প্রিয় মার্শাল–ছুটির মাঝে বিরক্ত করছি বলে দুঃখিত, কিন্তু বালি অ্যাণ্ড টেন্ডারের চুক্তি নিয়ে এক অদ্ভুত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে…। তারিখ ২৪ শে–অর্থাৎ গতকালের খামে পোস্ট অফিসের ছাপ। গতকাল সন্ধ্যে, ই, শি-১-এর এবং আজ সকালের লেদারকোম্ব-এর চিঠিতে এবং খামে একই টাইপরাইটার ব্যবহার করা হয়েছে। এ চিঠির কয়েকটা সংখ্যা থেকে মার্শালের চিঠির সংখ্যাগুলো তৈরি–ব্যাপারটা ভীষণ জটিল।
ওয়েস্টন, হুম–মার্শালকে তাহলে সন্দেহ থেকে বাদ দিতে হচ্ছে, এবার মিস ডার্নলির সঙ্গে আমাদের দেখা করতে হবে।
রোজামন্ড সাবলীল ভঙ্গীতে ঢুকে অপরাধী মন নিয়ে বললো, দুঃখিত। হয়তো ব্যাপারটা তেমন কিছু নয়, খুবই সামান্য। আমি বলেছিলাম যে আজ সকালটা আমি সানি লজ-এ কাটিয়েছি। সেটা ঠিক নয়। আমি একবার হোটেলে গিয়ে আবার ফিরে এসেছিলাম, রোদ-চশমাটা আনতে ভুলে গিয়েছিলাম। তাই হোটেলে গিয়ে ওটা নিয়ে এসেছি।
আপনি সোজা আপনার ঘরে গিয়েছিলেন?
হ্যাঁ, তবে একবার মার্শালের ঘরে উঁকি দিয়েছিলাম। ওর টাইপ করার শব্দ শুনে ভাবলাম, আজকের মতো একটা সুন্দর দিন ও টাইপ করে নষ্ট করছে। কিন্তু দরজা খুলে দেখলাম এত গভীর মনোযোগে দুহাত দিয়ে টাইপ করছে যে, ওকে কিছু বলতে পারলাম না। ও আমাকে হয়তো দেখতেও পায়নি।
এটা ঠিক কটার সময় হয়েছে মিস ডার্নলি?
এগারোটা বেজে কুড়ি মিনিট নাগাদ।
.
৮.৪
কলগেট বললেন, পরিচারিকা তাকে দেখেছে এগারোটা বাজতে পাঁচ মিনিট পর্যন্ত টাইপ করতে আর মিস ডার্নলি এগারোটা কুড়িতে দেখেছে। মিসেস মার্শাল নিহত হন পৌনে বারোটা নাগাদ। সুতরাং মার্শাল এখন এসব সন্দেহের বাইরে।
চিন্তাচ্ছন্ন ভাবে পোয়ারো বললেন, মিস ডার্নলি কেন যে এই অতিরিক্ত সাক্ষ্যটুকু যেচে দিলেন সেটাই ভেবে অবাক হচ্ছি।
আচ্ছা ধরে নেওয়া যাক, মিস ডার্নলি আজ সকালে সানি লজ-এ ছিলেন না। সুতারং তিনি চট করে একটা নতুন গল্প বানিয়ে আমাদের কাছে বিবৃত করলেন। তিনি কিন্তু বেশ সতর্কভাবেই বলেছেন ক্যাপ্টেন মার্শাল তাকে দেখতে পাননি।
ওয়েস্টন অবিশ্বাসের সুরে, আপনি কি বলতে চান! মিস ডার্নলি এর মধ্যে জড়িয়ে আছন?
ইনসপেক্টর কলগেট কেশে, ঐ মার্কিন ভদ্রমহিলার কথাগুলো নিশ্চয়ই মনে আছে। তিনি স্পষ্টই ইঙ্গিত করেছিলেন, ক্যাপ্টেন মার্শালের ওপর মিস ডার্নলির যথেষ্ট দুর্বলতা রয়েছে।
ওয়েস্টন অধৈর্য হয়ে বললেন, আর্লেনা কোনো মহিলার হাতে খুন হননি। সুতরাং পুরুষদের পেছনে আমাদের আবার আঠার মতো লেগে থাকতে হবে।
কলগেট বললেন, হ্যাঁ, আমরা বার বার একই জায়গায় ফিরে আসছি, তাই না?
পুলিসপ্রধান বললেন, এবার মনে হয়, আমার একবার পিক্সি কোভে যাওয়া দরকার। তাছাড়া পিক্সি গুহাটাও একবার দেখা দরকার। কোনো পুরুষ অপেক্ষা করার কোনো চিহ্ন পাওয়া যায় কিনা? আপনি কি বলেন সঁসিয়ে পোয়ারো?
নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই, যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
ওয়েস্টন বললেন, যদি বাইরে থেকে কেউ এসে থাকে তাহলে পিক্সি গুহাই হচ্ছে তার লুকোবার পক্ষে চমৎকার জায়গা–তবে স্থানীয় লোকেরা হয়তো গুহার খবরটা জানে।
আজকালকার ছেলেমেয়েরা হয়তো জানে না। কারণ হোটেল খোলার সঙ্গে সঙ্গেই এই দ্বীপ ও দ্বীপ সংলগ্ন কোভগুলো ব্যক্তিগত সম্পত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর হোটেলের লোকদের স্থানীয় অধিবাসী বলা যায় না। মিসেস ক্যাসল লন্ডনের লোক।
ওয়েস্টন বললেন, রেডফার্নকে সঙ্গে নিতে হবে, উনিই গুহার খবরটা দিয়েছেন। আর মঁসিয়ে পোয়ারো, আপনিও।
আমি? আমার অবস্থাও মিস ব্রুস্টার ও মিসেস রেডফার্নের মতো, খাড়া মই বেয়ে ওঠানামা সয় না।
আপনি তাহলে নৌকা করে যেতে পারেন।
আমরা পাকস্থলী আবার সমুদ্রে সুস্থ বোধ করে না।
এই শেষ সময়ে আমাদের এভাবে ডোবাবেন না।
সেই মুহূর্তে মিসেস ক্যাসল দরজায় উঁকি মেরে, আশা করি বিরক্ত হবেন না, সেই ধর্মযাজক মিঃ লেন এইমাত্র ফিরে এসেছেন।
ধন্যবাদ মিসেস ক্যাসল, আমরা এখুনি যাচ্ছি। কয়েক পা এগিয়ে মিসেস ক্যাসল, বেলা একটা নাগাদ একজন ভদ্রলোক ও একজন ভদ্রমহিলা এখানে এসেছিলেন। দ্বীপের ওপার থেকে মধ্যাহ্নভোজ সারতে। তাদের বলা হয়েছে, এখানে একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে, তাই মধ্যাহ্নভোজের ব্যবস্থা করা সম্ভব না। মনে হয়, তারা উঁচুদরের ট্যুরিস্ট, গ্রীষ্মের ছুটিতে বেড়াতে বেরিলয়েছেন।
ঠিক আছে। এবারে মিঃ লেনকে এ ঘরে পাঠিয়ে দিন।
.
৮.৫
আমি এ অঞ্চলের পুলিসপ্রধান, মিঃ লেন। আশা করি এখানকার দুর্ঘটনার কথা আপনাকে জানানো হয়েছে।
হা, ফিরেই শুনলাম ব্যাপারটা। কি ভয়ানক..তার শরীর কেঁপে উঠলো…যেদিন থেকে এখানে এসেছি–অশুভ শক্তির উপস্থিত স্পষ্ট টের পেয়েছি। বর্তমানে অশুভ শক্তিকে আমরা বিশ্বাস করি না। নরকাগ্নিকে নির্বাসনে দিয়েছি। শয়তান বিশ্বাস করি না। কিন্তু শয়তান অতীতে যেমন শক্তিমান ছিলো, আজও তেমনি আছে।
ওয়েস্টন বললেন, হ্যাঁ হয়তো তাই। কিন্তু আমার এলাকা নীরস, বাস্তববাদী একটা খুনের কিনারা করা।
খুন, বড় নিষ্ঠুর শব্দ। বলুন, কিভাবে আপনাদের সাহায্য করতে পারি।
আজ সারা সকালটা আপনি কিভাবে কাটিয়েছেন?
বরাবরের মতো আজও আমি সকালে পদব্রজে ভ্রমণে বেরিলয়ে পড়ি, হাঁটতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আজ গিয়েছিলাম সেন্ট-পেট্রক-ইন-দ্য কোম্ব-এ প্রায় সাত মাইল দূরে। সঙ্গে কিছু খাবার নিয়েছিলাম। তাই খেয়েছি। ওখানকার গীর্জাটাও দেখে এলাম।