রোজামন্ড ডুকরে উঠলো, ও বেচারা লিন্ডা! আর আমি ভেবেছি–ও এমন কিছু জানতো যাতে
পোয়ারো বললেন, আপনি কি ভেবেছিলেনে আমি জানি। আপনার ব্যবহার লিন্ডাকে আরও বেশি ভয় পাইয়ে দিয়েছিলো। ক্রিস্টিনও ওর কানে মন্ত্র যোগান। ওর মনে গেঁথে দেন ঘুমের বড়ির কথা, দেখিয়ে দেন ওর অপরাধের দ্রুত যন্ত্রণাহীন প্রায়শ্চিত্তের পথ। একবার যদি প্রমাণিত হয় ক্যাপ্টেন মার্শালের অ্যালিবাই রয়েছে তাহলেই নতুন কোনো সন্দেহ হবে। ক্রিস্টিন অথবা তার স্বামী মাদকদ্রব্য চোরাচালানের ব্যাপারটা জানতেন না। সুতরাং বলির পাঁঠা হিসেবে লিন্ডাকেই বেছে নিলেন।
রোজামন্ড বললো, কি শয়তান!
পোয়ারো বললেন, হ্যাঁ আমি পড়লাম মহা মুস্কিলে। আমি চেষ্টা করেছি ওর কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করতে কিন্তু সবই বিফলে গেছে। কিন্তু সেই মুহূর্তে আমি আবার সন্তর্পণে খতিয়ে দেখতে লাগলাম সব। প্রথমেই রয়েছে বেলাভূমিতে পাওয়া একটা কাচি–জানলা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলা একটা শিশি–একটা স্নানের খবর যা কেউ স্বীকার করেননি–সেগুলির তাৎপর্য একটা রয়েছে। ক্যাপ্টেন মার্শাল, লিন্ডা অথবা চোরাচালানকারীদের দায়ী করলে ঐ ঘটনাগুলোর কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে না। সুতরাং আমি ফিরে গেলাম আমার প্রথম সমাধানে–যে প্যাট্রিকই খুনটা করেছেন। আর্লেনার তহবিল থেকে যে একটা বিশাল অঙ্কের টাকা উধাও হয়েছে আমরা জানি। আর্ণেনা ছিলেন সেইরকম মেয়ে যাদের সুন্দর চেহারায় যুবকেরা সহজেই ঠকিয়ে নিতে পারে কিন্তু সে ব্ল্যাকমেল হবার মতো মেয়ে নয়। প্রয়োেজনের বেশি খোলা মন ছিল তার, গোপন কথা উনি গোপন রাখতে পারতেন না। কিন্তু হঠাৎ শুনে ফেলা ব্ল্যাকমেলের গল্পটা শুনেছেন প্যাট্রিক রেডফানের স্ত্রী। এটা সম্পূর্ণ তার গল্প–দ্বিতীয় কোনো সাক্ষ্য নেই। এর উত্তর বিদ্যুতের মতো আমার মনে ঝলসে উঠলো।
প্যাট্রিক ও ক্রিস্টিন রেডফার্ন দুজনেই এর সঙ্গে জড়িত। আর্লেনাকে গলা টিপে খুন করার মতো দৈহিক শক্তি ক্রিস্টিনের ছিলো না; তাহলে নায়ক প্যাট্রিক নিজে–
দেহ–এই দেহ শব্দটা আমার মনে নাড়া দিল–সৈকতে শুয়ে থাকা সব দেহই একইরকম। প্যাট্রিক ও ব্রুস্টার পিক্সি কোভে গিয়ে একটা দেহ বেলাভূমিতে শুয়ে থাকতে দেখেছেন। যদি
কিন্তু একটা মৃতদেহই আমরা পেয়েছি–তাহলে সেই দেহ ছিল জীবন্ত–যিনি মৃতের ভান করে শুয়ে আছেন। তাহলে কার জীবন্ত দেহ–তার স্ত্রীই রেডফার্নকে সাহায্য করতে পারেন। তার গায়ের রঙ সাদা হলেও সূর্যস্নানের নকল প্রলেপ লাগানো যেতে পারে-শিশি–একটা শিশি আমার টুকরো ছবির ধাঁধার একটা টুকরো। তারপর প্রয়োজন একটা স্নানের–টেনিস খেলতে যাবার আগে সর্বনাশা প্রলেপের দাগ ধুয়ে ফেলতে হবে। আর তাড়াহুড়োতে কঁচিটা থেকে যায় অকুস্থলে-এই একটা জিনিষ যেটা আমাদের খুনী দম্পতি ভুল করে রেখে আসেন।
কিন্তু আর্লেনা এতক্ষণ কোথায় ছিলো? পিক্সির গুহায় সুগন্ধী আমাকে সেকথা জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু পিক্সির গুহায় আর্লেনা লুকিয়ে ছিলেন যতক্ষণ না পথ পরিষ্কার হয়।
যখন ব্রুস্টার নৌকা নিয়ে চলে গেলেন তখন সৈকতে একা খুন করার পুরোপুরি সুযোগ। আর্লেনা খুন হয় পৌনে বারোটার কিছু পরে। কিন্তু পৌনে বারোটায় আর্লেনা মৃত ছিলেন, ডাক্তারী সাক্ষ্য সময়টা নিয়ে তাই মাথা ঘামায়।
আর দুটো রহস্য সমাধানের তখনও বাকি। লিন্ডার সাক্ষ্য ক্রিস্টিনকে অ্যালিবাই জুগিয়েছে। সে সাক্ষ্য লিন্ডার হাতঘড়ি। কিন্তু এখন প্রমাণ করা যে ওই হাতঘড়ির সময়ের বদল করার সুযোগ ক্রিস্টিন দুটো পেয়েছিলেন। সকালে যখন লিন্ডার ঘরে একা ছিলেন–এছাড়াও একটা পরোক্ষ প্রমাণ ছিলো। লিন্ডাকে বলতে শোনা গেছে যে ওর ভয় হচ্ছিলো হয়তো দেরি হয়ে গেছে। কিন্তু বিশ্রামকক্ষের ঘড়িতে তখন মাত্র দশটা পঁচিশ। দ্বিতীয় সুযোগ–লিন্ডা যখন পিছন ফিরে সমুদ্রে স্নান করতে নামে তখন ঘড়ির সময়টা আবার পিছিয়ে দেয় ক্রিস্টিন।
এরপর মইয়ের প্রশ্ন, ক্রিস্টিন বরাবরই বলেছেন যে, উঁচু জায়গা তার ধাতে সয় না। এটা সাজানো মিথ্যে।
প্রতিটি টুকরো এবার নিখুঁতভাবে খাপ খেয়ে গেছে নিজের নিজের জায়গায়। কিন্তু আমার হাতে নির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ নেই।
তখনই আমার মাথায় এলো এই খুনের মধ্যে নিহিত রয়েছে একটা আত্মবিশ্বাসের ভাব –একটা পরিপাটি ছিমছাপ পরিকল্পনা। প্যাট্রিক যে ভবিষ্যতে তার দুষ্কর্মের পুনরাবৃত্তি করবেন তার কোনো সন্দেহ নেই। এই খুনের পদ্ধতি, শাসরোধ করে হত্যা করা। শুধু ব্যক্তিগত লাভের জন্য নয়, নিছক আনন্দের জন্যও তিনি খুন করেন। যদি এটা তার প্রথম খুন না হয় তাহলে অতীতেও তিনি একই পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। আমি কলগেটের কাছে শ্বাসরোধ করে খুন হয়েছে এমন মেয়েদের একটা তালিকা চাইলাম। নির্জন ঝোঁপের পাশে শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায় নীলি পার্সলের খুন হয়তো প্যাট্রিকের কাজ। কিন্তু অ্যালিস করিগানের মৃত্যুতে আমি ঠিক যা খুঁজছিলাম পেয়ে গেলাম। একই পদ্ধতি, সেই সময় নিয়ে কারচুপি। সওয়া চারটের আবিষ্কৃত হয় মৃতদেহ। আর একজন স্বামী, যার অ্যালিবাই রয়েছে চারটে পঁচিশ পর্যন্ত।
বলা হয়েছে যে এডওয়ার্ড করিগান পাইন রিজে গিয়ে তার স্ত্রীকে পায় না, তখন বাইরে এসে পায়চারি করতে থাকে। কার্যত সে প্রাণপণে ছুটে যায় সীজার্স গ্রোভে, স্ত্রীকে খুন করে কাফেতে ফিরে আসে। পথচারী যে মেয়েটিকে খবর দেয়, সে ছিলো একজন সম্ভ্রান্ত যুবতী, এক বালিকা বিদ্যালয়ের দিদিমনি। পুলিসের ডাক্তার মৃতদেহ পরীক্ষা করে পৌনে ছটা নাগাদ। এবারের মতো তখনও খুনের সময়টা সকলেই বিনা দ্বিধায় মেনে নেয়।