আপনিও হয়তো মনে মনে বিশ্বাস করেন, অন্য সব পুরুষদের মতো স্বামী-পুত্র ছাড়া কোনো স্ত্রীলোকাই পূর্ণতা পায় না, রোজামন্ড ডার্নলি বললো।
কাঁধ ঝাঁকালেন পোয়ারো। সাধারণ স্ত্রীলোকের জন্য বিয়ে করা এত সন্তানের মা হওয়া আপনার মতো খ্যাতি প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন এমন মহিলা শয়ে একটা বেশি আরও একটা দেখা যায় হাজারে।
বিস্তৃত হাসলো রোজামন্ড, আমি একটা বিচ্ছিরি আইবুড়ি ছাড়া কিছু নয়, কিন্তু তবুও আজকাল একটা কথাই সব সময় মনে হয়, একটা ছাপোষা শান্ত জোয়ান স্বামী আর এক পাল বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে আমি হয়তো বেশি সুখী হতাম, কথাটা সত্যি তাই না। কাঁধ ঝাঁকালেন পোয়ারো, আপনি যখন বলছেন মাদমোয়াজেল, তখন সত্যি।
রোজামন্ড হেসে উঠলো, একটা সিগারেট বের করে ঠোঁটে রাখলো, ওর ভারসাম্য যেন আবার ফিরে এলো।
মঁসিয়ে পোয়ারো বললেন, আপনি ভালোভাবেই জানেন কিভাবে মহিলাদের সঙ্গে কথা বলতে হয়।
আপনাদের সঙ্গে আবার তর্ক জুড়ে দিই। মহিলাদের প্রতিষ্ঠার পক্ষে আমি এখন যেভাবে আছি তা আপনি বেশ ভলোভাবেই জানেন বেশ সুখেই আছি। বাগানের নাকি বলবো এই সৈকতের সমস্ত খুবই সুন্দর, মাদমায়াজেল, ঠিক বলেছেন।
সিগারেট কেস বের করলেন পোয়ারো, সন্তর্পণে তুলে নিলেন ছোট্ট সিগারেট। নিতান্তই ধূমপানের প্রতি করুণা বশে। ক্যাপ্টেন মার্শাল একজন পুরনো বন্ধু মাদমোয়াজেল, পোয়ারো উচ্চারণ করলেন মৃদু স্বরে।
রোজামন্ড সোজা হয়ে বসলো। বললো, ওহ কেউ হয়তো বলে থাকবে, মাথা নাড়লেন পোয়ারো। আমি একজন গোয়েন্দা আমাকে কেউ কোনো কথা বলেনি। শত হলেও মাদমোয়াজেল একটু ভেবে দেখুন আমি তো বুঝতে পারছি না। ব্যাপারটা বোঝাতে চাইলেন ক্ষুদে মানুষটি হাত নেড়ে। এখানে এসেছেন এক সপ্তাহের বেশি। আপনি হাসিখুশি মানুষ আজ হঠাৎ বলছেন প্রেতাত্মার কথা। গত কয়েকদিনে কেউ এখানে আসেননি, কাল রাত্রে এসেছেন ক্যাপ্টেন মার্শাল, স্ত্রী ও মেয়ে। আজ এই পরিবর্তন একটা অত্যন্ত স্পষ্ট।
রোজামন্ড ডার্নলি বললো, কথাটা সত্যি। মার্শালরা আমাদের বাড়ির পাশেই থাকতো। মার্শাল আমাদের ছেলেবেলাকার বন্ধু। ভালো ব্যবহার করতো আমার সঙ্গে। কম করে পনেরো বছরের বেশি আমার সঙ্গে দেখা নেই। ও, আমার চেয়ে পাঁচ বছরের বড় হলেও সমবয়েসির মতো মিশতে। গভীর চিন্তার সুর ভেসে উঠলো কণ্ঠে, পনেরো বছর ছিল সুদীর্ঘ সময়। মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো রোজামন্ড।
এরকুল পোয়ারো বললেন, কিছুক্ষণ নীরবতার পর, দরদী মানুষ কি বলেন ক্যাপ্টেন মার্শাল উষ্ণ স্বরে রোজামন্ড বললো, খুব ভালো লোকেদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো একজন। ভীষণ শান্ত ও চাপা স্বভাবের মানুষ ও। আজেবাজে বিয়ে করানো ঝোঁক ওর একমাত্র বড় দোষ।
গভীর সমব্যাথীর সুরে বললেন পোয়ারো, হু।
মেয়েদের ব্যাপারে একদম বোকা রোজামন্ড ডার্নলি বলে চললল, আপনার মনে আছে মার্টিংড়োল মামলাটা।
ভুরু জোড়া কুঁচকে উঠলো পোয়ারোর, মার্টিংডেল! মার্টিংডেল! আর্সেনিক, তাই না।
মহিলাটিকে স্বামীকে খুন করার অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। সতেরো আঠারো বছর আগেকার ঘটনা। ভদ্রলোক নিয়মিত আর্সেনিক খেতেন এ কথা প্রমাণিত হওয়ার পর তার স্ত্রীকে মুক্তি দেওয়া হয়, মেয়েটিকে বিয়ে করে বসলো। তার ছাড়া পাবার পর সাধারণত এই ধরণের বোকার মতো কাজ করে থাকে ও।
মৃদু স্বরে বললেন, এরকুল পোয়ারো, মেয়েটি নির্দোষ হয়ে থাকে যদি। আমার ধারণা মেয়েটি নির্দোষ ছিলো। তার কোনো মানে নেই কাঠগড়ার মেয়েটিকে বিয়ে করতে হবে। বিয়ে করার মতো মেয়ে অনেক আছে, পোয়ারো নীরব রইলেন। নীরব থাকলে জানতেন রোজামন্ড ডার্নলি ওর কথা বলে যাবে। তাই করলো ও, অবশ্য তখন কেনের বয়স ছিল কম। সবে একুশ, প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতো ও। বউ মারা গেল লিন্ডার জন্মের সময়। বিয়ের ঠিক এক বছর পর ভীষণভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলো। স্ত্রীর মৃত্যুতে সে দুঃখকে ভুলবার জন্য কিছুদিন হৈ-চৈ করে কাটিয়ে দেয়।
থামলো ও একটু। এই আর্লেনা স্টুয়ার্টের ব্যাপারটা তারপরেই ঘটলো। আর্লেনা বিভূতে ছিলো তখন। সেখানে কডরিংটন বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলা চলছিল। লেডি কডরিংটন তার স্বামীকে ডিভোর্স করেন আর্লেনা স্টুয়ার্টের জন্যই। লোকে বলে একেবারে মজে গিয়েছিলেন লর্ডকডরিংটনের জন্য। সবাই ভেবেছিল ও বিয়ে করবে আদালতের চুড়ান্ত রায় বেরেলেই। কিন্তু তা হল না কার্যক্ষেত্রে। সরাসরি ওকে পাশ কাটালেন লর্ড কডরিংটন। যদুর মনে পড়ে তার নামে মামলা ঠুকছিলো আর্লেনা, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অপরাধে। যাই হোক তখন এই ব্যাপারটা নিয়ে প্রচুর হৈ চৈ হয়েছিলো। তার একটা ঘটনা ঘটলো, কেন গিয়ে ওকে বিয়ে করে বসলো। বোকা এক নম্বরের। মিস স্টুয়ার্ট এ ধরনের বোকামির জন্য ক্ষমা করা যায় কোনো পুরুষকে? মৃদু স্বরে বললেন এরকুল পোয়ারো। সে বিষয়ে সন্দেহ নেই বছর তিনেক আগে ওকে নিয়ে হলো আর এক কেলেঙ্কারি। স্যার রজার আরস্কিন মারা যাবার সময় তার সম্পত্তি আর্লেনাকে দিয়ে গেলেন। এই ব্যাপারটাই কেনের চোখ খুলে দেবে। আর কিছু না থোক। তাই কি হয়নি, কাঁধ ঝাঁকালো রোজামন্ড ডার্নলি। বহুদিন দেখা হয়নি ওর সাথে। অবশ্য লোকে বলে–ব্যাপারটা ও ঠান্ডা মেজাজে নিয়েছিলো। সেটাই আমার জানতে ইচ্ছে করে। কেনই বা অন্ধভাবে বিশ্বাস করে ও ওর স্ত্রীকে। হয়তো অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে।