পোয়ারো বললেন, আর এই ঘটনার সঙ্গে মিসেস মার্শালের মৃত্যুর একটা সাদৃশ্য আছে, তাই তো?
হা–মানে। হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে ভয়ঙ্কর কিছু একটা করে বসা।
আপনার ধারণা, ক্যাপ্টেন মার্শাল তাই করেছেন।
না, মিঃ মার্শাল সম্পর্কে কোনো কথাই আমি বলিনি, সে অত্যন্ত ভালোমানুষ।
কিন্তু, একটু আগে একজন প্রতারিত স্বামীর স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ার কথা বলেছেন।
হ্যাঁ, মানে, রেডফান ছেলেটাকে মিসেস মার্শাল একেবারে সুতোয় করে নাচাচ্ছিলেন। কিন্তু মজার ব্যাপার, নিজের স্ত্রীর ব্যাপারে স্বামী দেবতারা বিশ্বাসে একেবারে অন্ধ। পুনায় এরকম একটা ঘটনার কথা মনে পড়ছে। খুব সুন্দরী মেয়েটি। ওঃ, নিজের স্বামীকে কম ঝাটে ফেলেনি সে।
কর্নেল ওয়েস্টন বললেন, ঠিক আছে মেজর-ব্যারী। আপনি তাহলে ব্যক্তিগতভাবে এমন কিছু জানেন না, যা আমাদের তদন্তে সাহায্য করতে পারে?
সেরকম কোনো তথ্য আমি দিতে পারছি না।
আজ সকালে মিসেস মার্শালকে দেখেননি?
সকালে কারও সঙ্গেই আমার দেখা হয়নি। সেন্ট লু-তে গিয়েছিলাম। এমনই দুর্ভাগ্য যে, ঘটনার দিনই আমি অনুপস্থিত।
আপনি তাহলে সেন্ট লু-তে গিয়েছিলেন?
হ্যাঁ, একটু টেলিফোন করার দরকার ছিলো। এখানে ফোনের ব্যবস্থা নেই।
আপনার ফোনের বক্তব্য গোপনীয় ছিলো?
মেজর চোখ টিপে সহাস্যে বললেন, হ্যাঁ, চেয়েছিলাম আমার এক বন্ধুকে ডেকে তার মারফত একটা বিশেষ ঘোড়ার ওপর বাজি রাখতে। কিন্তু লাইন পেলাম না।
আপনি কোথা থেকে ফোন করেছিলেন?
সেন্ট লু-র প্রধান ডাকঘর থেকে। এই তো, সবে আধঘণ্টা হলো ফিরেছি।
সেন্ট লু-তে কারও সঙ্গে আপনার দেখা হয়েছিলো?
স্বভাবসিদ্ধ চাপা হাসিতে মেজর ব্যারী বললেন, অ্যালিবাই প্রমাণ করতে বলছেন? সেন্ট লু-তে প্রায় হাজার পঞ্চাশ লোককে দেখেছি।
এ ধরনের মিয়মমাফিক প্রশ্ন আমাদের করতেই হয়।
সে কথা ঠিক। সাহায্য করতে পারলে খুশী হবো। আমিও চাই খুনী ধরা পড়ুক। নির্জন সমুদ্র সৈকতে হত্যাকাণ্ড।
ইনসপেক্টর ধন্যবাদ বলে তাকে বিদায় দিয়ে এসে বললেন, সেন্ট লু-তে কোনো খোঁজখবর নেওয়া একটা কষ্টকর হবে। কারণ সেখানে এখন ছুটির মরসুম।
পুলিশপ্রধান বললেন, হ্যাঁ, মেজর ব্যারীকে সন্দেহের তালিকাভুক্ত করা চলে। অবশ্য এইরকম ক্লান্তিকর বাঁচাল বৃদ্ধ বহু দেখা যায়। কিন্তু তবুও মেজরের দিকে নজর রাখতে হবে। কলগেট খোঁজ নিয়ে দ্যাখো, কটার সময় তিনি গাড়ি নিয়ে বেরিলয়েছেন, ট্যাঙ্কে কতটা তেল ছিলো। হয়তো কোনো নির্জন জায়গায় গাড়ি রেখে তিনি দ্বীপে ফিরে পিক্সি কোভে যান।
কলগেট বললেন, হ্যাঁ, বিশেষ করে আজই প্রচুর স্যারাব্যাং গাড়ি এখানে উপস্থিত আছে। জোয়ার ছিলো সাতটায়। আর ভাটা হবে বেলা একটায়। সুতরাং লোকেরা কংক্রীট সেতু এবং বেলাভূমিতে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছিলো।
ওয়েস্টন বললেন, কিন্তু তাকে সেতু পার হয়ে হোটেলের পাশ দিয়েই তো আসতে হবে।
ঠিক পাশ দিয়ে না এসে অন্য রাস্তায় গেছেন তিনি, হয়তো নৌকো বেয়ে ঘুর পথে পিক্সি কোভে গিয়ে থাকবেন।
ওয়েস্টন সম্মতি জানিয়ে, এটা অবশ্য যুক্তিগ্রাহ্য। যদি সমুদ্রের কিনারায় তিনি আগে থাকতেই নৌকাটা রেখে থাকেন, তাহলে পিক্সি কোভে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। সুতরাং ব্যাপারটা আমি তোমার ওপর ছেড়ে দিচ্ছি কলগেট। এখন, তাহলে মিস ফ্রস্টারের সঙ্গে কথা বলা যাক।
.
৭.৫
এমিলি ব্রুস্টার নতুন কোনো তথ্য দিতে পারলেন না।
ওয়েস্টন বললেন, তার মৃতদেহ আবিষ্কার ছাড়া আপনি এমন কিছু জানেন, যা আমাদের তদন্তে সাহায্য করতে পারে?
ব্রুস্টার বললেন, উঁহু। তবে আশা করি খুব শীগগির এর একটা সমাধান করতে পারবেন।
কি বলতে চান আপনি?
শুধু বলতে চাই, এ ধরনের ছেলেমেয়েদের ব্যাপারে সমাধান সহজেই হওয়া উচিত।
আপনি তাকে পছন্দ করতেন না?
না, কারণ আমার খুড়তুতো ভাই আরস্কিনদের একজনকে বিয়ে করে। আপনারা হয়তো জানেন। আর্লেনা বৃদ্ধ রবার্টের ওপর এমন প্রভাব বিস্তার করে যে, তিনি নিজের আত্মীয়-স্বজনকে বঞ্চিত করে সমস্ত সম্পত্তি ওই মেয়েটিকে দিয়ে যান। প্রথমতঃ আর্লেনার সঙ্গে তার ঘনিষ্ট সম্পর্ক এক চরম কেলেঙ্কারীর সৃষ্টি করে তার ওপর ওকে পঞ্চাশ হাজার পাউন্ড উইল করে দেওয়ায় বোঝা যায় যে, সে কি চরিত্রের মেয়ে ছিলো। আর একজন হতভাগ্য যুবক ওর জন্য পাগল হয়ে ওর পেছনে খরচ করার জন্য কিছু শেয়ার তছনছ করে দিয়েছে। কেমন করে রেডফার্ন ছেলেটার মাথাটা চিবিয়ে খাচ্ছিলো। যদি জলে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করতে ভালো হতো। গলা টিপে খুন, ভীষণ বিশ্রী।
তাহলে আপনার ধারণা, খুনী মিসেস মার্শালের অতীত জীবনের কোনো শত্রু? সে সকলের চোখকে ফাঁকি দিয়ে মূল ভূখণ্ড থেকে এসেছে?
তাকে দেখবার লোক কোথায়? সকলেই তো সমুদ্রতীরে ছিলাম। অবশ্য মিস ডার্নলি ছাড়া…
কেন, মিস ডার্নলি কোথায় ছিলেন?
হোটেলের পশ্চিমদিকের পাহাড়ের কিনারায় সানি লজে। আমি ও মিঃ রেডফার্ন নৌকা বেয়ে যখন যাচ্ছিলাম তাকে বসে থাকতে দেখেছি।
কর্নেল ওয়েস্টন বললেন, আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন, মিস ব্রুস্টার, মিসেস মার্শালের অতীত জীবনে নিহিত কোনো সূত্রই আমাদের নজর এড়িয়ে যাবে না।
.
৭.৬
ইনসপেক্টর বললেন, ভদ্রমহিলা একটু একরোখা প্রকৃতির। আর মৃতা মহিলার সম্পর্কে যা বললেন–তাতে বোঝা যাচ্ছে যে, মধুর সম্পর্ক ছিল না।