হ্যারি জিজ্ঞাসা করল, কিন্তু আসল গুলির শব্দটা কেউ শুনতে পায়নি কেন?
সাইলেন্সার থেকে গুলি করা হয়েছিল। সাইলেন্সারটা খুঁজে পাওয়া যাবে, আর পিস্তলটা পাওয়া যাবে ঝোঁপের মধ্যে। পোয়ারো বুলেটটা তুলল আমি যখন মিঃ ডেল হাউসকে সঙ্গে নিয়ে জানলাটা পরীক্ষা করেছিলাম তখন মিঃ কিন আয়নার নীচে বুলেটটা ছুঁড়ে দিয়েছিলেন।
ডায়না মার্শালের দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলল জন আমাকে বিয়ে করে এখান থেকে নিয়ে চল। ডায়না আরও বলে উঠল, আমি উইলের অর্থ চাই না। আমরা ফুটপাতে ছবি এঁকে দিন কাটাব।
হ্যারি বলল, ঐসব কোন দরকার নেই। আমরা সম্পত্তি ভাগাভাগি করে নেব।
মিসেস লাইচাম রোচ কেঁদে উঠলেন। মিঃ পোয়ারো আয়নাটা কিন ইচ্ছে করেই ভেঙেছে? হ্যাঁ ম্যাডাম। মিঃ জেফ্রি কিনের পক্ষে এটা খুবই দুর্ভাগ্য বলে প্রমাণিত হল।
৩-৫. শক্ত সমর্থ পুরুষ
০৩.
মিঃ ডিনমিড বেশ শক্ত সমর্থ পুরুষ, কাঁধ দুটো একটু ঝোকানো, মুখটা বেশ বড় সড় ও লালচে।
মিঃ ডিনমিড গোল টেবিলটা লক্ষ্য করলেন ফায়ার প্লেসের আগুনে সাদা টেবিলক্লথ, মিঃ মেহার্ন বললেন, ছুরি কাঁটা ও অন্যান্য সরঞ্জাম চক্ করছে।
মিসেস ডিনমিড জিজ্ঞাসা করলেন, দেখ সব কিছু ঠিক আছে তো?
হ্যাঁ সব প্রস্তুত, মিঃ ডিনমিড বললেন।
তাহলে রান্নাগুলো করে ফেল, শার্লট রান্নাঘরে আছে তোমাকে সাহায্য করবে।
ডিম, কোল্ড কর্ড বিফ, রুটি আর চিজ এই হলো আজ রাতের খাবার। মিঃ ডিনমিড মিনিট দুয়েক ধরে শিস দিতে দিতে বললেন কি বিশ্রী আবহাওয়া আজ আর কেউ আসবে না। প্রায় দশমিনিট বাদে মিসেস ডিনমিড হাতে ডিম ভাজা নিয়ে ঢুকলেন এবং কিছু পরে তার দুই মেয়ে খাবার নিয়ে ঘরে ঢুকল। পিছন পিছন মিঃ ডিনমিড। ছেলে ডনিকে নিয়ে ঢুকলেন। তিনি সামনের চেয়ারে বসলেন। এবার মজা করে বলতে লাগলেন নানা কথাবার্তা।
যেমন তার মেয়ে মলিন বলল, লোকালয় থেকে এতদূরে বাড়ি করার জন্য কোন জন প্রাণীর দেখা পাই না।
শার্লট বলল, আমি কিছুতেই এই বাড়িতে একা একা ঘুমাব না।
ডিনমিড খুব রেগে গিয়ে বললেন, যত্তোসব বাজে কথা, তুমি কি কখনও কিছু দেখেছ? শার্লট কোনো উত্তর দিল না। এদিকে বাইরে বেশ জোরে বৃষ্টি শুরু হল।
মিঃ ডিনমিড জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি ভয় পাচ্ছ নাকি? আমরা আগুনের ধারে নিরাপদে আছি।
তার কথা শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ দরজায় করাঘাত শোনা গেল।
মিসেস ডিনমিড আর্তনাদ করে শালটা গায়ে জড়ালেন।
কুড়ি মিনিট আগে মর্টিমার ক্লিভল্যাণ্ড বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে গাড়িটাকে দেখতে লাগলেন। দশ মিনিটের মধ্যে পর পর দুটো টায়ার ফেটে গেল আর তিনি এখন উইন্টশায়ারের এই লোকালয় বর্জিত জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন সত্যিই তার ভাগ্য খুব খারাপ।
চারিদিকে সন্ধ্যায় অন্ধকার নেমে আসছে। ধারে-কাছে আশ্রয়স্থল নেই। তার উচিত ছিল বড় রাস্তা দিয়ে যাওয়া। গাড়িটাকে সচল করার কোনো উপায় এখন আর নেই কারণ তিনি যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন পাহাড়ের পাশে সরু রাস্তায়। তিনি হতবুদ্ধি হয়ে চারিদিকে তাকিয়ে হঠাৎ আলোর ঠিকানা পেলেন এক মুহূর্ত চিন্তা করে তিনি গাড়ি ছেড়ে পাহাড়ী পথ বেয়ে উপরে উঠলেন।
এবার তিনি একটা কুটিরের আলো দেখতে পেলেন। মর্টিমার ক্লিভল্যাণ্ড ভাবলেন ওখানে নিশ্চয়ই আশ্রয় পাওয়া যাবে।
ক্লিভল্যাণ্ড একজন বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী। তিনি অবচেতন মন নিয়ে দুটো টেক্সট বই লিখেছেন। তিনি রিসার্চ সোসাইটির সভ্য এবং অতিপ্রাকৃত বিদ্যার ছাত্র।
মিঃ ডিনমিডের বাড়ি পৌঁছে দরজায় ধাক্কা মারার পূর্ব মুহূর্তে একটা উত্তেজনার আঁচ পেলেন। তিনি পারিপার্শ্বিক আবহাওয়া বিচার করে ভবিষ্যৎ ফল সম্পর্কে অনুমান করতে পারেন।
তিনি দরজায় ধাক্কা মারতেই ভিতরের সবাই চুপ করে গেল এবং কিছুক্ষণ পরে দরজাটা খুলে গেল। ক্লিভল্যাণ্ড ভিতরের সব দৃশ্য দেখতে পেলেন, মনে হলো ভেতরটা কোনো ডাচ শিল্পীর আঁকা ছবি।
একটা বড় গোল টেবিল, পরিবারের সবাই বসে আছে। বাড়ির কর্তা, গিন্নী এবং তাদের কিশোর পুত্র ও কিশোরী কন্যা। মেয়েটি আশ্চৰ্য্য সুন্দরী।
ঘরের মধ্যে নিস্তব্ধতা কাটিয়ে ক্লিভল্যাণ্ড তার অসহায় অবস্থার কথা বললেন। অবশেষে কর্তা উঠে দাঁড়িয়ে মিঃ ক্লিভল্যাণ্ডকে ভিতরে ডাকলেন। আগুনের পাশে কাঠের টুলে ক্লিভল্যাণ্ড বসলেন। জনি দরজাটা বন্ধ করে দিল।
আমার নাম ডিনমিড কর্তা বললেন। আর ইনি আমার স্ত্রী এবং এরা দুজন আমার মেয়ে শার্লট এবং মদলিন। শার্লট অপূর্ব সুন্দরী। মলিন দেখতে একটু অন্য ধরনের। তার সৌন্দর্য্য যেন পটে আঁকা।
মর্টিমার ক্লিভল্যাণ্ডকে চা-পান করার জন্য অনুরোধ করলেন এবং কিছুক্ষণ বাদে তার স্ত্রী গরম চা ও নানারকম খাবার দিয়ে পরিচর্যা করলেন। পরিচর্যার ভিতর দিয়ে মিঃ ডিনমিড নানারকম কথাবার্তা শুরু করলেন। নিজের সম্বন্ধে সব কথা খুলে বললেন, তাঁর ব্যবসা, এই গ্রামে থাকা ইত্যাদি।
তার কথার তোড়ে মার্টিমার মন্ত্রমুগ্ধ। কিন্তু তবুও ঘরের ভিতর দৃষ্টির ফেলার সময় চারজনের মধ্যে একজনের অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করছেন।
আপনাকে আজ রাত্রিতে এখানেই থাকতে হবে। মিঃ ক্লিভল্যাণ্ড না হলে এত রাত্রিতে যাবেনইবা কোথায়?
আপনাদের আতিথেয়তার তুলনা হয় না। মেয়ে দুজন ঘর ছেড়ে বের হয়ে গেল।