রেডফার্ন ঠাণ্ডা মেজাজে স্থির করেছিলেন প্রয়োজন বুঝলেই আর্লেনাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবেন–অতীতের একটা খুনের সাফল্য তাকে আরও বেশি সাহসী করে তুলেছিলো–যে মেয়েটিকে তিনি খুন করেছিলেন, তাকে তিনি করিগান নাম নিয়ে বিয়ে করে এক বিশাল অঙ্কের জীবনবীমা করাতে মেয়েটিকে রাজি করান।
তার পরিকল্পনায় সবরকম সাহায্য করেছেন যিনি এখানে রেডফানের স্ত্রীর পরিচয়ে আছেন এবং যার সঙ্গে রেডফার্নের সত্যিকারের সম্পর্ক রয়েছে যার অবিশ্বাস্য অভিনয় ক্ষমতাকে অবহেলা করা যায় না। ক্রিস্টিন রেডফার্ন একটা বিশেষ ভূমিকায় অভিনয় করে চলেছেন। হতভাগিনী বেচারা স্ত্রীর ভূমিকায় দুর্বল হলেও বুদ্ধিমতী। সূর্যানে তার শরীরে ফোস্কা পড়ে, যে কারণে তার গায়ের রঙ সাদা ফ্যাকাসে, উঁচু জায়গায় উঠলে তার মাথা ঘোরে, সব মিলিয়ে নিজের দুর্বল ভাবটাকে ফুটিয়ে তোলা–অথচ তিনি আর্লেনা মার্শালের সমান লম্বা। ক্রিস্টিন বলেছেন, তিনি স্কুলের দিদিমণি ছিলেন কিন্তু সেখানে তার চাকরি ছিলো খেলার দিদিমণি। নিজের হাতঘড়ি লুকিয়ে রেখে এগারোটা পঁচিশে লিন্ডাকে জিজ্ঞেস করলেন কটা বাজে। লিন্ডা পৌনে বারোটা বলে সমুদ্রে স্নান করতে নামে আর ক্রিস্টিন ছবি আঁকার সরঞ্জাম গুছিয়ে লিন্ডার হাতঘড়িটা তুলে নেন। কাটা ঘুরিয়ে সময়টা আবার ঠিক করে দেন। তারপর পাহাড়ি পথ ধরে সরু জমিটুকু একছুটে পার হয়ে মইটার কাছে পৌঁছে যান। ঢোলা জামা পাজামা ছেড়ে। সেগুলো এবং ছবি আঁকার সরঞ্জাম একটা পাথরের আড়ালে লুকিয়ে তরতর করে মই বেয়ে নেমে যান।
তখন আর্লেনা সৈকতে দাঁড়িয়ে ভাবছিলেন প্যাট্রিকের এত দেরি হচ্ছে কেন। হঠাৎ মইয়ের সামনে প্যাট্রিকের স্ত্রীরত্নটিকে দেখে তাড়াতাড়ি সৈকত পার হয়ে পিক্সি গুহায় ঢুকে পড়ে।
ক্রিস্টিন লুকানো জায়গা থেকে টুপিটা বের করে। টুপিটার পেছনের কানায় লাল রঙের পরচুলার গুচ্ছ আলপিন দিয়ে আঁটা ছিলো। তারপর টুপি ও পরচুলায় ঘাড় ও মুখ ঢেকে হাত পা ছড়িয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়েন তিনি। সময়ের হিসেব একেবারে নিখুঁত। কারণ মিনিট দুয়েক পরেই প্যাট্রিক ও এমিলি ব্রুস্টার নৌকো নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। মনে রাখবেন যে ব্যক্তি নিচু হয়ে মৃতদেহ পরীক্ষা করেছেন তিনি প্যাট্রিক। প্যাট্রিকই আঘাত পেয়েছেন–ভেঙে পড়েছেন তার প্রেমিকার মৃত্যুতে। তিনি জানেন মিস ব্রুস্টারের মাথা ঘোরে, তিনি কখনোই মইটা বেয়ে উপরে উঠবেন না। তিনি গেলে নৌকো নিয়েই যাবেন আর প্যাট্রিক থাকবেন মৃতদেহের কাছে কারণ খুনী হয়তো আশেপাশে কোথাও। লুকিয়ে আছে। মিস ব্রুস্টার চলে যেতে ক্রিস্টিন উঠে পড়লেন। প্যাট্রিকের লুকিয়ে আনা কাচিটা দিয়ে টুপিটাকে টুকরো করে ফেললেন আর টুকরোগুলো সাঁতার পোশাকের ভেতর লুকিয়ে ফেললেন এবং ছুটে গিয়ে মই বেয়ে উঠে ঢিলে জামা পাজামা পরে হোটেলের দিকে ছুটে চললেন। কোনোরকমে স্নান সেরে নকল সূর্যস্নানের প্রলেপ ধুয়ে। টেনিস খেলার পোশাক পরে বেরোবার মতো সময়টুকু হাতে রয়েছে। আরও একটা কাজ উনি করেছেন। পিচবোর্ডের টুপির টুকরোগুলো এবং লাল পরচুলার গুচ্ছ উনি লিন্ডার ঘরের তাপচুল্লীতে পুড়িয়ে ফেলেন–সঙ্গে একটা ক্যালেন্ডারের পাতা যাতে পোড়া পিচবোর্ডর সঙ্গে ক্যালেন্ডারের একটা যোগসূত্র রয়েছে। যা পোড়ানো হয়েছে সেটা ক্যালেন্ডার, টুপি নয়। তার সন্দেহানুযায়ী লিন্ডা যাদুবিদ্যা নিয়ে পরীক্ষা করছে–মোমের পিণ্ড ও আলপিন তারই সাক্ষী।
তারপর তিনি টেনিস কোর্টে উপস্থিত হলেন। আর ইতিমধ্যে প্যাট্রিক পিক্সি গুহায় ঢুকলেন। আর্লেনা কিছুই দেখেননি খুব সামান্য শুনতে পেয়েছেন। এখন তাকে প্যাট্রিক ডাকছেন।
আর ভয় নেই সোনা আর্লেনা, বাইরে বেরিলয়ে এলে প্যাট্রিকের হাত চেপে বসল তার গলায় –সেই হলো বেচারা নির্বোধ সুন্দরী আর্লেনা মার্শালের জীবনকাহিনীর পরিসমাপ্তি…
ডার্নলি শিউরে ওঠে, আপনি সবকিছু ছবির মতো দেখিয়ে দিচ্ছেন কিন্তু আপনি এখনও বলেননি কি করে আপনি আসল সত্যিটা জানতে পারলেন?
সেই প্রথম থেকেই আমার মনে হয়েছে যে সবচেয়ে সম্ভাব্য ব্যক্তিই আর্লেনা মার্শালকে খুন করেছেন এবং সম্ভবতঃ প্যাট্রিক রেডফার্ন, তিনি সেই ধরনের লোক যারা কোনো মহিলার সত্ত্বা শুনে নিয়ে তার গলা কাটতে পারেন। সেদিন সকালে আর্লেনা কার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন তার হাসি মুখই জানিয়ে দিয়েছে সে প্যাট্রিক। সুতরাং আর্লেনাকে প্যাট্রিক খুন করেছেন।
কিন্তু প্যাট্রিক রেডফার্নের পক্ষে আর্লেনাকে খুন করা সম্ভব ছিলো না কারণ মৃতদেহ আবিষ্কার করা পর্যন্ত তিনি মিস ব্রুস্টারের সঙ্গে ছিলেন। তাই আমাকে অন্যদিকে নজর দিতে হলো। তাদের সংখ্যা একাধিক। একবার মনে হয়েছিলো লিন্ডাকে কিন্তু পরে ওর সঙ্গে এক আলোচনায় একটা বিষয়ে আমার বিশ্বাস স্থির হয় যে লিন্ডা নিজেকে অপরাধী মনে করে। ও নেহাতই সিক্ত। ডাকিনীবিদ্যার বইটা পড়ে ও সেটা প্রায় বিশ্বাস করে বসে। ও আর্লেনাকে ঘৃণা করতো। সুতরাং মোমের পুতুল তৈরি করে তার হৃদপিণ্ড আলপিনবিদ্ধ করে। পুতুলটা গলিয়ে ফেললো–সেই দিনই আর্লেনা মারা গেলেন। স্বাভাবিকভাবে লিন্ডা বিশ্বাস করেছে যে যাদুবিদ্যার ক্ষমতায় ওর সম্মাকে ও খুন করেছে।