ঐ আগুনে বাদামী রঙের দাড়ি ও জুলফি পুড়িয়ে দিল।