পোয়ারো বললেন, ওই ছবির মূল্য আমার কাছে অনেক।
মিসেস গার্ডেনার বলে চললেন, আর আজ দেখুন। মামুলি হৈ-হুঁল্লোড়ে সর্বক্ষণ মেতে আছেন। এই লোকটাকে বাড়িতে রেখে এলেই ভালো হতো।
হায় মাদাম, সেটা অত্যন্ত কঠিন কাজ হতো।
কঠিন বলে কঠিন। ওই লোকটা গুতোণ্ডতি করে হলেও নিজের জায়গা করে নেয়।
সেই মুহূর্তে নিচ থেকে ভেসে আসা সমবেত উল্লাস চিৎকার জানিয়ে দিলো গুহার প্রবেশপথ পাওয়া গেছে।
পিকনিক দল এবার দেখলো পাহাড়ি ঝোঁপের পাশ দিয়ে একটা নদীর তীরেমনোরম এক সবুজ প্রান্তর। নদী পার হওয়ার একটা সরু কাঠের তক্তা দিয়ে পোয়ারো ও মিঃ ও মিসেস গার্ডেনার পার হয়ে গুল্ম ঝোপে ঘেরা একটি ছোট্ট সবুজ জায়গায় এলেন, যেটা পিকনিকের পক্ষে আদর্শ স্থান।
অন্যান্যরা সহজেই দৌড়ে কাঠের সেতুটা পার হয়েছেন কিন্তু এমিলি স্টার সেই সরু তক্তার মাঝখানে চোখ বোজা অবস্থায় দাঁড়িয়ে।
পোয়ারো ও রেডফার্ন ব্যস্তভাবে তাকে উদ্ধার করলেন।
খাবার ভাগ করে দেওয়া হলো, পিকনিক শুরু হলো।
এই ছোট্ট অনুষ্ঠানটুকু সন্দেহ ও ত্রাসে ঘেরা এক পরিবেশ থেকে তাদের মুক্তি দিয়েছে। এখানে চঞ্চল জলের স্বপন। জলজ উদ্ভিদের নেশা ধরানো হালকা গন্ধ এবং গুল্ম পর্ণের উষ্ণ রঙীন ছটা। হত্যা, পুলিসী তদন্ত সব অস্তিত্বকে ভুলিয়ে দিয়েছিলো। এমনকি মধ্যমণি মিঃ ব্ল্যাট পর্যন্ত খাওয়া-দাওয়ার পর নিশ্চিন্তে শুয়ে পড়লেন।
অবশেষে এই সুন্দর পরিকল্পনার জন্য পোয়ারোকে সবাই ধন্যবাদ জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে হোটেলের দিকে ফিরলেন। আজকের দিনটা এককথায় চমৎকার ভাবে কাটলো।
.
১২.২
মেজর ব্যারী বেরিলয়ে, এই যে দিনটা ভালোই কাটলো তো?
মিসেস গার্ডেনার বললেন, নিশ্চয়ই খোলা সবুজ মাঠগুলোর তুলনা হয় না। একেবারে খাস ইংরেজি আর সাবেকী। সেখানকার সতেজ বাতাসে শুধু তৃপ্তির ছোঁয়া।
মেজর হেসে, জলার মাঝে বসে স্যান্ডউইচ খাওয়া–এ সবের বয়েস কি আর আছে?
হোটেল পরিচারিকা গ্ল্যাডিশ ন্যারাকট দ্রুত এসে বললো ক্রিস্টিনকে, মাদাম, ছোট দিদিমণি, মিস মার্শালের জন্য ভীষণ দুশ্চিন্তা হচ্ছে। এইমাত্র চা নিয়ে তার ঘরে গিয়ে তাকে জাগাতে পারলাম না, আর তাকে এত–অদ্ভুত দেখাচ্ছে….
ক্রিস্টিন দিশেহারা, পোয়ারো তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। ওরা সিঁড়ি ভেঙে লিন্ডার ঘরে উপস্থিত হলেন, এবং বুঝতে পারলেন কিছু একটা হয়েছে। ওর মুখের রঙ অদ্ভুত দেখে পোয়ারো নাড়ি দেখলেন, আর দেখলেন চাপা দেওয়া একটা খাম। তিনি বললেন, লিন্ডার নামে কি শুনছি? কি হয়েছে ওর?
পোয়ারো বললেন, যত শীঘ্রই পারেন একজন ডাক্তার নিয়ে আসুন। আমাদের হয়তো অনেক দেরি হয়ে গেছে।
তিনি নিজের নাম লেখা খামটা খুললেন তাতে লিন্ডার ছিমছাপ কিশোরী হাতে লেখা কয়েকটা লাইন।
“আমার মনে হয় এটাই মুক্তির সহজ পথ। বাবাকে বলবেন তার বিচারে আমাকে ক্ষমা করতে। আমিই আর্লেনাকে খুন করেছি। এতে আমার খুশি হওয়ার কথা কিন্তু হইনি। সব কিছুর জন্য আমার ভীষণ দুঃখ হচ্ছে।”
.
১২.৩
সবাই বিশ্রাম কক্ষে জমায়েত হয়েছেন। প্রত্যেকেই চুপচাপ বসে–প্রতীক্ষারত।
ডাঃ নিসডন ভেতরে এসে বললেন, এ যাত্রা মেয়েটা টিকে গেলেও যেতে পারে–তবে আশা খুব বেশি নেই।
মার্শাল বললেন, কিন্তু জিনিষটা ও পেলো কেমন করে?
দরজা খুলে নিসডন পরিচারিকাটিকে ডেকে বললেন, তুমি যা দেখেছো আর একবার আমাদের বলল।
মেয়েটি কান্নাভেজা গলায় বললো, আমি মোটেই ভাবিনি ভেতরে ভেতরে কোনো গলদ রয়েছে–অবশ্য ছোট দিদিমণিকে দেখে একটু অবাক লেগেছিলো। মিস মার্শাল তখন মিসেস রেডফানের ঘরে বেসিনের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন একটা ছোট শিশি হাতে নিয়ে। আমাকে ঢুকতে দেখেই চমকে শুধু বললেন, এই তো এটা খুঁজছিলাম বলেই ঘর ছেড়ে চলে গেলেন।
ক্রিস্টিন ফিসফিস করলো, আমার ঘুমের ট্যাবলেটগুলো।
ডাক্তার রূঢ়স্বরে, সে খবর মিস লিন্ডা পেলে কি করে?
ক্রিস্টিন বললো, আমি ওকে একটা দিয়েছিলাম আর্লেনা মারা যাওয়ার রাতে। ও বলেছিলো ঘুম আসছে না, একটাতেই হবে তো? আমি বলেছিলাম, হ্যাঁ, এগুলো খুব জোরালো-আমাকে একসঙ্গে দুটোর বেশি খেতে বারণ করা হয়েছে।
নিসডন বললেন, মেয়েটা একসঙ্গে ছ-ছটা ট্যাবলেট গিলেছে।
ক্রিস্টিন ফুঁপিয়ে কেঁদে, ওঃ, এসবই আমার দোষে হলো, শিশিটা তালাচাবি দিয়ে রাখা উচিত ছিলো।
সেটাই বুদ্ধিমানের কাজ হতো।
ও মারা যাচ্ছে–সম্পূর্ণ আমার দোষে…।
মার্শাল বললেন, না আপনার কোনো দোষ নেই। ও ট্যাবলেট খেয়েছে স্ব-ইচ্ছায়। হয়তো–এই সবচেয়ে ভালো হলো।
ডার্নলি চিৎকার করে উঠলো। আমি বিশ্বাস করি না লিন্ডা আর্লেনাকে খুন করেছে। কারণ সেটা সাক্ষ্য প্রমাণ অনুযায়ী অসম্ভব।
ক্রিস্টিন বললো হয়তো, অতিরিক্ত মানসিক দুশ্চিন্তায় ও ব্যাপারটা কল্পনা করে নিয়েছে।
কর্নেল ওয়েস্টন ঘরে ঢুকে, এসব কি শুনছি?
ডাঃ নিসডন চিঠিটা পুলিসপ্রধানের হাতে দিলেন। তিনি বিস্ময়ভরা সুরে বললেন, কিন্তু এর কোনো মানে হয় না–একেবারে অর্থহীন। অসম্ভব। তাই না পোয়ারো?
না, আমার ধারণা অসম্ভব নয়।
ক্রিস্টিন বললো, কিন্তু আমি ওর সঙ্গে পৌনে বারোটা পর্যন্ত ছিলাম, পুলিসকেও তাই বলেছি।
পোয়ারো বললেন, আপনার সাক্ষ্যই ওকে অ্যালিবাই জুগিয়েছে–হ্যাঁ। কিন্তু লিন্ডা মার্শালের হাতঘড়ির ওপর নির্ভর করে আপনার সাক্ষ্য, আপনি নিজে নিশ্চিত নন যে ঠিক পৌনে বারোটায় আপনি মিস মার্শালকে ছেড়ে চলে আসেন–ও আপনাকে যা বলেছে তাই। এবারে ভাবুন মাদাম, যখন আপনি বেলাভূমি ছেড়ে আসেন তখন কি তাড়াতাড়ি গিয়েছিলেন?