একটু পরে মর্টিমার পায়ের শব্দ পেলেন।
আপনার মেয়েরা খুব সুন্দরী, ক্লিভল্যাণ্ড বললেন।
মিঃ ডিনমিড গর্বের সঙ্গে বললেন, হ্যাঁ। আমার মতো বা মা-র মতো হয়নি।
একটু পরেই জানানো হলো ঘর প্রস্তুত। মর্টিমার আরও একবার ধন্যবাদ জানালেন।
ডিনমিড বললেন, তোমরা ওঁর সঙ্গে উপরে গিয়ে দেখ সব কিছু ঠিকঠাক আছে কিনা।
মলিন জানালাটা পরীক্ষা করে দেখল এবং শার্ট ওয়াশ হ্যাঁণ্ড বেসিনের দিকে নজর দিল। তারপর গুডনাইট মিঃ ক্লিভল্যাণ্ড বলে বিদায় নিল।
দরজাটা বন্ধ করে তারা দুজন চলে গেল। ঘরে মর্টিমার এখন একা।
কিছুক্ষণ বাদে নিচ থেকে মিঃ ডিনমিডের গলার শব্দ তিনি পেলেন।
তারপর তিনি পায়চারি করতে করতে চিন্তায় ডুবে গেলেন। আচ্ছা মর্টিমার এমন ভাবে তাকাল কেন? তাহলে এই বাড়িতে কোথায় যেন একটা গোলমাল আছে।
এস.ও.এস। এটা বিপদ সংকেত কিন্তু ধুলোর মধ্যে কে এটা লিখল?
তার মনে পড়ল তারা দুজনেই ওখানে দাঁড়িয়ে ছিল কিন্তু লিখল কে?
দরজার সামনে গিয়ে তিনি আবার দরজাটা খুললেন না, মিঃ ডিনমিডের গলার আওয়াজ আর শোনা যাচ্ছে না।
তিনি চিন্তা করলেন কাল যা কিছু করার করব।
ক্লিভল্যাণ্ড সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠলেন। লিভিংরুমের ভিতর দিয়ে বাগানে চলে গেলেন। শার্লট সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেছে।
ক্লিভল্যাণ্ডকে শার্লট দেখতে পেয়েই সুপ্রভাত জানাল।
গুডমর্নিং, মর্টিমার হাসিমুখে বলল।
কিছুক্ষণ পর মর্টিমার একটা গাছের ডাল ভেঙে ঐটা দিয়ে বালুময় মাটিতে এস.ও.এস লিখে শার্লটকে ভালো করে লক্ষ্য করলেন। কিন্তু কিছু বুঝতে পারলেন না।
তুমি কি জান এই তিনটে অক্ষরের মানে কি? শার্লট ভ্রূ কোঁচকাল।
সে বলল, কোনো জাহাজ যখন বিপদে পড়ে তখনই তো এই সংকেত পাঠায়।
মর্টিমার সায় দিল মাথা নেড়ে। কিন্তু তুমি কি এটা লিখেছ।
শার্লট চোখ বড় করে অবাক হয়ে বলল, না আমি লিখিনি।
তাহলে আমার ভুল হয়েছে। হতাশায় মনটা তার ভরে গেল।
এবারে তারা দুজনে বাড়ির দিকে চলল। যেতে যেতে শার্লট হঠাৎ নীচু গলায় বলে উঠল, কথাটা আমি লিখিনি বটে কিন্তু যে কোন সময় লিখে ফেলতে পারতাম। কারণ আমি ভীষণ ভয়ের মধ্যে ছিলাম। কিন্তু আপনি আসার পর যেন কিছু উত্তর পেলাম।
তুমি কিসের ভয় পেয়েছিলে?
আমি তা জানি না, শার্লট বলল। তবে মনে হয় বাড়িটা। এখানে আসার পর সবাই কেমন যেন পালটে গেছে, তাছাড়া এই বাড়িতে ভূত আছে।
মর্টিমারের আগ্রহ আরও বেড়ে গেল। শার্লট বলল, এই বাড়িতে একজন লোক তার স্ত্রীকে খুন করেছিল। এখানে আসার পর আমরা তা জানতে পারি। মর্টিমার চিন্তা করতে লাগলেন। আমাকে বল কাল রাতে আমি যে ঘরে ছিলাম খুনটা কি সেই ঘরেই হয়েছিল?
শার্লট বলল, আমি ও সম্বন্ধে কিছুই জানি না।
মর্টিমার প্রায় নিজের মনে বললেন, খুনটা ঐ ঘরে হয়ে থাকতে পারে।
আমার মনে হয় কাল রাতে তুমিই এস.ও.এস লিখেছিলে! তুমি অবচেতন অবস্থায় লিখেছ। অনেক বছর আগে যে খুন হয়েছিলো সে হয়ত এস.ও.এস লিখেছিল, এখন তুমি অবচেতন মনে লিখে ফেলেছ।
শার্লটের মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল। সে বলল, আপনি এই ভাবে ব্যাখ্যা করছেন। বাড়ির ভিতর থেকে কে যেন তাকে ডাকল সে ভেতরে চলে গেল।
মর্টিমার একাই বাগানে পায়চারি করতে লাগলেন। কাল রাতে এই বাড়িতে ঢুকে তিনি যে উত্তেজনার আভাস পেয়েছিলেন এই ব্যাখ্যা কি তার সঙ্গে যুক্তিযুক্ত? তিনি নিজের মনে বললেন, আমার আবির্ভাব জনি ছাড়া সবাইকে ভীষণ চমকে দিয়েছিল কিন্তু কেন?
এমন সময় জনি অতিথিকে বলল, ব্রেকফাস্ট রেডি আপনি ভেতরে আসুন।
মর্টিমার লক্ষ্য করলেন জনির হাতের আঙুলে কিসের দাগ। জনি বুঝতে পেরে বলল, আমি রসায়ন নিয়ে পরীক্ষা করি। বাবা পছন্দ করেন না। তবুও আমার ইচ্ছা রসায়ন নিয়ে আমি গবেষণা করি।
ইতিমধ্যে মর্টিমার ব্রেকফাস্ট টেবিলে এলেন এদিকে মিঃ ডিনমিড মিসেস ডিনমিড, খাবার টেবিলে এসে মর্টিমারকে সুপ্রভাত জানাল। মর্টিমারের মনে হলো মিসেস ডিনমিড যেন ভয় পেয়েছে তাঁকে দেখে। সবার শেষে মলিন এল, সে মর্টিমারকে অভিবাদন জানিয়ে জিজ্ঞাসা করল কাল আপনার ভালো ঘুম হয়েছে তো?
মর্টিমার বললেন, হ্যাঁ তার ভালোই ঘুম হয়েছে। মদলিনের মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল মর্টিমারের উত্তরে। মর্টিমার এবার গৃহস্বামীকে জিজ্ঞাসা করলেন আপনার ছেলে রসায়ন বিদ্যায় আগ্রহী। হঠাৎ মিসেস ডিনমিড তার হাতের কাপটা মেঝেতে ফেলে দিলেন অর্থাৎ পড়ে গেল। তার স্বামী বলে উঠলেন কি হলো ম্যাগি? তার গলার স্বরে মনে হলো ধমক ও সাবধান করে দেওয়া। তারপর অতিথির দিকে তাকিয়ে অন্য কথা শুরু করলেন।
প্রাতঃরাশের পর মর্টিমার নিজেই বাগানে চলে গেলেন। তার যাবার সময় হয়ে এসেছে। কিন্তু তার যেতে ইচ্ছে করছে না মনের মধ্যে চিন্তা করতে করতে তিনি একটা রাস্তা ধরে বাড়িটার অন্য দিকে চলে এসেছেন। তার জুতোর তলা ক্রেপসোলের তাই মোটেই শব্দ হচ্ছিল না। তাই তিনি জানালার পাশে দাঁড়িয়ে মিঃ ডিনমিডের কথাগুলি শুনতে পেলেন, তিনি বলছিলেন প্রায় ষাট হাজার পাউণ্ডের মত উকিল বলছিল।
তাদের এই কথাবার্তা শুনে ব্যাপারটা রহস্যময় হয়ে উঠল। মদলিন বাড়ি থেকে বের হয়ে আসছিল কিন্তু তার বাবার ডাকে সে বাড়িতে ফিরে গেল।