কলগেট বললেন, এই তো সেই চিঠিটা, যেটার কথা উনি বলেছিলেন। ২৪ তারিখ দেওয়া আছে। আর এই যে সেই খামটালেদারকোষ বে ডাকঘরের আজকের ছাপ রয়েছে। এবার আমাদের জানতে হবে, এই চিঠির উত্তর আগেই তৈরি করেছিলেন কিনা!
কর্নেল বললেন, তোমাকে কিছুক্ষণের জন্য এখানে এ কাজে ছেড়ে যাচ্ছি। বাকি ঘরগুলো আমরা একবার চোখ বুলিয়ে নিই।
ওয়েস্টন লিন্ডা মার্শালের ঘরে একবার চোখ বুলিয়ে বললেন, মনে হয় না তেমন কিছু আছে তার। হয়তো মার্শাল তার মেয়ের ঘরে কিছু লুকিয়ে রেখেছে।
তিনি চলে গেলেন, এরকুল পোয়ারো ঘরেই রয়ে গেলেন। খুব সদ্য সেখানে কোনো কিছু পোড়ানো হয়েছে। তিনি হাঁটু গেড়ে বসে তার আবিষ্কার একটা সাদা কাগজে গুছিয়ে রাখলেন। অসম আকৃতির বিশাল এক টুকরো গলা মোম–কিছু সবুজ কাগজ অথবা পিচবোর্ডের ছিন্ন অংশ এ ছাড়াও রয়েছে একটা সাধারণ পিন এবং কোনো পশুর দগ্ধ লোম।
পোয়ারো সেগুলো সাজিয়ে মৃদু স্বরে, জীবনের মহৎ কর্ম চিন্তায় ফল নেই, সম্পাদনে ফল আছে। হয়তো এ কথাই লেখা ছিলো। কিন্তু এর অর্থ কি?
এই মুহূর্তে ছোট্ট পিনটা হাতে নিতেই তার চোখ তীক্ষ্ণ হয়ে উঠলো…হু..কিন্তু এও কিসম্ভব? শ্বেতপাথরের তাকে সাজানো কয়েকটা বই। একটা বাইবেল, সেক্সপীয়ারের নাটকের সংকলন। মিসেস হামফ্রি ওয়ার্ড রচিত দ্য ম্যারেজ অফ উইলিয়াম অ্যাস, সালট ইয়ং-এর লেখা দ্য ইয়ং স্টেপ মাদার, দ্য সুপসায়ার ল্যান্ড। ইলিয়টের মার্ডার ইন দ্য ক্যাথিড্রাল। ড্রিক কার-এর দ্য বার্নিং কোর্ট।
দ্য ইয়ং স্টেপমাদার ও উইলিয়াম অ্যাস বইদুটোর নামপত্রে বসানো অস্পষ্ট রবার ছাপগুলো দেখলেন। অন্যান্য বইগুলোর পেছনে একটা ছোট অথচ মোটা বাদামী চামড়া দিয়ে বাঁধানো বই রয়েছে।
তিনি বইটা খুলে, আমার ধারণাই দেখছি ঠিক। কিন্তু অন্য ব্যাপারটা কি সম্ভব? যদি না…
.
৮.২
কর্নেল ওয়েস্টন বললেন, কি হলো, মঁসিয়ে পোয়ারো, এখনও হয়নি।
পোয়ারো আসছি বলে তাড়াতাড়ি বারান্দায় বেরিলয়ে এলেন।
লিন্ডার পাশের ঘরটা রেডফার্নদের। পোয়ারো ভালো করে দেখলেন, দুটো ভিন্ন স্বাতন্ত্রের ছাপ নজরে পড়লো। এছাড়া তেমন কিছুই নজরে পড়লো না।
এর পরের ঘরটা রোজামন্ড ডার্নলির, বিছানার পাশে টেবিলে কয়েকটা বই ও প্রসাধন টেবিলে প্রসাধন সামগ্রী। এই ঘরের ঠিক পরেই, উত্তর প্রান্তে এখটা খোলা দরজা ও তার সংলগ্ন বারান্দা, বারান্দা থেকে সিঁড়ি নেমে গেছে নিচে পাথুরে জমিতে।
ওয়েস্টন বললেন, প্রাতঃরাশের আগে স্নান করার থাকলে সবাই এই সিঁড়িটাই ব্যবহার করে
এরকুল পোয়ারো দেখলেন, একটা সরু পথ গিয়ে মিশেছে পাথর কেটে তৈরি আঁকাবাঁকা কয়েক ধাপ সিঁড়িতে। সিঁড়ি শেষ হয়েছে সমুদ্রে। এছাড়া, আরও একটা পথ হোটেলকে ঘিরে বাঁদিকে চলে গেছে। এই সিঁড়ি বেয়ে যে কেউ কংক্রিটের সেতুর কাছে প্রধান রাস্তায় পৌঁছতে পারে।
ওয়েস্টন বললেন, সুতরাং হোটেলের মধ্যে না গিয়েও কারও পক্ষে দ্বীপের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত যাওয়া সম্ভব। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও কারো জানলা দিয়ে নজরে পড়ার সম্ভাবনা। সবার স্নানঘরগুলোর জানলা উত্তর দিকে, এছাড়াও কর্মচারীদের স্নানঘর, একতলার মালপত্র রাখার ঘর।
কিন্তু প্রথম জানলাগুলোয় আছে ঘষা কাঁচ। আর সুন্দর সকালে কেউ বিলিয়ার্ড খেলে না। সুতরাং এ যদি তার কাজ হয়ে থাকে, তাহলে সকালে এই পথ ধরেই তিনি গিয়েছিলেন।
মানে ক্যাপ্টেন মার্শাল?
হা। মনে হচ্ছে, সব কিছু যেন তারই দিকে আঙুল তুলে দেখাচ্ছে।
পোয়ারো নীরস কণ্ঠে বললেন, হয়তো–কিন্তু শুধু ব্যবহারের অজুহাতে কাউকে খুনী সাব্যস্ত করা যায় না।
ওয়েস্টন বললেন, দেখা যাক, টাইপরাইটার অ্যালিবাই থেকে কলগেট কদুর কি করতে পারে। এবার হোটেলের পরিচারিকাটির সঙ্গে কথা বলা যাক।
তিরিশ বছরের পরিচারিকাটি চটপটে, কর্মঠ এবং বুদ্ধিমতী।
ক্যাপ্টেন মার্শালের ঘর ঝাড়মোছ করে এগারো বাজতে পাঁচ মিনিটে মিঃ এবং মিসেস রেডফানের ঘরে কাজ করার সময় মার্শালের টাইপরাইটারের শব্দ সে শুনেছে। তারপর মিস ডার্নলির ঘর পরিষ্কার করে সওয়া এগারোটা নাগাদ নিচে যায় প্রাত্যহিক চা জলখাবার খেতে। তারপরে হোটেলের অন্য অংশের ঘরগুলো ঝাড়গোছ করে।
ওয়েস্টন বললেন, আচ্ছা, মিসেস মার্শাল কি তার প্রাতঃরাশ রোজ বিছানাতেই সারতেন?
হা। অবশ্য প্রাতঃরাশ বলতে সামান্য এক কাপ চা, একটু কমলালেবুর রস ও একটুকরো সেঁকা পাউরুটি।
পোয়ারো বললেন, মিসেস মার্শাল সম্পর্কে তোমার ধারণা কি, মাদমোয়াজেল?
গ্ল্যাডিশ ন্যারাকেট বললো, তার মতো বড়লোকের কথা কি আমার ছোট মুখে মানায়?
হ্যাঁ, মানায়। তোমার নিজস্ব মতামত শুনতে আমরা আগ্রহী।
মিসেস মার্শাল-ভদ্রমহিলা বলতে যা বোঝায়; ঠিক তা ছিলেন না। মানে কেমন যেন অভিনেত্রী অভিনেত্রী মনে হতো। এই হয়তো হাসি খুশি আছেন, হাসছেন, পরমুহূর্তে হয়তো কিছু খুঁজে না পেলে বা তার ডাকে সাড়া দিতে দেরি করলে অত্যন্ত খারাপ নোংরা ব্যবহার করতেন। কিন্তু তার পোশাকগুলো ছিলো দারুণ চমৎকার, দেখতে তিনি ছিলেন সুন্দরী–সুতরাং সকলেই তাকে প্রশংসা করতো।
আচ্ছা, মিসেস মার্শাল ও তার স্বামীর মধ্যে সম্পর্ক কেমন ছিল বলতে পারো?
আপনারা নিশ্চয়ই স্বামীকে সন্দেহ করছেন; না ক্যাপ্টেন মার্শাল এত চমৎকার ভদ্রলোক, তিনি একাজ করতে পারেন না।