মিঃ ডিনমিড খুশি মনে বললেন, আশা করি আপনার গাড়ির বিশেষ কোনো ক্ষতি হয়নি। মর্টিমার উঁচু গলায় মিঃ ডিনমিডকে বিপদে আশ্রয় দেবার জন্য ধন্যবাদ জানালেন।
মলিন ও শার্লট বলল, না না, এটা আমাদের কর্তব্য তারপর তারা হাত ধরাধরি করে দুজনে দূরে একটা বেঞ্চে বসল।
মর্টিমার হঠাৎ বলে ফেললেন, আপনার মেয়ে দুজনকে দেখতে কিন্তু মোটেই একরকম নয় তাই না মিঃ ডিনমিড।
মিঃ ডিনমিড কথাটা শুনে একটু হতচকিত হয়ে গেল।
আপনার তাই মনে হচ্ছে না কি? হা ওরা দেখতে আলাদা।
মর্টিমার সহজ গলায় বলল, তবে ওরা দুজনেই নিশ্চয়ই আপনার মেয়ে নয়।
মিঃ ডিনমিড এবার সত্যি কথা বললেন, ঠিক ধরেছেন মশাই, ওরা দুজনই আমাদের মেয়ে নয়। একজনকে শিশু বয়স থেকে পালন করে আসছি। সে কিন্তু এসবের কিছু জানে না। তবে তাকে এবার সব জানাতে হবে।
মর্টিমার জিজ্ঞাসা করলেন, কিছু সম্পত্তি ও পাচ্ছে বোধহয়?
মিঃ ডিনমিড ভাবলেন সব খুলে বলাই ভালো। আপনি কি করে ধরলেন মশাই।
এটা আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের পারদর্শিতা।
হ্যাঁ, আপনার কথাই ঠিক। আমরা তাকে পালিতা কন্যা হিসাবে গ্রহণ করি। মদলিনের সম্বন্ধে খবরে কাগজে একটা বিজ্ঞাপন দেখলাম। তার বাবা খুব ধনী ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর আগে তিনি তার সন্তানের অস্তিত্ব সম্বন্ধে জানতে পেরেছিলেন। তিনি লোকও লাগিয়ে ছিলেন এবং উইল করে গিয়েছেন যে মেয়েকে খুঁজে পাওয়া গেলে তার সব সম্পত্তি মেয়ে পাবে।
মিঃ মর্টিমার মন দিয়ে সৰু শুনলেন এইজন্যই মদলিন অন্যরকম দেখতে, চুলগুলো কালো কেমন যেন নিস্পৃহ ভাব। মিঃ ডিনমিডের কাহিনী সত্য হলেও কিছু তথ্য গোপন আছে।
তবু মর্টিমার মিঃ ডিনমিডকে বুঝতে দিলেন না।
তিনি বললেন, বাঃ মদলিন সুন্দরী এবং প্রচুর অর্থের মালিক তার ভবিষ্যৎ খুব উজ্জ্বল।
এবার এখন আমার যাবার সময় হয়েছে আপনাদের আতিথেয়তার জন্য আর একবার ধন্যবাদ। মিসেস ডিনমিডের দুচোখে ভয়ের ছায়া দেখতে পেলেন।
মেয়ে দুটোকে মর্টিমার দেখতে পেলেন না কিন্তু আগের রাতে গাড়িটাকে যেখানে ফেলে এসেছিলেন সেই রাস্তায় ধারের ঝোপে মদলিন দাঁড়িয়েছিল।
আপনার সাথে আমার দেখা করার দরকার ছিল। মদলিন বলল, দেখুন, আমি বিচার বুদ্ধি দিয়ে চলি কুসংস্কারে বিশ্বাস করি না। কিন্তু আমাদের বাড়িতে কিছু রহস্যজনক ঘটনা ঘটেছে তা ধরা ছোঁওয়ার মধ্যে, এটা ভূত প্রেতের সৃষ্টি নয়। প্রতিদিনই রহস্যটা ঘনীভূত হচ্ছে। বাবা, মা, শার্লট সব বদলে যাচ্ছে, একমাত্র জনি পাল্টায়নি।
মদলিন বলল, আমি ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম কাল রাতে। কিন্তু আপনি আসায় সেটা থেমে গেছে। আমি বিপদের আশঙ্কায় এস. ও. এস হঠাৎ লিখে ফেলেছি।
মর্টিমার মদলিনকে ভরসা দিয়ে বললেন, ভয়ের কিছু নেই। যা করার আমি করব। শুধু আপনি চিন্তা করে বলুন কাল রাতে এমন কোনো কথা আপনার মনে দাগ কেটেছিল কিনা?
মদলিন বলল সে রকম কিছু মনে পড়ছে না। শুধু শার্লটকে দেখতে হুবহু মার মত হয়েছে এই কথা বাবা বলেছিলেন মাকে।
ঠিক আছে আপনি চিন্তা করবেন না আপনি এখন বাড়ি যান। আমার হাতে সব কিছু ছেড়ে দিন।
এবারে মর্টিমার চোখ বন্ধ করলেন। তাঁর মনে বার বার জনির মুখটা ফিরে আসতে লাগল। জনি নিরীহ তবু তাকে কেন্দ্র করেই সব ঘটনা ঘটেছে। আজ সকালে প্রাতঃরাশের সময় মিসেস ডিনমিডের হাত থেকে কাপটা পড়ে গেল কেন? উত্তেজনার কারণটা কি? তিনি বলেছিলেন জনি রসায়ন ভালোবাসে সেই জন্য কি? তিনি পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছেন মিঃ ডিনমিডের চায়ের কাপটা ঠোঁটের কাছে ধরা।
এই সব ভাবতে ভাবতে শার্লটের কথা মনে পড়ে গেল। কাল রাতে সে কেমন অদ্ভুত ভাবে মিঃ মর্টিমার দিকে তাকিয়ে ছিল। আরও একটা ব্যাপার মিঃ ডিনমিড একটার পর একটা চায়ের কাপ খালি করে বললেন, চা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে কিন্তু তখনও চা দিয়ে ধোঁয়া বেরোচ্ছে।
মাসখানেক আগে একটা ঘটনা তিনি পড়েছিলেন একটা ছেলের অমনোযোগিতার জন্য পুরো একটা পরিবার ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
আধঘণ্টা পরে মর্টিমার তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ালেন এবং তিনি মিঃ ডিনমিডের বাড়িতে আবার ছুতো করে গেলেন। মর্টিমার বললেন, আমি দুঃখিত একটা জিনিষের জন্য আমাকে আবার আসতে হল।
মিঃ ডিনমিড চেঁচিয়ে উঠলেন, তার মুখ লাল হয়ে উঠেছে, শিরাগুলো ফুলে উঠেছে, আপনি কিসের জন্য ফিরে এলেন আমি তা জানতে চাই।
একটু চায়ের জন্য তড়িৎগতিতে তিনি পকেট থেকে কি একটা বার করে টেবিলে থেকে একটা চায়ের কাপ তুলে বাঁ হাতে ধরা একটা টেস্টটিউবে খানিকটা চা ঢাললেন।
মিঃ ডিনমিড জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি করছেন? তিনি তীক্ষ্ণ কণ্ঠে ভয়ে কেঁদে উঠলেন। আমি নিশ্চিত মিঃ ডিনমিড যে, আপনি খবরের কাগজ পড়েন। কিছুদিন আগে একটা খবর বের হয়েছিল যে, একটা পুরো পরিবার বিষক্রিয়ার অসুস্থ হয়ে পড়েছিল কিন্তু আজকে ঘটনায় মাত্র একজন মারা যেত।
প্রথম প্রশ্ন হলো টিনের যে হ্যাম খেয়েছিলেন তাতে কিছু ছিল। আপনার ভাড়ার ঘরে এক প্যাকেট আর্সেনিক আছে। তার নীচের শেলফে এক প্যাকেট চা আছে। উপরের শেলফে একটা ফুটো আছে। ঐ আর্সেনিক ফুটো দিয়ে চায়ের প্যাকেটে পড়েছে এটা সবাই স্বাভাবিক ভাববে।
মর্টিমার আরও বললেন, আপনি নিজের মেয়ে শার্লটের চায়ের কাপে কিছু মেশাননি কিন্তু মদলিনের চায়ের কাপে চার পাঁচগুণ বেশি আর্সেনিক আছে। এটা ঠিক নয় আসল যেটায় লাল লেবেল লাগানো হলো সেটায় আপনার মেয়ে শার্লটের কাপের চা আর দ্বিতীয়টায় মদলিনের কাপের চা। আমি শপথ করে বলতে পারি প্রথম টেস্টটিউবে দ্বিতীয় টেস্টটিউবের চেয়ে চার পাঁচগুণ বেশী আর্সেনিক রয়েছে।