হ্যাঁ, খুনের দিনটা চমৎকার ছিলো। কিন্তু আগের দিনটা ঘন কুয়াশায় ঢাকা ছিলো এই দ্বীপটা। তাকে শুধু সমুদ্রতীরে রাতটা গুহায় কাটাতে হবে।
পোয়ারো নিচে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে, জানেন মাদমোয়াজেল, আমি সবসময় এই কথাটাই বিশ্বাস করি যে, সবচেয়ে সম্ভাব্য ব্যক্তিই কোনো অপরাধের নেপথ্য নায়ক। একেবারে শুরুতে একজনের প্রতি এই ইঙ্গিত স্পষ্ট। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে তার পক্ষে এ খুন করা অসম্ভব। আচ্ছা আপনাকে একটা প্রশ্ন করি।
নিশ্চয়ই।
সেদিন সকালে আপনি যখন টেনিস খেলার পোশাক পরতে আসেন, তখন কি স্নান করেছিলেন?
স্নান, কি বলতে চান আপনি!
চীনামাটির মসৃণ সুদৃশ্য আধার, কল খুলে জল ভর্তি করে শরীর ডুবিয়ে সেই জলে, শেষে বেরিলয়ে এসে হুশ-হুশ, অস্বচ্ছ জল চলে যায় পাইপ বেয়ে।
আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?
বরং সম্পূর্ণ সুস্থ।
কি জানি, তবে আমি স্নান করিনি। কেউ হঠাৎ স্নান করতে যাবে কেন?
পোয়ারো হাসলেন, শান্তভাবে বাতাসের আঘ্রাণ নিলেন।
দুঃসাহসের সঙ্গে আমি বলবো যে সুগন্ধী আপনি ব্যবহার করেন তা অপূর্ব-এর একটা নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে–আছে চমৎকার ছলনাময়ী আকর্ষণ। গ্যাব্রিয়েল, নম্বর ৮, তাই না?
হ্যাঁ, সবসময় আমি এটাই ব্যবহার করি।
মৃতা মিসেস মার্শালও এই সুগন্ধী ব্যবহার করতেন। অত্যন্ত আধুনিক ও দামী। খুনের দিন সকালে আপনি এখানে বসেছিলেন, মিস ব্রুস্টার এবং মিঃ রেডফার্ন সমুদ্রপথে যাওয়ায় আপনাকে অথবা আপনার রঙিন ছাতাটাকে দেখেছিলেন। হলফ করে বলতে পারেন যে সারা সকালে আপনি একবারের জন্যেও পিক্সির সেই গুহাতে ঢোকেননি?
জানতে চাইছেন, আমি আর্লেনাকে খুন করেছি কিনা?
না, পিক্সি গুহায় গিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইছি।
ওটা কোথায় তাই আমি জানি না, তাছাড়া ওখানে যাবো কেন?
গ্যাব্রিয়েল নম্বর ৮ ব্যবহার করে এমন একজন খুনের দিন ওই গুহায় গিয়েছিলো।
আর্লেনা ওই সুগন্ধি ব্যবহার করতো। সেদিন ও পিক্সি কোভে গিয়েছিলো, গুহাতে ও গিয়ে থাকবে। আর সারা সকালে তো আমি এ জায়গা ছেড়ে কোথাও যাইনি।
শুধু একবার ক্যাপ্টেন মার্শালের ঘরে গিয়েছিলেন। টেবিলের মুখোমুখি ঝোলানো আয়নায় তিনি আপনাকে দেখেছিলেন, মাদমোয়াজেল।
পোয়ারার দৃষ্টি নিবদ্ধ রোজামন্ড ডার্নলির কোলে, ওর ভাঁজ করা হাতের দিকে, দীর্ঘ আঙুলের সমন্বয়ে সুন্দর গড়নের হাত।
আমার হাতের দিকে ওভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? আপনার কি ধারণা
.
১০.৮
এরকুল পেয়ারো গালকোভে যাবার রাস্তার শীর্ষদেশে নির্জন সৈকতে লাল জামা ও গাঢ় নীল প্যান্ট পরিহিত এক কৃষকায় শরীরকে দেখতে পেলেন।
পোয়ারো বেলাভূমিতে এসে লিন্ডা মার্শালকে দেখলেন। তিনি নিঃশব্দে ওর পাশে বসে অনুভব করলেন, কত অনভিজ্ঞ এবং দিশেহারা মেয়েটি।
ও বললো, কি ব্যাপার? কি চান?
সেদিন আপনি বলেছেন, আপনার সত্যাকে আপনি ভালোবাসতেন এবং তিনিও ভালো ব্যবহার করতেন। কথাটা সত্যি নয়–আপনি তাকে পছন্দ করতেন না–এটা দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট।
হয়তো সত্যি। কিন্তু মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে কথা বলা ঠিক নয়।
কোনো খুনের ঘটনায় লৌকিক ভদ্রতার চেয়ে সত্যভাষণের গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ আর্লেনা মার্শালের হত্যাকারীকে খুঁজে বার করাই আমার প্রধান কাজ।
উঃ কি ভয়ঙ্কর, আমি সব ভুলে যেতে চাই।
কিন্তু ভুলতে পারছেন কি?
আপনি এমনভাবে বলছেন আপনি সব জানেন।
হয়তো জানি। যদি বলি, তোমার চুড়ান্ত অশান্তিতে আমি তোমাকে সাহায্য করবো!
ও লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালো। আমার কোনো অশান্তি নেই। আপনি কি জানতে চাইছেন?
আমি মোমবাতির কথা বলছি…।
আতঙ্কে চিৎকার করে উঠলো, আমি আপনার কথা শুনবো না। কিছুতেই শুনবো না।
ও সৈকত পার হয়ে ছুটে চললো, আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে নিমেষে মিলিয়ে গেলো।
১১. তদন্তের বিবরণ
১১.১
কলগেট তার তদন্তের বিবরণ দিচ্ছিলেন, একটা চাঞ্চল্যকর ঘটনা স্যার। ব্যাপারটা মিসেস মার্শালের টাকা সম্পর্কে। ব্ল্যাকমেলের গল্পটার সমর্থনে আমার হাতে প্রমাণ এসেছে। স্যার আরস্কিন পঞ্চাশ হাজার পাউন্ড মিসেস মার্শালকে দিয়েছিলেন, তা এখন মাত্র পনেরো হাজারে দাঁড়িয়েছে।
পুলিসপ্রধান শিস দিয়ে, তাই না কি! তাহলে বাকি টাকাগুলো গেলো কোথায়?
মাঝে মাঝে কিছু সম্পত্তি হাত বদল করেছেন। প্রতি ক্ষেত্রেই লেনদেন হয়েছে ঋণপত্রের বিনিময়ে–অর্থাৎ সে টাকা তিনি এমন কারো হাতে তুলে দিয়েছেন যার পরিচয় প্রকাশ পাক তিনি চাননি। সেই ব্ল্যাকমেলার এই হোটেলেই রয়েছে। নিঃসন্দেহে ওই তিনজনের একজন।
কিন্তু তেমন জোরালো কিছু তথ্য পাইনি স্যার। মেজর ব্যারী, তার নিজের কথা অনুযায়ী একজন অবসরপ্রাপ্ত ফৌজি অফিসার। আয় পেনশনের টাকা আর কিছু কোম্পানির শেয়ারের লভ্যাংশ। কিন্তু গতকয়েক দফায় বেশ মোটা টাকা ব্যাঙ্কে রেখেছেন, ওগুলা বাজী জেতা টাকা। সত্যি তার ছোট বড় সবরকমের রেসের মাঠে যাতায়াত আছে।
ধর্মযাজক স্টিফেন লেনের পরিচয়ে কোনো বুজরুকি নেই। ভগ্ন স্বাস্থ্যের জন্য বছরখানেক হলো জীবিকা ত্যাগ করেছেন। এই কারণে মানসিক রুগীদের এক নার্সিংহোমে ছিলেন। ডাক্তারদের থেকে কাজের কথা আদায় করা কঠিন। কিন্তু ধর্মযাজকের প্রধান রোগ শয়তান সম্পর্কে আচ্ছন্নতা–বিশেষ করে স্ত্রীলোকের বেশে-রক্তবর্ণ স্ত্রীলোক–ব্যাবিলনের বেশ্যা। স্টিফেন লেনকে সন্দেহ করা যেতে পারে। নিহত মিসেস মার্শাল ছিলেন রক্তবর্ণ স্ত্রীলোক লাল চুল, সুতরাং এই অশুভ মেয়েটিকে চিরতরে সরিয়ে দেওয়া কর্তব্য বলে মনে করেছিলেন।