কিন্তু সেই দেহটা! মিস ব্রুস্টার এবং আমি সেটা দেখেছি। মৃতদেহ নয়, সেই মহিলার জীবন্ত দেহ, যিনি আপনাকে সাহায্য করেছেন। তার হাতে পায়ে রঙের প্রলেপ আর মুখ ঢাকা ছিলো টুপিতে। ক্রিস্টিন, আপনার স্ত্রী অথবা স্ত্রী নয়–আপনার দুষ্কর্মের সাথী। এ খুনে সাহায্য করেছেন, যেমন করে ছিলেন অতীতে, যেমন তিনি অ্যালিশ করিগানের দেহ আবিষ্কার করেন অ্যালিশ করিগানের মৃত্যুর কুড়ি মিনিট আগে–অ্যালিশকে খুন করেছিলো তার স্বামী, এডওয়ার্ড করিগান–আপনি।
ক্রিস্টিনের স্বর তীক্ষ্ণ ও শীতল, সাবধান, প্যাট্রিক, মাথা গরম কোরো না।
পোয়ারো বললেন, শুনলে হয়তো খুশি হবেন। এখানে ভোলা একটা গ্রুপ ফটো দেখে সারে পুলিশ খুব সহজেই আপনাকে এবং আপনার স্ত্রীকে চিনতে পেরেছে। তারা সঙ্গে সঙ্গে আপনাদের সনাক্ত করেছেন এডওয়ার্ড করিগান ও ক্রিস্টিন ডেভারিন বলে–ক্রিস্টিন ডেভারিন অর্থাৎ সেই মহিলাটি যিনি অ্যালিশের মৃতদেহ আবিষ্কার করেছিলেন।
প্যাট্রিক রেডফার্ন ক্রোধে উঠে দাঁড়িয়েছে। তার মুখ যেন কোনো খুনীর কোনো বাঘের। সে চিৎকার করে উঠলো, শালা হতচ্ছাড়া নাকগলানো টেকো গ্রুফো গোয়েন্দা।
সে ঝাপিয়ে পড়লো, এরকুল পোয়ারোর গলায় দুহাত চেপে বসলো, ক্ষিপ্ত স্বরে অশ্রাব্য শব্দের ফুলঝুরি।
১৩. সূর্যস্নান
১৩.১
পোয়ারো বললেন, কোনো এক সকালে সৈকতে আমরা বসে আলোচনা করছিলাম কসাইয়ের দোকানে সাজানো মাংসের মতো পড়ে থাকা সূর্যস্নান শরীরগুলো নিয়ে। তখনই আমার মনে হয়েছে, দুটো ভিন্ন শরীরের মধ্যে কী সামান্যই না পার্থক্য যদি সতর্ক দৃষ্টিতে দেখা যায়। একজন মোটামুটি স্বাস্থ্যের তরুণীর সঙ্গে দ্বিতীয় কোনো তরুণীর মিল প্রচুর। দুটো তামাটে পা। তামাটে বাহু, দুয়ের মাঝে এক টুকরো সাঁতার পোশাক–সূর্য কিরণে শুয়ে থাকা শুধুই একটা দেহ, যখন কোনো মহিলা চলাফেরা করেন,হাসেন, কথা বলেন-তখন একটা ব্যক্তিত্ব চোখে পড়ে-চোখে পড়ে স্বতন্ত্র। কিন্তু সূর্যসাধনার সময়–না।
সেইদিনই আমরা অশুভ শক্তির প্রভাব নিয়ে মিঃ লেনের সঙ্গে আলোচনা করেছিলাম। তিনি অত্যন্ত সচেতন মানুষ–অশুভের প্রভাব তিনি অনুভব করেন। তাঁর মতে অশুভ শক্তি লুকিয়ে ছিলো আর্লেনার ব্যক্তিতে।
কিন্তু অশুভ শক্তি উপস্থিত থাকলেও সে আর্লেনা মার্শালের মধ্যে আদৌ কেন্দ্রীভূত ছিলো মা। যেহেতু উনি সুন্দরী ও চটক ছিলো চেহারায়, পুরুষরা যেহেতু ওর দিকে চোখ ফেরাতে, যেহেতু তার মতো মহিলারাই ঘর ও জীবন নষ্ট করেন। কিন্তু সে সর্বনাশা আকর্ষণে কখনোও পুরুষদের টানতো না–বরং পুরুষরাই তাকে টানতো। তার সম্পর্কে প্রথমে যে কথাটি শোনা যায় তা হলো, কিভাবে সেই লোকটি, যার বিবাহ বিচ্ছেদের মামলায় উনি জড়িয়ে পড়েছিলেন। তাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে। আর ঠিক তখন উপস্থিত হয় আমাদের কাপ্টেন মার্শাল। যার বিপদাপন্ন রমণী সেবার ব্রত চিকিৎসার অযোগ্য, ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলেন এবং তাকে বিয়ের প্রস্তাব জানালেন। ক্যাপ্টেন মার্শালের মতো লাজুক নিঃশব্দ মানুষের প্রকাশ্য বিচার ছিলো এক চরম যন্ত্রণা–সেই কারণেই আমরা দেখতে পাই প্রথম স্ত্রীর প্রতি তার ভালোবাসা এবং করুণা, যাকে আদালতে অভিযুক্ত করা হয়েছিলো খুনের অপরাধে, যে খুন তিনি করেননি। তার মৃত্যুর পর আর একজন সুন্দরী মহিলা। হয়তো একই ধরনের অভিযুক্ত হলেন প্রকাশ্য কলঙ্কে। আবার মার্শাল তার প্রাণকার্য সম্পন্ন করলেন। আলেনা নির্বোধ। তার করুণা ও প্রতিরক্ষার অযোগ্য এবং হৃদয়হীনা, তা সত্ত্বেও স্ত্রীর মোটামুটি ছবিটা তার অজানা ছিলো না। স্ত্রীর সঙ্গে ভালোবাসা শেষ হয় কিন্তু তারপরে আর্লেনার প্রতি একটা দুঃখবোধ তার ছিলো। তার কাছে আর্লেনা ছিলো একটা শিশুর মতো, যিনি জীবন কেতাবের একটা বিশেষ পৃষ্ঠা কোনোরকমেই অতিক্রম করতে পারছিলেন না।
এক বিবেকহীন পুরুষের অনিবার্য শিকার হিসেবে আর্লেনাকে আমি দেখেছিলাম। আর সেই পুরুষকে আমি খোঁজ করে পেয়েছিলাম প্যাট্রিক রেডফার্নের মধ্যে। এ ধরনের ফটকাবাজ পুরুষেরা যেভাবেই হোক মহিলাদের মূলধন করে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করে। অশুভের কেন্দ্রবিন্দুতে আমি প্যাট্রিককেই দেখেছি, আর্লেনাকে নয়।
আর্লেনার জনৈক বয়স্ক প্রেমাস্পদ, যিনি তার বিশাল অঙ্কের অর্থ আর্লেনার জন্য রেখে গেছেন। সাধারণতঃ অর্থসংক্রান্ত ব্যাপারে কোনো পুরুষের হাতে অনিবার্যভাবে প্রতারিত হয়ে থাকেন ও ধরনের মহিলারা। মিস ব্রুস্টার একজন যুবকের কথা বলছেন। সে আর্লেনার জন্য নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। তার যে চিঠিটা মিসেস মার্শালের ঘরে পেয়েছি, সে আর্লেনাকে হীরে জহরত দিয়ে সাজাতে চাইলেও, প্রকৃতপক্ষে তার কাছ থেকে পাওয়া একটা চেকের প্রাপ্তিসংবাদ জানিয়েছে। যার সাহায্যে সে আদালত এড়াতে পারবে বলে আশা করে। সুতরাং তার কাছ থেকে ব্যবসায়িক লগ্নীর নাম করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করাটা রেডফানের কাছে নিতান্তই ছেলেখেলা ছিলো। লম্বা গল্প ফেঁদে আর্লেনাকে মুগ্ধ করে ফেলেছিলেন–বলেছিলেন কিভাবে তিনি তার স্ত্রীর বিষয়-সম্পত্তি নিয়ে কি কাণ্ডটা হচ্ছে, তাহলে প্যাট্রিকের অর্ধচন্দ্র প্রাপ্তির সম্ভাবনা ছিলো প্রবল।