রোজামন্ড তারুণ্যের চুল চেরা বিচার করলো, লিন্ডা সিদ্ধান্ত নিলেও মেনে নিতে পেরেছে রোজামন্ডকে বেশ বুদ্ধিমতী। রোজামন্ড ভাবলো চোহারার সঙ্গে মানিয়ে তৈরি ওর চুলটা। বেশিরভাগ লোকের চোহারার সঙ্গে চুল মানায় না। এছাড়া ওর পোষাক ছিল সুন্দর, ওর মুখে যেন এ অদ্ভুত খুশি। এই খুশির লক্ষ্য রোজামন্ড নিজে অন্য আর কেউ নয়। রোজামন্ড লিন্ডার সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করেছে। আজেবাজে কথা বলেনি কখনও। যাতে মনে হয় লিন্ডাকে ও বোকা ভাবছে। রোজামন্ড কখনো এমন ভাবে করেনি। সত্যি কথা বলতে কি, লিন্ডাকে সত্যিকারের মানুষ মনে করেই ওর সঙ্গে কথা বলছে রোজামন্ড। লিন্ডার নিজেকে কম সময় সত্যিকারের মানুষ বলে মনে হয়, কেউ ওকে মর্যাদা দিলে তার প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ হয়ে পড়ে।
বাবা খুশি হয়েছে মিস ডার্নলিকে দেখে। আশ্চর্য, মুহূর্তে বদলে গেছেন। তাকে দেখে মনে হচ্ছে সম্পূর্ণ অন্য মানুষ। ওকে দেখে মনে হচ্ছে লিন্ডা। হ্যাঁ অনেক ভেবে ঠিক করলো কমে গেছে বয়স। তিনি হেসে উঠলেন। এক অদ্ভুত বালকসুলভ হাসি। বাবাকে সে খুব কম সময়ে হাসতে দেখেছে। লিন্ডার হঠাৎ মনে পড়লো।
অন্য এক মানুষের ঝলক দেখতে সম্পূর্ণ অন্য এক মানুষ। ও কেমন বিহ্বল হয়ে পড়ল। ও ভাবলো আমার বয়েসের সময় বাবা কেমন ছিল।
ও হাল ছেড়ে দিলো ও ভাবা অনেক শক্ত। ওর মনে একটা নতুন চিন্তা ঝলসে উঠলো। এখানে এসে মিস ডার্নলির সঙ্গে দেখা পেতো শুধু ও আর ওর বাবা, কি মজাই না হতো।
ফুটে উঠলো এক কল্প-দৃশ্য, কিছুক্ষণের জন্য খুলে গেলো কল্পনার দরজা। ছোট ছেলের মতো হাসছে বাবা, মিস ডার্নলি, আর ও নিজে এই দ্বীপের সমস্ত মজা, গুহা, আনন্দ অন্ধকারের ঢেউয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো। কেন সম্ভব নয়, আর্লেনার সঙ্গে থাকলে কে জানে ওর পক্ষে সম্ভব, কিন্তু লিন্ডারের পক্ষে সম্ভব নয়। কাছাকাছি থাকে এমন কেউ কে সুখী হতে পারে। ঘৃণা করে আর্লেনাকে, ও ঘৃণা করে।
অত্যন্ত ধীর ঘৃণায় জ্বলন্ত ঢেউ আবার উথলে উঠলো। ফ্যাকাসে হয়ে গেলো লিন্ডার মুখ। সামান্য ফাঁক হলো ঠোঁট দুটো চোখের তারা তীক্ষ্ণ হয়ে এলো। বাতাস আঁকড়ে ধরলো আঙুলগুলো ক্রমশ।
.
২.৩
কেনেথ মার্শাল স্ত্রীর ঘরের দরজায় টোকা মারলেন। ওর সাড়া পেতেই দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলেন তিনি। আর্লেনা তখন শেষবারের মতো সাজগোজ দেখে নিচ্ছিলো। ওর পরনে মৎসকন্যার মতো চোখ ধাঁধানো সবুজ পোশাক। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ম্যাস্কারা লাগাচ্ছিল চোখের পাতায়। ও, তুমি। হ্যাঁ, তোমার হলো কিনা দেখতে এলাম। কেনেথ মার্শাল এগিয়ে গেল ধীর পায় জানলার কাছে, সমুদ্রের দিকে তাকালেন। তার মুখমণ্ডল বরাবরের মতোই অভিব্যক্তিহীন। সেই সঙ্গে শান্ত ও স্বাভাবিক। আর্লেনা ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল।
তুমি চিনতে না রেডফার্নকে আগে। হ্যাঁ সোনা, আর্লেনা সহজ ভাবেই উত্তর দিলেন। কোনো এক পার্টিতে দেখা হয়েছিল। ওকে আমার বেশ ভালো লেগেছিলো।
তুমি কি জানতে সে এবং তার স্ত্রী বেড়াতে আসছে। আর্লেনা গভীর আয়তন চোখ মেলে ধরলো। ভীষণ অবাক হয়ে গেছো না সোনা।
শান্ত স্বরে কেনেথ মার্শাল বললেন, ভাবছিলাম আমি এ জায়গার কথা তোমার মাথায় এসেছে, কারণ সেটা তুমি জানতে। আমরা যাতে এখানে আসি তুমি বরাবরই একটু বেশি আগ্রহ দেখিয়েছো, আর্লেনা স্বামীর দিকে ঘুরে তাকাল, ম্যাস্কারা নামিয়ে রাখল। নেশা ধরানো নরম হাসি হাসলো। বললো, এ জায়গাটার কথা কে যেন আমাকে বলেছিলো। মনে হয় রাইল্যান্ডরা! ওরা বলেছিলো জায়গাটা খুব সুন্দর চমৎকার। কেন তোমার ভালো লাগছে না।
কি জানি, জানি না, কেনেথ মার্শাল বললেন। কেন তুমি তো ভালোবাসো সমুদ্রে স্নান করতে ঘুরে বেড়াতে। তোমার নিশ্চয় ভালো লাগবে এখানে। জায়গাটা তোমার অত্যন্ত ভালোই লাগবে, বেশ বুঝতে পারছি।
আর্লেনার চোখের আয়ত আরও বিস্তৃত হলো। কেনেথ মার্শালের দিকে তাকালো অনিশ্চিত দৃষ্টিতে। কেনেথ মার্শাল বললেন, আসল ব্যাপারটা হলো, তুমি রেডফার্নকে জানিয়েছে আগেই, তুমি এখানে এসেছে।
আর্লেনা বললো, তুমি এরকম কথা বলছ কেন কেনেথ সোনা?
শোনো আর্লেনা, কেনেথ মার্শাল বললেন, তুমি কি ধরনের মেয়ে আমি জানি। তাই বলছি মোটামুটি সুখী স্বামী-স্ত্রী রেডফার্নরা। ওর বউকে ভালোবাসে ছেলেটা সত্যি। ওদের সুখের সম্পর্কে চিড় ধরুক তুমি কি চাও?
আর্লেনা বললো, দোষ দেওয়াটা কি ঠিক হচ্ছে? কেন আমি তো কিছু করিনি। আমি কি করতে পারি, কিছুই করিনি। চোখের পাতায় কাঁপন ধরলো আর্লেনার।
আমি অবশ্য জানি; পুরুষরা আমাকে দেখে পাগল হয়ে যায়। ওদের অমনি হয়, কিন্তু সে আমার দোষ নয়।
রেডফার্ন তোমার জন্য পাগল তুমি তাহলে স্বীকার করছে। নিছকই ওর বোকামি, আর্লেনা অস্পষ্ট স্বরে জবাব দিলো। এক পা এগিয়ে গেল স্বামীর দিকে।
তুমি ছাড়া আর কারো কথা আমি ভাবি না, তুমি তো জানো।
কৃষ্ণাভ চোখের পাতার ফাঁকে কেনেথ মার্শালের চোখে তাকালো আর্লেনা। সে দৃষ্টি এক কথায় বিস্ময়কর… যা খুব কম পুরুষই প্রতিরোধ করতে পারে। কেনেথ মার্শাল গম্ভীরভাবে চোখ নামালেন আর্লেনার চোখে। তার মুখ অভিব্যক্তিহীন। শান্ত কণ্ঠে আর্লেনা বললেন, আমার ধারণা আমি বেশ ভালোভাবেই চিনি।
.
২.৪