- বইয়ের নামঃ পুরনো শত্রু
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, অ্যাডভেঞ্চার, রোমাঞ্চকর গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী
পুরনো শত্রু
০১.
সবে থেমেছে স্যালভিজ ইয়ার্ডের ট্রাকটা, চেঁচিয়ে উঠলো কিশোর পাশা, চাচা, দেখো, দেখো!
বাড়িটা রকি বীচের কাছেই, রেমুডা ক্যানিয়নে। পুরনো মাল কিনতে এসেছেন রাশেদ পাশা। সঙ্গে এসেছে কিশোর আর তার বন্ধু মুসা আমান।
কী? অবাক হয়ে তাকালেন রাশেদ পাশা। কোথায়?
ওই যে, ওই তো বাড়িটার ধারে!
শেষ গোধূলি, দিনের আলো প্রায় শেষ।
কই, কি দেখেছিস, কিশোর?
খাইছে! আমিও তো কিছু দেখছি না, মুসা বললো।
চেয়ে রয়েছে কিশোর। কালো মূর্তিটা নেই। চোখের পলকে যেন বাতাসে মিলিয়ে গেছে। নাকি ছিলোই না ওখানে? চোখের ভুল? বিড়বিড় করলো, দেখেছি! কালো পোশাক পরা একটা মূর্তি!
বিরাট কাঠামোর বাড়িটার দিকে তাকালেন রাশেদ পাশা পাহাড়ী অঞ্চল। গিরিসঙ্কটের দেয়ালের ছায়ায় কেমন নিঃসঙ্গ লাগছে বাড়িটাকে। কাছেই হোট কটেজ। শান্ত, নীরব।
ছায়াটায়া দেখেছিস আর কি, বললেন চাচা।
আলোছায়ার খেলা, বললো মুসা।
আলো কোথায় দেখলে? আমি বলছি, আমি দেখেছি। মনে হলো ওই বাড়ির জানালার ভেতরে ঢুকে গেল।
দ্বিধা করলেন রাশেদ পাশা। সাধারণতঃ ভুল করে না তার ভাতিজা। বললেন, বেশ, চল, বাড়িতে ঢুকেই দেখি। প্রফেসরকে জিজ্ঞেস করলে হয়তো জানা যাবে।
রাশেদ পাশার পিছু পিছু এগোলো দুই গোয়েন্দা।
অনেক পুরনো বাড়ি। একশো বছর হতে পারে, দুশো হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। কাঠের টাওয়ার, ছড়ানো কার্নিশ। গাড়িবারান্দার ঢেউখেলানো হাতটা ধরে রেখেছে মোটা মোটা থাম। আর রিশাল সদর দরজা।
দরজায় ধাক্কা দিলেন রাশেদ পাশা।
সাড়া দিয়ে বেরোলেন লম্বা, রোগাটে একজন মানুষ। প্রৌঢ়, কিন্তু মনে হয় বয়েস আরও বেশি, বৃদ্ধ। চোখের নিচে গভীর ছায়া। এই জুলাই মাসের গরমেও টুইডের একটা জ্যাকেট পরে রয়েছেন, তোকাল ধোয়া হয়নি কে জানে, দোমড়ানো। হাতে বিদেশী ভাষায় লেখা মোটা এক বই।
প্রফেসর হোফার? জিজ্ঞেস কলেন রাশেদ পাশা।
হাসলেন প্রফেসর। আপনি নিশ্চয়ই রাশেদ পাশা? আসুন আসুন।
বাধা দিয়ে বললেন রাশেদ পাশা, প্রফেসর সাহেব, এ-আমার ভাতিজা। ও খানিক আগে নাকি কালো, পোশাক পরা একটা লোককে আপনার জানালা দিয়ে চুতে দেখেছে।
আমার বাড়িতে? চোখ মিটমিট করলেন প্রফেসর। নিশ্চয় ভুল করেছে।
না, স্যার, জবাব দিলো কিশোর। আমি শিওর। দামী কোনো জিনিস আছে। আপনার বাড়িতে? চোরে চুরি করবে, এমন কিছু?
নাহ। কিচ্ছু নেই।…তবু তুমি যখন বলছো..ওহহো, বুঝেছি, আমার ছেলে, রিকি। কালো কাউবয় পোশাক আছে তার। আর কতোবার বুঝিয়েছি, জানালা দিয়ে ঢোকার চেয়ে দরজা দিয়ে ঢোকা অনেক ভালো। প্রফেসর হাসলেন।
মাথা ঝাঁকালেন রাশেদ পাশা। তাই বলুন।
আপনার ছেলের বয়েস কতো, স্যার? জানতে চাইলো কিশোর।
কতো আর, এই তোমাদের মতোই। তোমার মতোই লম্বা।
আমি যাকে দেখেছি, সে আরও লম্বা।
তাই? সংশয় দেখা দিলো প্রফেসরের চোখে। বেশ, এসো, দেখি কোথায় লুকিয়ে আছে তোমার চোর।
বিরাট বাড়িটার নিচতলার ঘরগুলো ঘুরিয়ে দেখালেন প্রফেসর। বেশির ভাগই খালি, বন্ধ করে রাখা হয়েছে। করি ভাষা নিয়ে গবেষণা, বিষণ্ণ শোনালো তার কণ্ঠ। টাকা নেই। এতো বড় বাড়ি আর রাখার ক্ষমতা নেই আমার। এক মুহূর্ত থেমে বললেন, বাপ-দাদারা ছিলো জাহাজী, ক্যাপ্টেন। ভালো টাকা আয় করতো। কতো যে জিনিস আনতে পুব-দেশ থেকে। তারাই বানিয়েছে এই বাড়ি, টিকিয়ে রেখেছে অনেক দিন। নাবিক হলে হয়তো আমিও পারতাম। হইনি। এখন এখানে থাকি শুধু আমি আর আমার ছেলে। এক চাচাতো ভাই ছিলো আমার, সে-ও অনেকদিন হলো এ-বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। এতো বড় বাড়িতে থাকার লোক কোথায়? বন্ধই করে রাখি ঘরগুলো। কটেজটা যে দেখলেন, কেয়ারটেকার। থাকতত আগে। এখন ওটা ভাড়া দিয়েই সংসারের খরচ চালাই।
নিচতলায় চোরকে পাওয়া গেল না। ওপর তলায় উঠলো সবাই। ওপরেও নিচের মতোই অবস্থা।
ভালোমতো ঘরগুলো দেখে কিশোর স্বীকার করলো, না, চুরি করার মতো। কিছু নেই।
হতাশ মনে হচ্ছে তোমাকে? বললেন প্রফেসর।
হবেই, বললো মুসা। ভেবেছিলো কি জানি একটা রহস্য পেয়ে গেছে। পায়নি তো, তাই।
আপনার ছেলেকে দেখছি না? চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো কিশোর। কাউকে দেখেছি, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আচ্ছা, পুরনো জিনিস বিক্রি করবেন বলে ডেকেছেন আমাদের। তার মধ্যে মূল্যবান কিছু নেই তো?
থাকলে, তো খুশিই হতাম। আছে শুধু বুড়ো ডেনবারের কিছু পুরনো জিনিস। কটেজে থাকতো। কয়েক মাস আগে মারা গেছে। থাকার মধ্যে আছে গোটা দুই সুটকেস, আর কয়েকটা ছবি, তার আঁকা। লোকটার বোধহয় দুনিয়ায় কেউ ছিলো না, অনেকটা সন্ন্যাসীর মতোই থাকতো। টাকাপয়সা ছিলো না। শেষ কমাসের ভাড়াও মিটিয়ে যেতে পারেনি। সেজন্যেই তার জিনিস বিক্রি করতে চাইছি, কটা ডলারও যদি আসে মন্দ কি?
সন্ন্যাসীদের কাছে অনেক সময় মূল্যবান জিনিস থাকে, বললো কিশোর।
কি ব্যাপার, গোয়েন্দার মতো কথা বলছো?
গোয়েন্দাই তো আমরা, মুসা বললো। কিশোর, দেখাও না।
পকেট থেকে তিন গোয়েন্দার কার্ড বের করে দিলো কিশোর।