আপনি কি তার হাত দুটো লক্ষ্য করেছেন? যে কোনো পুরুষের মতো বড়সড়। তাছাড়া তার শরীরের গঠনও বেশ ঋজু–অনেক পুরুষের চেয়েও তার শক্তি বেশি…আপনি বলছেন মঁসিয়ে পোয়ারো, তিনি আজ সকালে একবারের জন্যও বেলাভূমি ছেড়ে যাননি?
প্রিয় ইনসপেক্টর, তিনি যখন সমুদ্রতীরে আসেন তখন মিসেস মার্শাল পিক্সি কোভেতে পৌঁছাননি এবং মিঃ রেডফার্নের সঙ্গে নৌকা নিয়ে বেরোবার সময় পর্যন্ত আমার চোখের সামনেই ছিলেন।
তাহলে তো তাকেও বাদ দিতে হয়।
.
৭.৭
রোজামন্ড ডার্নলি প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই এরকুল পোয়ারো খুশির একটা উদ্বেল অনুভব করলো।
রোজামন্ড বললো, আপনারা বোধহয় আমার নাম ঠিকানা জানতে চান? রোজামন্ড অ্যান ডার্নলি। রোজামন্ড লিমিটেড নামে, ৬২২, ব্রুক স্ট্রিটে আমার একটা পোশাক তৈরির প্রতিষ্ঠান আছে।
ধন্যবাদ, মিস ডার্নলি। আজ সকালে আপনার গতিবিধি
সাড়ে নটায় প্রাতঃরাশ শেষ করে ওপরে ঘরে গিয়ে কয়েকটা বই ও সূর্য আচ্ছাদন নিয়ে সানি লজ-এ চলে যাই। তখন দশটা পঁচিশ হবে। বারোটা বাজতে দশ নাগাদ আমি হোটেলে ফিরে আসি। টেনিস র্যাকেট নিয়ে টেনিস কোর্টে যাই, প্রায় মধ্যাহ্নভোজ পর্যন্ত খেলেছি।
আজ সকালে মিসেস মার্শালকে দেখেছিলেন?
না।
তিনি যখন ভেলা ভাসিয়ে পিক্সি কোভের দিকে যান তখন কি সানি লজ থেকে আপনি দেখেছিলেন?
না। হয়তো আমি সেখানে পৌঁছাবার আগেই উনি পার হয়ে যান।
মিঃ রেডফার্ন এবং মিস ব্রুস্টারকেও নিশ্চয় আপনি যেতে দেখেননি?
না, দেখিনি।
মিঃ মার্শালের সঙ্গে তো আপনার আগেই পরিচয় ছিলো, তাই না?
ক্যাপ্টেন মার্শাল আমাদের পরিবারের একজন পুরোনো বন্ধু। একসময় পাশাপাশি বাড়িতে থাকতাম। মাঝে প্রায় বারো বছর আমাদের দেখা হয়নি…।
আর মিসেস মার্শাল? ওদের সম্পর্ক কেমন ছিলো, জানেন কি?
আমি যদুর জানি-খুবই ভালো ছিলো।
মিসেস মার্শালকে আপনি পছন্দ করতেন?
না। মহিলা মহলে আর্লেনা মার্শাল তেমন জনপ্রিয় ছিলেন না। কিন্তু আর্লেনার পোশাকের প্রশংসা না করে পারছি না। ওকে আমার দোকানের খদ্দের করতে পারলে সত্যিই খুশি হতাম।
আচ্ছা, মিসেস মার্শালকে কেউ কি ব্ল্যাকমেল করছিলো?
ব্ল্যাকমেল করছিলো আর্লেনাকে।
কিন্তু অসম্ভব তো নয়।
না। এ পৃথিবীতে সবকিছুই সম্ভব। সেটা ঠেকে শিখতে হয়। কিন্তু আর্লেনাকে কেন ব্ল্যাকমেল করা হচ্ছিলো?
হয়তো এমন কতগুলো বিষয় ছিলো যেগুলো তার স্বামীর কানে যাতে না যায়?
হতে পারে। আর্লেনা বরাবরই একটু বেপরোয়া। নিজেকে কখনো সতী সাবিত্রী বলে জাহির করতো না।
তাহলে তার স্বামী সবই জানতেন?
আসলে মনে হয় কেনেথ মার্শাল আর্লেনাকে আর্লেনা হিসেবেই মেনে নিয়েছেন, ওর সম্পর্কে কোনো ভ্রান্ত ধারণা ছিলো না। পুরুষেরা ভীষণ বোকা। আর কেনেথ মার্শালের পক্ষে স্ত্রীকে অন্ধ বিশ্বাস করাটা অসম্ভব নয়।
তাহলে আপনি মিসেস মার্শালের শত্রুকে জানেন না?
শুধুমাত্র ক্ষুব্ধ স্ত্রীদেরই আর্লেনার ওপর আক্রোশ ছিলো। কিন্তু শ্বাসরুদ্ধ করে ওকে নিশ্চয়ই কোনো পুরুষ খুন করেছে। আপনারা বরং আর্লেনার অন্তরঙ্গ সঙ্গীদের কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারেন।
ধন্যবাদ, মিস ডার্নলি।
মঁসিয়ে পোয়ারোর জিজ্ঞেস করার কিছু আছে।
এরকুল পোয়ারো হেসে বললেন, না–এই মুহূর্তে কোনো প্রশ্ন নেই।
০৮. আর্লেনা মার্শালের শোবার ঘরে
৮.১
আর্লেনা মার্শালের শোবার ঘরে দুটো বিশাল জানলা দিয়ে ঠিকরে পড়েছে সোনালি রোদ। আর্লেনার প্রসাধন টেবিলে সর্বপ্রকার প্রসাধন দ্রব্যই রয়েছে। ইনসপেক্টর ড্রয়ারগুলো দেখতে ব্যস্ত। তিনি একগোছা ভাজ করা চিঠি পেলেন। ওয়েস্টন ও তিনি চিঠিগুলো পড়ে দেখতে লাগলেন।
ইতিমধ্যে পোয়ারো পোশাকের আলমারি খুলে দেখলেন রাশি রাশি আধুনিক পোশাক। আর রয়েছে অন্তর্বাসের স্তূপ, অসংখ্য টুপি, যার পেছনে কয়েক গিনি করে খরচ করা হয়েছে। তিনি মৃদু স্বরে মন্তব্য করলেন, স্ত্রীয়াশ্চরিত্রম।
কর্নেল চিঠিগুলো ভাঁজ করতে করতে বললেন। তিনটে লিখেছে রেডফার্ন।
আরেকটা চিঠি তিনি পোয়ারোর দিকে এগিয়ে দিলে—
প্রিয়তমা আর্লেনা–
আমার দুঃখ যদি বুঝতে। সুদূর চীনদেশে চলে যাচ্ছি। কোনো পুরুষ কোনো মেয়েকে এত গভীরভাবে ভালোবাসে ভাবিনি, যেমন তোমাকে বেসেছি। চেকার জন্যে ধন্যবাদ। ওরা এবার আমাকে মুক্তি দেবে। অল্পের জন্য বেঁচে গেছি। এতসবের কারণ বড়লোক হতে চেয়েছিলাম শুধু তোমার জন্য। আমাকে ক্ষমা করবে তো? আমি চেয়েছিলাম তোমার সুন্দর নরম কানে হীরের বন্যা বইয়ে দিতে। আর গলায় মুক্তোর মালা পরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। একটা বিশাল পান্না, শীতল এবং সবুজ, প্রচ্ছন্ন আগুনে টইটুম্বুর। আমাকে ভুলে যেও না–তুমি চিরকালের জন্য আমার।
বিদায়–বিদায়–বিদায়
জে.এন.।
কলগেট বললেন, এই জে.এন. সত্যিই চীনে গিয়েছিলো কিনা দেখতে হবে। সম্ভবত সে-ই আমাদের প্রার্থিত ব্যক্তি। অন্ধের মতো মহিলাটিকে ভালোবাসত, হয়তো একদিন জানতে পারলো, তাকে ঠকানো হয়েছে। মনে হচ্ছে, মিস ব্রুস্টার এই ছেলেটির কথাই বলেছে।
পোয়ারো ঘরের আসবাবপত্রের দিকে, প্রসাধন টেবিলে, খোলা পোশাকের আলমারির দিকে, শেষ নজর পড়লো উদ্ধত অলস ভঙ্গীতে বিছানায় শুয়ে থাকা একা বড়সড় ডোবার পুতুলের দিকে।
কেনেথ মার্শালের ঘরটা তার স্ত্রীর ঘরের লাগোয়া। মাঝে কোনো দরজা নেই। প্রসাধন টেবিলে রয়েছে দুটো গজদন্তের বুরুশ; একটা পোশাক পরিষ্কারের বুরুশ এবং এক শিশি কেশ প্রসাধনের আরক। ঘরের অন্যপ্রান্তে লেখার টেবিলে রয়েছে একটা টাইপরাইটার পাশে একরাশ কাগজ।